চলুন যাই কালাগুল চা বাগানে

এখন বসন্ত কাল। মিষ্টি আবহাওয়া। সময়টা ভ্রমণের জন্য খুবই উপযোগী। নাগরিক ব্যস্ততার একঘেয়েমি দূর করতে এই সময়ে যারা বেরিয়ে পড়ার চিন্তাভাবনা করছেন, তাদের মধ্যে অনেকেরই পছন্দ প্রকৃতির অপরূপ লীলাভূমি সিলেট।

হৃদয়ের দ্বার খুলে শহরতলীর চা-বাগানগুলোর সরু পথে হাঁটতে হাঁটতে বসন্ত বাতাস দারুণ উপভোগ্য। এ ক্ষেত্রে সদর উপজেলার কালাগুল চা-বাগানে এক ঢিলে দুই পাখি শিকারের সুযোগ কাজে লাগাতে পারেন ভ্রমণ বিলাসীরা। বাগানের পাশাপাশি কালাগুল সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য তীর্থস্থানও বটে। মহাদেব শিবের শিবানী সতীর গ্রীবাংশ যে পড়েছিল এখানে্। আর তাই কালাগুলের মনোরম পরিবেশে অনায়াসে একটা দিন কাটিয়ে দিতে পারেন ভ্রমণ বিলাসীরা।

যা দেখবেন:
সিলেটের প্রাচীন চা বাগানগুলোর অন্যতম কালাগুল। বাগানে প্রবেশের পর পরই মেঠো পথধরে হাঁটতে হাঁটতে শোনা যায় কিচির-মিচির, যেন আপনাকে স্বাগত জানাতে  উল্লাসে মেতেছে নানা জাতের বুনো পাখি। চা আর ছায়া বৃক্ষের সবুজে মোহিত তো হবেনই, সেই সাথে পিছিয়ে পড়া চা-জনগোষ্ঠীর জীবনটাকেও নিজ চোখে দেখা যায়। সেজন্য অনুমতি নিয়ে তাদের কারো বাড়িতে ঢুকে পড়তে পারেন। কথা বলতে বলতে জানতে পারবেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উৎকর্ষের এই সময়েও তারা কতভাবে নির্যাতিত ও নিষ্পেষিত।

কাজ সেরে সারিবদ্ধভাবে পিঠে ঝোলানো ঝুড়ি নিয়ে মৃদু পদেক্ষেপে এগিয়ে যাওয়া চা-কন্যাদের দেখে মুগ্ধ হওয়ার পাশাপাশি জীবনটাকে নিয়ে নতুন করে চিন্তাভাবনার প্রেরণাও পাওয়া যায়। কখনো কখনো মাথায় বাঁশের বোঝা নিয়ে দ্রুত ছুটে চলা এই মানুষগুলোর জীবন যুদ্ধ, পাওয়া না পাওয়ার হতাশা নিমেষে হাওয়ায় মিলিয়ে দিতে পারে। আর নানা জাতের বাঁশ ও বেতবাগানও আছে কালাগুলে। আছে কয়েকটি ন্যাড়া টিলা।

কালীবাড়ী মন্দির:
কালাগুল চা-বাগানটি কেবল বাগানই নয়, তীর্থস্থানও বটে। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস মতে, মহাদেব শিবপত্নী মা কালি বা সতীর গ্রীবাংশটি এখানে পড়েছিল। কালিবাড়ী মন্দিরে পাথর রূপে তা সংরক্ষিত। তা দেখতে প্রতিদিন নানা ধর্মের মানুষ মন্দিরটিতে ভিড় করে। তা ছাড়া মন্দিরের ভেতর যে কুণ্ডে তা সংরক্ষিত, তার পানি পান করে অসুস্থ সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অনেকেই উপকৃত হন বলেও ব্যাপক জনশ্রুতি রয়েছে। প্রতি বছর ৯ ফাল্গুন বাৎসরিক পূজা মহোৎসবের আয়োজন করা হয় এখানে। তখন কালাগুল তো বটে, সিলেট অঞ্চলজুড়ে এই উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়ে।

যেভাবে যাবেন:
রাজধানী থেকে বাস, ট্রেন বা বিমানযোগে আপনি সিলেট মহানগরীতে প্রবেশ করতে পারেন। সায়দাবাদ-ফকিরাপুল থেকে দূরপাল্লার বাসে সিলেটের দক্ষিণ সুরমাস্থ কদমতলী যেতে আপনার খরচ পড়বে সাড়ে ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা। সেখান থেকে বন্দরবাজার যেতে রিকশায় খরচ হবে ৩০ থেকে ৫০ টাকা আর সিএনজি অটোরিকশায় ৭০ থেকে ১০০ টাকা। বন্দরবাজার থেকে সিএনজি অটোরিকশায় আম্বরখানা যেতে খরচ পড়বে জনপ্রতি ১০ টাকা। আর আম্বরখানা থেকে শহরতলীর সাহেববাজার যেতে জনপ্রতি খরচ পড়বে ৩০ টাকা। সিএনজিচালিত অটোরিকশা রিজার্ভ নিয়ে গেলে খরচ ১৫০ থেকে ২০০ টাকা। সাহেববাজার থেকে কালাগুল বাগানে যেতে রিজার্ভ অটোরিকশার ভাড়া ১০০ টাকা।

যেখানে থাকবেন:
সিলেট শহরের বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার, দরগাহ গেইট এলাকায় প্রচুর আবাসিক হোটেল রয়েছে। এসব হোটেলে থাকার খরচ পড়বে ২৫০ থেকে ৫০০ টাকা। এ ছাড়া কয়েকটি অভিজাত হোটেলও আছে।

Share:

Leave a Comment