সিকিম ট্যুরের বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে জেনে নিন
সিকিম ট্যুরটা আমার কাছে অত্যাধিক ভালো লেগেছে। বিশেষ করে কাছ থেকে বরফ ছুয়ে দেখার অনুভূতিটা ব্যক্ত করা সম্ভব নয়। আমার এক বন্ধুসহ দুজনে বেনাপোল বর্ডার দিয়ে কোলকাতা হতে শ্যামলী পরিবহনযোগে শিলিগুড়ি আসি।
* ফুলবাড়ি/বাংলাবান্ধা পোর্ট হতে শিলিগুরি জাংশনের দূরত্ব ১২ কিমি আর চ্যাংড়াবান্ধা/বুড়িমারী থেকে শিলিগুরি জাংশনের দূরত্ব ৮৩ কিমি। তাই যাদের ভিসায় ফুলবাড়ী বর্ডার রয়েছে তাদের জন্য বেটার হবে।
* পারমিশন সংক্রান্ত আলোচনাঃ
—————————————–
শিলিগুড়ি Sikkim Nationalized Transport( SNT) অফিস হতে ইনার লাইন পারমিশন করাই। অফিস খোলে সকাল দশটায়। পাসপোর্ট,ভিসার ফটোকপি ও ছবি সহ নির্দিষ্ট ফর্ম পূরন করে সাত দিনের আবেদন করেও এগার দিনের জন্য বিনা টাকায় সহজে পারমিশন পেয়েছি। SNT থেকেই ১৫০ টাকা ভাড়ায় বাসের টিকিট কেটে গ্যাংটকের উদ্দ্যেশে রওনা করি।
* রংপো চেক পোষ্ট এবং সিল সংক্রান্ত কিছু কথাঃ
——————————————————————
বাস/জীপ যেটাই হোক না কেন আগে থেকেই ড্রাইভারকে চেক পোষ্টে থামানোর কথা বলে রাখতে হবে। অন্যথায় গাড়ী না থামানোর সম্ভাবনা থেকে যাবে। রংপো ফরেনার রেজিষ্ট্রেশন অফিসের দোতলা হতে ইনার লাইন পারমিশনের পেপারে এবং পাসপোর্টে সিল মেরে নিতে হবে।
* ফেরার দিন পাসপোর্টে সিল মারা অংশে শুধু মাত্র তারিখ দিয়ে ইনার লাইন পারমিশনের মুল কপি তারা রেখে দিবে। অর্থ্যাৎ পাসপোর্টে একটাই গোল সিল থাকবে কিন্তু তারিখ হবে দুইটা।
* যাদের ভারতীয় এম্বাসী/এসএনটি হতে পারমিশন নেওয়া হইনি,তারা রংপো থেকেও সহজে পারমিশন নিতে পারবেন। সকাল আটটা হতে রাত আটটা পর্যন্ত অফিস খোলা থাকে।
* কোথায় থাকবেনঃ
————————-
গ্যাংটকের MG Marg এ ভালো মানের অনেক হোটেল রয়েছে। হোটেল কয়েকটা দেখে দরাদাম করে নিতে হবে। এমজি মার্গের হোটেল গুলো ব্যয় বহুল।
* ট্যুর প্লান তৈরী সংক্রান্ত ধারনাঃ
——————————————
হোটেলে চেক ইন করে এমজি মার্গ বা তার আশে পাশের কোন এজেন্সির সাথে কথা বলে আগামী দিনের জন্য ভ্রমনের প্যাকেজ নিতে হবে। নর্থ সিকিম অর্থ্যাৎ লাচুং,ইয়ামথাং ভ্যালির পারমিশনের জন্য পাসপোর্ট,ভিসা কপি,ইনার লাই পারমিশনের কপি ও ছবি এজেন্সির কাছে জমা দিলে তারা পরের দিন সকাল আটটার ভেতর পারমিশন করিয়ে দিবে। সাঙ্গু লেকের জন্যও একই রকম প্রসেস।
