বাংলাদেশের সর্ববৃহত্তম দ্বীপ ভোলা ভ্রমণে যেভাবে যাবেন

ভোলা জেলাতে রয়েছে ছোট বড় মিলিয়ে অনেক গুলো দ্বীপ। রয়েছে বেশ কয়েকটি পর্যটক স্থান। আরও রয়েছে সুন্দরতম মার্বেল পাথরের তৈরী অসাধারন কয়েকটি মসজিদ।

ভোলাতে গিয়ে যেখানে যেখানে ঘুরবেন:-
১. মনপুরা!
মনপুরা ভোলা জেলার ছোট্ট একটি উপজেলা। মনপুরা একটি দ্বীপ। এ দ্বীপের আয়তন ৩৭০ বর্গ কিলোমিটার। মনপুরাতে অনেক কেওরা বাগান,বিশাল চর এবং হরিন রয়েছে। বর্তামনে হরিনের সংখ্যা কমে গেছে। কয়েক বছর আগেও অনেক হরিণ ছিল কিন্তুু সেখানকার মানুষ আর ঘুরতে যাওয়া পর্যটকের শিকার করে খাওয়ার কারনে হরিণ সংখ্যা কমে গেছে। এখন গেলেও হরিণের দেখা পাবেন। ছোট বড় ১০টি চর ও বনবিভাগের প্রচেষ্টায় গড়ে উঠেছে সবুজ বিপ্লব। মাইলের পর মাইল সবুজ বৃক্ষরাজি বিশাল মনপুরাকে সাজিয়েছে সবুজের সমারোহে। শীত মৌসুমে শত শত পাখির কলকাকলিতে মুখরিত থাকে। আর হে.. সামনেই কিন্তু শীত মৌসুম।

২.চর কুকরী মুকরী!
চর কুকরী মুকরী বাংলাদেশের প্রসিদ্ধ চরের মধ্যে অন্যতম। এটি একটি ইউনিয়ন যা চরফ্যাশন উপজেলার দক্ষিণ আইচা থানা অন্তভুক্ত। এটি একটি মেঘনার মোহনার দ্বীপও বটে। চর কুকরী মুকরীর আশে পাশে অনেক গুলি ছোট বড় চর রয়েছে। বাংলাদেশে প্রথম বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষিত হয়েছে চর কুকরী মুকরী। যা দ্বিতীয় সুন্দরবন নামে পরিচিত। চর কুকরী মুরকীতে শীতের মৌসুমে অনেক পাখির দেখা মিলে। সেখানে প্রচুর হরিণ রয়েছে। রাতে মানুষের বাড়িতে আসে মিঠা পানি পান করার জন্য।বিকেল বেলায় বাগানের কাছে দাড়ালে অনেক হরিণ দেখা যায়।আর সন্ধার সময় শিয়ালের ডাকের জন্য বাগানের পাশে তো দাড়ানো যায়না। চর কুকরীর বাকি চরগুলি দেখাতে হলে নৌকা ভাড়া করে দেখতে হবে। চর কুকরীতে একটি মাত্র বাজার রয়েছে সেখানেই নৌকা/বোর্ড ভাড়া পাওয়া যায়। থাকার জন্য বর্তামনে ভালো মানে একটি হোটেল তৈরী করা হয়েছে পর্যটক কর্পোরেশন থেকে। রাতে ক্যাম্পিং করতে চাইলে করতে পারবেন। কোন সমস্যা হবে না। সেখানের চেয়ারমেনের ভালো সাপোর্ট পাওয়া যায় ক্যাম্পিং এর ব্যাপারে।

৩.জ্যাকব টাওয়ার!
জ্যাকব টাওয়ার বা চরফ্যাশন টাওয়ার। ভোলা জেলার চরফ্যাশনে অবস্থিত উপমহাদেশের সর্বোচ্চ ওয়াচ টাওয়ার। ১৬ তলা বিশিষ্ট এই ওয়াচ টাওয়ার টি উদ্ভাদন করা হয় ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে। এই টাওয়ারে প্রতি তলায় ৫০ জন আর সম্পূর্ন টাওয়ারে ৫০০ জনের মতো পর্যটক অবস্থান করতে পারবে।উঠার জন্য রয়েছে সিঁড়ি এবং স্বচ্ছ কাচের ক্যাপসুল লিফট। উপরে খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে। ভোলা জেলার বর্তমান আকর্ষনীয় স্থান এটি।

৪.নিজাম হাসিনা ফাউনডেশন জামে মসজিস!
নিজাম হাসিনা ফাউনডেশন জামে মসজিস
ভোলা সদরে মসজিদ টি অবস্থিন। ভোলা জেলার সবথেকে সুন্দর মসজিদ এটি। অসাধারন এই মসজিদ দেখলে চোখ জুরিয়ে যায়। মসজিদটির ডিজাইন আর পাথরের কাজ সবকিছু মিলিয়ে অসাধারন। নিজাম হাসিনা ফাউনডেশনের অর্থয়নে সমজিট তৈরী করা হয়েছে।
এছাড়াও ভোলা শহরে আরো অনেক আকর্ষণীয় স্থান রয়েছে, যা দেখলে মন জুড়িয়ে যাবে। ভোলা শহর টাও অনেক সুন্দর ও অনেক পরিষ্কার।

