কলকাতা থেকে কালকা/চন্ডিগড় থেকে শিমলাঃ

কলকাতার হাওড়া স্টেশন থেকে কালকা মেইল ট্রেনে কালকা যাওয়া যায়।কালকা মেইলের ভাড়া এসি থ্রি-টায়ার ২৩৫০ রুপি প্রতি জন।যদি কালকা মেইল ট্রেনের টিকিট না পান তাহলে অমৃতসর মেইল ট্রেনের টিকিট কেটে আম্বালা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে নামতে হবে।অমৃতসর মেইলের এসি থ্রি-টায়ার এর ভাড়া ২২৫০ রুপি প্রতি জন।সেখান থেকে বার্মিজ কালকা মেইল নামে একটা ট্রেন আছে কালকা যাওয়ার।আম্বালা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে টিকিট কেটে কালকা পর্যন্ত যাওয়া যায়।অমৃতসর মেইল ট্রেনে আম্বালা ক্যান্টনমেন্ট পৌঁছাতে সময় লাগে ৩২ ঘন্টা।আর কালকা মেইলে কালকা পর্যন্ত পৌঁছাতে সময় লাগে ৩৬ ঘন্টা।কালকা পৌঁছে কালকা থেকে ভোর ৫টা থেকে ১২ টার মধ্যে অনেক গুলো টয় ট্রেন আছে শিমলা যাওয়ার।শিবালিক ডিলাক্স এক্সপ্রেস,হিমালয়ান কুইন,কালকা-শিমলা রেইল মটর।টয় ট্রেনে কালকা থেকে শিমলা পৌঁছাতে সময় লাগে ৭ ঘন্টা।ভাড়া ২৫০ রুপি।টয় ট্রেনের মধ্যে একটি ট্রেন শিবালিক ডিলাক্স এক্সপ্রেস কালকা মেইলের সাথে কানেক্টেড।অর্থাৎ কালকা মেইল কালকা ষ্টেশনে না পৌঁছানো পর্যন্ত শিবালিক ডিলাক্স এক্সপ্রেস স্টেশন ত্যাগ করবে না।তাই যারা কালকা মেইলে কলকাতা থেকে যাত্রা করবেন তারা ফেয়ারলি প্লেস থেকে শিবালিক টয় ট্রেনের টিকিট কাটার চেস্টা করবেন।কারন, কোন কারনে যদি কালকা মেইল লেটও হয়,টয়ট্রেন মিস হওয়ার ভয় নেই।টয় ট্রেন ঊনবিংশ শতকের মাঝামাঝি থেকে শিমলাকে কালকা শহরটির সঙ্গে সংযুক্ত রেখেছে এবং শহরটিতে পৌঁছানোর জন্য সবচেয়ে অন্যতম জনপ্রিয় রাস্তা টয় ট্রেনের রাস্তাটি।তবে এটি খুবই ধীর গতির। তবে,পারিপার্শ্বিক দৃশ্য পরিদর্শনের জন্য এই ৯৬ কিলোমিটার দীর্ঘ ট্র্যাকটি সারা জীবন মনে রাখার মত।টয় ট্রেনটি ১৭৬টি সুড়ঙ্গপথ ও ৭৬টি সেতুর মধ্যে দিয়ে অতিক্রম করে।
শিমলা রেলষ্টেশন থেকে মল রোড মাত্র এক কিলোমিটার মত দূরত্বে অবস্থিত।

এছাড়া কলকাতা থেকে দিল্লী হয়ে বাই রোডে শিমলা আসা যায়। বাস ভাড়া এসি ভলভো ১৫০০ রুপী আর নন-এসি ভলভো ৯০০ রুপী। আপনি চাইলে ট্যাক্সি অথবা প্রাইভেট গাড়ি ভাড়া করে আসতে পারেন সিমলা।

�শিমলাতে ঘোরার জায়গাঃ

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২২০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত হিমাচলের রাজধানী,শিমলা শহর। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, কঠোর নিয়ম কানুন এবং পরিমিত আধুনিকতায় সাজানো শহর। মানুষের সচেতনতা এবং আইনের প্রয়োগ কিভাবে একটা সাদামাটা শহরকে দৃষ্টিনন্দন করে তুলতে পারে,তা দেখতে চাইলে চলে যান শিমলায়।রাস্তায় সিগারেট খাওয়া যায় না।রাতের শিমলা অনেক বেশী সুন্দর।

