মারায়নতং পাহাড়, আলিরগুহা, আর দানবীয় দামতুয়া ঝর্না ভ্রমণ ও খরচাবলি

৪ তারিখ ফকিরাপুল থেকে রাত ১১.৩০ টার হানিফ বাসে জনপ্রতি ৮৫০ টাকা ভাড়ায় রওনা হই আলিকদম এর উদ্দেশ্যে। সকাল ৮ টায় পৌছাই আলিকদম। বাস স্ট্যান্ড এ নেমেই সকালের নাস্তা সেরে জনপ্রতি ২০ টাকা ভাড়ায় অটো নিয়ে রওনা হই আলিরগুহার উদ্দেশ্যে। অটো নামাবে আলিরগুহার সামনে নদীর এপারে। টমটম এ ব্যাগ রেখে প্রয়োজনীয় জিনিস এবং টর্চ লাইট নিয়ে নদী পার হতে জনপ্রতি ২০ টাকায় যাওয়া আসার জন্য নৌকা ঠিক করি। তারপর ৩-৪ মিনিট পাহাড় এর দিকে উঠে সোজা হেটে গেলেই পরবে প্রথম গুহা আর বাম দিকে গেলে পরবে আরেকটি গুহা। আমরা কোন গাইড নেইনি। আমাদের সাথে থাকা ২ অটো মামার একজন আমাদের সাথে এসেছিল নিজ থেকে। আর একজন ব্যাগ দেখার জন্য ছিল। আলিরগুহায় ঢুকতেই প্রথমে যা খেয়াল করবেন তা হল আবহাওয়া। মনে হবে ৯-১০ ডিগ্রি টেম্পারেচার কমে গেছে। ১০-১৫ মিনিট হাটার পর শুরু হয় মেইন এডভেঞ্চার। সিড়ি বেয়ে উঠেই টর্চ এর আলোয় চলতে হবে। ২ টা গুহা দেখা শেষ করে টমটম নিয়ে যাই আবাসিক। গুহা থেকে আবাসিক নিবে ৩০-৪০ টাকা। আবাসিক গিয়ে পুকুরে গোসল করে নেই। দুপুরের খাবার খেয়ে বিশ্রাম নিয়ে রাতের এর বাজার করে রওনা হই মারায়নতং এর উদ্দেশ্যে। মারায়নতং এর নিচে রাস্তার সামনে নেমে তারপর হাটা শুরু। আমরা এখানেও কোন গাইড নেইনি। মারায়নতং কে সহজ ভাবে নিলেও আমরা কেওই জানতামনা মারায়নতং আমাদের দিকে কত বড় চেলেঞ্জ ছুরে দিতে যাচ্ছে। সব পাহাড় এ উচু নিচু সমতল রাস্তা থাকলেও মারায়নতং শুধু খাড়া উপরের দিকে উঠতে হয়। ১০-১৫ মিনিট হাটার পরই শুরু হলো ঝুম বৃষ্টি। কোনভাবে এক গাছের নিচে ব্যাগ গুলো রেখে ভিজতে থাকি আমরা। হাল্কা বৃষ্টি থাকতেই উঠা শুরু করি আবার। বৃষ্টি থাকায় কিছুটা স্লো হাটি আমরা। প্রায় ১.৩০ ঘন্টা পর মুরং পাড়া পার করে একটা বড় গাছ এর নিচে এসে বসি। তারপর আবার হাটতে থাকি। একটু উপরে উঠতেই মেঘ এর খেলা দেখতে পাই। বৃষ্টির কারনে মেঘ এর খেলা যেন আরো ভালভাবে শুরু হয়েছিল। কিছুক্ষন পরই পৌছে যাই আমাদের গন্তব্য মারায়নতং চূড়ায়। চূরায় উঠেই আমরা মেঘে ঢেকে গেলাম। সবার মুখ দিয়ে একটাই কথা বের হচ্ছিল “সুবানআল্লাহ”।

