এক দিনের ছুটিতে মাওয়াঘাট এবং আরিয়াল বিল ভ্রমণে খরচাবলি ও যাতায়াত

শরতের এই বিকেলগুলো বিলে ঘুরতে যাওয়ার জন্য পারফেক্ট সময়, রোদ বৃষ্টি আর মেঘের খেলা দেখতে দেখতে কাটিয়ে দিতে পারেন চমৎকার একটা দিন।

সকাল ৯ টার দিকে (মিরপুর থেকে স্বাধীন, গুলিস্তান বা পোস্তগোলা থেকে গাংচিল/ভাগ্যকুল/আরাম) মাওয়াগামী যে কোন বাসে উঠে পরবেন। ১১:০০টার আগেই মাওয়াঘাটে পৌছে যাবেন।

মাওয়া ঘাট থেকে স্পিডবোটে করে পদ্মা নদী ঘুরে আসতে পারেন, পদ্মা সেতুর পাইলিং-এর কাজ চলছে সেগুলো ঘুরে আসা যায় মাত্র ২০+২০=৪০ মিনিটে। তবে স্পিডবোট নিয়ে চিন্তার কোন বিষয় নাই কারন স্পিডবোটে সবাইকেই লাইফ জ্যাকেট দেওয়া হবে, সাঁতার জানুন বা না জানুন অবশ্যই লাইফ জ্যাকেট পড়ে নিবেন। আপনি চাইলে আরো আগে বের হয়ে ডাইরেক্ট “পদ্মা রিসোর্টে”ও ঘুরে আসতে পারেন।।

ঘোরাঘুরিরর পর ১:০০/১:৩০টার দিকে সরাসরি খাবার হোটেলে চলে যাবেন, নিজেরাই ইলিশ পছন্দ করে ভাজতে দিয়ে হোটেলে বসে পড়ুন। একটু পরেই চলে আসবে গরম ভাত, লেজ+ডিম ভর্তা, বেগুন ভাজি, ইলিশ ভর্তা,আলুভর্তা আর সেই বিখ্যাত পদ্মার ইলিশ।।

খাবার পরিবেশনের পর এবার ট্যুরের সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান “আরিয়াল বিল”-এর উদ্দেশ্যে ২:০০টার মধ্যেই রওনা হয়ে যান।

মাওয়া থেকে গাদিঘাট আপনি দুইটা ওয়েতে যেতে পারবেন। এক হচ্ছে, মাওয়া থেকে বাস/লেগুনা দিয়ে শ্রীনগর-বেজগাও নামার পর অটোরিকশা দিয়ে শ্রীনগর বাজার অথবা ডাইরেক্ট গাদিঘাটের জন্য অটো ঠিক করতে পারেন। আর দুই, মাওয়া থেকে সরাসরি একটা অটোরিকশা নিয়ে গাদিঘাট চলে যেতে পারেন। যেহেতু অটোরিকশা হাইওয়ে দিয়ে চলেনা,তাই গ্রামের ভেতর দিয়ে দিয়ে গাদিঘাট যাওয়াটাও একটা বোনাস এক্সপেরিয়েন্স হিসেবে যোগ হবে।।

ঢাকা থেকে আপনি চাইলে শুধু “আরিয়াল-বিল”-এর উদেশ্যে একটি বেলা কাটাতে চলে যেতে পারেন। সেক্ষেত্রে বাস থেকে বেজগাও নামবেন অথবা শ্রীনগর বাসস্ট্যান্ডে নেমে শ্রীনগর ভেজবাজার দিয়েও যেতে পারেন। তবে বেজগাঁও নামাই সুবিধাজনক কারন
বেজগাঁও নামলেই অটোরিকশা-রিকশা-লেগুনা দাঁড়িয়ে থাকতে দেখবেন।।

অটোরিকশায় গাদিঘাট যাওয়ার পথেই “শ্যামসিদ্ধির মঠ” পড়বে। অটো সাইড করে রেখে ১৫ মিনিটের জন্য ঘুরে নিতে পারেন মঠের আশপাশ। ঐতিহাসিক দিক থেকে অনেক সমৃদ্ধ এই মঠ, উপমহাদেশেরই সবচেয়ে উঁচু মঠ এটা, গুগুল করলে এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারবেন। তবে কালক্রমে মঠের যায়গা অনেক সংকির্ণ হয়ে পরেছে। লোকে মুখে জানলাম, হেলেকপ্টার দিয়ে নাকি এখান থেকে শক্তিশালী মহা মুল্যবান ম্যাগনেটটি নিয়ে গেছে।।