শিমলা দেখার জন্য ২ দিনই যথেষ্ট।কালকা থেকে টয় ট্রেনে বা বাই রোড গেলে আপনি দুপুরের মধ্যে শিমলা পৌছে যাবেন। হোটেলে চেক ইন করে দুপুরের খাওয়া সেরে ফেলুন। বিকালে চলে যান মল রোড, রিজ বা চার্চের কাছে। শিমলা শহরের মুল আকর্ষন এই রিজ বা মল রোড। পাশেই অবস্থিত শিমলা কালীবাড়ি। চাইলে ভেতরটা ঘুরে আসতে পারেন। এই পুরা মল রোডে এ্যাম্বুলেনস এবং ফায়ার ব্রিগেডের গাড়ি ছাড়া সব রকম যান চলাচল নিষেধ, তাই নিশ্চিন্তে হেটে বেড়ান। চার্চের পাশে বসার জন্য সুন্দর বেঞ্চের ব্যবস্থা আছে। সন্ধ্যাটা উপভোগ করুন এখানে বসেই। দূরের পাহাড়ের গায়ের বাড়িগুলোর বাতি দেখলে মনে হয় তারা গুলো সব পাহাড়ের গায়ে নেমে এসেছে।

অনেক ব্র্যান্ডের দোকান পাবেন মল রোডে, ঘুরে দেখুন।রাত ৯ টার মধ্যেই দোকানপাট বন্ধ হওয়া শুরু হয়।এরপর হোটেলে ফিরে আসুন।

শিমলাতে যা যা দেখবেন:-

জাখু পাহাড় ও জাখু মন্দির: জাখু পাহাড় হল সিমলার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এবং পারিপার্শ্বিক ভূ-প্রকৃতির এক অত্যাশ্চর্য নিদারুণ দৃ্শ্য পরিদর্শনেরও প্রস্তাব দেয়। পাহাড়ের চূড়ায় স্থিত জাখু মন্দির প্রভু হনুমানের প্রতি উৎসর্গীকৃত। স্থানীয়দের অনুমান অনুযায়ী, সঞ্জীবনী ঔষধি বিদ্যমান এই পাহাড়টিকে তুলে নিয়ে আসার সময় প্রভু হনুমান এখানে বিশ্রাম নিয়েছিলেন। এর ফলস্বরূপ, এই স্থানটি একইভাবে ভক্ত এবং ভ্রমণকারীদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।এত ঠান্ডার মধ্যে জাখু মন্দিরের চূড়ায় ওঠা খুব কঠিন।শ্বাস নিতে অনেক প্রবলেম হয়।কিছুক্ষন উপরে ওঠার পর গাড়ী পাওয়া যায়।গাড়ীতে গেলে ভালো হয়।

ভ্যাইসরিগেল লজ: অবসারভেটারী পাহাড়ের উপর অবস্থিত ভ্যাইসরিগেল লজ ১৮৯৮ সালে নির্মিত হয়েছিল এবং এটি ভারতের ভাইসরয়, লর্ড ডাফরিনের সরকারি বাসভবন হিসেবে ব্যবহৃত হত। বর্তমানে এই স্থানটি হল ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ আ্যডভান্স স্টাডিজ। লজটি শুধুমাত্র ভারতে ব্রিটিশ শাসনের মধ্যে একটি অন্তর্দৃষ্টি প্রদান করে না,সূর্যাস্ত ও সূর্যোদয়ের এক অত্যাশ্চর্য দৃ্শ্য পরিদর্শনেরও সুযোগ দেয়।

সামার হিল: সামার হিলের পথের চারপাশে ওক, সেডার, রডোডেনড্রন এবং আরোও অনেক গাছপালা বেড়ে উঠেছে। এখানে অবস্থিত ম্যানরভিল্যে ম্যানশন হল এই এলাকার সবচেয়ে বিখ্যাত ভবন, কারণ এটিই সেই জায়গা যেখানে মহাত্মা গান্ধী সিমলা ভ্রমণের সময় ছিলেন।

দ্যা রিজ্ :-এটি একটি উন্মুক্ত স্থান, যেটি সিমলার সবচেয়ে বেশি কার্যকলাপ কেন্দ্র রূপে পরিচিত। দ্য রিজ্ বা শৈলশ্রেণীতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক ল্যান্ডমার্ক আছে এবং বেশ কিছু কার্যক্রম আয়োজনের পাশাপাশি এখান থেকে পার্শ্ববর্তী পর্বতগুলির এক সুন্দর দৃশ্য পরির্শনেরও প্রস্তাব দেয়। শহরের এই অংশটি সিমলার জনজীবনের জন্যও খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটির নীচের জলাশয় শহরের একটি প্রধান অংশে জল সরবরাহের দায়ভারে রয়েছে।

