পাথারিয়া পাহাড়ে-মহামায়া টিলা ভ্রমণ
পাথাড়িয়া পাহাড়ের এই মায়াময় টিলা দেখে আমাদের চোখে লাগে অতি বিষ্ময়কর সৌন্দর্য্য। মায়ময় পবিত্র সুন্দর।
সিলেটের মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা থেকে আমরা মটর সাইকেলে চেপে রওয়ানা করেছি। সঙ্গী জুলফিকার তাজুল, আশফাক অনিক, কামরান এবং আমি। পিছ ডালা পথে মটরসাইকেল এগিয়ে চলেছে। দক্ষিণভাগ পৌছার পর আমরা বামের পথ ধরি। কলাজুরা পৌছার পর মিলে দুই রাস্তার মোড়। একটি গেছে পূর্ব দিকে অন্যটি ডানে। আমরা ডানে চলি। আকাবাকা মসৃণ রাস্তা। কলাজুরা স্কুল থেকে কিছুটা এগোলেই দু দিকেই সবুজের মহামিলন। সারিবদ্ধ আগর বৃক্ষ দেখে সহজেই প্রাণ জুড়িয়ে যায়। সাইক্লিস্ট এবং মটর বাইকারদের জন্য এ যেন স্বর্গ- সড়ক।
আমাদের বাইক- ইয়াত্রা কিন্তু থেমে নেই। চলছিতো চলছি আর অবাক হয়ে দেখছি সবুজ বৃক্ষ পত্রের আনন্দ সম্মিলন।
বড় ভালো লাগে আমাদের। চলতে চলতে একটি ভালো জায়গা পেয়ে যাই। পূর্ব দিকে পাথারিয়া পাহাড়, আর পাহাড়ের ডানে নান্দনিক টিলাবাড়ি, বাড়ি গুলা সবুজ বৃক্ষে মাখামাখি। আমাদের মন ভালো হয়ে যায়। হাসি আনন্দে ছবি তুলে কিছুটা সময় কাটাই। জুলফিকর তাজুল তার পকেট থেকে বের করে আমসত্ত ।
প্রকৃতির এই নিস্বর্গ নিকেতন দেখে বন্ধুদের মুখ থেকে বের হয়ে আসে ওয়াও, বড়ই সৌন্দর্য্য, সুবহানাল্লাহ।
এবার মেলে জামকান্দি বস্তি বাজার। তার পর দুরগাপুর বাজার। রাস্ত একটি গেছে পূর্ব দিকে অন্যটি সোজা দক্ষিণে। পূর্বের রাস্তা ধরলে পাবেন পেট্রোবাংলা গ্যাস ক্ষেত্র। আমরা দক্ষিণে চলি। কিছুটা এগোলে দৃষ্টি নন্দন একটি বাড়ি। এটা কুটু বলাই মিয়ার বাড়ি। বাড়ি ছেড়ে সামনের পথ এগোলে আমরা ফের একটুখানি জিরিয়ে নিই। এই জায়গাটা কাশ্মিরের আরু ভেলির মতো মনকাড়া হাসিন সুন্দর। আপনি সুনামগঞ্জের তাহিরপুর বা নওগার পত্নিতলা, ঢাকার জিগাতলা কিংবা চট্রগ্রামের সাতকানিয়া থেকে আসেন। তবে লিখে রাখুন এই পর্যন্ত দেখলে আপনার ট্যুর উসুল হয়ে যাবে। আর যদি ফটোগ্রাফার হোন তবে জেনে রাখুন বন্ধদের চমকে দেওয়ার মতো কিছু ছবি পাবেন।
