১২,৬৬৭ হাজার রুপি রুট প্লান ( ঢাকা , কলকাতা , আগ্রা ,দিল্লি, মানালী, আম্রিতাসর )
,
ঘুরে আসুন ঢাকা – কলকাতা – আগ্রা – দিল্লি – মানালী – আম্রিতাসর ( পাঞ্জাব ) – কলকাতা – ঢাকা মাত্র ১৮৬ ডলার বা ১২,৬৬৭ হাজার রুপি ( রুট প্লান )
.
কি অবাক হচ্ছেন। ভাবছেন গাজা খুড়ি গল্প মারছি না হয় ফাউল একটা টুরের গল্প শুনাচ্ছি। না ! একটা পরিকল্পিত ভালো বা লাক্সরিয়াস টুরের গল্প বলছি। দালাল বা এজেন্সি বাদ দিয়ে নিজে নিজে ট্যুর করতে শিখুন 🙂 । এবার নিচে পড়তে থাকুন। এই টুর দিতে হলে আপনাকে মিনিমাম ৩ জন হতে হবে এবং সময় লাগবে ১৫ দিন।
.
◄◄▌▌ দিন এক : ঢাকা থেকে বেনাপোল শ্যামলী , গ্রীন লাইন, সোহাগ পরিবহন ৫০০ টাকা বা ৪২০ রুপি। বাংলাদেশ ইমিগ্রেশনে খরছ ৫০ রুপির মত। এবার সোজা চলে আসবেন বনগাঁ রেলওয়ে স্টেশনে খরছ সি এন জি ৩০ রুপি। এখান থেকে শিয়ালদাহ ট্রেনের ভাড়া ২০ রুপি। আপনি সোজা চলে এলেন শিয়ালদহ। প্রথম দিন কলকাতায় থাকবেন না। শিয়ালদহ থেকে রাতের ট্রেন ধরে চলে যাবেন আগ্রা ফোরট রেলওয়ে স্টেশন। ভাড়া নিবে স্লিপার ক্লাস ৫৬৫ রুপি মাত্র। যারা ভাবেন স্লিপার ক্লাস খারাপ তাদের জন্য এক বালটি সমবেদনা। শিয়ালদাহ রেলস্টেশনে এসে এর পিছনের গেটে চলে যাবেন। ওখানে কম দামে ভালো খাবার পাওয়া যায়। ১০০ রুপি দিয়ে ভাত আর মাছ পাবেন আর ৭ রুপির সোডা খাবেন। সোডাটা মিস করবেন না।। অস্থির জিনিস। আল ইন্ডিয়া এয়ারটেল সিম + ১ জিবি কিনবেন ৩০০ রুপি দিয়ে । ভোডা ফোনের কভারেজ কম । এয়ারটেল বেষ্ট
.
দিন ১ এর মোট খরছ ৪২০+৫০+৩০+২০+৫৬৫+৩০+১০০+৭ +৩০০ = ২০৩৩ রুপি
.
◄◄▌▌দিন দুই : ট্রেনে খাবেন আন্ডা বিরিয়ানি। প্রতি প্যাকেট ১০০ রুপি মাত্র, সাথে থাকবে ২ টা ডিম আর ফ্রাইড রাইস । ২ বেলা আন্ডা বিরিয়ানি আর সকালে নাস্তা মিলে খরছ ২৫০ রুপি। আপনার যদি চা খাবার ইচ্ছে থাকে তবে খেয়ে নিন। ১০ রুপি পার কাপ। স্লিপার ক্লাসে আপার টা নিবেন। রাতে শান্তির ঘুম আর দিনে ট্রেনের জানালা দিয়ে ভারতবর্ষ কে দেখুন। আপনি এসি কামড়ায় গেলে হয়তবা আরাম বেশী পাবেন বাট ভারতবর্ষ তো আর দেখতে পারবেন না ঠিকমত। যারা ট্রেন ভ্রমন করেছেন তারা জানেন ট্রেনের দরজায় দাঁড়িয়ে বাহিরের জগত দেখার মজাটা কিরকমের।
.
