আইল্যান্ড (থাইল্যান্ড) ভ্রমন…
গত মাসে ঘুরে এলাম Land of Smiles খ্যাত থাইল্যান্ড থেকে। অবভিয়াসলি থাইল্যান্ড ভ্রমণের সবচেয়ে আকর্ষণীয় পার্ট ছিল ফি ফি আইল্যান্ড ভ্রমণ। দ্বীপটা থাইল্যান্ডের দক্ষিণাঞ্চলে ক্রাবি প্রভিন্সে পড়েছে (থাইল্যান্ডের মোট প্রভিন্সের সংখ্যা ৭৭)। আন্দামান সাগরের উপর অবস্থিত ফি ফি এর আশেপাশে আরও কিছু ছোট ছোট আকর্ষণীয় দ্বীপ আছে। ফি ফি এবং এর আশেপাশের দ্বীপগুলো ভ্রমণের অভিজ্ঞতা শেয়ার করার জন্যই আজকের এই পোস্ট।
ফি ফি তে প্রধানত দুইটা জায়গা থেকে যাওয়া যায়। ফুকেট থেকে এবং মেইনল্যান্ড ক্রাবি থেকে। বেশিরভাগ পর্যটক ফুকেট হয়েই যায়, যদিও আমি এবং আমার গ্রুপমেটরা গিয়েছিলাম ক্রাবি হয়ে। দুই ক্ষেত্রেই আপনাকে প্রথমে ব্যাংকক থেকে ডোমেস্টিক এয়ারে ফুকেট/ক্রাবি যেতে হবে। এখানে উল্লেখ্য যে, ব্যাংককে দুইটা এয়ারপোর্ট আছে। সুবর্ণভূমি এয়ারপোর্ট এবং ডন মুয়াং এয়ারপোর্ট। বাংলাদেশ থেকে বাংলাদেশ বিমান বা থাই এয়ারওয়েজে গেলে আপনি সুবর্ণভূমিতে ল্যান্ড করবেন। আর ডোমেস্টিক বাজেট এয়ারলাইন্সগুলো ছাড়ে ডন মুয়াং থেকে। দুই এয়ারপোর্টের মধ্যবর্তী দূরত্ব প্রায় ৪০ কিলোমিটারের মত। তাই হাতে যথেষ্ট সময় নিয়ে প্ল্যান করতে হবে। সুবর্ণভূমি থেকেও ফুকেট/ক্রাবির প্লেন আছে, তবে সেগুলো কিছুটা এক্সপেনসিভ।
ক্রাবি থেকে ফি ফি আইল্যান্ডে গিয়ে যদি দিনে দিনে ফিরে আসতে চান তবে আপনার হাতে তিনটা অপশন আছে।
অপশন-১:
ফেরিতে (বড় বোট) করে যাওয়া এবং আসা। ফেরি সকাল ৯:৩০ এ ক্রাবি থেকে ছাড়ে, ১১:৩০ এ ফি ফি দ্বীপে পৌঁছায়। দুপুর ৩:৩০ এ ফি ফি থেকে ছেড়ে বিকাল ৫:৩০ এ ক্রাবিতে ব্যাক করে। ভাড়া যাওয়া আসা ৭৫০ থেকে ৯০০ বাথের মধ্যে (বার্গেইনিং করার সুযোগ আছে)। যাওয়া এবং আসার টিকেট আলাদাভাবে নিতে পারবেন।
সুবিধাঃ
ফেরি বেশ স্লো যায়, ফলে যাত্রাপথের দৃশ্য খুব ভালোভাবে উপভোগ করতে পারবেন। ছবিও উঠাতে পারবেন। ফেরির ছাদে দাঁড়িয়ে যাত্রা বেশ উপভোগ্য হওয়ার কথা।
অসুবিধাঃ
১। ফি ফি এর আশেপাশে আরও বেশ কিছু আকর্ষণীয় স্পট আছে, যেগুলো মিস করবেন। মাঝ সমুদ্রে সুইমিং, স্নোরকেলিং ইত্যাদি অ্যাক্টিভিটির সুযোগও পাবেন না। আর এই প্যাকেজে লাঞ্চ ইনক্লুডেড না। (ফুকেট থেকে গেলে সম্ভবত ফেরির ভাড়ার সাথে লাঞ্চ ইনক্লুডেড)।
অপশন-২:
কোন ট্যুরগ্রুপের সাথে অ্যাড হয়ে বড়/মাঝারি স্পিডবোটে ভ্রমণ। আমরা এভাবেই গিয়েছিলাম। ভাড়া পড়েছিল জনপ্রতি ১৩০০ বাথ। সকাল ৯:৩০ এর দিকে ক্রাবি থেকে রওনা হয়ে বেশকিছু স্পট কভার করে বিকাল ৫:০০ টার দিকে আবার ক্রাবিতে ব্যাক করে।
সুবিধাঃ
১। ফি ফি আইল্যান্ড ছাড়াও ব্যাম্বু আইল্যান্ড, মাংকি বীচ, মায়া বে, ভাইকিং কেভ সহ আরও বেশকিছু স্পটে নিয়ে যায়।
২। সমুদ্রের মধ্যে সুইমিং এবং স্নোরকেলিং এর সুযোগ আছে। এর জন্য প্রয়োজনীয় ইকুইপমেন্ট যেমন লাইফ জ্যাকেট, গগলস, পাইপ ওরাই সরবরাহ করে। এই দুইটা অভিজ্ঞতাই অনেক ইন্টারেস্টিং। বিশেষ করে স্নোরকেলিং করে সমুদ্রের পানির নিচের প্রবাল, রঙ্গিন মাছের ছোটাছুটি দেখতে বেশ ভাল লাগবে।
৩। প্যাকেজের সাথে ব্যুফে লাঞ্চ ইনক্লুডেড (ফি ফি আইল্যান্ডে)। লাঞ্চের কোয়ালিটি অনেক ভাল।
অসুবিধাঃ
১। প্রতিটা জায়গায় কাটানোর জন্য আপনাকে নির্দিষ্ট সময় ধরে দিবে। কোন জায়গা খুব বেশি ভাল লেগে গেলেও নির্ধারিত সময়ের বেশি অবস্থান করতে পারবেন না।
২। স্পিডবোট খুব দ্রুত চলে এবং প্রচুর ঝাঁকি খায়। চলন্ত অবস্থায় দুপাশের দৃশ্য উপভোগ করা কিংবা ছবি উঠানো একটু মুশকিল!
