এভারেস্ট, কাঞ্চনজঙ্ঘা, লোতসে, মাকালু ভ্রমন

১২০০০ ফিট উপরের এই স্বর্গ থেকে বিশ্বের পাচটি পর্বতশৃঙ্গ মধ্যে চারটিই( এভারেস্ট, কাঞ্চনজঙ্ঘা, লোতসে, মাকালু) দেখতে পাবেন। কাঞ্চঞ্জঙ্ঘার আর হিমালয়ের পুরো রেঞ্জটাই দেখা মিলবে এখান থেকে।”

উপরের কোটেড করা কথাটা কিন্তু আমার না । আমার গুরুর ,তিনি আমাকে motiveted করার জন্য গুছিয়ে উপরের কথা গুলো বলেছিলেন । কেননা সান্দাকফু যাওয়ার ততটা ইচ্ছে আমার ছিল না। যদিও november মাসে আমার বন্ধু জেফ্রি_সরকারের সান্দাকফুতে ল্যান্ডরোভারের পাশে তুলা ছবি দেখে একটু লোভ লাগছিল ।

গর্ভধারিণী – উপ্যনাসটি পড়িনি, শুনেছি সেখানে নাকি কয়েকজন যুবক শহর থেকে অনেক দূরে পালিয়ে থাকার জন্য ওই অঞ্চল বেছে নিয়েছিল। আর আমাদের রসের লেখক ওই অঞ্চলটাকে সাহিত্য রসে লেপে দিয়েছিলেন।সমরেশ মজুমদার কে বিশ্বআস করা যায় আমি বিষন্ন মনটাকে মেরামত করার জন্য অবশেষে গুরুর জায়গাই বেছে নিলাম।
তবে সন্দিহান ছিলাম কিছুটা ! সন্দেহ আরো বাড়ল যখন দেখি বাজেট টুর এ আমি আর গুরু ছাড়া কেও নাই। ToB help line এ dail করেও কোন help পাই নাই

সবশেষে বিশাল বাজেটের চাপ নিয়ে দুজনে ২৬ তারিখ রাতে উত্তরার আব্দুল্লাহ পুর থেকে এস আর পরিবহনে বুরিমাড়ির উদ্দেশ্যে যাত্রা করি।

ভোরে বুড়িমারিতে পওছে অজ্ঞাত দুই শুভাকাঙ্ক্ষীর সাথে সাক্ষাৎ হল।এ যেন মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি । একজন সান্দাকফু যাবেন ।আর একজন ঘুরতে যাবেন but কই যাবেন নট ডিসাইড ইয়েট।তাদের দুজনকে খুব সহজে নিজেদের দলভুক্ত করে দুই থেকে হয়ে যাই চার & বাজেট চাপমুক্ত হয়ে যাই।

সান্দাকফু যেতে গেলে আপনাকে প্রথমে শিলিগুড়ি পওছতে হবে। শিলিগুড়ি বা নিউজলপাইগুড়ি থেকে গাড়িভাড়া করে সরাসরি মানেভাঞ্জন আসতে হবে । আমরা শিলিগুড়ি থেকে রিজার্ভ গাড়ি নিয়েছিলাম l এছাড়া দার্জিলিংগামী শেয়ার জীপে ঘুম স্টেশন পর্যন্ত এসে এখান থেকে সুখিয়াপোখরি হয়ে মানেভঞ্জন যেতে পারেন । মানেভঞ্জন-এ রাত্রিবাস করে পরদিন সকালে ট্রেক করে বা ল্যান্ডরোভারে করে সান্দাকফু যেতে হবে l দুরত্ব ৩১ কিলোমিটার , গাড়িতে তিন থেকে চার ঘন্টা লাগবে।আর ট্রেক করে গেলে মাঝে সুবিধামত জায়গায় থেকে থেকে সান্দাকুফ উঠা যায়।

ঠিক সকাল ৯ টায় মানেভঞ্জন ল্যান্ডরোভার এসোশিয়েশন থেকে ল্যান্ডরোভার ভাড়া করে আমাদের যাত্রা শুরু হয়।শুরুতেই সিঙ্গালীলা অভায়ারন্যের প্রবেশদ্বার , বিদেশিদের জন্য টিকেট জন প্রতি২০০ রুপি করে , টিকেট কেটে গাড়ি ছুটে চলল উপরের দিকে।প্রথমেই পরবে সুন্দর গ্রাম চিত্রে । এখানে গাড়ি থামিয়ে কিছুক্ষণ এর জন্য প্রকিতিকে আপনি স্তব্দ করে দিতে পারেন।স্তব্ধ সময় টুকু ক্যামেরায় বন্ধি করে এগিয়ে চলুন সামনের দিকে। চিত্রে থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার চড়াই-উতরাই কংক্রিটের ঢালাই করা রাস্তার দুপাশে পাইন, ফারের জঙ্গল হয়ে প্রবেশ করবেন মেঘমা নামক সুন্দর আরেক গ্রামে। মেঘমা থেকে পথ দু-ভাগ হয়ে গেছে l ডান দিকের রাস্তাটি গেছে পশ্চিমবঙ্গের টংলু হয়ে নেপালের তুমলিং আর বাম দিকের রাস্তাটি সোজা চলে গেছে তুমলিং l ড্রাইভাররা সোজা তুমলিং যেতে চাইলেও আপনারা টংলু হয়ে তুমলিং যাবেনl কেননা অনেকে বলে এখানকার দৃশ্য ছবিতে দেখা স্কটল্যান্ডের মতো দেখতে লাগে l কিছুটা সময় এখানে কাটালে আপনার ভালোই লাগবে । আমরা আসার সময় এখানে সময় দিয়েছিলাম ।