এখান থেকে অটোতে আরো প্রায় দশ-পনেরো মিনিট পর পৌঁছে যাবেন গাদিঘাটে, মেইনলি এখানেই বোট ভাড়া করতে হবে।।

ওখানে নেমে হালকা খাবার দাবার,পানি,কোল্ড ড্রিংকস কিনে নিবেন নৌকায় খাওয়ার জন্য।
একটা ট্রলার ভাড়া করতে পারেন ঘন্টা ৪০০ টাকা রেটে তিন ঘন্টার জন্য। অথবা ২/৩ জনের জন্য অনেক ছোট ছোট নৌকা পাওয়া যাবে।।

প্রথমে কিছুক্ষণ খুবই নরমালই মনে হইলেও একটু পরই বুঝবেন আড়িয়াল বিলেন আসল সৌন্দর্য, ঠান্ডা বাতাসের সাথে পরিষ্কার পানিতে পা ভিজিয়ে চলার আনন্দ অবর্ণনীয়। আপনারা আপনাদের ইচ্ছামত বোটের ইঞ্জিন থামিয়ে আপনাদের মতো করে উপভোগ করতে পারবেন। ওখানে একটা ছোটখাট চরের মতো আছে। পুরো চরটাই গাছের আড়ালে আবৃত।।

সবাই তো কম-বেশি আড়িয়াল বিলের মজার কথা শেয়ার করেছে। কিন্তু বৃষ্টির স্পর্শে বিলের পুরো সৌন্দর্য আপনাকে নতুন করে জলের প্রতি ভালবাসার জন্ম দিবে। সেই অনুভূতি বর্ণনাতীত। (নিচের ভিডিও ক্লিপে আমি তার সামান্য কিছু স্মৃতি ধারণ করার চেষ্টা করেছি মাত্র)।।

এবার আসি খরচের ব্যাপারে-
বাস ভাড়া:
১) মিরপুর ১০ থেকে বেজগাঁও- ৯০ টাকা
২) পোস্তগোলা থেকে বেজগাও- ৬০ টাকা
৩) গুলিস্তান থেকে মাওয়া- ৭০ টাকা
৪) মিরপুর থেকে মাওয়া- ১০০টাকা
** অটো রিজার্ভ (৬-৮জনের জন্য):
মাওয়া থেকে গাদিঘাট- (৩৫০-৪০০ টাকা)
বেজগাঁও থেকে গাদিঘাট- (১৫০-১৬০ টাকা)
বোটভাড়া: (ঘন্টায় ৩৫০-৫০০ টাকা)

খাবারের খরচ:
একটা মাঝারি সাইজের ইলিশ- ৫০০ টাকা
(নকল ইলিশ মাছ হইতে সাবধান)
আলু এবং বেগুন ভর্তা, লেজ+ডিম ভর্তা
(ওরা বানিয়ে দিবে)
ভাত নিবেন প্লেট হিসেবে,
গামলা/বোল হিসেবে দিতে চাইলে না করবেন।।
–সব মিলে মাওয়া ঘাটে খাওয়া দাওয়া-
পার পার্সন (১৫০-১৬০ টাকা)

এক্সটা কিছু খরচ যেমন নাস্তা+ড্রিংকস সহ
সর্বমোট- (৪৫০-৫৫০ টাকা/জন)
[গ্রুপ মেম্বারের উপর নির্ভরশীল]

বি.দ্র:
১) নৌকাতে খাওয়া দাওয়া শেষে চিপসের প্যাকেট,পলিথিন,প্লাস্টিকের বোতল সহ যাবতীয় জিনিস একটা বড় ব্যাগে রেখে ঘোরাঘুরি শেষে গাদিঘাটে এসে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলে দিবেন।।
২) বিলের শাপলা ফুল অনেকেই তুলে নিয়ে যায় বা নষ্ট করে। তাই শাপলাফুলের পরিমাণ বেশ কম ছিল। তাই দয়া করে সবাই প্রাকৃতিক সৌন্দর্য রক্ষায় সচেষ্ট থাকবেন।।
৩) গোছল করার উদ্দেশ্য থাকুক বা নাই থাকুক একসেট জামা আর সাথে পলিথিন নিতে ভুলবেন না। রোদ/বৃষ্টির মধ্যে চাইলে ছাতাও সঙ্গে নিতে পারেন।।

Source: AB Tanvir‎ <Travelers of Bangladesh (ToB)

Share:

Leave a Comment