দিন ২ এর মোট খরছ: ২৫০+২০= ২৭০ রুপি
.
◄◄▌▌দিন তিন: সকাল বেলা চলে আসবেন আগ্রা ফোরট স্টাশনে। সকালে ট্রেনেই নাস্তা সেরে নিবেন। খরছ হবে ৫০ রুপি। আমরা ছিলাম স্টেশনের পাশেই অজয় ইন্টান্যাশনালে। ১ রাতের জন্য ভাড়া ৯৫০ রুপি বা পার পারসন হিসেবে ৩১৭ রুপি। এবার হোটেলে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিন। হোটেল থেকে বেড়িয়ে হাতের ডান দিকে একটু হাটুন। ২ মিনিট হাটলেই জামা মসজিদ পাবেন । মসজিদ এর সাথে সব মুসলিম খাবারের হোটেল পাবেন। এক প্লেট কলিজা ৪০ রুপি আর তন্দুররুটি ৫ রুপি। ৩ টে খেলেই পেট ভড়ে যাবে। খাওয়া শেষ করে মোবাইলের জিপিএস অন করুন এবং বিজালি ঘর ক্রসিং ট্রাক করুন । ৫ মিনিটের হাটাপথ বিজালি ঘর ক্রসিং মোড়ে চলে আসুন। এখান থেকে তাজমহল গামী সি এন জি পাবেন, পার পারসন ১০ রুপি। সোজা গিয়ে নামবেন তাজমহল এর Western Gate। এখানে গিয়ে টিকিট কাটুন। টিকিট কাটার সময় অবশ্যই বলবেন SAARC COUNTRY. টিকিটের মুল্য হয়ে যাবে ৫৩০ রুপি মাত্র। আগে তাজমহল দেখবেন। কেন দেখবেন সেটা পরে বলছি 🙂 । তাজমহল দেখার সময় সব সময় ফরেনার জোন ব্যাবহার করবেন। পুলিশ টিকিট দেখতে চাইলে দেখাবেন। ফরেনার টিকিটে অনেক সুবিধা। বাথরুম ফ্রি, সবার আগে যেতে পারবেন ইত্যাদি। ৩ থেকে ৪ ঘন্টা সময় নিয়ে তাজমহল দেখুন। এর পর একটা অটো নিয়ে চলে আসুন আগ্রা ইমতি উদ দৌউলা । দাম নিবে ৮০ রুপি, পার পারসন রুপি ২৭ রুপি । আসার পথে মিনা বাজার দেখুন। এর পর সোজা চলে জান ইমতি উদ দৌউলা দেখতে। ইমতি উদ দৌউলা এর আশে পাসেই ২ টি স্থাপনা আছে বাট আমার মতে দেখার দরকার নেই খুব একটা সুন্দর না। বিকেল বেলা বেবি তাজ বা ইমতি উদ দৌউলা থেকে যমুনা নদীর উপর সূর্যাস্ত দেখুন। অনেক সুন্দর। ইমতি উদ দৌউলা প্রবেশ ফি ১৫ রুপি ( অবশ্যই SAARC বলে নিবেন ) । এবার আপনি চাইলে হেটে হেটে আপনার হোটেলে আসতে পারেন আবার অটোতেও আসতে পারেন । আগ্রা ফোরট রেলওয়ে স্টেশনে আসতে জন প্রতি ১৫ রুপি পরবে । আমরা হেটে হেটে এসেছি, আগ্রা শহর ঘুরে ঘুরে দেখছি। হোটেলে ফিরার সময় পেট ভরে খেয়ে নিন। পার পারসন খুব বেশি হলে ১০০ রুপি পরবে।
.
দিন ৩ এর আপনার মোট খরছ: ৫০+৩১৭+৪০+১৫+১০+৫৩০+২৭+১৫+ ১৫+১০০ = ১১১৯ রুপি
.