অপশন-৩:
যদি আপনারা গ্রুপের সদস্য সংখ্যা ৮/১০ জন বা তার বেশি হন তবে নিজেরাই একটা ছোট স্পিডবোট রিজার্ভ করে চলে যেতে পারেন। ভাড়া পড়বে ১১,০০০/১২,০০০ বাথের মত।
সুবিধাঃ
নিজেদের ইচ্ছামত যেখানে যতক্ষণ খুশি সময় কাটাতে পারবেন।
অসুবিধাঃ
১। থাইল্যান্ড ভ্রমণ সম্পর্কে খুব ভাল ধারনা না থাকলে কোথায় কোথায় যেতে হবে তা বুঝতে পারাটাই মুশকিল হয়ে যাবে।
২। বুঝতে পারলেও স্পিডবোটের চালকের সাথে কম্যুনিকেট করা যথেষ্ট কঠিন হবে, কারন ওরা ইংরেজি খুবই কম বুঝে।
৩। লাঞ্চ ইনক্লুডেড না।
ফাইন্যালি, হাতে যদি যথেষ্ট সময় থাকে তবে আমি সাজেস্ট করব আপনি ফেরিতে করে ফি ফি যান, গিয়ে ফি ফি আইল্যান্ডে কমপক্ষে একরাত থাকুন, এরপর আবার ফি ফি থেকে ফেরিতে ব্যাক করুন। যেদিন যাবেন সেদিন বিকালে কিংবা পরদিন সকালে ফি ফি থেকে লং টেইল্ড কাঠের বোটে করে আশেপাশের স্পটগুলো ঘুরে দেখুন। সুইমিং, স্নোরকেলিং, স্কুবা ডাইভিং, কায়াকিং করারও সুযোগ পাবেন। আর যাদের সময়ের স্বপ্লতা আছে তারা অপশন-২ বেছে নিতে পারেন।
যারা ফি ফি আইল্যন্ডে রাত কাটাবেন তাদের জন্য আরেকটা ভাল সাজেশন হতে পারে আপনি যদি ফুকেট হয়ে যান, তবে ক্রাবি হয়ে ব্যাক করুন। আর ক্রাবি হয়ে গেলে ফুকেট হয়ে ব্যাক করুন।
কক্সবাজারে যেমন রাস্তার মোড়ে মোড়ে সেন্টমার্টিন ভ্রমণের শিপের টিকেট বিক্রির বুথ আছে, ক্রাবিতেও ঠিক তাই। সেগুলোর যেকোন একটা থেকে আপনার পছন্দসই প্যাকেজটা বেছে নিন। সম্ভব হলে ৩/৪টা বুথ ঘুরে দাম যাচাই করে নিন। সবগুলোর সার্ভিস একই, কিন্তু দাম কিছুটা এদিক সেদিক হয়! দামাদামি করার সুযোগ আছে। তবে একটা ব্যাপারে নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন, দাম যাই রাখুক, সার্ভিস যেটা দেওয়ার কথা বলবে সেটাই দেবে। মিথ্যা কথা বলে কিংবা বাটপারি করে আপনার সাথে লেনদেন করবে না।
আর ফি ফি এর সৌন্দর্যের ব্যাপারে কিছুই বললাম না। সেটা আপনারা গেলে স্বচক্ষেই দেখবেন!
সতর্কতাঃ
১। খোলা সমুদ্রে রোদের তেজ অনেক বেশি। প্রয়োজনে সানগ্লাস এবং সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে পারেন।
২। পুরো থাইল্যান্ড দেশটাই অনেক পরিচ্ছন্ন, অনুগ্রহপূর্বক একে নোংরা করবেন না।