ঘুরে আসলাম সান্ডাকফুপশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ হল সান্দাকফু
ঘুরে_আসলাম_সান্ডাকফুপশ্চিমবঙ্গের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ হল সান্দাকফু l উচ্চতা প্রায় ৩৬০০ মিটার l দার্জিলিং জেলার তথা পশ্চিমবঙ্গের ভ্রমন পিপাসুদের জীবনে অন্তত একবার যাওয়া উচিত সে-রকম একটি জায়গা হল সান্দাকফু l সিঙ্গালীলা জাতীয় উদ্যানের মধ্যে অবস্থিত রডোডেনড্রন, পাইন, ফার গাছে মোড়া সান্দাকফুর ফুলের বাহার দেখতে গেলে মার্চ-এপ্রিল আদর্শ সময় l তবে বর্ষাকাল ছাড়া বছরের যে কোন সময়ই সান্দাকফুতে যাওয়া যায় l আমরা গেছিলাম 3:12:2018 তে সৌভাগ্যের ক্রমে এই বছরের প্রথম বরফ বৃষ্টির ও দেখা মিলেছিল তবে পরিমান অনেক কম । সান্দাকফু থেকে কাঞ্চনজঙ্ঘার উপর সূর্যোদয় ও সূর্যাস্থ দেখা সারা জীবনের প্রাপ্তি হয়ে থাকবে l সাধারণত সান্ডাকফু তে পর্বতরাহী রা ট্রেক করেই যায় । ট্রেক করার উপযুক্ত রাস্তা তবে আমাদের হাতে সময় কম থাকার জন্য মানেভঞ্জন থেকে ওখান কার লোকাল গাড়ি ল্যান্ড রোভার বুক করে নিয়েছেন ।ওই ভয়ঙ্কর ও রোমাঞ্চকর রাস্তায় এই গাড়ি ই চলে তা ছাড়া কিছু jeep ও মাহিন্দ্রা বুলেরো এর দেখা পাওয়া যায় l একটা ল্যান্ড রোভার এ 6 জনের বেশি ব্যাক্তি নেন না ড্রাইভার রা passenger সুরক্ষার জন্য আমরা আট জন ছিলাম তাই 2 টো গাড়ি নিতে হয়েছিল 5000 করে ভাড়া এক রাত থেকে আবার পরের দিন মানে ভঞ্জন এ ফিরিয়ে নিয়ে আসার জন্য তাই একটু আরামের সাথে গেছিলাম 4 জন করে এক একটি গাড়িতে । ল্যান্ড রোভারে যাওয়া যায় বোল্ডার বিছানো রাস্তায় সে রাস্তা ছিল বড়ই কষ্টকর ও ভয়ঙ্কর l বর্তমানে সান্দাকফু যাওয়ার বেশিরভাগ রাস্তাই কংক্রিট এর হয়ে গেছে , তাই ল্যান্ড রোভারে পরিবার নিয়ে সহজেই যাওয়া যায় সান্দাকফু lতবে শেষ 10 km রাস্তা খুব ই ভয়ঙ্কর আর পুরো পাহাড়ের খাড়া ঢাল বয়ে উপরে চড়ে । দুই ধারে বিশাল খাড়া খাঁদ যা দেখে শরীর শিউরে ওঠে ।প্রকৃত বিশ্বাস আর ভরসা কি সেটা ওই রাস্তার ড্রাইভার এর সাথে সফর না করলে বোঝা যাবে না ।
আমরা সকল 10 টাই মানেভঞ্জন থেকে সান্ডাকফু এর উদ্দেশে রওনা হয়েছিলাম 4 জায়গায় হল্ট করতে করতে প্রায় 3 তে নাগাদ পৌঁছে ছিলাম সান্ডাকফু তে তখন তাপমাত্রা ছিল 10 ডিগ্রি থেকে 12 ডিগ্রীর মধ্যে সঙ্গে মেঘ ভেসে বেড়াচ্ছে ও শীতল ঠান্ডা । আবহাওয়া পরিষ্কার ছিল না তাই একটু ভয় ও ছিল যে কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে পাবো কিনা । তবে সকাল 5 টাই উঠে পড়েছিলাম সূর্যোদয় দেখার জন্য । হোটেল রুম গুলো কাঠ দিয়ে সজ্জিত ছিল বলে ঠান্ডা টের পাইনি তবে 5 টার সময় হোটেল এর ছাদে পৌঁছে বুঝতে পেরেছিলাম ঠান্ডা কাকে বলে তখন তাপমাত্রা ছিল – 2 ডিগ্রি তাই ট্যাংক এর জল জমে বরফে পরিণত হয়েছিল ।
সান্দাকফু যেতে গেলে আপনাকে মানেভঞ্জন-এ রাত্রিবাস করে পরদিন সকালে ল্যান্ডরোভারে করে সান্দাকফু পৌঁছতে হবে l দুরত্ব ৩১ কিলোমিটার এবং সময় লাগে তিন থেকে চার ঘন্টা l মানেভঞ্জনকে সান্দাকফুর গেটওয়ে বলা যেতে পারে l নেপালি ভাষায় মানেভঞ্জন শব্দের অর্থ দুই গিরিশিরার মিলনস্থান l উত্তরে টংলু পাহাড় আর দক্ষিনে জোড়পোখরী পাহাড়ের মাঝখানে বাটির মত এই মানেভঞ্জন উপত্যকা l দোকান, হোটেল স্থানীয় মানুষদের বাড়িঘর নিয়ে ছোট শহর মানেভঞ্জন l দিনে দিনে সান্দাকফু ঘুরে মানেভঞ্জন ফিরে না এসে এক বা দু-রাত্রি কাটানো উচিত সন্দাকাফুতে l আর যাওয়া ও আসার দিনে, মেঘমা, টংলু, তুমলিং, গৌরীবাস, কালিপোখরি জায়গাগুলি সময় নিয়ে ঘুরে দেখে নিন l এই সমস্থ জায়গাগুলি ট্রেকারদের নাইট হল্ট করার জায়গা , ফলে প্রতি জায়গাতেই আছে বেশ কিছু হোম-স্টে বা হোটেল l এর যে কোনো জায়গায় ব্রেকফাস্ট বা লাঞ্চ করাও বেশ তৃপ্তিদায়ক l প্রকৃতির মাঝে বসে গরম থুপকা, মোমো বা আলু পরোটা বেশ সুস্বাদু l টেস্ট করতে ভুলবেন না l
Source: Emdadul Kabir <Travelers of Bangladesh (ToB) – ভ্রমন গাইড বাংলাদেশ