◄◄▌▌দিন চার: সকাল সোজা চলে যান আসুন বিজালি ঘর ক্রসিং । এখান থেকে আগ্রা ক্যান্ট রেলওয়ে স্টেশন ভাড়া ১০ রুপি । আগ্রা ক্যান্ট রেলওয়ে ষ্টেশনের সামনে দাঁড়ালে আপনার হাতের ডান পাশে সেকেন্ড ক্লাস টিকিট ও লাগেজ রুম এবং বা পাশে SL , AC এর টিকিট কাউন্টার । বাম পাশে গিয়ে রাত ১ টার দিল্লী গামী ( হযরত নিজাম উদ্দিন রেলওয়ে স্টেশন , দিল্লী ) ট্রেন্রের টিকিট কাটুন, পার পারসন ১৭০ রুপি । এবার লাগেজ রুমে গিয়ে ২০ রুপি পার পারসন আপনাদের লাগেজ রাখুন (নিরাপদ) । এবার জেনারেল ক্লাসের টিকিট ঘরে গিয়ে ফতেহ পুর সিক্রি যাবার ট্রেনের টিকিট করুন , ভাড়া ১০ রুপি । ফতেহপুর সিক্রি ঢুকার এন্ট্রি ফি ৪০ রুপি ( অবশ্যই SAARC বলে নিবেন ) । ১২ টার মধ্যে আগ্রা ক্যান্টে রেলওয়ে স্টেশনে চলে আসুন , ভাড়া ১০ রুপি ট্রেনে । স্টেশনে নেমেই হালকা কিছু খেয়ে নিন , খরছ ৩০ রুপি । এখান থেকে আগ্রা ফোরট পার পারসন সি এন জি তে ১৫ রুপি । আগ্রা ফোরট এ গিয়েই পুলিশকে আপনার আগের দিনের তাজমহলের টিকিট টি দেখিয়ে বলবেন আমি SAARC এর আওতায় টিকিট কাটব । পার পারসন ৩৫ রুপি , না হলে কিন্তু ৫০০ এর মত দিতে হবে 🙂 । এবার আবার আগ্রা ক্যান্ট রেলওয়ে স্টেশনে আপনার পছন্দ মত সময়ে ফিরুন । এখানে ভারী কিছু খেয়ে নিন , খরছ ১০০ রুপি । এখানে কিছু বিষয় মাথায় রাখুন আগ্রা ক্যান্ট রেলওয়ে স্টেশনে আসার পথের স্টেশনের খুব কাছে রাস্তার দুপাশে হাতের ডান ও বামদিকে অনেক খাবারের দোকান পাবেন । বাম সাইডের গুলো কিন্তু আসলে বার আর ডান সাইডের গুলো ফ্যামেলি নিয়ে বসার জন্য 🙂 । আপনি যখন হযরত নিজাম উদ্দিন রেলওয়ে স্টেশন, দিল্লীতে পৌঁছবেন তখন আনুমানিক রাত ৫ টা বা ৪ টা বেজে যাবে । এবার সোজা এ সি ওয়েটিং রুমে গিয়ে শুয়ে পরুন 🙂
.
দিন 8 এর আপনার মোট খরছঃ১০+১৭০+২০+১০+৪০+১০+৩০+১৫+৩৫+১০০ = ৪৪০ রুপি
.
