টিওবি এক অসাধারণ ভ্রমণ অভিজ্ঞতা

আমার প্রথম বান্দরবান ট্যুর শেষ করে আসার আগের দিন প্রথম নাম শুনলাম সাকা হাফং এর আর প্রথম ছবি দেখলাম রাইক্ষিয়াং আর পুকুর পাড়ার…. সেবার বান্দরবান থেকে ফিরেই দুই বন্ধু ঠিক করে ফেল্লাম নেক্সট সাকা হাফং যাবো। তখন টিওবি চিন্তাম না, সামহোয়্যারইন ব্লগে ঘাটাঘাটি করে সাকা হাফং সম্পর্কে যতদুর পারা যায় জানার চেস্টা করতে থাকলাম। অবশেষে সেই দিন চলে আসলো, সেপ্টেম্বর এর শুরুর দিকে রাতের বাসে বান্দরবান রওনা দিলাম। এইবারের ট্যুরটা হবে জীবন এর দ্বিতীয় ট্রেকিং! বলা যায় এক্সট্রিম ট্রেকিং সম্পর্কে কোন রকমের ধারনাই নেই, আগের বারের ট্যুরে রুমা থেকে বগা তারপরে বগা থেকে কেওক্রাডং এই ছিলো ট্রেকিং এক্সপেরিয়েন্স। তোহ যাইহোক, পরের দিন রুমা বাজার পৌঁছেই গাইড ঠিক করে নিলাম, ৭ দিনের ট্যুর। প্রথম রাত বগাতেই ছিলাম। পরের দিন সকালেই দুই বন্ধু আর গাইড বেরিয়ে পড়লাম, এখানে বলে রাখা ভালো আমার যেই প্ল্যান ছিলো শুরু থেকেই গাইডের কল্যাণে বেপক পরিবর্তন হলো। শুরুতে কেওক্রাডংয়ের উদ্দেশ্য নিয়ে ট্রেক শুরু করলাম।

দুই রাত ঠিক মত ঘুমাতে না পেরেই মনে হয়, শুরুতেই কস্ট লাগছিলো। কেওক্রাডং ট্রেক এর শুরুর কিছু পরে প্রথম যেই মোটামুটি ঢাল বেয়ে উঠতে হয়, অখানে গিয়েই হাফাতে শুরু করলাম, আমাদের পিছনেই তিন জন বিদেশির টিম ছিলো, আমি যখন হাফাচ্ছিলাম দাড়িয়ে দাড়িয়ে, দেখলাম আমার পাশ দিয়েই কি সুন্দর বিদেশিরা পার হয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। তাদের ভিতর দুইজন ছিলো মেয়ে। শেষ মেয়েটা যখন পাশ কাটিয়ে চলে গেলো তখন নিজের ভিতরে চ্যালেঞ্জ ফিল করলাম। আবার শুরু করলাম ট্রেক, দার্জিলিং পাড়াতে গিয়ে তাদের পেলাম, তারপর আর ওরা আমাদের ধরতে পারেনি। জাদিপাই গিয়ে আবার ব্যাক ও করলাম তাদের আগেই। তবে জাদিপাই থেকে ফেরার সময় খাড়া দিয়ে উঠার সময় খবর হয়ে গিয়েছিলো। আগের দুই রাতের না ঘুমের অভাব খুব পেরা দায়ক হয়ে উঠছিলো। পাড়াতে ব্যাক করে খাওয়ার পরে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না, জাস্ট রেস্ট নেওয়ার জন্য এক্টু শুয়েছিলাম, কখন যে ঘুমিয়ে পড়লাম নিজেও বুঝি নাই। ঘুম ভাংলো বিকেলে, ভাবছিলাম সেদিন জাদিপাই পাড়াতেই থেকে যাবো। কিন্তু গাইডের পিড়াপিড়িতে এক্টু পরে আবার ট্রেক শুরু করলাম। যাবো থাইক্ষিয়াং পাড়া, থাইক্ষিয়াং পাড়াতে যাওয়ার সময় গাইড বলছিলো এই ট্রেইল্টার আসেপাশে মাঝে মাঝে ভালুক দেখা দেয়, কিছুদিন আগেই নাকি এক মারমা ছেলেকে আক্রমণ করে আধমরা বানিয়ে ফেলেছিলো। আমি ছিলাম শেষে, আর পুরা ট্রেইলে শুধু আ্মারা তিনজন্‌ আসপাশের সব নিরব, মাঝে মাঝে অজানা একটা পোকা বা অমন কিছু বিকট শব্দে ডেকে উঠছিলো।

