কম খরচে নাফাকুম ঘুরে আসার উপায়

হিসেব করে দেখলাম, ৩৪৫০ টাকায় নাফাকুম-রেমাক্রি-তিন্দুর সৌন্দর্য ভালভাবেই উপভোগ করে আসা সম্ভব!

এই মাসের শুরুতে প্রথমবারের মত নাফাকুম জলপ্রপাত দেখে আসলাম, সেই অভিজ্ঞতার আলোকে আজকের লেখা!

১৫ জনের গ্রুপের খরচের হিসেবটা দিলাম!

ঢাকা টু বান্দরবন ৬২০+৬২০= ১২৪০ (যাওয়া আসা)
বান্দরবন টু থানচি ২০০+২০০= ৪০০
থানচি টু রেমাক্রি নৌকা ভাড়া: ৮০০ (যাওয়া আসা প্রতি নৌকা ৪০০০ টাকা নেয়, এক নৌকায় ৫ জন বসা যায়, সে হিসেবে জনপ্রতি ৮০০ টাকা লাগবে, ১৬ ডিসেম্বর, ২১শে ফেব্রুয়ারি বা এই টাপের বন্ধের দিন গেলে নৌকা ভাড়া জনপ্রতি ১০০ টাকা বাড়তে পারে)

গাইড: জনপ্রতি ১৩৫ টাকা! থানচি থেকে যে গাইড নিবেন তাকে ১৫০০ টাকা আর রেমাক্রি থেকে একজন নিতে হয়, তাকে দিতে হয় ৫০০ টাকা, টোটাল ২০০০ টাকা! একজন গাইড সর্বোচ্চ ১৫ জন ট্যুরিস্ট নিয়ে যেতে পারে, আপনারা ১৫ জন গেলে জনপ্রতি গাইড চার্জ আসে ১৩৩ টাকা!

রেমাক্রিতে ১ রাত কটেজে থাকা: ১৫০/- টাকা

খাবারের খরচ: ৬০০

বান্দরবনে ১ম দিন সকালের নাস্তা+ ২য় দিন রাতের খাবার: ২০০
থানচিতে ২ বেলা দুপুরের খাবার: ২০০
রেমাক্রিতে ১ম দিন রাতের খাবার ও ২য় দিন সকালের নাস্তা: ২০০

গাইড; নৌকার মাঝি ও হেল্পারের ২ বেলা খাবারের খরচ আপনাদেরকেই বহন করতে হবে! সেক্ষেত্রে জনপ্রতি ৮০-১০০ টাকা লাগবে!

তাহলে সর্বমোট খরচ দাঁড়ালো : ১২৪০+৪০০+৮০০+১৩৫+১৫০+৬০০+১০০= ৩৪২৫ টাকা!

এর বাইরে আর কোন খরচ নেই!

এখন যদি আপনি একটু রিলাক্সে ট্যুর দিতে চান, পাহাড়ি আঁকাবাঁকা-উঁচুনিচু রাস্তার সৌন্দর্য উপভোগ করতে চান তাহলে খরচ বাড়বে! এই যেমন বাসে করে না গিয়ে বান্দরবন থেকে থানচি রিজার্ভ চান্দের গাড়িতে করে গেলে ভাড়া বেশি পড়বে! যাওয়া আসা একটা চান্দের গাড়ি ৯০০০-৯৫০০ নিতে পারে! এক গাড়িতে ১৩/১৪ জন বসা যায়!

গ্রুপ যদি ছোট হয় তবে জনপ্রতি খরচ ১৫০-২০০ টাকা বাড়বে!
আর আপনারা গেলে ৫/১০/১৫ জন যাবেন, ৭-৮ জন বা ১২-১৩ জন গেলে নৌকার খরচ বাড়বে! এক নৌকায় ওরা ৫ জনের বেশি নিতে চায়না, ২ জন অতিরিক্ত গেলে আরেকটা নৌকা নিতে হবে, ভাড়া কম নিবেনা, অতিরিক্ত ২ জনের জন্য সবার মাথাপিছু নৌকা ভাড়া বেড়ে যাবে! তাই গ্রুপের মেম্বার সংখ্যা নৌকা হিসেব করেই নির্ধারণ করবেন!

নাফাকুমের উদ্দেশ্যে রেমাক্রি থেকে খুব ভোরে বের হবেন, যত তাড়াতাড়ি ফিরে আসা যায়! হাটার সময় খুব খেয়াল করে হাটবেন, অন্যমনস্ক হয়ে বা অন্য দিকে তাকিয়ে হাটবেন কখনোই; পা পিছলে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা খুবই বেশি! আমার গ্রুপের অনেকেই একাধিকবার আছাড় খেয়েছে, আমি নিজেও একবার পড়ে গেছি!

ট্রেকিং এর পথটা অতটা কঠিন মনে হয়নি, যে কেউ যেতে পারবেন, সেদিন বেশ কয়েকটা মেয়েও চোখে পড়লো যারা নাফাকুমে ঘুরতে গেছে! সুতরাং ছেলে হয়ে নাফাকুম যেতে ভয় পাওয়া মানে লজ্জার বিষয়!

নিরাপত্তা নিয়ে কোন সংশয় নেই, নিশ্চিন্তে যেতে পারেন!

খেয়াল রাখবেন আপনার এবং আপনার সাথে থাকা ভ্রমণসঙ্গীদের দ্বারা যেন পরিবেশের কোন ক্ষতি না হয়! খালি বোতল/প্যাকেট, সিগারেটের ফিল্টার ফেলে আসবেন না, সাথে করে নিয়ে এসে উপযুক্ত জায়গায় ফেলবেন!

স্থানীয় আদিবাসীদের সাথে সুন্দর ও মার্জিত আচরণ করুন, সম্ভব হলে ওদের সাথে ৫-১০ মিনিট আড্ডা দিন!

আমার মনে হয় কি, প্রত্যেকের অন্তত একবারের জন্য হলেও নাফাকুম যাওয়া দরকার! বান্দরবনের আনাচেকানাচে যে কি পরিমাণ সৌন্দর্য ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে তা গহীনে না গেলে বুঝে আসবেনা! আমিয়াকুম-সাতভাইকুম যাওয়া কিছুটা কঠিন, সেখানে না গেলেও অন্তত একটাবার নাফাকুম থেকে ঘুরে আসুন!

আপনার ঘুরবাজ বন্ধুটাকে আজকেই নক করুন, প্ল্যান করে ফেলুন নাফাকুম ঘুরে আসার!

প্রথমবারের মত নাফাকুম দেখে আসলাম, নেক্সট টার্গেট আমিয়াকুম-সাতভাইকুম

Post Copied From:Sujauddin F. Sohan‎>Travelers of Bangladesh (ToB)

Share:

Leave a Comment