▌▌◄◄ দিন পাঁচঃ সকাল ৯ টার মধ্যে ঘুম থেকে উঠে পরুন । এবার ফ্রেশ হয়ে মোবাইলের জিপিএস অন করে হুমায়ূনের কবর দেখতে বের হউন । যাবার পথে ছোট একটা বাস স্ট্যান্ড পরবে সেখান থেকে হালকা নাস্তা করে নিন, খরছ পার পারসন ৫০ রুপি । এবার সকালের দিল্লির রুপ দেখতে দেখতে হুমায়ূনের কবর দেখে ফেলুন , এন্টি ফি ৩০ রুপি । এবার একটা সি এন জি নিয়ে রেড ফোরট চলে আসুন ভাড়া পার পারসন ৩৫ রুপি । রেড ফোরট প্রবেশ ফি ৩৫ রুপি। রেড ফোরড দেখে ভারী কিছু খেয়ে নিন , ১০০ রুপিতেই হয়ে যাবে । রেড ফোরট দেখেই ের সামনে অনেক টুরিস্ট বাস পাবেন পার পারসন ১৩০ থেকে ১০০ রুপি নেবে পুরো দিল্লীর সব ঐতিহাসিক স্থাপনা গুলো ঘুরে দেখাবে । বিকেল ৫ টার মধ্যেই কাশ্মীর গেট বাস স্টেশনে চলে আসুন । ষ্টেশনের সাথেই মেট্রো রেল স্টেশন ওখানেই ম্যাক ডোনাল পাবেন । পার পারসন ২৫০ রুপি খরছ করলেই পেট ভরে যাবে । এবার শীতকাল হলে মানলী যাবার জন্য ভলভো এর গরমের দিন হলে সাধারন HRTC গাড়ির টিকিট কাটুন । ভল্ভো ১৪১২ রুপি এর সাধারন ৬৭৫ রুপি । সারাদিনের ক্লান্তিদুর করার জন্য ভল্ভোর টিকিট কাটুন । মানলী যাবার সময় চান্ডিগড় সহ অনেক কিছুই দেখতে থাকুন এর বোনাস হিসেবে রাতের দিল্লী তো থাকছেই । দিল্লী জামা মসজিদের কাছেই মুসলিম কম দামের খাবারের হোটেল আছে ।
.
দিন ৫ এর আপনার মোট খরছঃ ৫০+৩০+৩৫+৩৫ +১০০+১৩০+১৪১২+২৫০ = ২০৪২
.
◄◄▌▌ দিন ছয়ঃ মানলী ঢুকার সাথে সাথেই OYO , MAKE MY TRIPS এর অ্যাপ মোবাইলে নামিয়ে নিন । OYO ভালো , অনেক অফার দেয় । সবাই আপনাকে মল রোডে থাকার পরামর্শ দিবে আমি বলব না । আপনি যদি মানলীর সৌন্দর্য দেখতে চান তবে লজ হাট এরিয়া বা অল্ড মানলী বা সার্কিট হাউজ এরিয়ায় থাকবেন । আমরা লজ হাট এরিয়াজ মানলীর সব থেকে উঁচুতে সুন্দর একটা হোটেলে ছিলাম । OYO অ্যাপ এর মাধ্যেমে ৬৯% ডিস্কাউন্ট পাইছি ( অফ সিজেন ছিল বলে ) । মল রোড বা বাস স্ট্যান্ড থেকে লজ হাট যেতে জেকোন সি এন জি খুব বেশী পার পারসন ২৫ রুপি নেবে । আমাদের হোটেলে ৬৯% ডিস্কাউন্টে মাত্র ২ রাত ৩ দিন + ফ্রি ব্রেকফাস্ট সহ ২৫০০ নিয়ে ছিল । আমাদের ৩০০ রুপি বেশী নিয়েছে কারন আমাদের আর্লি চেক ইন ছিল , সে হিসেবে পার পারসন ৮৩৪ রুপি মাত্র । ভুলেও মল রোডে খাবেন না । লজ হাট এরিয়ায় কিছু নেপালী থাবা পাবেন ১০০ রুপিতে মুরগীর মাংস সহ ভাত একজন খেয়ে শেষ করতে পারবেন না । লজ হাট এরিয়ার কাছেই হাডিম্বা দেবীর মন্দির । মন্দির দেখে সোজা পাহাড় দেখতে চলে যান । এলাকাটা ধুরে ঘুরে দেখুন । অনেক সুন্দর । সারাদিনের খাবার করছ মাত্র ২০০ রুপি । মল রোডে থাকলে ২০০০ এও কিছু করতে পারবেন কিনা আল্লাহ জানে । পাহড়ি এলাকা খুব তাড়াতাড়ি রাত নামে এর সব কিছু ফাকা হয়ে যায় । রাত ৭টার মধ্যে খেয়ে দেখে হোটেলে ফিরে আসুন ।
.
দিন ৬ এর আপনার মোট খরছঃ ২৫+ ৮৩৪+ ২০০ = ১০৫৯ রুপি
.