সব মিলিয়ে কেমন এক্টা ছমছমে পরিবেশ, আমি কিছুক্ষণ পর পর পিছনের ট্রেই্লটা দেখে নিচ্ছিলাম, কেমন জানি লাগছিলো। কিছুক্ষণ পরে হাল্কা বৃষ্টি শুরু হলো আর তার পরেই মেঘে ঢেকে গেলও পুরা ট্রেইল, তখন আরো রহস্যময় লাগছিলো সবকিছু। কিন্তু এই পর্যায় আর ভালুকের ভয় পাচ্ছিলাম না, মেঘে ঢাকা পাহাড়ের মাঝের ট্রেইল ধরে এগিয়ে যাচ্ছিলাম আর মনে হচ্ছিলো সপ্নিল কোন পরীদের দেশে যাচ্ছি, সত্যি বলতে কি, তখনের অনুভূতি ছিলো অবর্ণনীয়। সন্ধ্যার সময় গিয়ে থাইক্ষিয়াং পাড়া পোউছলাম। কারবারির ঘরে ব্যাগ রেখে এক্টু বিস্রাম নিয়ে আমি বের হলাম গোছল করতে, আমার বন্ধু আর গাইড তখন আর বের হয়নি। এই খানে এক্টা হাইস্যকর ঘটনা ঘটেছিলো। গোছল শেষ করে ব্যাক করছি অন্ধকারের মাঝে, হটাৎ আমি আবিস্কার করলাম যে কারবারি ঘর কোনটা চিন্তে পারছিনা!! প্রথমে পড়ার এই মাথা ওই মাথা ঘোরাঘুরি করলাম বাট পেলাম না, পাড়ার অনেক মানুষ তখন সান্ধ্যকালীন আড্ডায় পাড়ার উঠনে জড় হয়েছিলো, সবাই আমার দিকে কৌতূহল নিয়ে তাকাচ্ছিলো। আর আমি এক্টু আতংক নিয়ে ভাবছিলাম কি করা যায়, পরে লাজ লজ্জার মাথা খেয়ে পাড়ার এক দাদাকে গিয়ে বললাম, দাদা কারবারির ঘর টা খুজে পাচ্ছিনা আমি, এক্টু দেখিয়ে দিবেন? সে অবাক হয়ে আমার দিকে চেয়ে প্রশ্ন করলো, খুজে পাচ্ছিনা মানে কি?? বললাম আমি আসলে হারিয়ে ফেলেছি!! শুনে চার পাচজন দাদা প্রান খুলে হেসে ঊঠলো, হাসতে হাসতেই এক দাদা বলল, আসেন আমি নিয়ে যাবো। পরে কারবারির ঘরে গিয়ে ঘটনা শুনে আরেক দফা হাসাহাসি চলল।

তারপরের দিন খুব ভোরে উঠেই আবার বের হলাম, আজকের গন্তব্য সরাসরি নেপিউ পাড়া। সকালে বের হয়ে একবার ঝিরি ধরে কখনো খালের পাড় দিয়ে, আবার ঝিরি পার হয়ে এইভাবে করতে করতে প্রায় শেষ বিকেলে সাকার নিচে হাজরয় পাড়ায় পৌঁছলাম, ঝিরি পার হওয়ার সময় আমার ব্যাকপ্যাক ভিজে গিয়েছিলো। ক্রমশ ভারী হয়ে আসছিলো, টানতে কস্ট হচ্ছিলো, এই দিকে প্রায় সন্ধ্যা হয়ে আসছে তাই ভাবলাম আজকে হাজরয় পাড়াতে থেকে যাবো। কিন্তু গাইড বলল হাজরয় পাড়াতে থাকা ঠিক হবে না। পাড়ার মানুষ নাকি খুব এক্টা ফ্রেন্ডলি না। অগত্যা পাহাড় বেয়ে উঠতে শুরু করলাম। অল্প এক্টু ওঠার পরেই ঝুপ করে সন্ধ্যা নেমে এলো আবছা আলোর মাঝের এই ট্রেকিং আমার অনেকদিন মনে থাকবে, মাঝে মাঝে মনে চাইছিলো কান্না করি, কারন ওজন, ব্যকপ্যাক খুব ভারী লাগছিল্‌ একে অভিজ্ঞতা না থাকায় ব্যাকপ্যাক কিছুটা ভারীই ছিলো তার উপ্রে ভিজে আরো ভারী হয়ে উঠছিল যেনো, এই দিকে সন্ধ্যার আলো মিলিয়ে যাচ্ছিলো প্রায়, আর আমি ক্রমশ পিছিয়ে পড়ছিলাম আমার বন্ধু আর গাইড থেকে। মাঝে মাঝেই ওরা জংগলের মাঝে চোখের আড়ালে চলে যাচ্ছিলো, তখন ওদের ডাক দিচ্ছিলাম। এইদিকে ব্যাকপ্যাক এর ওজনের কারনে আমার অবস্থা শেষ! খাড়া ঢাল দিয়ে উঠতে উঠতে মাঝে মাঝেই মনে হচ্ছিলো ব্যাকপ্যাক এর টানে পিছন দিকে পড়ে যাবো।