যেভাবে যাবেন:-
ভোলার চার পাশে নদী। ভোলা যেহেতু একটি দ্বীপ তাই সেখানে যেতে হলে নদী পারি দিতেই হবে, যেদিক থেকেই জান না কেনো নৌ যোগে যেতে হবে।

ঢাকা থেকে যারা যাবেন তারা সদর ঘাট থেকে
কর্ণফুলী-১৪,
কর্ণফুলী-৯,
নিউ সাব্বি,
সারুপ খাঁন,
লঞ্চ গুলো প্রতিদিনই ভোলার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। ৩৫০ টাকার মতো নরমাল ভাড়া। লঞ্চের শেষ ঘাট লেতরা। তবে সব লঞ্চ সব ঘটে যায় না, লঞ্চে উঠার আগে জিজ্ঞেস করে নিবেন যে কোন ঘটে যাবে এটা।

যেদিন লঞ্চে উঠবেন তার পরের দিন বিকালে পৌছাবেন লেতরা। সেদিন আর তেমন কিছু দেখতে পারবেন না। রাতে লেতরা থাকতে হবে অথবা মাইনকা ও থাকতে পারেন। লেতরা থেকে গাড়িতে করে চলে যাবেন মাইনকা। মাইনকা থেকে দক্ষিন আইচা লঞ্চ ঘাট হয়ে ট্রলারে করে চরকুকরী মুকরী।
চর কুকরী মুকরীতে একরাত থেকে পরের দিন আবার চলে আসবেন চরফ্যাশন। চরফ্যাশন জ্যাকব টাওয়ার দেখে রাতে সেখানে থেকে যাবেন। পরের দিন সকালে বেউতা ঘাট থেকে সকালের বোর্ডে করে চলে যাবেন মনপুরা। সারা দিন ঘুরে রাতে সেখানে থেকে যাবেন। পরের দিন সকালের বোর্ডে আবার বেউতা চলে আসবেন। বেউতা ঘাট থেকে যদি ঢাকার লঞ্চ পান সেটা করে ঢাকা ব্যাক। অথবা যদি নিজাম হাসিনা মসজিদ টি দেখতে চান তাহলে আপনাকে চরফ্যাশন থেকে বসে করে আসতে হবে ভোলা সদরে। ভোলা থেকে বেধুরিয়া ঘাট অথবা খেয়া ঘাট থেকে লঞ্চে করে ঢাকা ব্যাক করা যাবে। খেঁয়া ঘাট থেকে কনফুলি-৯ ছাড়ে, ডেক ভাড়া নিবে ২৫০ টাকা।

চট্টগ্রাম থেকে চরফ্যাশনের ডাইরেক্ট বাস আছে। বর্তমান ভাড়া ৫৫০ টাকা।চরফ্যাশন থেকে বাকিটা উপরের নিয়মে ঘুরে দেখবেন।

বিঃদ্রঃ- কিছু কথা!
১. ট্রলার/বোর্ডের ব্যাপারে, বেউতা থেকে মনপুরা বোর্ড দিনে একবার যায় আর আসে। গিয়ে ৩০ মিনিটের মতো অপেক্ষা করে চলে আসে তাই মনপুরা ভালো করে দেখতে হলে রাতে থাকতে হবে। অনুরূপ ভাবে চর কুকরী মুকরীর বোর্ডও দিনে একবার যায় আর আসে। তাই এই দুইটা জায়গাতে এক রাত করে থাকতে হবে তা না হলে তেমন কিছু দেখতে পারবেন না।

২. ভোলা ভ্রমণের জন্য উপযুক্ত সময় হচ্ছে শীতকাল, আর সেজন্যে আপনাদের সুবিদার্থে এই শীতকালে আমাদের পক্ষ থেকে ভোলা ভ্রমণের আয়োজন করা করা হবে। যারা যারা যেতে ইচ্ছুক, আমাদের ইভেন্ট ছাড়ার সাথে সাথেই কনফার্ম করে নিবেন।

৩. ভোলা শহর টা অনেক পরিষ্কার একটি শহর, ভোলার সব চর গুলোও খুব পরিষ্কার, সবার কাছে একটাই অনুরোধ থাকবে যে, সেখানে গিয়ে ময়লা আবর্জনা ফেলে পরিবেশ টা নষ্ট করে আসবেন না। মনে রাখবেন, আপনি যেমন কোথাও ঘুরতে গিয়ে একটি সুন্দর ও পরিষ্কার স্থানের আশা করেন, ঠিক অন্যরাও এমনি একটি পরিষ্কার স্থানের আশা করে।
source:  The Paradise Tourism

Share:

Leave a Comment