◄◄▌▌দিন সাতঃ সি এন জি ভাড়া করে শহরের সব গুলো জায়গা বা আপনার পছন্দের বাকি ভ্রমণ প্লেস গুলো দেখে নিন । সবার শেষে দিন জন্য সোলাং ভ্যালি রাখবেন । সারা দিনের সি এন জি ভাড়া ৮০০ রুপি এর বেশী হবেই না, পার পারসন ২৬৭ । ভুলেও ক্যাব নিবেন না । তা হলে ধরা । সারা দিনের খাওয়া খরছ ২০০ রুপি ।
.
দিন ৭ এর আপনার মোট খরছঃ ২৬৭+ ২০০ = ৪৬৭ রুপি
.
◄◄▌▌দিন আটঃ সকালে হোটেল থেকে চেক আউট করে বেড়িয়ে পড়ুন । মল রোডে গিয়ে সোলাং ভ্যালী যাবার জন্য সি এন জি ঠিক করুন । ভাড়া নিবে ৭০০ এর মত সাথে ৩ থেকে ৪ টা স্থানো দেখবেন । জন প্রতি হিসেবে সি এন জি ভাড়া পরবে ২৩৪ রুপি । ৩ টের মধ্যে মল রোডে চলে আসুন । ভারী কিছু খেয়ে নিন । পার পারসন ১০০ হলেই হবে । এবার আম্রিতাসর , পাঞ্জাব যাবার জন্য HRTC এর সাধারন গাড়ির টিকিট কাটুন, পার পারসন ৫৫০ রুপি । গাড়ি ছাড়বে ৩.৩০ মিনিটে । ভুলেও ৬.৩০ এর ভল্ভো গাড়ির টিকিট কাটবেন না । কেন কাটবেন না ? নিচের কথা গুলো পড়লেই বুঝবেন । গাড়ি ছাড়বে ৩.৩০ মিনিটে । গাড়ি যখন পাহাড়ের গা বেয়ে কুলু বাস স্ট্যান্ডের দিকে আসতে থাকবে আপনি দুরের পাহাড় গুলো দেখে অন্য এক জগতে হাড়িয়ে যাবেন । সন্ধ্যার সময় কুলু বাস স্ট্যান্ডে পৌঁছে যাবেন । চারদিকে পাহাড় ঘেরা অসম্ভব সুন্দর কুলু বাস স্ট্যান্ড । এবার সারা রাত পাহাড়ের গায়ে মিট মিট করে জলতে থাকা ঘর বাড়ি দেখতে দেখতে চলে আসবেন আম্রিতাসর , পাঞ্জাব । পথে পার পারসন ১০০ রুপি দিয়ে কিছু খেয়ে নিন।
.
দিন ৮ এর আপনার মোট খরছঃ ২৩৪+১০০+৫৫০+১০০ = ৯৮৪ রুপি
.
◄◄▌▌দিন নয়ঃ বাসে ঘুমাতে ঘুমাতে সকালে আম্রিতাসর বাস স্ট্যান্ডে চলে আসবেন । এখান থেকে ১০ রুপি ভাড়া আম্রিতাসর রেলওয়ে স্টেশন । ওখানে গিয়ে এসি বা ফার্স্ট ক্লাস ওয়েটিং রুমে গিয়ে গোসল সেরে নিন । লাগেজ রুমে ২০ রুপির বিনিময়ে আপনার লাগেজ রাখুন । স্টেশনের সামনে ১৫০ রুপি দিয়ে ভরা পেটে মুরগী বিরিয়ানি খেয়ে নিন । এবার জন প্রতি ১৫ রুপি দিয়ে গোল্ডেন টেম্পেল্ট চলে যান । গোল্ডেন টেম্পেল্টর কাছেই জালিওয়ানওলা বাগ । সব কিছু দেখা শেষ হলে গোল্ডেন টেম্পেল্ট সংলগ্ন মার্কেটে শপিং করুন কারন এখানে অনেক কম দাম জিনিস পত্রের । অবশ্যই লাচ্ছি আর আইস্ক্রিম খাবেন , ২৫+৩০ রুপি । অনেক কম দাম । এবার ৬.৩০ এর মধ্যে ১৫ রুপি পার পারসন আম্রিতাসর রেলওয়ে স্টেশন চলে আসুন । ১ দিনের আম্রিতাসর দেখা শেষ, বর্ডারে যাবার দরকার নেই । অহেতুক এক দিন থাকতে হবে তাহলে । রাত ৬.৩০ মিনিটে আম্রিতাসর , পাঞ্জাব থেকে হাওড়া , কলকাতা ট্রেন । আবার মুরগী বিরিয়ানি বা অন্য কিছু খান , ১৫০ রুপিতেই হয়ে যাবে । আম্রিতাসর টু কলকাতা ট্রেন ভাড়া ৭৬৫ রুপি ।
.