এর মাঝে পুরাপুরি আধার হয়ে গেলো, সাথে কোন লাইট ছিলোনা, রাতে ট্রেকিং করা লাগতে পারে আর সেইখেত্রে লাইটের দরকার হবে, এই সমস্ত কিছুই তোহ তখন যানতাম না! যাইহোক মোবাইল লাইটের টিমটিমে আলোতে আধারের মাঝে কোনরকমএ উপরে উঠছিলাম, যতই উঠছিলাম আর মনে হচ্ছিলো নেপিঊ পাড়ার দেখা আর পাবোনা কোনদিন। এই জঙ্গলের শেষ হবে না আর, তাছাড়া নিজেরে ক্রমাগত অভিশাপ দিয়ে যাচ্ছিলাম যে, কোন পাগলে বলসিলো পাহাড়ে আসতে, চারহাত পায়ে আসপাশের ঝোপ জংলা ধরে কোনরকম ব্যালেন্স রাখতে রাখতে প্রতিজ্ঞা করছিলাম আর জীবনে যদি পাহাড়ে আসি! যাইহোক, বহুযুগ পরে উপরে অন্ধকার এর মাঝে দিয়ে যেনো টিমটিমে কিছু খুবি হাল্কা আলো দেখা যাচ্ছিলো, গাইড জানালো ওইটাই নেপিউ পাড়া, মুহুর্তেই যেনো স্পিড বেড়ে গেলো, অবশেষে নেপিউ পাড়া! মোটামুটি বিধ্বস্ত অবস্থায় পাড়ায় ঢুকলাম, কিন্তু রেস্ট নেওয়ার আগেই জোক ছাড়ানোটা দরকারী হয়ে উঠলো আমাদের দুই বন্ধুর শরীর থেকে মোটামুটি ২০ টার মত জোক ছাড়ালাম। এই কাজে পাড়ার দাদারা খুব সাহায্য করলো। পরের দিন সকালে উঠে, খাওয়দাওয়া সেরে নিয়ে এক্টু রিলাক্সলি নয়টার দিকে বের হলাম সাকা সামিটের জন্য, এইখানে বলতে ভুলে গিয়েছিলাম, নেপিউ পাড়া আস্তেই আমার পায়ের জুতা প্রায় শেষ, কোন ট্রেকিং সু ছিলোনা, ছিলো স্টাইলিশ হাই কনভারস!! কারন ওইযে, এইসব সম্পর্কে জানতাম নাহ।

