একদিনের মানিকগঞ্জ ট্যুর

মনে মনে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আর কিছু না হোক,
অন্তত বাংলাদেশের সবগুলো জেলা ঘুরে দেখব।
দেখার পাশাপাশি অইসব এলাকার ঐতিহ্য গুলো তুলে ধরব।
সেই ইচ্ছা অনুযায়ী এবারের ভ্রমণ,, মানিকগঞ্জ দর্শন।
তেওতা জমিদার বাড়ি,বালিয়াটি জমিদার বাড়ি,সরিষার ক্ষেত এসব ছিলো লক্ষ্য।

চারজনের যাত্রা চারদিক থেকে।
তাই যে যার মতো সর্বপ্রথম গাবতলী থেকে একত্রিত হবার মনস্থির করলাম।
খুব সকালে ৬.৩০ এ গাবতলী থেকে আরিচাঘাট এর উদ্দ্যেশ্যে হাইওয়ে রুটের (খুলনাগামী) বাসে উঠে রওনা দিলাম।ভাড়া ছিল জনপ্রতি ১২০/ করে।
আরিচার মোড়ে নেমে অটোতে করে তেওতা গেলাম ৩০ টাকা জনপ্রতি।

যাবার পথে যমুনা মেঘনা আর পদ্মার মিলনস্থান,বিশাল এক মোহনা নদীর বুক চীরে ওঠা চর,জেলেদের মাছ ধরা ট্রলার নদীতীরের মানুষের জনবসতি,শত বর্ষী বট বৃক্ষ যাকে এই এলাকার মানুষ মানত গাছ বলে জানে এসব দেখতে দেখতে তেওতা ইউনিয়ন পরিষদ এর সামনে গিয়ে নামলাম।
ঠিক বিপরীতে জমিদার বাড়ি।
আগে নাস্তা আর চা পর্ব এখানে সেরে নিলাম।২০/৩০/৪০ টাকা করে,যা যেমন খাবার রুচি।

এরপর শুরু হলো তেওতা জমিদার বাড়ি দর্শন।
বাড়ির সামনে বিশাল এক দিঘি
দিঘীতে দুটো সান বাধানো ঘাট, গোলাপী শাপলায় মুখরিত দিঘি।
এক পাশে এক মন্দির রয়েছে, আবার একটা মসজিদ ও রয়েছে এখানে।
যদিও জমিদার বাড়ি পুরোই ধ্বংসস্তুপে পরিনত হয়েছে তবু তার বিশালতা নিখুঁত কারুকাজ সব মিলিয়ে এক অস্থির ভাললাগা কাজ করছিল ভেতরে।
প্রায় এক ঘন্টার মত কাটিয়েছি এখানে।
এরপর এখান থেকে বের হয়ে নদীতীর ঘুরে এলাম।
চরের ওপারে কিছু জনবসতি আছে যারা ট্রলারে করে তাদের বাড়ি যাওয়া আসা করে।
এখানে পাওয়া যাবে ১০০% বিশুদ্ধ প্রাকৃতিক বাতাস।
সতেজ মাছ, শাকসবজি,ফলমুল,কচি নারিকেল।

এবার সেখান থেকে ফেরার পালা।
আবার সেই অটোতে করে আরিচা মেইন রোডে ফেরা।
আবার বাস ধরে যাত্রা শুরু।

উদ্দেশ্য কালামপুর।
কালামপুর পর্যন্ত ভাড়া জনপ্রতি ৫০/ করে।
এখানে নেমে অটোতে সাটুরিয়া ভাড়া জনপ্রতি ৪০/ করে।

যাবার পথে যা কিছু দেখেছি,, ইটভাটা ইটভাটা আর ইটভাটা 😑।
এছাড়াও ফসলের বিস্তীর্ন মাঠ,ভুট্টা,নানা ধরনের শীতকালীন সবজি, মাঝেমধ্যে আখ আর হ্যা অবশ্যই সরিষার ক্ষেত।

লোভ সামলাতে না পেরে নেমে গেলাম ছবি তুলার জন্য। যতদুর যায় হলুদ আর সবুজের ছড়াছড়ি।
বারবার মনে বাজতে ছিল
“তুঝে দেখা তো এ জানা সানাম,
পেয়ার হো তা হ্যায় দিওয়ানা সানাম,
আব এহা সে কাহা যায়ে হাম,
তেরে বাহোমে মার যায়ে হাম 😍”
সুন্দর এতটাই যা আসলে প্রকাশের মতো নয় 🥰
মনে হয়েছি হ্যা,আমার ট্যুর সফল।
সাটুরিয়া পৌছে সবার ই পেটের মধ্যে ক্ষুধা চো চো করছে। দুপুরের লাঞ্চ এখানেই সেরে নিলাম ১২০/ টাকার মত লেগেছে একেক জনের, ও হ্যা ঘিওর এর মিস্টি না খেলেই নয় তাই এখানে জিজ্ঞেস করে মিস্টি চেখে নিলাম।

