নাটোর ঘুরতে যেতে হলে যেভাবে যাবেন ও বিভিন্ন তথ্যবলী

জীবননান্দ দাশের নাটোরের বনলতা সেনকে মানুষ জানে খুব ভাল ভাবে। ঐতিহ্যের জৌলুস, অতীতের রাজ-রানীদের স্মৃতি, প্রাচীনত্ব আর ইতিহাসের সোনালী দিনগুলোকে বুকে ধারণ করে নীরব সাক্ষী হিসাবে দাঁড়িয়ে আছে নাটোরের বিভিন্ন প্রত্নতত্ব নিদর্শন। তার মধ্যে দিঘাপতিয়া রাজবাড়ি, রাণী ভবানী রাজবাড়ী, দয়ারামপুর রাজবাড়ি, বনপাড়া লুর্দের রাণী মা মারিয়া ধর্মপল্লী, বোর্ণী মারীয়াবাদ ধর্মপল্লী বেশ জনপ্রিয় তাছাড়া শহীদ সাগর, চলন বিল, যুব পার্ক, হালতি বিল, লালপুরের পদ্মার চর, চলনবিল জাদুঘরেও বেশ পর্যটকের সমাগম হয়।নাটোর সদর উপজেলায় অবস্থিত একটি রাজবাড়ি, যা নাটোর রাজবংশের একটি স্মৃতিচিহ্ন।

কিভাবে যাওয়া যায়ঃ
নাটোর শহরের যে কোন স্থান থেকে সরাসরি রিক্সা বা অটোরিক্সা যোগে যাওয়া যায়।যাতায়াতের জন্য রিক্সা বা অটোরিক্সা রিজার্ভ না নেয়াই ভাল। কেননা নাটোর শহরের সকল স্থানেই স্থানীয় যানবাহন পর্যাপ্ত চলাচল করে।

দিঘাপাতিয়া_রাজবাড়িবা উত্তরা গণভবন নাটোর শহর থেকে প্রায় আড়াই কিলোমিটার দূরে এককালের দিঘাপাতিয়া মহারাজাদের বাসস্থান এবং বর্তমান উত্তরা গণভবন (Uttara Ganabhaban) বা উত্তরাঞ্চলের গভর্মেন্ট হাউস বা প্রধাণমন্ত্রীর বাসভবন। বর্তমানে এটি দর্শনার্থীদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থায় জেলাপ্রশাসকের কার্যালয়ের অণুমতি সাপেক্ষে উন্মুক্ত রয়েছে।

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় হচ্ছে বিল চলন বিল (Chalan Bill)। এই বিল উত্তরবঙ্গের নাটোর, সিরাজগঞ্জ এবং পাবনা জেলারমধ্যে অবস্থিত। দেশের সর্ববৃহৎ এই বিলটি বিভিন্ন খাল দ্বারা সংযুক্ত অনেকগুলো ছোট ছোট বিলের সমষ্টি নিয়ে গঠিত।ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশে কোন ঋতুতেই হতাশ করবে না এই বিল। শীতেকালে অতিথি পাখির দেখা, বসন্তে চারিদিকে সবুজ গ্রাম আর সুনীল আকাশের প্রতিবিম্ব, বর্ষায় আকাশ আর বিল যেন মিলে মিশে একাকার, শরতে বিলের পার ধরে কাশবন। তবে ভরা বর্ষাতেই যৌবনপ্রাপ্ত ও অপরুপ সাজে সজ্জিত হয় চলন বিল। বর্ষায় একাকার হয়ে যায় প্রায় ৩৬৮ বর্গ কিলোমিটার এলাকা। তখন দর্শনার্থীর সংখ্যাও থাকে ভরপুর।

কীভাবে যাবেনঃ
ঢাকা থেকে রাজশাহীর গাড়িতে সিরাজগঞ্জ অথবা নাটোরের কাছিকাটা নামবেন। ঢাকার মহাখালী থেকে সৌরভ পরিবহন, এস আই এন্টারপ্রাইজ, গাবতলী থেকে ইউনিক বাস যায়। সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত ভাড়া ১৭০ টাকা। কাছিকাটা নামলে ৮ কি.মি দুরে চাচকৈর বাজার। চাচকৈর বাজার থেকে ৫-৬ কি. মি. দূরে চলনবিলের প্রান্ত ঘেষে খুবজীপুর গ্রামে দেখা মিলবে চলনবিল জাদুঘরের আর চলনবিল জাদুঘরের পরেই পাবেন সেই কাঙ্খিত চলনবিল।