যাইহোক, এই জুতাগুলারেই দড়ি দড়া দিয়ে বেধে ছেদে মোটামুটি আদিম রুপ দিয়েই ওইগুলা পায়ে দিয়েই অসাধারণ কর্দমাক্ত ট্রেইল ধরে ধরে উপরে উঠছিলাম। মোটামুটি মনে হয় প্রায় ১.৩০ পরে সাকার চুড়াতে পোছুলাম। আহ সাকা হাফং! সাম্নের দিকে অনেকদুর পর্যন্ত বেশ ভালো ভিউ পেয়েছিলাম। আমরা সামিটের যেইখানে বসে ছিলাম, ঠিক ওইখান থেকেই পাহাড়টা ভীতিকর ভাবে মায়ানমারের দিকে খাড়া নেমে গিয়েছে। এক ঘন্টার মত ছিলাম চুড়াতে, ইচ্ছমত দেখে নিলাম। এরপরে আবার পাড়াতে ব্যাক করলাম পাড়াতে ব্যাক করার পনের মিনিটের মাথায় আমাদের গাইড বলছিলো ওইদিনেই আবার বের হয়ে যাইতে। নিষেধ করে দিলাম৷, ইচ্ছা আজকে পাড়াতে থাকবো, দেখবো। নেপিউ পাড়াটা কেমন যেনো আদিম টাইপের, মনে হয় যেনো সময় এইখানে পিছিয়ে গিয়েছে। দুপুরের পরে পুরা পাড়াতে মনে হচ্ছিলো উৎসব লেগে গেছে, বেপার কি? ঘটনা হচ্ছে বিশাল দুইটা গুইসাপ (গুল) ফাঁদে ধরা পড়েছে। এই দুইটাই আজকের উৎসব উপলক্ষ কিছু সময় পরে ওই দুইটাকে কারাবারির ঘরের উঠানে আগুনে ঝলসানো শুরু হলো….

তারপরের দিন ভোরে নেপিউ পাড়া থেকে রওনা দিলাম, আজ নাইক্ষামুখ পর্যন্ত যাওয়ার ইচ্ছে আছে। সাকা থেকে যাওয়ার পথেই পড়ল নেপিউ ফল, এর কিছুপরে আরেকটা। তারপর কখনও ঝিরির পাশ দিয়ে আবার কখনো কোমর সমান পানি পার হয়ে, এইভাবেই আগিয়ে যাচ্ছিলাম এক্টা সময় পউছে গেলাম মাথভারাখুম সাকা থেকে নামার পরে এই পর্যন্ত আর মানুষ দেখিনি এইখানে এক ত্রিপুরা দাদার সাথে দেখা হলো, তার সাথে কিছুক্ষন আড্ডা দিলাম পাতার বিড়ি পান করতে করতে। তারপরে আবার ট্রেক শুরু খুমের উপরের পাড় দিয়ে ট্রেক করছিলাম এইদিকের জংগল অনেক ঘন ও কিছু কিছু যায়গাতে সূর্যের আলোও ঠিক মতো পৌছায়না না। একদমি আদিম ঘন জংগল। দুপুরের এক্টু পরে নাইক্ষামুখ পৌঁছলাম, আহা সপ্নের নাইক্ষামুখ, যাওয়ার আগে টিংকু ভাইয়ের নাইক্ষামুখ যাওয়ার ভিডিও টা অনেকবার দেখেছিলাম তখনি এই জায়গার প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম। আসলেই অসাধারণ নাইক্ষামুখ। নাইক্ষামুখ ছাড়িয়ে সামনে দুই পাশেই পাহাড় পুরা খাড়া ভাবে উঠে গিয়েছে, ক্যানিয়নের নিচে দিয়ে বয়ে যাচ্ছে সচ্ছ পানি, এক ঘন্টা এই খানে ইচ্ছেমতো থাকলাম এখন সামনে আগাতে হবে।

কিন্তু ঝামেলা হচ্ছে সামনে যে যাবো, কিভাবে? কোন ভেলা নাই। গাইড বগাতে থাকতেই বলেছিলো এইখানে নাকি সবসময় ভেলা থাকে। ওকে জিজ্ঞেস করলাম এখন সামনে যাবো কিভাবে, তখন ও বলল আসেপাশের কোন একটা পাড়ায় থেকে যাইতে একটা ব্যাবস্থা তখন করা যাবে। আমরা দুই বন্ধু তখন আলাপ করলাম এবং বুজতে পারলাম আরেক রাত এখানে স্টে করলে খরচে কুলিয়ে উঠতে পারবোনা তখন গাইডকে বললাম যে সামনে আগাবো, এখন সামনে আগাতে হলে আমাদের ভেলা লাগবে। ভেলা নাই, তারমানে বানাতে হবে এর মাঝে জংগল থেকে এক দাদা বের হলো তখন তাকে রিকোয়েস্ট করে তাকে সহ নিয়ে ভেলা বানানো শুরু হলো জংগলের বাশ কেটে নিয়ে। একটা সময় ভেলা বানানো শেষ হলো ভেলা মানে, জিনিসটা হলো সাত আটটা বাশ এরসাথে জড়ো করে বেধে কিছু এক্টা। এমন বস্তু দুইটা বানানো হলো। এইবারে সমস্যা দেখা দিলো, ভেলা নামানো হবে কিভাবে? এইবারো সমাধান দিলো গাইড বাবাজী, বলল নাইক্ষামুখ এর স্ট্রিমটা থেকে লাফ দিতে তারপরে সে ভেলা ছাড়বে, শেষে সে আমাদের ব্যাকপ্যাক নিয়ে লাফ দিবে! তারমাঝে আমি পারিনা ঠিকমতো সাতার এবং সেও জানে।

