চীনামাটি পাহাড় টিলা স্বচ্ছ সোমেশ্বরীর দেশে একদিন

আমরা যারা একদিনেই পাহাড়, নদী, চিনামাটি, কমলাবাগান আরো অনেককিছু দেখতে চাই। তাদের একবারের জন্য হলেও ঘুরে আসা উচিত বিরিশিরি থেকে। বিরিশিরি বাংলাদেশের নেত্রকোনা জেলার ঐতিহ্যবাহী একটি স্থান। বিরিশিরির মূল আকর্ষণ বিজয়পুর চীনামাটির খনি। এছাড়াও দেখার মত আরো রয়েছে রানীখং গির্জা, গারো পাহাড়,এবং সোমেশ্বরী নদী। জাফলং এর স্বচ্ছ পানি কিংবা সেন্টমার্টিন্স এর গভীর নীল পানি অনেকের কাছে পরিচিত।
কিন্তু সবুজ নীলের মিশেলে অদ্ভুত-রঙা হ্রদ টা কখনো দেখেছেন? যদি না দেখে থাকেনতবে তৈরি হয়ে যান এই গ্রীষ্মে।
যা যা ঘুরে দেখবেনঃ

ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কালচারাল একাডেমীঃ
দুর্গাপুরের বাসস্ট্যান্ড এর পাশেই অবস্থিত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কালচারাল একাডেমী । এ অঞ্চলে বসবাসকারী ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর জীবন যাত্রার নানা নিদর্শন সংরক্ষিত আছে এখানে।

গারো পাহাড়ঃ
গারো পাহাড় ভারতের মেঘালয় রাজ্যের গারো-খাসিয়া পর্বতমালার একটি অংশ। এর কিছু অংশ ভারতের আসাম রাজ্য ও বাংলাদেশের নেত্রকোনা ও ময়মনসিংহ জেলায় অবস্থিত। গারো পাহাড়ের বিস্তৃতি প্রায় ৮০০০ বর্গ কিলোমিটার। গারো পাহাড়ে যেতে হলে আপনাকে গোপালপুর যেতে হবে। দুর্গাপুর কলেজের কাছ থেকে অটোতে ১০ টাকা করে নিবে।

সোমেশ্বরী নদী
সোমেশ্বরী নদী স্বচ্ছ পানি আর ধুধু বালুচরের জন্য বিখ্যাত। সোমেশ্বরী নদী বাংলাদেশের নেত্রকোনা জেলায় প্রবাহিত একটি নদী। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের গারো পাহাড়ের বিঞ্চুরীছড়া, বাঙাছড়া প্রভৃতি ঝর্ণাধারা ও পশ্চিম দিক থেকে রমফা নদীর স্রোতধারা একত্রিত হয়ে সোমেশ্বরী নদীর সৃষ্টি। । নদীতে ঘুরতে অথবা গোসল করতে হলে বিজয়পুর বিজিবি ক্যাম্পের কাছে করলেই ভালো হবে। এখানে পানিও বেশী থাকে এবং চারিদিক টা অনেক সুন্দর। এখানে গোসল কররলে মনে হবে বিছানাকান্দি অথবা জাফলং এ গোসল করতেছেন।

হাজং মাতা রাশিমণি স্মৃতিসৌধঃ
দুর্গাপুর বাজার থেকে বিজয়পুর পাহাড়ে যাওয়ার পথে কামারখালী বাজারের পাশে বহেরাতলীতে অবস্থিত রাশিমণি এই স্মৃতিসৌধ।
সীমান্তবর্তী, গারো পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত ‘বগাঝরা’ নামক গ্রামটি ছিল ব্রিটিশবিরোধী গ্রামগুলোর মধ্যে একটি।রাশিমণি সেই গ্রামেরই একজন প্রতিবাদী মানুষ ছিলেন।ব্রিটিশ মহাজন ও জোতদারদের অন্যায় নীতির বিরুদ্ধে তিনি রুখে দাঁড়ান এবং হয়ে ওঠেন টংক আন্দোলনের অন্যতম নেত্রী।
সাধু যোসেফের ধর্মপল্লীঃ
সুসং দুর্গাপুর থেকে সোমেশ্বরী নদী পার হয়ে রিকশায় যেতে হয় রানিখং গ্রামে। এখানে আছে সাধু যোসেফের ধর্মপল্লী। রানিখং গ্রামের এ ক্যাথলিক গির্জাটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৯১২ সালে। মেলার কারনে বর্তমানে এটা বন্ধ আছে। এটা দেখতে হলে সোমেশ্বরী নদী পার হয়ে অটোতে করে যেতে হয়। রাশিমণি স্মৃতিসৌধ দেখে ওই রাস্তা দিয়েই পাচ মিনিটেই পৌছে যাবেন।

