ঢাকা থেকে কাঠমুন্ডু যাবেন যেভাবে আর এর মাঝে আপনি যা উপভোগ করতে পারবেন

ঢাকা-কাঠমুন্ডু। যথা রীতি প্রায় তিন ঘন্টা পূর্বে এয়ারপোর্টে থাক্তে হবে কারণ সেখানে বিদেশ যাত্রা সম্পর্কীত কিছু কাজ আছে। গত রাত থেকেই মালপত্র গুছগাছ করার একটা মধ্যমগুছের ব্যস্ততা ছিল। ঈদ পরবর্তী সময় ঢাকার রাস্তায় খুব একটা জ্যাম থাকবেনা এমন একটা ধারণা আমাদেরকে রওয়ানা দিতে বিলম্ব করিয়ে দিচিছল। ঘড়িতে কখন যে বারটা বেজে গেল। এখনই এয়ারপোর্ট রওয়ানা দিতে হবে। আধুনিক ঢাকা যাতায়াত সুবিধার নতুন নতুন দ্বার উম্মচন করেছে। ওভার ডাকা হলো। এয়ারপোর্ট পৌঁছে ইমিগ্রেশন সেরে আমরা লাউঞ্জে অপেক্ষারত। মনে তখন দু’ধরণের একটা মিশ্র প্রতিক্রিয়া কাজ করছিল। এক, নেপাল যাচিছ, প্রাণভরে সেখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য অবলোকন করব, দারুন আনন্দ হবে, চক্ষু জুরাবে, উৎফল্ল হবে প্রাণ। দুই, এই কিছুদিন পূর্বেই নেপাল এয়ারপোর্টে ঘটে যাওয়া মারাত্মক দুর্ঘটনা। নেপালে ভ্রমণের কথা শুনে আৎকে উঠে কেউ কেউ বলেছে ”হায় হায় নেপাল যাবেন! ইত্যাদি। তাই যতই প্লেন ছাড়ার সময় ঘনিয়ে আসছিল, মনে মনে আহত হবার প্রবনতাও বাড়ছিল। একথা অস্বীকার করিনা যে, মনে মনে কিছুটা হলেও ভয় করিনি। তবে শেষ অবধী মনে যে শক্তি বা উদ্যম কাজ করছিল, তা হল সর্বশক্তিমান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের প্রতি অগাত বিশ্বাস ও আশ্রয়। ”তাঁর” স্মরণ নিচিছলাম অবনত ও একাগ্র চিত্তে বারবার। তিনিইতো একমাত্র রক্ষাকারী। যথারীতি প্লেনে আরোহন করে বিরাট আকাশ পথ পাড়ি দিয়ে কিছুটা বিলম্বে হলেও নেপাল ত্রিভূবন ইন্টারন্যাশনাল এয়ার পোর্টে অবতরন করলাম। গাইড এবং ড্রাইভার গাড়ীসহ আগথেকেই অপেক্ষা করছিলেন। পরিচয় জেনে গাড়িতে উঠে বসলাম।

প্রথমেই নাগর কোট। বিরাট তিন চারটে পাহাড় পেরিয়ে ২৩৫০ মিটার উচূঁতে অবস্থিত হোটেল প্যারাডাইজে যখন পৌছলাম তখন রাত প্রায় ১০টা। ভিষণ ঠান্ডা বাতাস। হাত পা জমে যাবার উপক্রম। ঠান্ডার কথা পূর্বেই শুনেছিলাম কিন্তু তা যে এত তীব্র হবে তা বুঝি নাই। যা হউক রেষ্ট্যুরেন্টে উচচ মূল্যে রাতের খাবার খেয়ে নির্ধারিত মনোরম হোটেল কক্ষে যাবার জন্য আরও একটি পাহাড় পেরোতে হয়েছে। দেখলাম, আরও উচুঁতে পাহাড়ের চূঁড়ায় অনেক হোটেল রয়েছে। কোথা হতে সাদা মেঘের ভেলা এসে পাহাড়ের চূঁড়ায় গাছ ও হোটেলগুলোতে আছরে পড়ছে। হোটেলের পাশেই গভীর বনারন্য থকে বেড়ে উঠা রং বেরংয়ের লম্বা লম্বা গাছগুলির শুধু উপরাংশটাই দেখা যায়, তাও আবার ঘন কুয়াশাবৃত। মাথার উপর চাঁদটা মনে হলো অনেক নিচে নেমে এসেছে। পাহাড়, বৃক্ষ, ফুল, ফল, মেঘ, কুয়াশা, চারিদিক নিস্তব্দ নিরবতা সব মিলিয়ে এক আনন্দঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। বিধাতার কি অপরুপ সৌন্দর্য্য। গভীর রাত, এক সময় আমার স্ত্রী কামরুন্নাহার ও কন্যা দিশা ঘুমিয়ে পড়েছে। কিন্তু, আমি তারপরও অনেকক্ষন জেগে থেকে বার বার জানালার পর্দার পাশটেনে বাহিরের দিকে চেয়ে থেকেছি।