পরে বন্ধুকে বললাম যে এটা সম্ভব না। কারণ আমি যে সাঁতার পারি তাতে এই পানির ফ্লোতে ডুবে যাবো, পরে আমি আর আমার বন্ধু মিলে সামনে গিয়ে খুঁজলাম যে এমন কোন জায়গা যেইখান দিয়ে ভেলা নামানো যায়, সুবিধামতো মিলল না, খুব ছোট চাতালের মতো জায়গা পেলাম যেখানে শুধু কোন রকমে একজন দাঁড়ানো যায়। ঠিক হলো, আমি ওখান দিয়ে দাড়াবো আর ওরা ভেলা নিয়ে যখন আমার সামনে দিয়ে পার হবে, তখন আমি লাফ দিবো ভেলার দিকে। দাঁড়িয়ে দেখছিলাম ওরা মেইন স্ট্রিম থেকে লাফ দিলো, দুইটা ভেলার একটা ভেসে গেলো আর একটা কোনরকমে ধরে ওরা আসতে লাগলো স্রোতে ভেসে। আর আমি তৈরি হচ্ছিলাম লাফ দেওয়ার জন্য। যে আমি ঠিকমতো সাতার পারিনা! ওই সময়ের মনের অবস্থা আর বর্ণনা দিলাম না, বুঝানো সম্ভব না, যা হোক ঠিক সময় লাফ দিলাম আর ভেলাও ধরতে পারলাম, একপাশ দিয়ে ভেলা আঁকড়িয়ে ধরে, ভেলার উপরে ব্যাগ রেখে ভেলা নিয়ে স্রোতে ভেসে সামনে যাচ্ছিলাম।

কিছুক্ষন পরে হাতের বায়ের দিক দিয়ে জঙ্গলে ঢুকার রাস্তা পেলাম। এখান দিয়ে প্রায় এক ঘন্টা রীতিমত দৌড়ে দৌড়ে আগালাম পরে আমিয়াখুমের স্ট্রিমের ওপরে হাতের ডান পাশ দিয়ে বের হলাম। অবশেষে এতো রিস্ক শেষে আমিয়াখুম! এখানে এসে ব্যাগ চেক করে দেখলাম আমার ডিজিটাল ক্যামেরা, মোবাইল পানিতে চুবে অলরেডি ডেড।যাইহোক এক ঘণ্টার মতো সময় কাটিয়ে সন্ধ্যার কিছু আগে দেবতা পাহাড় বেয়ে উঠতে শুরু করলাম, শুরু হলো বৃস্টি। ভিজতে ভিজতে পাহাড় বেয়ে যাচ্ছি এক পর্যায় আমার এক পাটি জুতা কাদায় আটকে গেলো সন্ধার আলো আর মুষলধারে বৃষ্টিতে আর খুঁজে পেলাম না। রাতে জিনাপাড়ার আগের পাড়াটা তে পৌঁছলাম। আবারো বিধ্বস্ত অবস্থায়, জোঁকে জোঁকারন্য হয়ে… পরেরদিনে ভোরে আবার বের হলাম সারাদিন ট্রেক করে, নাফাখুম দেখে বিকালে পৌঁছলাম রেমাক্রি। সে রাতে রেমাক্রিতে ছিলাম, সারারাত বৃষ্টি হলো। পরের দিন বোটে করে থাঞ্চি রওনা দিলাম। আগের দিনের সারা রাতের বৃষ্টিতে পানির উচ্চতা আর স্রোত দুইটাই বেশী ছিলো। নিরাপদেই থাঞ্চি বাজার পৌঁছলাম। খাওয়া দাওয়া করে করে দুপুরের পরে বাসে করে বান্দরবন রওনা দিলাম। শেষ হলো অসাধারণ সাত দিনের অ্যাডভেঞ্চারের, এখন বাড়ি ফেরার পালা।

Source: S Hossain Rajon‎>Travelers of Bangladesh (ToB)

Share:

Leave a Comment