ষাট গম্বুজ মসজিদ ও আমাদের বিশ্বঐতিহ্য

একটা মসজিদের কত রূপ ধারণ করতে পারে তা বুঝা যায় ষাট গম্বুজ মসজিদকে দেখলে।সকাল,দুপুর,সন্ধ্যা কিংবা মধ্যরাত,প্রতিটি মুহূর্তেই ভিন্ন রূপে অর্বিভাব হয় দেশের সুপ্রাচীন এই মসজিদটি।

মসজিদটি যতটুকু সুন্দর ঠিক ততটুকুই ইতিহাস সমৃদ্ধ।মসজিদের নিমার্ণ শৈলী প্রকাশ করে সমৃদ্ধশালী অতীতের কথা।মধ্যযুগে সুলতানী শাসনামলে মুসলিম সম্রাজের শৌর্যবীর্য এবং খলিফাতাবাদ শহরের গৌরবগাঁথা।

বর্তমানে ষাট গম্বুজ মসজিদ ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট
,আমাদের প্রাচীন স্থাপত্যের গর্ব।১৯৮৫ সালে ইউনেস্কো ষাট গম্বুজকে বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করে।মসজিদটির রেফারেন্স নম্বর ৩২১।

ইতিহাসবিদরা ধারণা করেন,পঞ্চদশ শতাব্দীর মাঝামাঝিতে খান জাহান আলী মসজিটি নির্মাণ করেন।সে হিসাব করলে,বর্তমানে মসজিদটির বয়স ৬৫০ বছরের কাছাকাছি কিংবা বেশি।

মসজিদটির নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছিলো ইট,পাথর,চুন,সুড়কি।মসজিদের স্তম্ভ হিসেবে ব্যবহৃত পাথরগুলো আনা হয়েছিলো সুদূর রাজমহল থেকে।মসজিদের মেঝেতে
ব্যবহৃত হয়েছিলো নকশা করা ইট,
দেয়ালে টেরাকোটা।মসজিদের
দেয়ালগুলো প্রায় ৮ ফুট চওড়া।মসজিদটি অর্থোডক্স মসজিদ প্লানে নির্মিত।মসজিদটি দেশি ও তুঘলক নির্মাণ শেলীর মিশ্রণে তৈরী হয়ছিলো।

মসজিদটি সবার কাছে ষাট গম্বুজ নামেই পরিচিত।তবে অনেকেই ভাবেন, ষাট গম্বুজ মসজিদে ৬০ টি গম্বুজ আছে।তবে মসজিদটিতে ৭৭ টি গম্বুজ বিদ্যমান।এর মধ্যে ৭০ টি গোলাকৃতির,৭ টি চার চালা গম্বুজ এবং ৪ টি মিনার রয়েছে।তবে অনেকে চারটি মিনার সহ ৮১ টি গম্বুজ ধরে থাকে।মসজিদটিতে ১০টি মিহরাব রয়েছে।

ষাট গম্বুজ নামটি এসেছে নাম বিকৃতির মাধ্যমে।এটি ছিল তৎকালীন খলিফাতাবাদ শহরের প্রথম ছাদ গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ।সে সময় লোকমুখে এর নাম হয় ছাদ গম্বুজ মসজিদ।পরবর্তী সময়ে এর নাম বিকৃত হয়ে বর্তমান ষাট গম্বুজে রুপান্তরিত হয়।

মসজিদটি ১৯১৩ সালে প্রথম প্রত্নত্তাত্বিক স্থান হিসেবে স্বীকৃতি পায় তৎকালীন আর্কিলিজক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার এর কাছ থেকে এবং ঐ বছরই প্রথম সংস্কার করা হয় মসজিদটির।আর সামনের যে দুইটি বড় কড়ই গাছ আছে সেগুলোও ১৯১৩ সালে রোপন করা হয়।

অনেকের মতে,খান জাহান আলী মসজিদটিকে বিচার কার্জে ব্যবহার করছেন।এই মসজিদটি যতটুকু মসজিদ ঠিক ততোটুকুই দূর্গ।মসজিদের চারটি মিনার ওয়াচ টাওয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হতো যা দূর্গের কথাই প্রকাশ করে।ধারণা কথা হয়,কেন্দ্রীয় মিহারাবে বিচারকার্যে বসতেন খান জাহান আলী,পাশাপাশি অন্য ৯ মেহরাবে বসতেন বিভিন্ন পদে ক্ষমতাদিষ্ট ব্যক্তিবর্গ।

বিশেষ লক্ষণীয় ব্যাপার,কিবালার দয়ালে দরজা ছিলো।যা প্রকাশ করে এখানে খান জাহান আলী নিয়মিত যাতায়াত ছিলো। শাসকরা যেখানে নামাজ পড়ে সেখানে পশ্চিম দরজা থাকার রীতি ছিলো ইসলামে।এটিই বাংলাদেশের একমাত্র মসজিদ যার পশ্চিম মুখো দরজা ছিলো।

মসজিদটির পশ্চিমদিকে খনন করা হয় বিশালকৃতির দিঘী।যেখানে ওযু ও গোসলের কাজ সাড়া হতো।

মসজিদটিতে কোন নামফলক কিংবা শিলালিপি পাওয়া যায় না।যার ফলে ইতিহাসবিদের নানা মতানৈক্য রয়েছে এই অসাধারণ নির্মাণকে ঘিরে।

যেভাবে যাবেন –

ঢাকা থেকে বাগেরহাট বাসস্ট্যান্ড।বাগেরহাট বাসস্ট্যান্ড থেকে ষাট গম্বুজ মসজিদ।
ভিতরে প্রবেশ মূল্য ২০ টাকা।

Share:

Leave a Comment