টাঙ্গাইল বাসুলিয়া বিল ভ্রমণ

অফিসের একটা কাজে গিয়েছিলাম টাঙ্গাইলে। কাজটি নির্ধারিত সময়ের আগেই শেষ হয়ে যাওয়ায় আর ভ্রমনের প্রতি একটা টান থাকায় ভাবলাম টাঙ্গাইলের দর্শনীয় কোন স্থানে ঘুরে যাই।প্রথমবারের মতন টাঙ্গাইলে আসার কারনে সব কিছুই ছিল একেবারে নতুন আর অপরিচিত তাই শরণাপন্ন হলাম জনাব গুগল সাহেবর নিকট, উনাকে জিজ্ঞেস করার সাথে সাথেই উনি পার্ক,জমিদার বাড়ি আর বাসুলিয়া বিল সম্পর্কে জ্ঞান দিলেন।
আমার সময়, অবস্থান আর রুচিবোধ সবকিছু মিলিয়ে বাসুলিয়া বিলটিকেই প্রাধান্য দিলাম।

টাঙ্গাইলের পুরাতন বাস স্ট্যাণ্ড থেকে সিএনজি করে ৪০ টাকা ভাড়ায় প্রথমে আসলাম বাসাইল বাজারে।বাসাইল থেকে ভ্যানে ৩০ টাকা দিয়ে আসলাম বাসুলিয়া বিলের পাড়।বিলের পাড়টি মেইন রোড লাগোয়া হওয়ার কারনে ভ্যান থেকে নামতেই নৌকার মাঝিরা হাকডাক শুরু করে দিলো।
একজনকে পছন্দ করে পাড় থেকে ২০ টাকার বাদাম কিনে তার ডিঙ্গি নৌকাতেই চড়ে বসলাম।মাঝি ঘন্টায় ২০০ করে ভাড়া চাইলেও শেষ পর্যন্ত ১০০ টাকায় রফাদফা হলো।আরেকটু দরদাম করলে হয়তো আরেকটু কমানো যেতো।কিন্তু দরিদ্র মাঝির প্রতি একটা মমতা বোধের কারনে খুব একটা দরকষাকষি করিনি।লোকজন বেশি হলে বড় নৌকা বা ট্রলারও সাশ্রয়ী মূল্যে ঘাট থেকে ভাড়া করার সুযোগ রয়েছে।

বর্ষায় এই বিলটিতে প্রচুর পানি থাকে বিধায় বর্ষা মৌসুমেই এই বিলের সৌন্দর্য বিকশিত হয়।বিলের সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান হলো মাঝ বিলে বিশাল আকৃতির একটি হিজল গাছ।চারদিকে থই থই পানির মাঝখানে ডালপালা সমেত মাথা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে একটা বিকাল আকৃতির হিজল গাছ।নীলাভ আকাশ,ঝিরি ঝিরি বাতাসে স্বচ্ছ পানির এই বিলটি সত্যিই অনেক সুন্দর।পরিবার কিংবা বন্ধু বান্ধব যেকোন পরিসরেই একদিনে ঘুরে আসার মতন সুন্দর একটা স্থান।শেষ বিকেলের মাঝারি আকৃতির এই বিলটিতে ভ্রমন করতে আসলেই অনেক ভালো লেগেছে।

আমরা ছুটির দিন ছাড়া গিয়েছি তাই মোটামোটি ভীড় ছিল। খুব সম্ভবত ছুটির দিনটিতে আরো ভীড় থাকে।আর ভীড় বেশি হলে ভাড়াটাও তুলনামূলক একটু বেশি হবে।

ঢাকা থেকে যেতে হলে টাঙ্গাইলের যেকোন বাসে চড়ে বাইপাস বা পুরাতন বাস স্ট্যান্ডে নেমে সেখান থেকে প্রথমে সিএনজি করে বাসাইল এবং সেখান থেকে ভ্যানে করে বাসুলিয়া বিলে যেতে পারবেন।আর যদি নিজস্ব গাড়ি নিয়ে যান তাহলে টাঙ্গাইল বাইপাসের ১.৫-২ কিলো আগে হাতের ডান দিকে বাসাইল বাজারের পথ ধরতে হবে।এবং ৩০-৪০ মিনিটের মধ্যেই আপনি একেবারে বাসুলিয়া বিলের পাড়ে চলে যেতে পারবেন।রাস্তা ঘাট বেশ উন্নত এবং যোগাযোগ ব্যবস্থাও অনেক ভালো।

যারা একদিনের স্বল্প সময়ের ট্যুরের তালাশ করেন তাদের জন্য স্বল্প বাজেট ও অল্প সময়ের চমৎকার একটা পছন্দ হতে পারে বাসুলিয়া বিল।

ট্যুরে গেলে অবশ্যই পানিতে বাদামের খোসা,চিপস, চানাচুরের প্যাকেট,মদের বোতল, বিভিন্ন ড্রিকংসের বোতল প্রভৃতি পানিতে ফেলা পরিহার করবেন।স্থানীয়দের সাথে ভালো ব্যবহার করবেন।অনেকেই দেখলাম বিলের অন্যতম আকর্ষণ হিজল গাছটিতে চড়ে ছবি তুলেছেন, ছবি তোলা অবশ্যই ভালো কাজ কিন্তু সেটা করতে গিয়ে গাছের ডাল ভাঙ্গা বা কোন ধরনের যেন ক্ষতি না হয় সে দিকে লক্ষ্য রাখা বাঞ্ছনীয়।

সবার ভ্রমন জীবন সুন্দর ও আনন্দঘন হউক।

বিঃদ্রঃ- বাসুলিয়া বিলটি কেবল বর্ষাতেই থাকে।ঘুরতে গেলে বর্ষা মৌসুমেই যেতে হবে।
ধন্যবাদ।
Source:Tarikul Alam Tasikul <Travelers of Bangladesh (ToB)

Share:

Leave a Comment