সাদা মাটির পাহাড়ঃ
দুর্গাপুর উপজেলা পরিষদ থেকে ৭ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে কুল্লাগড়া ইউনিয়নের আড়াপাড়া ও মাইজপাড়া মৌজায় বিজয়পুরের শসার পাড় এবং বহেরাতলী গ্রামে সাদা মাটি অবস্থিত। এখান থেকে চীনা মাটি সংগ্রহের ফলে পাহাড়ের গায়ে সৃষ্টি হয়েছে ছোট ছোট পুকুরের মতো গভীর জলাধার। পাহাড়ের গায়ে স্বচ্ছ নীল রঙের জলাধার গুলো দেখতে অত্যন্ত চমৎকার।

আরো আছে কমলা বাগান, জিরো পয়েন্ট। জিরো পয়েন্ট সবসময় যেতে দেয় না।

ট্যুর শুরু করবেন কালচারাল একাডেমী দিয়ে, তারপর গোপালপুর পাহাড়, তারপর সোমেশ্বরীতে গোসল, তারপর একে একে রাসমণি, সাধু যোসেফ এবং সাদা পাহাড় ঘুরে আসতে পারেন।

বিরিশিরি যাওয়ার উপায়ঃ

সরাসরি বাসে, ট্রেনে অথবা ময়মনসিংহ হয়ে বিরিশিরি যাওয়া যায়।
১.ঢাকার মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে সরাসরি দুর্গাপুরের উদ্দেশ্যে বাস ছেড়ে যায়। এই বাস আপনাকে সুসং দুর্গাপুর এর প্রাণকেন্দ্র তালুকদার প্লাজার সামনে নিয়ে নামাবে। রাত ১২ টায় মহাখালী টার্মিনাল থেকে নাইট কোচ ছেড়ে যায়। বাসে দুর্গাপুর যেতে ভাড়া পরবে ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা।
আবার ঢাকা ফেরার জন্য দুর্গাপুরের প্রাণকেন্দ্র তালুকদার প্লাজার সামনে থেকে রাত এগারটায় এবং সাড়ে এগারটায় দুটি নাইট কোচ ঢাকার উদ্দ্যশ্যে ছেড়ে যায়।
২. ঢাকা থেকে রাত ১১ টা ৫০ মিনিটে হাওড় এক্সপ্রেস নামের ট্রেনে করে শ্যামগঞ্জ ট্রেন স্টেশনে নেমে সেখান থেকে বাস বা সিএনজি ভাড়া নিয়ে বিরিশিরি বাজার যাওয়া যায়। কিংবা একটু সহজে যেতে চাইলে হাওড় এক্সপ্রেস ট্রেনে নেত্রকোনা এসে চল্লিশা বাজার থেকে মোটর সাইকেলে জনপ্রতি ৩০০ টাকা ভাড়ায় সব স্পট দেখে ফিরতে পারবেন। এছাড়া বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ভোর ৪.০০/৪.৩০ তে যাত্রা করা জারিয়া স্টেশনগামী ট্রেনে করে ৮০ থেকে ১০০ টাকায় জারিয়া এসে ট্রলার, অটো, সিএনজি বা মোটরসাইকেলে করে দূর্গাপুর যাওয়া যায়।
৩. ময়মনসিংহ হয়ে বাসে অথবা ট্রেনে
ময়মনসিংহ হতে জারিয়া পর্যন্ত দিনে ৪ বার লোকাল ট্রেন চলাচল করে।
সকাল ৬ টায় , সকাল ১১ টায়, বিকাল ৪ টায় , রাত ৮ টায়। ময়মনসিংহ হতে জারিয়া ট্রেন ভাড়া ২০ টাকা। জারিয়া হতে দুর্গাপুর এর ভাড়া টমটম এ ২৫ টাকা , CNG তে ৪০ এবং মোটর সাইকেলে ১৫০ টাকা।

কোথায় থাকবেনঃ
১.জেলা পরিষদ ডাক বাংলা:
২. ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী কালচারাল একাডেমী গেষ্ট হাউজ।
৩. ইয়ুথ মেন খ্রিস্টান অ্যাসোসিয়েশন বা ওয়াইএমসিএ-এর রেস্ট হাউস।: এখানকার কক্ষ ভাড়া ৩০০-৫০০ টাকা।
আরো কয়েকটা হোটেল আছে থাকার জন্য। যেমনঃ হোটেল গুলশান, নদী বাংলা গেস্ট হাউস। এসব হোটেলে ১৫০-৪০০ টাকার মধ্যে রুম পেয়ে যাবেন।
খাওয়া দাওয়াঃ
খাওয়া দাওয়ার ব্যাবস্থা নিয়ে আপনাদের একেবারেই চিন্তা না করলেও চলবে। যে গেস্ট হাউস এ থাকবেন তারাই সুলভ মুল্যে ভাল খাবারের ব্যাবস্থা করে দিবে। এছাড়া অগ্রণী ব্যাংক/ তালুকদার প্লাজার সামনে অবস্থিত হোটেল শান্ত এবং হোটেল পুস্প তে ভাল মানের এবং সুলভ মুল্যে খাবার পাওয়া যায়।

Share:

Leave a Comment