ভালো আলাপ জমে স্থানীয় কিছু বন্ধুদের সঙ্গে। তারা পাহাড়ের অনেক গল্প শুনালেন। এদের একজন দুবাই প্রবাসি। কুটু বলাই সাহেবের ছেলে। তিনি মেহমান নওয়াজি, একটুখানি আটা আদর করবার জন্য জোর জবরদস্তি করলেন। সময় সল্পতার কথা বলে, থ্যাংকস গিভিং জানিয়ে, শেইক হ্যান্ড করে বিধায় নিলাম। এই অঞ্চলের মানুষ বড় দিলদার। নরম-সরম খোশ ব্যবহার। যার সঙ্গে আলাপ করেছি, তিনি তার বাড়িতে যেতে নিমন্ত্রন জানিয়েছেন। আর প্রতিটি বাড়ি নানান মৌসুমি ফলগাছে ভরপুর। কাঠাল আর কলা সব বাড়িতে পাবেন। এখন শুধু পূর্ব দিকে দেখছি। কারণ পাথারিয়া পাহাড় সবুজ শাড়ির আছল বিছিয়ে রেখেছে, চোখ ফেরানো দায়। তার পর এভাবে দেখতে দেখতে দেখা পেয়ে যাই-মহামায়া টিলা। এর সৌন্দর্য্য সব হিসাব পাল্টে দেয়।
আমরা মটর সাইকেল থেকে নামি। খোলামেলা টেরাসের মতো জায়গা। একটা ছোট পাহাড়ি প্রবাহমান ছড়া পাড়ি দিই। এর নাম শুকনা ছড়া। এর পর ওয়াও ওয়াও শব্দ করে শুধু দৌড় আর দৌড়। টিলার উপরে উটে দেখি মনোহরণ বিষ্ময়কর রূলপ। আহা কি ভাবে যে এর বর্ণনা দিই।
টিলাকে স্থানীয়রা গরছা টিলা নামে ডাকেন। টিলা জুড়ে সবুজ গাসের ইরানি গালিচা। পূর্বে সেগুন বাগান, তারপর গহিন বন। শুধুই হারি রং -সবুজ সুন্দর। পশ্চিমে, উত্তরে ধানি জমি,।তারপর দুরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে টিলা বাড়ি। দক্ষিণে শিলুয়া চা-বাগান, তাও ঘন সবুজ। উপরে নীল আকাশ। সীমাহীন অপার মুগ্ধতায় আমরা তব্দা মেরে বসে পড়ি। সবুজ ঘাসে শুয়ে শুয়ে গড়াগড়ি খাই। তার পর খুশিতে দুই হাত, দুই পা তুলে আকাশ পানে ফাল দিই। অনেকক্ষণ পাথারিয়া পাহাড়ের- মাহামায়া টিলায় আনন্দ সময় কাটিয়ে রওয়ানা দিই কচুরগুলের উদ্দেশে।
এখানে প্রচুর কমলার আবাদ হয়। তার পর লাঠি টিলা, যেখানে এখন ও দেখা যায় বন মোরগ, কিং কোবরা সাপ আরো অনেক ওয়াইল্ড লাইফ। সন্ধ্যা হয়ে এসেছে, আকাশ থেকে নেমেছে ঝুম বৃষ্টি। আমরা বৃষ্টি স্নানে জুড়িতে আসি। এখানে আছে সুভাষ বাবুর মিষ্টির দোকান। রসগোল্লা বুন্দিয়া গরম পরটা খেয়ে কামিনি গঞ্জ বাজারে যাই সিরাজের দোকানের বিখ্যাত চা খেতে। তার পর বড়লেখার উদ্দেশে ফেরা।
##যে ভাবে যাবেন:
সিলেট ঢাকা চট্রগ্রাম যে কোন জায়গা থেকে বড়লেখা আসুন। ঢাকা থেকে শ্যামলি এবং এনা বাস পাবেন। ভাড়া পাচঁশত টাকা। ট্রেন ও পাবেন উপবন, জয়ন্তিকা, পারাবত। বড়লেখা এসে সিএনজি রিজার্ভ করে সোজা চলে আসুন নাসিরাবাদ বাজার, যে কাউকে বললে দেখিয়ে দিবে শুকনা ছড়ার রাস্তা।
Source: Shahin Ahmed <Travelers of Bangladesh (ToB)