কর্ণফুলীর স্বচ্ছ পানিতে কায়াকিং এবং রাঙামাটি ভ্রমণ

রাত ৮ টায় আসতে বলছে। সারে ৮ টা বাজে বাসের খবর নাই। পৌনে নয়টায় বাস আসলো। কল্যাণপুর থেকে মিনি বাসে সায়দাবাদ যেতে হবে তারপর রাত ১১ টার শ্যামলির বাসে করে সরাসরি কাপ্তাই। ছোটো বেলায় কাপ্তাইকে চিনতাম জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র হিসাবে। কর্নফুলি নদীতে বাধ দিয়ে এই জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি নির্মান করা হয়েছে। সকাল ৮ টা যখন বাজে তখন বড়ইছরি পার হচ্ছি। বড়ইছরি মোর থেকেই মুলত বাস গুলো দুই দিকে যায়। একদিকে কাপ্তাই অন্যদিকে রাঙ্গামাটি। কাপ্তাই এর দিকে ১ কিলোমিটার এগুলেই জুম রেস্তোরাঁ। তার পাশেই কাপ্তাই কায়াক ক্লাব। জুম যতটা আড়ম্বরপূর্ণ, কায়াক ক্লাব ততটাই সাধারন। আমার মত সাধারন মানুষের ভালো লাগবে। একটা ওয়াসরুম আছে, পরিষ্কার। কাপ্তাই পৌছানোর আগেই কায়াক ক্লাবের সামনে নেমে যাওয়া যায়। তবে আমি নামি কাপ্তাইতে। অইখানেই নাস্তা করে সিএনজি তে চলে আসি কায়াক ক্লাবে। কাপ্তাইতে সিএনজি ছাড়া কিছুই পাবেন না। এসে দেখি আমরাই প্রথম। লাল রঙের সুন্দর একটা কায়াক বেছে নিলাম।দুজই সাতার জানি তবুও লাইফ জ্যাকেট বাধ্যতামূলক। কমলা রঙের জ্যাকেট পরে উঠে পরলাম বৈঠা হাতে। আমার সহধর্মিণী সামনে আমি পিছনে। ইন্সট্রাক্টর শিখিয়ে দিল চালানোর সময় সিনক্রোনাইজেসন করে চালাতে হবে। যাইহোক যাত্রা শুরু হলো। এক ঘন্টা কর্নফুলির সচ্ছ পানিতে কায়াক চালিয়ে ফিরে এলাম ঘাটে। জায়গা এবং পরিবেশ অসাধারণ। কায়াক ভাড়া প্রতি ঘন্টা ২৫০ টাকা কিন্তু ছাত্র/ছাত্রী হলে ২০০ টাকা। কায়াক শেষ করে যখন রাস্তায় ফিরে আসলাম তখন সারে ১০ টা বাজে। দিনের অনেকটা সময় বাকি, কি করবো ভাবতেছিলাম। রাঙ্গামাটি যাব প্ল্যানে ছিল না। হাতে যথেষ্ট সময় থাকার কারনে সুযোগটা মিস করতে চাইলাম না। সিএনজি ড্রাইভারকে জিজ্ঞাস করলাম রাঙ্গামাটি কিভাবে যাওয়া যায়। বলল দুই ভাবে।
এক বরইছরি দিয়ে, দুই নুতুন একটা রাস্তা হইসে লেকের পাশ দিয়ে আসামবস্তি পর্যন্ত ঐটা দিয়ে। ১৯ কিলোমিটার, ভাড়া ৪০০ টাকা সিএঞ্জিতে। তবে রাস্তার দৃশ্য দেখলে ভাড়া উসুল হয়ে যাবে। পাহাড়ের উপর দিয়ে একেবেকে চলে গেছে, পুরো রাস্তায় কাপ্তাই লেক আপনাকে সঙ্গ দিবে। আসামবস্তি পৌছাই ১১:৩০ এর দিকে। ঐখান থেকে আরেকটা সিএনজি নিয়ে চলে গেলাম ঐতিহ্যবাহী ঝুলন্ত সেতু দেখতে। ছোটবেলায় বাংলা ছিনেমায় গানের দৃশে অনেক দেখেছি, এবার বাস্তবে দেখলাম। দেখে স্বাদ মিটে গেছে চিরতরে। মানুষ আর মানুষ। কাপ্তাই যতটা ফাকা ঠিক ততটাই ভর্তি রাঙ্গামাটি। ছিনেমাতেই ভাল লাগছে বাস্তবে লাগে নাই। বেশি মানুষ তার কারন হতে পারে। তাড়াতাড়ি ঐখান থেকে বের হয়ে চলে যাই রাঙ্গামাটি শহরে। নামাজ পড়ে দুপুরের খাবার খেয়ে আবার কাপ্তাইতে আসার জন্য যাত্রা শুরু করি। বাসের টিকেট কাপ্তাইতে করা ছিল তাই যাইতে হইসে। যাইহোক এইবার চিন্তা করলাম অন্য রাস্তা দিয়ে যাব। রাঙ্গামাটি থেকে লোকাল বাস যায় চট্টগ্রাম ও খাগড়াছড়ির উদ্দেশে। আমারা বরইছরি নামব। ১২০ টাকা প্রতিজন ভাড়া দিয়ে উঠে পরলাম বাসে। এত খারাপ বাস আমি জীবনে দেখি নাই। ঢাকার ৮ নাম্বার বাস ঐটা থেকে অনেক ভাল। দুই ঘণ্টার জার্নি ছিল ভয়াবহ। বাস থেকে নেমে জুম রেস্টুরেন্টে যাই। দেখার তেমন কিছু নাই, সময় কাটানোর জন্য গিয়েছিলাম। সাড়ে চারটার দিকে আবার সিএনজি নিয়ে যাই কাপ্তাই নৌকা ঘাটে। ছোট একটা নৌকা নিয়ে ঘুরে বেড়াই কাপ্তাই লেকে। সন্ধ্যার পরপরই নৌকা থেকে নেমে চলে আসি বাস কাউন্টারে। সাড়ে আটায় বাস।
Share:

Leave a Comment