দিন ৯ এর আপনার মোট খরছঃ ১৫+১০+২০+১৫০+ ১৫+১৫০+২৫+৩০ +৭৬৫ = ১১৮০রুপি
.
◄◄▌▌দিন দশ + এগারো + বারোঃ লক্ষ্য করুন আপনি যে পথে গেছেন সে পথে কিন্তু ফিরেন নি । ফিরেছেন অন্য পাশ দিয়ে । ফেরার পথে অনেক নতুন নতুন জায়গা পাবেন । তিন দিনে খাওয়া খরছ ৬০০ রুপির বেশী হবেই না । এই তিনদিন আপনি আম্রিতাসর থেকে কলকাতা আসার ট্রেনে থাকবেন । সো অনলি খাওয়া খরছ
.
দিন ১০ + ১১ +১২ মোট খরছঃ ৬০০ রুপি
.
◄◄▌▌দিন তেরঃ সকালে বা ১০ টার দিকেই হাওড়া স্টেশনে পৌঁছে যাবেন । সেখান থেকে সাব ওয়েতে চলে আসুন । ১২৯/C বাসে করে ৬ রুপি ভাড়া দিয়ে পার্ক স্ট্রিট । আসার পথে হাওড়া ব্রিজ দেখুন । পার্ক স্ট্রিট থেকে ১৫ মিনিট হাটলেই মির্জা গালিব স্ট্রিট । ওখানে এসে ২০০০ এর মধ্যে ২ রাতের জন্য হোটেল পেয়ে যাবেন , সে হিসেবে পার পারসন ৬৬৭ রুপি । মির্জা গালীবেই হোটেল খাজা হাবিবের পাশেই ইসলামিক নামের একটা মুসলিম খাবারের হোটেল আছে , নাম মনে আসছে না । ওখানে ৬০ রুপি দিয়ে গরুর মাংশ আর ২ প্লেট ভাত পাবেন । পরিমানে অনেক বেশী দেয় ওরা আবার চাইলে এক্সট্রা ঝোলও দেয় । হোটেলে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বিকেলে জি পি এস ট্রাক করে ইডেন গার্ডেন , মিলেনিয়াম পার্ক , JAMES PRINSER GHAT , দ্বিতীয় হুগলী ব্রিজ দেখুন । সন্ধ্যাটা অবশ্যই JAMES PRINSER GHAT এর সামনের মাঠেও বসে কাটাবেন । রাতে ৬০ রুপি দিয়ে খেয়ে হোটেলে ফিরুন ।
.
দিন ১৩ মোট খরছঃ ৬+৬৬৭+৬০+৬০ = ৭৯৩ রুপি ।
.
◄◄▌▌ দিন চোদ্দঃ মোটা মুটি পার পারসন ৭০০ রুপি খরছ করলেই সায়েস সিটি , গড়ের মাঠ সহ কলকাতার সব কিছুই দেখতে পারবেন । কলকাতা সম্পর্কে বেশী কিছুই লিখছি না । বাংলা ভাষাভাষীদের জায়গা , সো কারো কোন সমস্যা হবে না । সারাদিনে তিন বেলা খেতে ১৮০ রুপি খরছ হবে । বিকেলে নিউমার্কেটে ফিরে কেনা কাটা করুন । রাতে কলকাতা শহর ঘুরে দেখুন ।
দিন ১৪ এর খরছঃ ৭০০+১৮০ = ৮৮০ রুপি
.