এরপর চলে আসুন তুমলিং l নেপালের এই ছোট গ্রামটিতে বেশিরভাগ ট্রেকার কাটান তাদের প্রথম রাত l আকাশ পরিষ্কার থাকলে কাঞ্চনজঙ্ঘা সহ বহু শৃঙ্গ দেখা যায় এখান থেকেইl

এরপরের গ্রাম গৌরীবাস আর তারপরের গন্তব্য কালিপোখরি l এ গ্রামে ঢোকার মুখে পড়বে একটা ছোট পুকুর- নাম কালিপোখরি l পুকুরের চারপাশে বৌদ্ধদের প্রার্থনা পতাকা টাঙানো l
কালিপোখরি থেকে সান্দাকফুর দুরত্ব সাত কিলোমিটার । তুষারপাতের কারনে আমাদের গাড়ি এখানেই ছেড়ে দেয়। বাকি পথটা ট্রেকিং করে উঠতে হয়। উপরে ওঠাটা যতটা কষ্টের ছিল, তারও চেয়ে বেশি আনন্দের ছিল তুষারপাতের কারনে। চাদের যেমন কলংক আছে তেমন আমাদের আনন্দের মাঝেও ছিল,তা হল টেনশন । আর টেনশন ছিল আবহাওয়ার অবস্থা নিয়ে। পরদিন যদি আকাশ পরিষ্কার না হয় তাহলে যে আসল উদ্দেশ্যে ই সাধন হবে না !

উপরে উঠে মনে হল এনটার্টিকাতে চলে এসেছি । তাড়াতাড়ি নেপালের এক হোটেলে রুম নিয়ে রাতের খাবার কোন মতে খেয়ে চলে যাই লেপের রাজ্ জে ।
ঘুম হয়েছে কিনা জানিনা কারন রাতের temperature সম্পর্কে আমি শুধু এই টুকু বলব যে washroom এর পানি ,sewage line ও রেহায় পায়নি pure ice হওয়া থেকে।

আল্লাহর অশেষ রহমতে আমি আমার এ ক্ষুদ্র জীবনের best সকালটি উপহার হিসেবে পেলাম পরদিন।চোখের সামনে পৃথিবীর top 4 এভারেস্ট, কাঞ্চনজঙ্ঘা, লোতসে & মাকাল । সূর্য উদয় , চারপাশে প্রকৃতির সাদা অলংকার সব যেন নেশার মত । মনের বিষন্নতা প্রকৃতির রুপ দেখে পালিয়েছে ।সান্দাকফু থেকে আশেপাশের যে সৌন্দর্য তা লিখে প্রকাশের ক্ষমতা আমার নেই। যা দেখেছি তা শুধু চোখে ভাসছে। স্রষ্টার সৃষ্টির এ সৌন্দর্য মানব সৃষ্টি কোন যন্ত্রে বন্ধি করা সম্ভব না।
এদিকে তো দেখছি স্লিপিং বোদ্ধা। একটু হাঁটলেই পৌঁছে যাওয়া যাবে এমন মনে হচ্ছে। সোজা সামনেই মাকালু -নেপাল ও চিনের সীমান্তে অবস্থিত পৃথিবীর পঞ্চম উঁচু পর্বতশৃঙ্গ । তার পিছে লৎসে -নেপাল ও চিনের সীমান্তে অবস্থিত পৃথিবীর ৪চতুর্থতম উঁচু পর্বতশৃঙ্গ । আর এ দুটো র পিছনে এভারেস্ট -এটার পরিচয় দেয়ার কিছু নাই।কাঞ্চনজঙ্ঘা তো হাতের মুঠোয়, আর মাকালু এর পাশে থ্রি সিস্টার। যত দেখছি ততই ভালো লাগছে।ছবি তুলতে তুলতে হাতটা যে বরফ হয়ে গেসে তা ভুলেই গেছিলাম।

সকালের নাস্তা হয়ে ছিল খিচুড়ি দিয়ে । নেপালি খিচুড়ি কিন্তু অন্য রকমের সাদ,খেতে ভুলবেন না কিন্তু। নাস্তা সেরে চারপাশ ঘুরে নামা শুরু করলাম। যেখান থেকে এসেছি সেখানে। মনটা একটু ভারী হয়ে এলো ।সত্তই একদিন এ সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে।

খরচ
ঢাকা-বুরিমারি ৬৫০টাকা(জন প্রতি)
নন AC SR পরিবহনে
বরডার খরচ- ২০০(জন প্রতি)
চাংলা -শিলিগুরি -১০০০ রুপি
(রিজার্ভ গাড়ি ৪ জন)
দুপুরের খাবার – ৪৩০ রুপি (৪জন)
শিলিগুরি – মানেভঞ্জন ২৭০০ রুপি
(রিজার্ভ করেছিলাম-৮জন অনায়াসে যাওয়া যায়)
হোটেল (মানেভঞ্জন)-১১০০ রুপি
খাবার(রাত& সকাল)- ৬৫০(৪ জন)
ল্যান্ডরোভার -৫৮০০ রুপি (৪জন)
২ রাত তিন দিনের জন্য
হোটেল (সান্দাকফু) ৩০০০রুপি(৪জন)
তিন বেলার খাবার-২১২০ রুপি (৪জন)
তুমলিং থাকা খাওয়া – ২৩৫০রুপি
৪জন দুইবেলা খাবার & নাস্তা সহ।
মানেভঞ্জন – শিলিগুরি- ৩০০ (sharing)
শিলিগুরি-চাংলা -১৬০০ রুপি
(রিজার্ভ গাড়ি )
বুরিমারি -ঢাকা ৬৫০টাকা(জন প্রতি)

Share:

Leave a Comment