ডেসটিনেশন-মালদ্বীপ ভ্রমণ বিতান্ত

মালদ্বীপ অনেক বছর ধরেই একটি জনপ্রিয় হানিমুন ডেস্টিনেশন হিসেবে পরিচিত। কারণ এই দেশের ট্যুরিজম এভাবেই ডেভেলপ করা হয়েছে। প্রথমে যখন মালদ্বীপ যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নেয়া শুরু করি তখন আগে যারা গিয়েছিলো এবং কয়েকটা ট্রাভেল এজেন্সির সাথে কথা বলি। একটা ব্যাপার খেয়াল করলাম যে সবাই মোটামুটি ৪-৫ টা আইল্যান্ডের কথাই বলছে ঘুরেফিরে। নিজে থেকে একটু ঘাঁটাঘাঁটি করে দেখলাম দেশটাতে আইল্যান্ড রিসোর্টের সংখ্যা ১০০০ এর উপরে। ওখানকার বেশিরভাগ আইল্যান্ডই ব্যাক্তি মালিকানাধিন এক একটা আইল্যান্ড রিসোর্ট। এর মধ্যে ফাইভ স্টার বা তার চেয়েও হাই রেটেড রিসোর্ট আছে প্রায় ৫০০ এর মত। যেটা বুঝলাম- আমাদের দেশের এজেন্সিগুলোর সাথে মালদ্বীপের কয়েকটা রিসোর্টের বিজনেস ডিল থাকার কারণেই ওই কয়েটা রিসোর্টের নাম বেশি জানে মানুষ। যেমন প্যারাডাইস আইল্যান্ড, সেনতারা রাসফুসি, সানল্যান্ড, ফানল্যান্ড এগুলো। আগেই বলে নেই এর প্রতিটা রিসোর্টে যারা গিয়েছে সবার অভিজ্ঞ্যতা খুবই ভালো। তাই আমি বলছিনা এগুলোতে গেলে কোনদিক দিয়ে কিছু কম হয়ে যাবে। তবে আমি আর আমার স্ত্রী চাচ্ছিলাম হানিমুনের গল্পটা আমাদের মত হোক। তাই যাওয়ার আগে বেশ কয়েকদিন ধরে অনেকগুলো রিসোর্ট নিয়ে গবেষনা করি। তাতে যতটুকু বুঝেছি তা হল-

সব রিসোর্ট অবকাঠামোগত দিক দিয়ে প্রায় একই ধরনের। রিসোর্টের একটা ভাগে থাকে সবচেয়ে জনপ্রিয় ওয়াটার ভিলা, তারপর আছে বীচ ভিলা এবং বাকিটা আইল্যান্ড ভিলা। হানিমুনের জন্য সবাই ওয়াটার ভিলাই বেছে নেয়। বেসিক কাঠামো সমান হলেও আর্কিটেকচারাললি প্রতিটা রিসোর্টের একটা নিজস্বতা থাকে।
প্রতিটা আইল্যান্ডেরও কিছু নিজস্বতা থাকে। মালদ্বীপে কতগুলো দ্বীপপুঞ্জ নিয়ে এক একটা আতোল তৈরি হয়। আতোল বলতে আমাদের বিভাগের মত আর কি। এই প্রতিটা আতোলের আবার কিছু পরিবেশগত নিজস্বতা থাকে। যেমন বা আতোল ডাইভিং/স্নর্কেলিং এর জন্য বিখ্যাত, রা আতোল গ্লোইং বীচের জন্য পরিচিত।

আর সব রিসোর্টের বিভিন্ন ভিডিও তাদের নিজস্ব ওয়েবসাইট বা ইউটিউবে পাওয়া যায়। এসবকিছুর খোঁজখবর নিয়ে, ইউজার রিভিউ দেখে নিজেদের পছন্দমত একটা আইল্যান্ড রিসোর্ট বের করতে খুব একটা কষ্ট হবার কথা নয়।

আমরা গিয়েছিলাম রা আতোলের কুদাফুসি আইল্যান্ডে। এই আইল্যন্ডের ভিডিও দেখার সময় আমরা দুইজনই মুগ্ধ হই। তারপর বিভিন্ন ওয়েবসাইটে এদের রিভিউ দেখে সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলি নিজেদের মত করে সবকিছু আয়োজন করবো। মনে হচ্ছিলো এই আইল্যান্ডই আমাদের হানিমুনের নিজস্ব গল্প। যে গল্প এর আগে কেউ বলে নি।

এবারে বুকিং দেয়া নিয়ে কিছু কথা বলি। মালদ্বীপে যাওয়ার পিক টাইম হল নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত। এই সময়ে সবকিছুর খরচ একটু বেশি পড়বে। মে থেকে শুরু হয় অফ সিজন। তাই বিভিন্ন ধরনের অফার পাওয়া যায় সব রিসোর্টে। অনলাইনে ওয়েদার ফোরকাস্ট দেখে তাপমাত্রা ও বৃষ্টির সম্ভাবনা দেখে ডেট ঠিক করলে খরচ অনেকাংশে কমানো সম্ভব।

আরেকটা সমস্যা হতে পারে নিজেরা বুকিং দিতে গেলে। এসব জায়গা থেকে বুকিং এর সমস্যা হল বাংলাদেশের বেশিরভাগ ক্রেডিট কার্ডে একবারে ৩০০ ডলারের বেশি ট্রাঞ্জেকশন করা যায় না। ব্র্যাক ব্যাংক, ইবিএল ব্যাংকগুলোতে আবার এই অসুবিধা হয় না। আমি যেমন আমার আমেরিকা প্রবাসী এক বন্ধুর মাধ্যমে বুকিং দিয়েছিলাম। রিসোর্টের নিজস্ব ওয়েবসাইটে বুকিং দিলেও এই সমস্যা এড়ানো সম্ভব। বুকিং ওয়েবসাইটগুলোতে আবার অনেক আকর্ষনিয় অফার থাকে যা রিসোর্টের ওয়েবসাইটে থাকে না। আর অবশ্যই তিনবেলা খাবার সহ বুকিং দেয়া ভালো। বুকিং ওয়েবসাইটগুলোতে যে দাম দেখাবে ফাইনাল করার আগে দেখে নিতে হবে তার মধ্যে কি কি ইনক্লুডেড আছে। সার্ভিস চার্জ, ট্যাক্স এবং গ্রীন ট্যাক্স এই তিনটা এক্সট্রা চার্জ সহ সবসময় দেখানো হয়ে না শুরুতে। তবে সব রিসোর্টে এই তিনটা এক্সট্রা চার্জ থাকবেই। তাই আপনার খরচ আসলে কত হচ্ছে সেটা বুঝে বুকিং দেয়াই ভালো। আরেকটা এক্সট্রা চার্জ লাগে আইল্যান্ড ট্রান্সপোর্টের জন্য। আইল্যান্ড ভেদে স্পীড বোট, সী প্লেন/লোকাল প্লেনে যেতে হয় যার খরচটা আলাদা দিতে হয়।

আশা করি আমার এই লেখা মালদ্বীপে ভ্রমণ নিয়ে কিছুটা নতুন করে ভাবতে সাহাজ্য করূবে উৎসাহীদের। নিজের ভ্রমনের গল্প নিজেরাই তৈরি করূন।

অবশ্যই ঘুরতে গেলে ওখানকার পরিবেশের প্রতি সম্মান দেখাবেন। যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলবেন না, সমূদ্রের কোরাল নষ্ট করবেন না।
Source: Nazmus Sakib

Share:

Leave a Comment