স্বর্গপুরীর স্বর্গরাজ্য সেন্টমার্টিন

আমি এতো এতো ভ্রমন গল্প লিখলাম অথচ সেন্টমার্টিনের অমন স্মরণীয় একটা রাতের কথা লিখতে কিভাবে ভুলে গেলাম! প্রশ্নটা নিজের কাছেই করেছি নিজে, কিন্তু সঠিক উত্তর পাইনি। তবে হ্যাঁ নিজের কাছে নিজের একটা জবাবদিহিতা ঠিকই দাড় করিয়েছি। সেটা হল অধিকাংশ লেখাই সাম্প্রতিক সময়ের ভ্রমণ অভিজ্ঞতা নিয়ে, তাই কয়েকদিন আগের ভ্রমন অভিজ্ঞতা চাপা পরে গিয়েছিল বর্তমানের তাজা ভ্রমণের অনুভূতির কাছে😏

তবুও মনে এমন একটা স্মরণীয় রাতের কথা না লেখার অসীম আক্ষেপ হয়ে খচখচ করতে লাগলো, কয়েকদিন থেকেই। কিন্তু সময় ঠিক করে উঠতে পারছিলাম না। একটু সময় পেতেই তাই ঝাঁপিয়ে পরলাম সেই রোমাঞ্চকর রাতের কথা নিজের মত করে লিখে ফেলতে। তবে এবার গল্পটা শুরু করি🤔

ধরে নিন না, কোন এক নিরব সৌন্দর্য গ্রহনের জন্য আপনি এখন একটি দ্বীপে। যেই দ্বীপটিতে সারি সারি নারিকেল গাছের ছড়াছড়ি আর দ্বীপের মাঝে রয়েছে একটি কেয়া গাছের বন। দ্বীপটি ঘিরে পাথরের বড় বড় স্তূপ যাতে আছড়ে পড়ে বড় বড় ঢেউ আপনাকে শোনাচ্ছে সুমধুর সংগীত। সাগরের মাঝে কোরাল খোচিত বড় বড় শৈল্পিক পাথরে তৈরি করা বাঁধে বসে অবলোকন করছেন সোনালি সূর্যোদয় বা রক্তিম সুর্যাস্ত। চাঁদনী রাতেরও যেখানে লুকিয়ে আছে অসহ্য সৌন্দর্যের রুপালি গল্প ।
হ্যাঁ🤭
এরুপ অসাধারণ সৌন্দর্য্যমণ্ডিত একটি দ্বীপের নাম “ছেড়াদ্বীপ”। যার নিশ্চুপ সৌন্দর্য্যতা মুহুর্তের মধ্যেই সতেজ করে দেবে আপনার মনকে । বাংলাদেশের সর্ব দক্ষিণের স্থান এটি, যা টেকনাফ ভূখণ্ড থেকে দক্ষিনে খানিক দূরত্বে ক্ষুদ্রকায় কয়েকটি দ্বীপ নিয়ে গঠিত। দ্বীপের প্রায় অর্ধেকই জোয়ারের সময় সমুদ্রের পানিতে ডুবে যায় এবং মূল দ্বীপ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। তারপর আবার ভাটার সময় সেখান থেকে হেঁটেই ছেঁড়াদ্বীপে যাওয়া যায়🚶

এমন পরিবেশে হাতে যদি বই থাকে তবে ওমর খৈয়ামের কবিতার মত বলা যায় 🤙

“এই খানে এই তরুর তলে
তোমার আমায় কৌতুহলে
যে কটি দিন কাটিয়ে যাব প্রিয়ে
সঙ্গে রবে সুরার পাত্র
অল্প কিছু আহার মাত্র
আরেক খানি ছন্দ মধুর কাব্য হাতে নিয়ে।”

টেকনাফ সমুদ্র উপকুল হতে নাফ নদীর গতিপথ অনুসরন করে দক্ষিনে প্রায় ৩ ঘন্টা জাহাজ অথবা সি ট্রাকের ভ্রমন দূরত্বে সাগর বক্ষের একটি ক্ষুদ্র দ্বীপ সেন্টমার্টিন। আকাশ আর সমুদ্রের নীল যেখানে মিলেমিশে একাকার, তীরে বাঁধা নৌকা, অপরূপ নারিকেল বৃক্ষের সারি আর ঢেউয়ের ছন্দে মৃদু পবনের কোমল স্পর্শ- এটি বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ। বালি, পাথর, প্রবাল কিংবা জীব বৈচিত্র্যের সমন্বয়ে ভ্রমণ পিপাসু মানুষের জন্য অনুপম অবকাশ কেন্দ্র সেন্টমার্টিন। স্বচ্ছ পানিতে জেলি ফিশ, নানা রকমের সামুদ্রিক মাছ, কচ্ছপ, সেন্টমার্টিনকে করেছে সকল পর্যটন কেন্দ্র থেকে আলাদা। দ্বীপটিতে নারিকেল গাছের প্রাচুর্যের কারনে এই দ্বীপটিকে নারিকেল জিঞ্জিরা নামেও ডাকেন অনেকে।
দারুচিনি দ্বীপ অথবা নারিকেল জিঞ্জিরা অথবা কোরাল আইল্যান্ড যাই বলা হোক না কেন একবার হলেও নভেম্বর থেকে মার্চ মাসে ঘুরে আসুন সেন্টমার্টিন থেকে।

রাতে নীল জলরাশির সমুদ্রের পানিতে খালি পায়ে হাটা, উপরে লক্ষ-কোটি তারার ঝিলিমিলি বিচরণ, গভীর রাতে বারান্দায় শো শো বাতাসের আওয়াজের সাথে বিছানায় শুয়ে থাকা, যতক্ষণ চোখ খোলা ছিল; কতক্ষণ জানিনা, তবে শরীরের সব টুকু শক্তি আর জেগে থাকার সামর্থ্যের শেষ বিন্দু পর্যন্ত। শেষে এই গানে গানে চোখ দুটি জোড়া লাগল👀

“এই রাত অক্ষয় হোক, দেখ অধরের তৃষ্ণায় মরেছে অধর!”
“দু চোখে মরেছে দুই চোখ, এই রাত অক্ষয় হোক!”

সেন্টমার্টিনের সেই রাত আজও অক্ষয়। স্বপ্নময় চোখের পাতায়, মনের বর্ণিল আঙিনায় আর কল্পনার রুপালী আকাশে☁

বিঃ দ্রঃ পরিবেশের ক্ষতি হয় এমন কোন কিছু করবেন না, স্থানীয় মানুষদের সম্মান দিন, তাদের সাথে মিশুন, এলাকার ইতিহাস জানুন। আর যত্রতত্র ময়লা ফেলে আসবেন না। ঘুরেন দায়িত্ববোধের সাথে।

ঢাকা থেকে সরাসরি বাসে টেকনাফ
টেকনাফ থেকে জাহাজে করে সেন্টমার্টিন যাওয়া যায়।

Source: Asif Haider‎>Travelers of Bangladesh (ToB)

Share:

Leave a Comment