◄◄▌▌দিন পনেরোঃ সকালে পার পারসন ৪০রুপি দিয়ে ট্যাক্সি নিয়ে শিয়ালদাহ রেলওয়ে স্টেশনে চলে আসুন । এবার বনগাঁ যাবার ট্রেনের টিকিট ২০ রুপি দিয়ে কেটে ফেলুন । বনগাঁর মানুষ যশোরের ভাষায় কথা বলে । এবার ৩০ রুপি দিয়ে হরিদাশ পুর বর্ডার বা বেনাপোলে চলে আসুন । ৫০০ টাকা বা ৪২০ রুপি দিয়ে ঢাকা । খাওয়া খরছ সারা দিনে ২৫০ রুপি
.
দিন ১৫ এর খরছঃ ৮০+ ২০ + ৩০ + ৪২০+২৫০ = ৮০০ রুপি
.
১৫ দিনের ট্যুরে মোট খরছঃ ১২,৬৬৭ বা ১৮৬ ডলার ( পার ডলার ৬৮.৩০ রুপি রেট হিসেব)
.
.
◄◄▌▌১৫ দিনে আপনি অতিক্রম করবেন ভারতের ওয়েস্ট বেঙ্গল , উত্তর প্রদেশ ( EAST ) , উত্তর প্রদেশ ( WEST ) , দিল্লী , হিমাচল প্রদেশ আর পাঞ্জাব প্রদেশ ।
.
আর যাত্রা পথে ট্রেন থেকে দিনের আলোতে দেখতে পারবেন ঝারখান্ড , বানারাস , কানপুর ( উত্তর প্রদেশ) , হারিয়ানা , চান্ডিগর , এলাহবাদ , লুডাইয়ানা , কুলু , জালান্দার , দুর্গাপুর , বারাসাত , ২৪ পরগণা , আসানসোল , লাখনো আর অতিক্রম করবেন মোটা মুটি ৫০১০ কিঃমিঃ 😛
.
◄◄▌▌কিছু অভিজ্ঞতাঃ আমার একটা নেশা আছে , সেটা হলো ভ্রমনের নেশা । আমি বদ্ধ এসি কামরায় বা বিমানে উরে গিয়ে কিছু দেখে আসতে ভালো বাসি না । আমার মতে ভ্রমণ হবে নিরাপদে অনেক কিছু জানার । ভারত ভ্রমণ যদি ট্রেনে না করেন তবে ভ্রমনের ৫০% অপূর্ণ থেকে যাবে । ট্রেনের দরজার পাশে দাড়িয়ে দুরের পাহাড় , ভারতবর্ষের গ্রাম দেখা , নতুন নতুন জায়গার উপর দিয়ে যখন ট্রেন যাবে তখন উপভোগ করা এসব কিছুর মাঝেই আছে আনন্দ । আমি আমার ভ্রমনে পুরোটাই মোবাইলের জি পি এস নির্ভর ছিলাম । আমরা হেটে বেড়িয়েছি ভারতের শহরের অলিতে গলিতে ।
ভারতের রেলওয়ে স্টেশন গুলোতে গোসল , বাথ্রুমের ভালো ব্যাবস্থা আছে । শুধুমাত্র নিশ্চিত টিকিটের PNR নাম্বার দিয়ে আপনি এগুলোতে আক্সেস নিতে পারবেন । স্টেশনে আছে গুগলের হাই স্পিড ফ্রি WiFi ( মোবাইল নাম্বার না হলে কাজ করবে না ) । ট্রেনে মোবাইল চার্জ দেওয়ার ব্যাবস্থা আছে । কিছু অ্যাপ এর ঠিকানা দিচ্ছি এগুলো মোবাইলে অবশ্যই রাখবেন । অনেক গুলো বাংলাদেশের আইপি দিয়ে আক্সেস পাবেন না ইন্ডিয়া গিয়েই মোবাইলে ইন্সটল দিয়ে নিবেন । এগুলো দিয়ে হোটেল , ট্রেনের স্থান, কোন স্টেশনে থেকে কোন স্টেশনে ট্রেন যাবে তার তথ্য পাবেন ।
১. OYO (Best)
২. Make My Trips
৩. Goibibo
৪. Ixigo Train
৫. Uber / Ola Cabs
৬. enquiry.indianrail.gov.in এর অ্যাপ
৭. Google Map
.