পরের দিন ১৯শে জুন সকালে পাহারী রেষ্ট্যুরেন্টে নাস্তা সেরে চন্দ্রাাগীরির উদ্দেশ্যে রওয়ানা হই। সেখানে রয়েছে জন প্রতি ১১০০ নেপালী রুপীর বিনিময়ে ঈধনষব ঈধৎ এর মাধ্যমে ২৫০০ মিটার উপরে উঠার ব্যবস্থা। সেখানে রয়েছে চা কফি, ছোট ছোট রেষ্ট্যুরেন্ট, গার্মেন্ট ওয়ার্স, খেলনা, মনোহরি দ্রব্যের দোকান তবে দাম একটু নয় বেশ বেশী। যাহউক, এযে কি এক লোম হর্ষক উত্তোলন তা একমাত্র ভোক্তভোগীরাই জানেন। ঈধনষব ঈধৎ যখন উপরে উঠা শুরু করে তখন নিচের দিকে তাকালে অন্তর আত্মা ভয়ে শুকিয়ে কাঠ হয়ে যাবার উপক্রম হয়। চন্দ্রাগীরিতে গেলে ঈধনষব ঈধৎ এ উপরে উঠার প্রবল আকাঙ্খাও দমন করা যায়না আবার উপরে আরোহন কিংবা নিচে নামার সময় মনে হয় ’এই বুঝি জীবনের শেষ।’ মনে জাগে যে, জীবন ও মৃত্যু কত কাছে। জীবনের করুণ পরিনতির আশংকায় অনেকের চোখ থেকে পানি বের হয়ে গাল গড়িয়ে পড়তেও দেখা যায়। তবে উপলব্দিটা যার যার।

ঈধনষব ঈধৎ পর্ব শেষ করে সূদীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে নেপালের আরেকটি সৌন্দর্যমন্ডিত অঞ্চল চিতুয়ান ন্যাশনাল পার্ক এর উদ্দেশ্যে রওয়ানা হই। দুপাশের পাহাড় দেখে ধারনার সবটুকুই পাল্টে গেল। এতবড় পাহাড় হতে পারে তা চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা যেতনা। পিচ ঢালাই রাস্তার এক পাশে খাড়া উচু পাহাড়, যার অন্য পাশে রাস্তাার অতি সন্নিকটে সূদীর্ঘ পথজুরে গভীর খাদ, ভয়ে প্রাণ বারবারই সংকুচিত হয়েছে। চোখ বন্ধ করেও থেকেছি দুচারবার। উঁচু নিচু পাহাড় কেটে অসংখ আঁকাবাঁকা দীর্ঘ পথ তৈরী করা হয়েছে তা পাড়ি দিয়ে চিতুয়ান পৌঁছে হোটেল সেভেন ষ্টার-এ উঠি। ধারুন মনোমুºকর প্রাকৃতিক পরিবেশে চমৎকার ব্যবস্থাপনার হোটেলটিতে রাত্রী যাপন সত্যিই স্মৃতিমধুর হয়ে থাকবে। তাছাড়া, আলো ঝলমল সকালটিও পাখির কলকাকলিতে বেশ আকর্ষণীয় ছিল।

