বাশঁখালী চা-বাগান ও সমুদ্র সৈকত, চট্টগ্রাম ভ্রমণ

প্রায় সাড়ে তিন হাজার একর জায়গা জুড়ে স্তরে স্তরে সাজানো পুকুরিয়া চা-বাগান শত বছরের ঐতিহ্যের অংশ। ক্লোন চায়ের জন্যে এই বাগানে উৎপাদিত চায়ের খ্যাতি দেশ ছাড়িয়ে বিশ্বব্যাপী।বৈচিত্র্যময় পাহাড়ী টিলা গুলো দূর থেকে দেখলে অনেকটা ‘সবুজ টুপি’ ন্যায়। ৩ লক্ষ ২৫ হাজার কেজি পাতা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে এগিয়ে চলা এই চা-বাগানে চা-পাতা প্রক্রিয়াজাত করণ করার দৃশ্যটিও অনুমতি নেয়া সাপেক্ষে দেখতে পারেন ভ্রমনকারীরা। তবে গহীন জঙ্গলে ঢুকতে গেলে একটু সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত, ওখানে বন্য হাতীর আনাগোনা।

সকালটি চা বাগানের সবুজাভ আথিতিয়তা নিয়ে বিস্মিত হয়ে আসতে পারেন বাঁশখালীর উপকূল জুড়ে ৩৭ কিলোমিটার বিস্তৃত সমুদ্র সৈকত টি অবলোকন করে। উপভোগ করতে পারবেন সমুদ্রের নয়নাভিরাম সৌন্দর্য। বিস্তীর্ণ জলরাশি ও সমুদ্রের বিশালতা ভ্রমণে ভিন্ন মাত্রা যোগ করবে। বেলাভুমিতে পদার্পন করতে লাল গালিচা সংবর্ধনা জানাবে লাল কাঁকড়ায় “বাঁশখালী সমুদ্র সৈকত”

প্রেমাশিয়া, কদমরসূল, খানখানাবাদ, বাহারছড়া, রত্নপুর, কাথারিয়া সরল ও গন্ডামারা সহ সাত-আটটি পয়েন্ট সেজে আছে আপন আপন রূপ মাধুর্যে। প্রেমাশিয়া পয়েন্টে সাঙ্গু নদীর মোহনা ও সুসজ্জিত বেড়ি বাঁধ। কদমরসূল ও খানখানাবাদ পয়েন্টে বেড়ি বাঁধ, ঝাউ গাছ ও মাছ ধরার বোট। বাহারছড়া পয়েন্টে বেলাভুমি, লাল কাঁকড়া ও সমুদ্রের জলরাশি। আর কাথরিয়া ও রত্নপুর পয়েন্টে সুবিশাল মাছ চাষের ঘের, সারিসারি ঝাউগাছ ও প্যারাগাছ। বিস্তৃত ঘাস সমাহিত মাঠ যেন সবুজ গালিচা। পুরা সমুদ্র সৈকত জুড়ে সাগর জলে ভেসে বেড়ানো মাছ ধরার নৌকা/ট্রলার ও জেলেদের মাছ ধরার জীবনসংগ্রামের চিত্র। মৌসুমে জেলেদের জালে ধরা পড়ে ঝাঁকে ঝাঁকে রূপালী ইলিশ। বিকেল হলে এখানে পর্যটকের ঢল নামে। ঝাউবাগানের শাঁ শাঁ দক্ষিণা হাওয়ায় সূর্যাস্ত দেখতে দেখতে সারা বিকেল কাটিয়ে দিতে পারেন। বালুকাবেলায় একেঁ দিতে পারেন একটি বিকেল কাটানোর শিল্পিত চিহ্ন। এই সমুদ্র সৈকতটি প্রচারের আলো ও আবাসন ব্যবস্থা করা গেলে কোনাংশে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত থেকে পিছিয়ে থাকবেনা।

সকালটা চা বাগানে আর বিকেলটা সমুদ্রকে সপে দিয়ে প্রকৃতির সৌন্দর্যের মুগ্ধতা সম্বল করে ফেরা যাবে নিজ নিজ গন্তব্যে।

ঢাকা থেকে কিভাবে যাবেনঃ
ঢাকা থেকে যেকোন পথে চট্টগ্রাম হয়ে বাঁশখালী যাওয়া যায়।বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল ও শাহ আমানত সেতু (স্থানীয় ভাষার নতুন ব্রীজ) থেকে বাঁশখালী স্পেশাল সার্ভিস ও সুপার সার্ভিস নামে দুটি বাস ছেড়ে যাই প্রতি ২০ মিনিট পর পর। মাত্র ৬০-৮০ টাকা ভাড়ায় বাঁশখালী ঘন্টা দেড়েকের দুরত্বে। তাছাড়া নতুন ব্রীজ থেকে সিএনজি যোগে সরাসরি সাঙ্গু নদী পার হয়ে বাশঁখালীর চানঁপুরে। সিএনজি ভাড়া জনপ্রতি ৪০-৫০ টাকা। চানঁপুর থেকে পুকুরিয়া চা-বাগান, ভাড়া জনপ্রতি ২৫-৩০ টাকা। চা-বাগান থেকে পুনরায় চাঁনপুর এসে গুনাগরি/কালিপুর ছলিয়ার বাপের পুল/বৈলছড়ি হয়ে সী-বীচে। বৈলছড়ি হয়ে কাথরিয়া পয়েন্ট,ছলিয়ার বাপের পুল বাহারছড়া পয়েন্ট আর গুনাগরি হয়ে খানখানাবাদ ও কদমরসূল পয়েন্ট।
মাইক্রোবাস ভাড়া নিয়ে নিতে পারেন সারাদিনের চুক্তিতে। অবকাঠামো সেভাবে গড়ে উঠেনি। দুই-একটা রিসোর্ট নিমার্ণাধীন। তবে সব স্পট গুলো প্রায় কাছাকাছি, এক দিনেই ঘুরে ব্যাক করা যাবে।

প্রচারের ব্যবস্থা, যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নতি, মান সম্পন্ন স্থায়ী হোটেল-মোটেল নির্মাণ, সামান্য সংস্কারে বদলে দিতে পারে বাশঁখালী চা-বাগান ও সমুদ্র সৈকতকে। গড়ে উঠতে পারে কক্সবাজারের মত আরেকটি পর্যটন এলাকা। প্রয়োজন সরকারের পর্যটন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সুদৃষ্টি ও আন্তরিকতার। তবে, কিছুটা আশাবাদী বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন যথেষ্ট সাড়া পাওয়াই।

.বিঃ দ্রঃ- সঙ্গে যা নিয়ে যাবেন তা ফিরিয়ে আনতে ভুলবেন না। যত্রতত্র পলিথিন, খাবার প্যাকেট ও সিগারেটের ফিল্টার ফেলবেন না। আমরা যেমন দেখছি, আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের কাছেও যেন তেমনই উপস্থাপন করতে পারি। আসুন চারপাশ পরিচ্ছন্ন রাখি, নির্মল দৃশ্যগুলো মুগ্ধতা ছড়িয়ে পড়ুক।

Source: Ãráfàt <Travellers Of Bangladesh

 

Share:

Leave a Comment