তাবু পিচ করতে করতেই আবার শুরু হয় ঝুম বৃষ্টি। কিন্তু এবার বৃষ্টি চলে প্রায় ২ ঘন্টা। এর মধ্যেই চারদিকে ঘুটঘুটে অন্ধকার নেমে যায়। এদিকে তাবুতে পানি ভরে গেছে সাথে ২ টা তাবু পিচ করার আগেই পানিতে একাকার।

এদিকে স্থানীয় ছোট্ট ছেলে ইকবাল এসেছে আমাদের সাথে থাকবে বলে। পরে তখনই ঠিক করি। চূরায় থাকা যাবেনা। প্রয়জনীয় জিনিস খাবার নিয়ে টর্চ এর আলোয় রাতের আধারে নামতে শুরু করি মাঠ এর নিচের ঝুম ঘরের দিকে। ব্যাপার টা রিস্কি হলেও এছাড়া আর উপায় ছিলনা। ঝুম এই রাতের খাবার তৈরী করে খেয়ে ঘুম দেয় কয়েকজন। ঠিক করি ভোর ৪ টার দিকে উঠে চূরায় উঠে যাবো। তাবু গুলো প্যাক করা লাগবে আবার। ৪ টায় উঠিয়ে দিলাম সবাইকে। ঝুম ঠিক যেমন ছিল আমারা আসার আগে ঠিক ঐভাবে পরিষ্কার করে ঠান্ডায় অন্ধকারে টর্চ এর আলোয় চূড়ায় উঠলাম। চূড়ায় উঠে সব প্যাক করে ভোর দেখেই নামা শুরু করলাম ৬ টার দিকে। চূড়া থেকে নামতে খুব বেশি সময় লাগেনি। নেমেই বাস স্ট্যান্ড এ গিয়ে নাস্তা সেরে ঢাকার বাস এর টিকেট কেটে বাস এই ব্যাগ রেখে যাওয়া আসা ৮০০ টাকায় বাইক নিয়ে রওনা হই ১৭ কিলোর উদ্দেশ্যে। প্রতিটি বাইক এ ২ জন করে বসতে পারবেন। আলিকদম থেকে ১৭ কিলোর এই রাস্তাকে বাংলাদেশ এর সর্বচ্চ রাস্তা বলে। ১০ কিলো আর্মি ক্যাম্প এ জাতীয় নিবন্ধন এর ফটোকপি জমা দিয়ে চলে গেলাম ১৭ কিলো। ছোট্ট একটা দোকান পাবেন দোকান থেকে চা খেয়ে ১০০০ টাকায় গাইড ঠিক করে রওনা হলাম দামতুয়ার উদ্দেশ্যে। প্রথমে পরবে আদু পাড়া তারপর মেম্বার পাড়া- তামতই পাড়া- নামসাক পাড়া – কাখইপাড়া হয়ে দামতুয়া ঝর্না। এ পথে আরো ২ টি ঝর্না আছে। ওয়াংপা ও তংপ্রা। যাওয়া আসা সব মিলিয়ে সময় লেগেছে ৬ ঘন্টার মত। জামা কাপড় চেঞ্জ করে খাবার খেয়ে ৭.৩০ টার বাস এ ঢাকার উদ্দেশ্যে উঠে পরি।

খরচ সমূহঃ
ঢাকা – আলিকদম বাসঃ ৮৫০
বাস স্ট্যান্ড -আলিরগুহাঃ ২০
নৌকাঃ ২০
আলিরগুহা – আবাসিকঃ ৪০
আবাসিক -মারায়নতংঃ(২৫+২৫)=৫০
বাইক(যাওয়া আসা)=৪০০
দামতুয়া গাইডঃ(১০০০÷৯)=১১১
আলিকদম – ঢাকাঃ ৮৫০
( খাবার খরচ আপনাদের মত )
আমাদের জনপ্রতি ৩০০০/- করে খরচ হয়েছে। ট্যুরমেট বেশি হলে আরো কমে ট্যুর দেয়া সম্ভব।
Source: Rbh Shornab‎ <Travelers of Bangladesh (ToB)

Share:

Leave a Comment