পরের দিন ২০শে জুন সকাল ১০টায় পোখারার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়ে বিশাল পাহাড়ী পথ পাড়ী দিয়ে সন্ধ্যায় পুখারায় পৌছে লেক পাড়ের অনন্য সুন্দর পরিবেশে হোটেল ঈযড়রপব ওহহ- এ উঠি। খানিকটা সময় বিশ্রামের পর হোটেল থেকে বেড়িয়ে পড়ি। রাস্তার পাশে সাজানো গুছানো দোকানগুলো বেশ সুন্দর ও পরিস্কার পরিচছন্ন। বলা বাহুল্য যে, পর্যটন এলাকা হওয়ায় জিনিষপত্রের দাম বেশ কড়া। তৎস্বত্তেও, বিভিন্ন দেশ থেকে আগত বিভিন্ন জাতি নির্বিশেষে পুখারা যেন হাজারো ট্যুরিষ্টদের এক অনন্য সাধারণ প্রাণের মিলন মেলা। এমনি করে অনেক রাত অব্দী ঘুরে ফিরে সব দেখে শুনে পরে হোটেলে ফিরি। পাশের লেকটিও বেশ। সেখানে অবস্থান প্রাণ জুরায়।

পরের দিন ২১ জুন। ভোর ৪ টায় হিমালয়ের অংশ অন্নপূর্ণা-১ দেখার জন্য হোটেল থেকে প্রাইভেট কার যোগে বিশাল উচচতার সারাঙকুট পাহাড় চূঁড়ায় আরোহন করি। ঘন কুয়াশাচছন্ন শীতল পরিবেশ। পাহাড়ের চূঁড়ায় দাঁড়িয়ে নিচে তাকালে মনে হয় সমস্ত পুখারা শহর ও পাহাড় অঞ্চল যেন সাদা মেঘের চাদরে আবৃত। উপত্যকায় মানুষ্য প্রজাতির বসবাস লক্ষ্য করার মত। যাহউক, প্রায় সবাই উত্তর দিকে তাকিয়ে আছে। আমরাও। দেখলাম, সুর্য উদয় মুহুর্তে উত্তরাকাশে হিমালয়ের ৎধহমব, বরফ আবৃত চূঁড়া ”অন্নপূর্ণা -১”। এ দৃশ্য প্রত্যেহ দেখা যায় না। সপ্তাহের কোন কোন দিন আবার এমনও হয় যে পুরো সপ্তাহের কোন দিনই দেখা যায় না। চমৎকার নয়নাভিরাম দৃশ্য। কখনো মনে হলো বিরাট আয়তকার এক স্বর্ণের পাহাড় আবার মনে হলো এ যেন রুপোতে আচছাদিত অদ্ভুত সৌন্দর্যমন্ডিত কল্পনার রাজ্য। মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের একি অপরুপ সৃষ্টি। এরই মধ্যে আমরা স্বামী স্ত্রী ও মেয়ে দিশা অসংখ ছবি ক্যামেরা বন্দী করেছি হিমালয়সহ সমগ্র নেপালের যা হয়ত স্মৃতি হয়ে থাকবে অনেকদিন।

তারপর হোটেলে ফিরে আসি। পথে ড্রাইভার বল্ল – ব্রেক ফাষ্ট সেরেই আবার বেরুতে হবে। কোথায়? উধনরং ঋধষষ, ঈধাব, চঁশযধৎধ তড়ড়, খধশব বঃপ. দেখলাম – উধনরং ঋধষষ একটি অত্যন্ত মনোমুºকর গভীর ঝর্ণাধারা। হয়তবা অনেকদিন স্মৃতিতে অটল থাকবে। এগুলো দর্শন শেষে বিকেলে লেকের পাশেই বসে ছিলাম সুর্য অস্ত যাওয়া পর্যন্ত। যে বিষয়টি খুবই ভাল লেগেছে তা হলো, লেকের পাড়ের নির্ভিক পাখিদের। মানুষের খুবই কাছাকাছি প্রায় হাতের নাগালের মধ্যে অসংখ বক, চড়–ই, শালিক, কবুতরের অবাদ বিচরন আমাদের মুº করেছে। পাখিরা মানুষদের ভয় পায়না। পাখিদের মনে হয়ত এ ধারণা বিদ্ধমূল হয়েছে যে, ট্যুরিষ্টরা পাখিদের মারেনা বা শিকার করেনা। খুব ভাল লেগেছে।

পরের দিন ২২শে জুন। পোখারা থেকে বিদায় নিয়ে মনোমুºকর বিচিত্র পথ পেরিয়ে বিকেলে কাঠমুন্ডুতে পৌছে ঞযধসবষ জড়ধফ-এ অশোক গলিতে হোটেল ঋধসরষু ঐড়সব-এ উঠি। রাতে শহরের বিশেষ বিপণি বিতান ঘুরে দেখার চেষ্টা করি।

Share:

Leave a Comment