হিমালয় কন্যা পঞ্চগড়

অনেকেই বিশ্বাস করতে চান না পঞ্চগড় থেকে হিমালয় দেখা যায়, আসলে আপনি নিজ চোখে না দেখলে কখনোই বিশ্বাস করবেন না।

আমার আগের পোস্টে ছবি গুলো নিয়ে অনেকে বলেছেন ওগুলো এডিট করা, আর দেখা গেলেও ক্যামেরার ছবির মত এত ভালো দেখা যায়না।
তাদের বলব, ভাইয়েরা ক্যামেরার চেয়েও ভালো দেখা যায়, কারণ পৃথিবীর সেরা ক্যামেরা আপনার চোখ।

আমার ছবিগুলো মোবাইলে তোলা ছবি ছিল, তাই তেমন ভালো হয়নি।
এবার যে ছবি গুলো দিলাম এগুলো ক্যামেরাবন্দি করেছেন আমাদের বড়ভাই আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ফটোগ্রাফার যাকে সবাই ছবিপাগল বলে জানে, যার ছবি ন্যাশনাল জিওগ্রাফিকেও স্থান পেয়েছে সেই ভাই, যিনি নিজেও পঞ্চগড় জেলার কৃতিসন্তান।
যারা উনাকে চিনেন তাদেরকে নতুন করে বলার কিছু নেই। আর আমার ছবিগুলো বিশ্বাস না হলে #Firoz_Al_Sabah ভাইয়ের প্রোফাইলে গিয়ে দেখতে পারেন।
এখানে ফিজোর ভাইয়ের ছবির সাথে আমার নিজের মোবাইলে তোলা কয়েকটি ছবি দিলাম।

বাংলাদেশের পঞ্চগড় থেকে হিমালয় দেখতে পাওয়া যায় , তবে তা নির্ভর করবে আবহাওয়ার ভাগ্যের উপর। এটা যেহেতু মেঘের অনেক উপরে অবস্থিত তাই এটা দেখার জন্য সবচেয়ে যেটা প্রয়োজন মেঘমুক্ত আকাশ এবং পরিষ্কার আবহাওয়া।
আবহাওয়া খারাপ আপনি নেপাল গিয়েও হিমালয় দেখতে নাও পারেন।

কাঞ্চনজঙ্ঘার চূড়া দেখতে সারাবিশ্ব থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার পর্যটক ভারতের টাইগার হিলে ছুটে যান। ভোরে উষার সময় কাঞ্চনজঙ্ঘার ওপর রোদ পড়ে সেই রোদ যেন ঠিকরে পড়ে পর্যটকের চোখে।
দার্জিলিং-এর টাইগার হিলই কাঞ্চনজঙ্ঘার চূড়া দেখার সবচেয়ে আদর্শ জায়গা। কিন্তু যদি পাসপোর্ট ভিসা ছাড়াই সেই দৃশ্য দেখতে পারেন তবে কেমন হয়? হ্যাঁ এমন সুযোগই রয়েছে।

বাংলাদেশের উত্তরের সর্বশেষ উপজেলা তেঁতুলিয়া থেকেই দেখা যাচ্ছে কাঞ্চনজঙ্ঘা। অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে বেশ ভালোভাবে দেখা যায়।
আবহাওয়ার কারণে শীতকালে হিমালয়ের পাদদেশে অবস্থিত পঞ্চগড় জেলার তেঁতুলিয়া থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায়। আবহাওয়া ভালো হলে খুব পরিষ্কার ভাবে দেখা যায়।

আমার নিচে দেয়া ছবিতে তেঁতুলিয়ার ধানক্ষেত আর কাঞ্চনজঙ্ঘার মাঝখানে যে কালচে পাহাড়টা দেখা যাচ্ছে…ওই পাহাড়ের এপারের ঢালে শিলিগুড়ি শহর। রাতে তেঁতুলিয়া থেকে শিলিগুড়ির আলো দেখা যায় স্পষ্ট। ছবি যে লাইটের আলোলো দেখছেন ওগুলো শিলিগুড়ি শহরের লাইটের আলো, একেবারে কাছেই।
ওই পাহাড়েরই অপর ঢালে দার্জিলিং। দার্জিলিং-এ যারা বেড়াতে যান…তাঁদের কাছে প্রধান আকর্ষণ বরফে ঢাকা কাঞ্চনজঙ্ঘার ওপর সূর্যোদয়ের সময় দিনের প্রথম সূর্যকিরণের ঝিকিমিকি!

সম্প্রতি তেঁতুলিয়া ঘুরে আসা সাদাব মোস্তফা জানাচ্ছেন, ‘ভোর সাড়ে ৫টায় উঠলাম! উঠেই দেখি কেবল হালকা আলো দেখা যাচ্ছে! কিন্তু আকাশে মেঘ আছে। ভাবলাম আর মনে হয় পাহাড় দেখা যাবে না! কিন্তু সকাল ৬টা ১০ মিনিটে কাঞ্চনজঙ্ঘা আবার উকি দিচ্ছে! কিছুক্ষণ পর মেঘ ঠেলে সূর্য একটু বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই কাঞ্চনজঙ্ঘা আবার লাল হয়ে গেল! এবার শান্তি মতো ছবি তুললাম। নিজেকে ভাগ্যবান মনে হলো যে দুই দিন এ কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পারলাম। ‘

টাইগার হিলে উষার সময় ভোরে দেখা গেলেও তেঁতুলিয়া থেকে এত ভোরে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখা যায় না। সকাল ৮টা থেকে সূর্যকিরণ যখন তেজ হতে থাকে তখন স্পষ্ট হয়ে ধরা দেয় কাঞ্চনজঙ্ঘা। সকাল ১০টা পর্যন্ত বেশ ভালো দেখা যায়। তারপর আস্তে আস্তে ঝাপসা হতে থাকে কাঞ্চনজঙ্ঘা। শেষ বিকেলে সূর্যকিরণ আবার যখন তির্যক হয়ে পড়ে বরফের পাহাড়ে তখন অনিন্দ্য সুন্দর হয়ে ধরা দেয় কাঞ্চনজঙ্ঘা।

হিমালয়ের আশাপাশের এলাকা অতিরিক্ত জলীয়বাষ্প সম্পন্ন হওয়ায় এবং দার্জিলিং এর পাহাড়ি এলাকা প্রায় সময় কুয়াশাচ্ছন্ন থাকায় বেশীরভাগ সময়ই কাঞ্চনজঙ্ঘার চূড়া দেখা যায়না।

ঢাকা থেকে সরাসরি বাস রয়েছে তেঁতুলিয়াগামী। কিংবা পঞ্চগড় পর্যন্তও যাওয়া যায়। তেঁতুলিয়ায় বিভিন্ন চা বাগান রয়েছে। সেখানে তেমন টুরিস্ট প্লেস নেই, তবে রয়েছে অসাধারণ সৌন্দর্য সম্পন্ন গ্রাম্য এলাকা এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, যা আপনাকে মনোমুগ্ধ করবেই। পর্যটন এলাকা না হওয়ায় সেখানে হোটেল মোটেল নেই তবে রয়েছে সরকারি বেসরকারি ডাকবাংলো। আগে থেকে যোগাযোগ করে যাওয়াই ভালো।

source:  Prince Rasel Mahmud Chowdhury‎ <Travellers Of Bangladesh

 

Share:

Leave a Comment