মল্ রোড:- সিমলার বিপূল সংখ্যক ল্যান্ডমার্ক এখানে অবস্থিত হওয়ায়, মল রোড পর্যটকদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয়। এছাড়াও এখানে বেশ কিছু রেস্তোঁরা, ক্লাব, বার ও দোকান অবস্থিত হওয়ায় এটি সিমলার বাণিজ্যিক কেন্দ্রস্থল হিসাবেও পরিচিত।

ক্রাইস্ট চার্চ:- এটি ১৮৪৪ সালে নির্মিত হয়েছিল এবং এটি উত্তর ভারতের দ্বিতীয় প্রাচীনতম গির্জা। ক্রাইস্ট চার্চটি রিজ্-এ অবস্থিত এবং এটি তার এলিজাবেথীয় স্থাপত্য ও তার নকশায়িত কাঁচের জানলার জন্য পর্যটকদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয়। এছাড়াও গির্জাটিতে একটি পাইপ অর্গান রয়েছে, যেটি দেশের সবচেয়ে এক অন্যতম বৃহৎ হিসাবে বিবেচিত হয়। এটি তাদের জন্যই আদর্শ যারা আধ্যাত্মিকতার সাথে সাথে ইতিহাসের এক নিদর্শনকে খুঁজে চলেছে।

সেন্ট মাইকেল ক্যাথিড্রাল:-সেন্ট মাইকেল চার্চ ১৮৫০ সালে নির্মিত হয়েছিল। এটা সিমলার প্রথম ক্যাথলিক গির্জা। এটিতে পাঁচটি মার্বেলের বেদী আছে যেগুলি ১৮৫৫ সালে ইতালি থেকে আনা হয়েছিল। এছাড়াও গির্জাটিতে সুন্দর নকশায়িত কাঁচের জানলা রয়েছে।

গেইটি থিয়েটার :- এই থিয়েটার বা নাট্যমঞ্চটি, সিমলায় ব্রিটিশ বাসিন্দাদের বিনোদনের সুযোগ প্রদানের জন্য ১৮৮৭ সালে নির্মিত হয়েছিল। ভবনটির নব্য স্থাপত্য লালিত নেত্রের জন্য এক সুন্দর দৃশ্য। এখানে একটি প্রদর্শনী সভা ও অন্যান্য বহু সুযোগ-সুবিধা সহ একটি শৈল্পিক গ্যালারি রয়েছে। যেকোনও সূক্ষ শিল্পপ্রেমীদের জন্য এটি একটি অবশ্যই দর্শনীয় স্থান।

তত্তপানি: সিমলা থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে তত্তপানি-তে অবস্থিত সালফিউরাস উষ্ণ প্রসবণ অনেকের মতে ভেষজ উপকারিতা হিসাবে বিবেচিত হয় এবং সেই কারণেই চিকিৎসক পর্যটকদের জন্য তত্তপানি একটি খুবই জনপ্রিয় স্থান। উষ্ণ প্রসবণের পাশাপাশি, শতদ্রু নদীর ঠান্ডা জল রিভার র্যাফটিং-এর সুযোগ প্রদান করে।এখন সরকারী ড্যামের কারনে তত্তপানি তার সৌন্দর্য হারিয়েছে।

কোটগড়: কোটগড়, সিমলা থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে, প্রাচীন হিন্দুস্তান-তিব্বত সড়কের উপর অবস্থিত এবং এটি আপেল বাগানের জন্যও প্রসিদ্ধ। এটি এমন একটি স্থান যেখানে ১৯১৪ সালে হিমাচল প্রদেশের মধ্যে সর্বপ্রথম বাণিজ্যিক ফলের বাগান স্থাপিত হয়েছিল। পরবর্তীকালে, কোটগড় প্রকৃতপক্ষে হিমাচল প্রদেশের এক অন্যতম প্রধান আপেল রপ্তানীকারক স্থান হয়ে ওঠে।

