বগালেক,কেওক্রাডং এর সৌন্দর্য
ছোটবেলায় বইয়ের পাতায় প্রথম যখন কেওক্রাডং সম্পর্কে জানলাম তখন চোখের সামনে যে ছবিটি সাথে সাথে ভেসে এসেছিলো সেটা হচ্ছে একজন পর্বত আরোহী রশি দিয়ে ঝুলে ক্রেওক্রাডং এর চূড়ায় উঠার চেষ্টা করতেছে। তখন মনে মনে বললাম ইশ্ যদি আমি একদিন উঠতে পারতাম! আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ সে ইচ্ছা আমার পূরণ করল। ১৩ কিলোমিটার পাহাড়ি উঁচু নিচু ভয়ানক খাড়া রোমাঞ্চকর সুন্দর পথ পায়ে হেটে অতিক্রম করে জয় করলাম অফিসিয়ালি বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্বত শৃঙ স্বপ্নের কেওক্রাডং। এর উচ্চতা ৩১৭২ ফুট। সময় লাগলো প্রায় সাড়ে চার ঘ্ণটা। নামতে লেগেছে ৩ ঘ্ণটা। উঠার সময় পথে যা দেখেছি তা বর্ণনা করতে হয়ত শত বছর লেগে যাবে। এতো উঁচু উঁচু পাহাড় এর আগে শুধু ছবিতে দেখেছি। এখন সশরীরে দেখছি। পুরা পথ এডভেঞ্চারে ভরা ছিলো। উঠার সময় দেখা হয়ে গেল অপরূপ সুন্দরী চিংড়ি ঝর্ণার সাথে। বর্ষায় সুন্দরী ঝর্ণা টি তার যৌবন ফিরে পায়। শুনেছি এখানে নাকি আগে অনেক চিংড়ি মাছ পাওয়া যেত। উঠার সময় হাতের ডান পাশে দেখেছি পাহাড়ের কোলে সাদা মেঘের ভেলা। সারাবছর মেঘের নিচে বসবাস করেছি কিন্তু সেই দিন সেই রাত মেঘের চেয়ে আরো অনেক উপরে থেকেছি সুখের ঘুম গিয়েছি। আরো দেখেছি মেঘের উপর পূর্ণিমার চাঁদের আলো পড়লে কেমন লাগে। উফফ পাগল করে দিয়েছিলো। ভোর বেলা ঘুম থেকে উঠে চূড়া থেকে যা দেখলাম তা বর্ণনাতীত। যতদূর চোখ যায় শুধু মেঘ আর মেঘ। এই যেন আরেক সমুদ্র। সেই সমুদ্রে দ্বীপের মতো জেগে উঠেছে সুউচ্চ পাহাড়ের চূড়া গুলো। কেওক্রাডং উঠার আগের দিন রাতে ছিলাম বগালেকের পাড়ে একটা ছোট কটেজে। সেই লেক আরেক সুন্দর। রহস্যে ঘেরা। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর উচ্চতা ১০৭৩ ফুট। গভীরতা ১১৫ ফুট। প্রায় একটা ১১ তলা বিল্ডিং এর সমান।
যাইহোক এবার আসি কিভাবে যাবেন:
চট্টগ্রাম এর বহদ্দারহাট বাস টার্মিনাল থেকে বান্দরবান এর উদ্দেশ্যে বিভিন্ন বাস ছেড়ে যায়। বান্দরবান বাস টার্মিনাল পৌছে সেখান থেকে আরেকটি বাসে রুমা যেতে হবে। বান্দরবান থেকে রুমা ৪৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। পাহাড়ি পথ হওয়া বান্দরবান থেকে রুমাই যেতে সময় লাগবে প্রায় সাড়ে ৩ ঘ্ণটা। সেখানে গাইড ঠিক করে একটা ফর্ম পূরণ করে আর্মি ক্যাম্পে এন্ট্রি করে থানায় স্বাক্ষর করে বিকাল ৪ টার মধ্যে বগালেকের উদ্দেশ্যে চাঁদের গাড়িতে করে কমলাবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দিতে হবে। গাইড সব ব্যবস্থা করে দিবে। চিন্তার কোনো কারণ নেই। আপনি শুধু যেখানে যেখানে স্বাক্ষর করতে হবে সেখানে করে যাবেন। গাইড আগে থেকে ঠিক করে রাখা ভালো। বিকাল ৪ টার মধ্যে কমলাবাজারের উদ্দেশ্যে রওনা দিতে হবে। বিকাল ৪ টার পর আর যেতে দেয় না। কমলাবাজার পৌছাতে সময় লাগবে ৩০ মিনিট । সেখান থেকে আবার ৩০ মিনিট পায়ে হেটে বগালেক। বগালেকে রাতে থেকে সকালে ১৩ কিলোমিটার পায়ে হেটে পৌছে যাবেন কেওক্রাডং এ।
খরচ – চট্টগ্রাম থেকে ১৪ জনের একটা টিম গেলে খরচ হবে থাকা খাওয়া সব মিলে সর্বনিম্ন ৩০০০ টাকা।