মাগুরার পাঁচুড়িয়া গ্রাম মধুমতি নদী ভ্রমণ

মাগুরা জেলার মহম্মদপুর উপজেলার পাঁচুড়িয়া গ্রাম এবং তার পাশ দিয়ে বয়ে গেছে মধুমতি নদী। এই গ্রামে বাস করতেন নদের চাঁদ, যার জন্মের আগেই বাবা গদাধর পদ্মায় মাছ ধরতে গিয়ে মারা যান। তাই বড় হওয়ার পরও নদের চাঁদের মা চাইতেন না বাবার মত ছেলে মাছ ধরুক। এদিকে মাছ ধরা তো পরের কথা, নদের চাঁদের সংসার ধর্মের দিকেই কোন মন ছিল না। একদিন রাত গভীর হলে কাউকে কিছু না জানিয়ে চলে যান তিনি। ফেরেন যখন, ততদিনে পেরিয়ে গেছে দশটি বছর। ছেলে তখনও মা’কে বলে না এতোদিন কোথায় ছিল!

মা ছেলেকে ঘরে আটকে ফেলার জন্য বিয়ে দিয়ে দেন।

নদের চাঁদের বধুর নাম ছিল সরলা। অবশেষে একদিন স্ত্রী সরলার কাছে সব খুলে বলেন তিনি। জানান, এই দশ বছর আসামের কামরূপ ছিলেন এবং এ সময়ে জাদুবিদ্যা শিখেছেন এক নারীর কাছে। জাদুবিদ্যার বলে তিনি কুমির হতে পারেন। সরলা আবদার করেন নদের চাঁদ যেন কুমির হয়ে দেখান। স্ত্রীর মনের ইচ্ছা পূরণ করার জন্য গভীর রাতে দুটি পাত্রে পানি নিয়ে তাতে মন্ত্র পড়ে ফু দিয়ে সরলাকে জানান, এক পাত্রের পানি গায়ে ছিটিয়ে দিলে তিনি কুমির হয়ে যাবেন, আরেক পাত্রের পানি গায়ে ছিটালে আবার মানুষ রূপে ফিরবেন।

নদের চাঁদের কথা মত সরলা প্রথমে এক পাত্রের পানি গায়ে ছিটিয়ে দিলে নদ কুমির হয়ে যান। চোখের সামনে সত্যি কুমির দেখে সরলা ভয়ে দৌড়ে পালানোর সময় পায়ে লেগে অপর পাত্রের পানি মাটিতে পড়ে যায়। নদের চাঁদের আবার মানুষ হওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যায়।

এর তিনদিন পর কুমির নদের চাঁদ পাশের মধুমতি নদীতে নেমে যান। কিছুদিনের মাঝে নদের চাঁদের গুরু যার কাছে নদ জাদু শিখেছিলেন, তাঁকে আনা হয় এই আশায় যে নদকে আবার মানুষে রূপান্তরিত করা যাবে। গুরু নদীর পাড়ে বসে নদকে ডাকলে নদ ঠিকই আসেন। কিন্তু দেখা যায় তাঁর মুখে ইলিশ মাছ। আহার করে ফেলার কারণে নদকে আর মানুষে রূপান্তর অসম্ভব বলে জানান গুরু।

এরপর থেকে নদের চাঁদের মা নদীর পারে বসে থাকতেন। নদকে ডাকলেই চলে আসতেন তিনি। মা খাবার দিতেন। খেয়ে আবার ফিরে যেতেন।

এভাবেই চলছিল। কিছুদিন পর একদল বণিক জাহাজে করে যাওয়ার সময় চরে বিরাট একটা কুমির দেখে এবং সেটি মেরে ফেলে। মেরে ফেলা সেই কুমিরটিই ছিল নদের চাঁদ।

আমার জীবনের লক্ষ্য ভ্রমণ করে বেড়ানো। এই ভ্রমণের উদ্দেশ্যেই গিয়েছিলাম মাগুরায়। থেকেছিলাম পরিচিত ছোটভাই ও কবি সারোক শিকদারের বাড়িতে। ওর বাড়ির ঠিক পাশেই মধুমতি নদী। ঘরের জানালা খুললেই নদী দেখা যায়। অসম্ভব স্বচ্ছ এবং গভীর এই নদীর প্রেমে পড়ে গিয়েছিলাম। নীল এবং রূপালীর মিশ্রণের আভা দিতে থাকে যেন সবসময়। নদীর পাশ দিয়ে ঘুরতে ঘুরতে কিছুদূর যাওয়ার পর বাঁশ দিয়ে বাধানো একটা ঘাট চোখে পড়তে সারোক জানালো এই সেই নদের চাঁদের ঘাট, যে ঘাট দিয়েই নদ নেমে গিয়েছিলেন এই নদীতে এবং মায়ের ডাকে যেই ঘাটে ফিরে আসতেন।

মাগুরার এই মহম্মদপুর অসম্ভব রহস্যঘেরা এক জায়গা। এর আনাচে কানাচে কত যে মিথ ছড়িয়ে রয়েছে! ঘুরে দেখতে নিঃসন্দেহে ভালো লাগবে ভীষণ।

বিঃদ্রঃ কামরূপের রহস্যের ব্যাপারে নতুন করে তো কিছু বলার নেই। বলা হয় – কামরূপ কামাক্ষ্যা হল হাজার বছরের পুরোনো জাদুটোনা, তন্ত্র-মন্ত্রের দেশ। এই জায়গা নারী শাসিত এবং এর কামাক্ষ্যা মন্দিরে জাদুবিদ্যার চর্চা করা হয়। একসময় এ জায়গায় কেউ গেলে আর ফিরে আসতো না। ভূত প্রেত ডাকিনী-যোগিনী ঘুরে বেড়ায় এর অরণ্যে।

Source:  Jahra Jahan Pearlya

Share:

Leave a Comment