সিমলা জল-অববাহিকা অভয়ারণ্য: ১০.২৫ বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এই অভয়ারণ্যটি সরলবর্গীয় অরণ্য, খাড়াই ভূখণ্ড এবং ক্ষু্দ্র প্রবাহের গৃহস্থল। সিমলার ১২ কিলোমিটার পূর্বে অবস্থিত এই স্থানটি হল বাদামী ভালুক, কৃষ্ণকায় হরিণ, ভারতীয় লাল শেয়াল ও ডোরা-কাটা হায়নার নিরাপদ আশ্রয়স্থল।

কুফরিঃ কুফরি হিমাচল প্রদেশের সিমলা জেলার একটি ছোট্ট হিল ষ্টেশন। সিমলা শহর থেকে ন্যাশনাল হাইওয়ে ২২ এর দিকে ১৩ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত এই শহরটি। ‘কুফরি’ শব্দটি স্থানীয় শব্দ ‘কুফ্র’ থেকে এসেছে, যার অর্থ ‘লেক’। এখানে রয়েছে ‘হিমালায়ান ওয়াইল্ড লাইফ জু’। মজার ব্যাপার ১৮১৯ সালের আগে এই এলাকা মানুষের অজানা ছিল, মাত্র দুইশত বছর আগেও।একদল ইংরেজ পর্যটক বনের ভেতর দিয়ে ট্র্যাভেল করতে গিয়ে আবিস্কার করেন এই অপার সৌন্দর্যের জায়গাটি। প্রতি বছর ফেব্রুয়ারিতে হিমাচল ট্যুরিজম এর উদ্যোগে এখানে উইন্টার স্পোর্টস ফেস্টিভ্যাল অনুষ্ঠিত হয়।কুফরির চূড়ায় উঠতে হলে আপনাকে ঘোড়ায় করে উঠতে হবে।জনপ্রতি ঘোড়া ভাড়া ৫০০ রুপি।সরকার কর্তৃক ভাড়া নির্ধারিত।

ফাগুঃ ফাগু কুফরি থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে প্রায় ২৫০০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র। ফাগু শীতে স্কিয়িং আর উইন্টার স্পোর্টস এর জন্য দেশ-বিদেশ এর পর্যটকদের কাছে খুব জনপ্রিয়। ফাগুর চূড়া থেকে ‘গিরি উপত্যকা’র খুব সুন্দর ভিউ দেখতে পাওয়া যায়।

শিমলাতে থাকা:

মল রোড বা লাক্কার বাজার এর আশেপাশে ৮০০-১৫০০ রুপির মধ্যে হোটেল পেয়ে যাবেন।রুম ঠিক করার আগে রুম হিটার আর গিজার আছে কিনা যাচাই করে নিন।

শিমলাতে খাওয়াঃ

সকালের নাস্তা: চেস্টা করবেন যে হোটেলে থাকবেন সেই হোটেলের সাথে নাস্তার চুক্তি করতে। যদি তাতে কিছুটা বেশিও লাগে, রাজি হয়ে যাবেন। কারন সাত সকালে ঠান্ডায় বের হতে ইচ্ছা করবে না।আলু পরোটা,তাওয়া রুটি,ম্যাগী নুডলস আর চা দিয়েই নাস্তা সারতে হবে।চা খুব একটা ভালো লাগবে না। কারন ওরা চায়ে আদা আর এলাচ ব্যবহার করে।

দুপুর/রাতের খাবার- ভাত খেতে চাইলে থালি সিস্টেমে খাবেন।Veg/Non-Veg দুটোই পাবেন।
Veg থালি খেলেই ভালো হবে।কারন মাছ এবং মাংশ রান্না একদমই ভালো না।খেতে পারবেন না শুধু শুধু নষ্ট হবে।

এছাড়া আর যা যা খেতে পারেন:
– চিকেন মমো- স্থানীয় খাবার।
– ট্রাউট মাছ।
– পেস্ট্রি, কাপকেক- শিমলায় অবশ্যই পেস্ট্রি খাবেন।কাপকেক অসাধারন খেতে।
– পাপড়ি চাট।
– ভেলপুরি।
– গোলগাপ্পা বা পানিপুরি।
– ইডলি, দোসা।
– চানাচাট।
– আপেল, নাশপাতি- ফল খেতে ভুলবেন না। একদম ফ্রেশ, নো ফরমালিন।
– টাংরি কাবাব।

Post Copied From:Dip Biswas>Travelers of Bangladesh (ToB)

Share:

Leave a Comment