এখান থেকে অটোতে গেলাম বালিয়াটি জমিদার বাড়ি।
ভাড়া নিয়েছে ১০ টাকা করে জনপ্রতি।

সিংহ খচিত ৩ টা গেটের সুবিশাল জমিদার বাড়ি।
এই জমিদার বাড়ি প্রত্নতত্ব মন্ত্রণালয় দেখাশোনা করে বিধায় অনেকটা আধুনিকতার ছোয়া আছে।
হ্যা বালিয়াটি জমিদার বাড়ি রবিবার বন্ধ থাকে এবং সোমবার দুপুর ২ টার পরে খুলে এবং প্রতিদিন ই ৫ টায় বন্ধ হয়ে যায়।
জমিদার বাড়ি প্রবেশ মুল্য ২০/ করে।
প্রবেশ পথেই আয়না মহল।
এখানে ছবি তোলা এবং ২য় তলার বারান্দায় যাওয়া নিষেধ।
এবং এই বিল্ডিং টা ছাড়া অন্যান্য কোনো বিল্ডিং এ প্রবেশ অধিকার নাই কারো।
সো বাইরে থেকেই সকল সৌন্দর্য্য অবলোকন করতে হয়েছে আমাদের।
প্রতিটা দেয়ালে যেন এক একটা উপন্যাস,কত টা উন্নত এদের শিল্পচর্চা ছিল,ভেবেই ভালো লেগেছে।

কতগুলো পানি খাবার কুপ এখানে,
এবং আমরা বাঙাল শৈল্পিক জাতি হিসেবে কুপের মধ্যে আবর্জনার যেন ডাস্টবিন ভাসিয়েছি
সকল বিল্ডিং এর শেষে পিছনে একটা বিশাল আবার সেই গোলাপী রঙের শাপলার দিঘী,এর চারদিকে চারটা সানবাধানো ঘাটলা।
এই জমিদার বাড়ি নিয়ে অনেক মিথ আছে,
আয়নামহলের এক কুপের মধ্যে থেকে নাকি মাঝেমধ্যে অনেক জোরে মেয়েলি কান্নার আওয়াজ পাওয়া যায় বৃষ্টির রাতে রাতে।
আগেকার জমিদার রা তাদের মনোরঞ্জন এর জন্যে বাড়ির গৃহ পরিচারিকাদের কে নির্যাতন এর পর হাত পা বেধে অনেক গভীর কুপের মধ্যে নিক্ষেপ করত।
এবং বৃষ্টির সিজনে ডুবুরি দের মাধ্যমে মরে কঙ্কাল হয়ে যাওয়া হাড্ডি-গুড্ডি উঠিয়ে মাটিতে পুতে দিতো।
এসব কাহিনী শোনার পর গায়ে কাটা দিয়ে উঠেছিল আমার।

যাই হোক সব মিলিয়ে একটা কোয়ালিটি টাইম এখানে কাটিয়েছি।
সাটুয়িয়া থেকে যেভাবে গিয়েছি,ঠিক সেভাবেই ফিরেছি।
সাটুরিয়া থেকেই গাবতলী গামী বাসে ফিরে যে যার মতো বাসায় ফিরেছি।
সাটুরিয়া থেকে গাবতলী ভাড়া ৭০ টাকা করে নিয়েছে।

ইচ্ছা ছিল জাতীয় স্মৃতিসৌধ হয়ে আসা, বাট সময়ে আর কুলোতে পারিনি।
সব মিলিয়ে ৬০০+ টাকায় ঘুরে এলাম অতীব সুন্দর ঢাকার কাছেই মানিকগঞ্জ।
চাইলে আপনিও ঘুরে আসতে পারেন ডে ট্যুর হিসেবে।

মনে রাখবেন, আপনার আবর্জনা সাফ করার জন্য অন্য কেও নেই, তাই দয়া করে যেখানে সেখানে নোংরা করে আসবেন না।
প্রকৃতি নস্ট করার কোনো অধিকার আপনাকে প্রকৃতি দেয়নি।
হ্যাপী ট্রাভেলিং।
Source: Mafiza Mafi‎<Travelers of Bangladesh (ToB)

Share:

Leave a Comment