দালাল এড়িয়ে চলবেন । পাসপোর্ট কাউকে দিবেন না । নিজের পাসপোর্ট + ভিসা + কয়েক কপি ছবি নিজের কাছে বাংলদেশে থেকে নিয়ে যাবেন । ওখানে ফটোকপি বলে না যেরকক্স বলে । ডলার ভাঙাবেন কলকাতায় । বেনাপোলে বা হরিদাশপুরে ৫০০ টাকার মত ভাঙিয়ে নিবেন ।
.
ইন্ডিয়াতে SAARC COUNTRY ( বাংলাদেশ + পাকিস্তান + শ্রীলংকা + নেপাল + ভুটান + আফগানিস্তান + মালদ্বীপ ) এর ফরেনারদের জন্য অন্য ফরেনারদের তুলুনায় কম টিকিটের দাম রাখা হয় । অনেক ক্ষেত্রে ঈন্ডিয়ান্দের টিকিটের মুল্যে SAARC COUNTRY এর লোকেরা টিকিট কাটতে পারে । আপনাকে শুধু মেনশন করতে হবে আপনি SAARC COUNTRYএর লোক ।
.
◄◄▌▌ কিছু চিকন পিনের কথা ( ভালো না লাগলে এড়িয়ে যান )ঃ কলকাতা বাদে যেখানেই যাবেন হোটেল বুকিং বা ভ্রমনের স্থান ছাড়া সকল ক্ষেত্রে বলবেন আপনি কালকাতা থেকে এসেছেন । হিন্দি বলতে পারলে ভালো , অনেক ঝামেলা থেকে বেচে যাবেন । হিন্দি ভালো পারলে কলকাতায় হিন্দিতে কথা বলবেন এতে আপনি সঠিক দামে জিনিস কিনতে পারবেন । বর্ডার পার হবার সময় ডলারের সাথে শুধু মাত্র ২০ টাকার ৮ + ১০ টাকার ৪ টি নোট রাখবেন । কোথাও চাইলে ২০ টাকা দিবেন খুব বেশী হলে ৩০ টাকা দিবেন । অবশ্যই মোবাইলে ইন্টারনেট আর জি পি এস অন রাখবেন । কারন আপনার জি পি এস আপনাকে কখনোই ভুল তথ্য দিবে না 🙂 । আর একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা ” মানুষ শক্তের ভক্ত নরমের যম ” কথাটা ইন্ডিয়ায় গেলে মাথায় রাখবেন 🙂
.
.
NOTE: আমার এই ভ্রমনে ট্যুর প্লানে শুধুমাত্র ভারত ভ্রমনের কথাই বলা আছে । ভিসা ফি , ট্র্যাভেল ট্যাক্স বা অন্যান্য কিছু নিয়ে লিখি নাই যেটার জন্য আপনাদের খুব বেশী হলে ১২০০ টাকা খরছ হবে । আমি যে রুট প্লান দিয়েছি সেটা ভারতে গিয়ে অনেক ধাক্কা খেয়ে খুঁজে বের করা 🙂 আশা করছি আপনাদের হেল্প হবে । তবে আপনারা অবশ্যই কিছু টাকা এক্সট্রা ব্যাকআপ নিয়ে যাবেন , কারন সবার ভ্রমনের অভিজ্ঞতাটা সবার থেকে আলাদা । অনেক বড় লিখা সময় নিয়ে পড়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ 🙂
Post Copied From:রেজওয়ানুল কবীর>Travelers of Bangladesh (ToB)