ট্রেনে যেতে হলে কমলাপুর থেকে খুলনাগামী সুন্দরবন এক্সপ্রেস, রাজশাহীগামী সিল্কসিটি এক্সপ্রেস, পদ্মা ও লালমনি এক্সপ্রেস এ উঠতে হবে। নামতে হবে সদানন্দপুর স্টেশনে। এখান থেকে সাত কিলোমিটার দূরে সিরাজগঞ্জ শহর। ভাড়া ১১০-১২৫ টাকা মাত্র।

চলনবিলে ঘুরে বেড়াতে পারেন নৌকায় করে। সাধারণ নৌকা আর ইঞ্জিন নৌকা দুই-ই পাবেন। দরদাম করে ভাড়া ঠিক করে নিতে হবে। সাঁতার না জানলে অবশ্যই লাইফ জ্যাকেট সঙ্গে নেবেন।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নাটোরের নর্থ বেঙ্গল চিনি কারখানায় সংগঠিত গণহত্যার স্মরণে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভ। এটি মূলত একটি পুকুরকে কেন্দ্র করে, যার পানি ১৯৭১ সালের ৫ মে জমাট বেঁধে লাল হয়েছিল শহীদদের রক্তে।

কিভাবে যাবেনঃ
নাটোর সদর থেকে বাস ও অটোরিক্সা যোগে যাওয়া যায়।

থাকবেন কোথায় নাটোরে?

সরকারি আবাসনঃ
১. সার্কিট হাউস নাটোর
২. নাটোর সদর ডাক বাংলো
৩. গুরুদাসপুর ডাকবাংলো
৪. নলডাঙ্গা, ডাকবাংলো
৫. বাগাতীপাড়া ডাকবাংলো
৬. বনপাড়া ডাকবাংলো
৭. লালপুর ডাকবাংলো

বেসরকারি আবাসনঃ
১. হোটেল ভিআইপি
২. হোটেল মিল্লাত
৩. হোটেল রাজ
৪. হোটেল রুখসানা
৫. নাটোর বোর্ডিং
৬. নাটোর সুগার মিলস গেস্টহাউজ

আবাসন টিপসঃ
সরকারি গেস্ট হাউজ বেছে নিন থাকার জন্য বাংলাদেশের প্রতিটি জেলায় রয়েছে সরকারি ডাকবাংলো, গেস্ট হাউজ, রেস্ট হাউজ, সার্কিট হাউজ এবং আরো বিভিন্ন রকমের সরকারি থাকার সুবিধা। সম্ভব হলে এরকম জায়গাগুলোকে বেছে নিন থাকার জায়গা হিসেবে। পরিবেশও ভালো পাবেন এবং থাকা-খাওয়ার খরচও অবিশ্বাস্য রকমের কম!

খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থাঃ
১.পরচুর হোটেল
২.নয়ন হোটেলে
৩. ঘরোয়া রেস্টুরেন্ট
৪.সিসিলি চাইনিজ রেস্টুরেন্ট

স্থানীয় বিশেষ খাবারঃ
নাটোরের ঐতিহ্যবাহী খাবারের মধ্যে কাঁচাগোল্লা অন্যতম। উত্তর বংগের যাত্রীদের কাছে এইটা অতি পরিচিত জিনিস। সিরাজগঞ্জ, নাটোরে যাত্রাবিরতির সময় হকারদের মনা ভোলা কথায় কাঁচা গোল্লা বাসায় নিয়ে যারা প্রতারিত হয়েছেন তারা নাটোরে গেলে আসল কাঁচা গোল্লার স্বাদ নিতে ভুলবেন না। আসল এবং আদি কাঁচা গোল্লা পাবেন শহরের কালী মন্দির সংলগ্ন দ্বারিক ভান্ডার মিস্টান্ন ভান্ডারে।

খাবার টিপসঃ
আপনি যে হোটেলে উঠেছেন সে হোটেলের খাবারের মান ভালো না হলেও দাম যে ভালোই হবে এ ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। তাই হোটেলে খাওয়া এড়িয়ে চলুন। সবসময় নাম করা রেস্তোরাঁর খাবার খেতে হবে এমন কোন কথা নেই। নতুন নতুন খাবারের স্বাদ নিন, স্থানীয় খাবারের দোকানে চলে যান। এসব জায়গায় পর্যটক হিসেবে আলাদা পয়সা গুণতে হবে না আপনাকে।

Share:

Leave a Comment