নিজেরা পারমিশন করাতে চাইলে সেটা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। পারমিশনকৃত সকল স্পটে গাইড থাকবে যা প্যাকেজের অন্তর্ভূক্ত।
* এজেন্সির ব্যাপারে ধারনাঃ
————————————
গ্যাংটকে এজেন্সি বাছাই করা একটা ফ্যাক্ট। এজন্য কোন দালালের খপ্পরে না পড়ে সরাসরি কয়েকটা এজেন্সির সাথে কথা বলে যাচাই বাছাই করে প্যাকেজ নিলে ভালো হবে। শিলিগুড়িতে অনেক এজেন্সি এবং দালাল পাবেন যারা আপনাকে নানা রকম প্রলোভন দেখাবে। দয়া করে তাদের খপ্পরে পড়বেন না।
* ইতিপূর্বে সোনম নামের যে ম্যাজিক ম্যানের কথা আমরা শুনছি,অভিজ্ঞতায় বলব তার হতে দূরে থাকাই উত্তম। কেননা তার কথা কাজে যথেষ্ঠ অমিল পেয়েছি। তার সার্ভিসে গ্রুপের কেহ সন্তুষ্ট হয়নি। তাছাড়া তার কোন অফিসও নেই। আপনারা চাইলে তার সাথে আলাপ করে ধারনা নিতে পারেন।
* কোথায় কোথায় ঘুরবেনঃ
———————————–
_ সাঙ্গু লেকের জন্য ১দিনের ট্যুর।
_ লাচুং,ইয়ামথাং ভ্যালি,জিরো পয়েন্ট,কাটাও ২ দিনের ট্যুর।
_ গ্যাংটক লোকাল ১ দিনের ট্যুর।
নরমালি ৪ দিনে বিশেষ গুরুত্বপূর্ন স্থান গুলো দেখা হয়ে যাবে।
যদি লাচেন যেতে চান তাহলে ১ দিন সময় বেশি লাগবে,পেলিং গেলে ২ দিন,নামচি গেলে ১ দিন সময় লাগবে। তাছাড়া আবহ জনিত কারনে সব স্পটের পারমিশন সবদিন দেয় না,সেক্ষেত্রে সময় আরো বাড়াতে হবে নতুবা ফেরত আসতে হবে।
* বরফের দেখা কোথায় পাবেনঃ
——————————————
অফ সিজনে লাচুংয়ে পর্যাপ্ত বরফ দেখতে পাবেন। আর এ সময়ে ইয়ামথাং ভ্যালি ও জিরো পয়েন্ট পর্যন্ত পৌছানো প্রায় অসম্ভব। সেক্ষেত্রে বিকল্প হিসাবে কাটাও ঘুরে আসতে পারেন। অসম্ভব সুন্দর একটা জায়গা যেখানে অনায়াশে বরফে গড়াগড়ি খেতে পারবেন। অফ সিজনে সাঙ্গু লেকের দেখা পাওয়াটা খানিকটা ভাগ্যেরও ব্যাপার। কেননা রোডে অতিরিক্ত বরফ জমা এবং তাপমাত্রা (-)° থাকায় দিনের পর দিন পারমিশন না পেয়ে পর্যটকরা দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে ফিরে আসতে বাধ্য হন।
* বোনাস হিসাবে কি কি দেখতে পারবেনঃ
——————————————————-
১: শিলিগুড়ি টু গ্যাংটক রাস্তার পাশ দিয়ে বয়ে চলা নীল রঙ্গের পানির দৃশ্যে আপনার চোখ জুড়িয়ে যাবে।
২: রাস্তার পাশে অসংখ্য বানর দেখতে পাবেন।
৩: গ্যাংটকে ৫ মিনিটের পথ হেঁটে মাত্র ১১৭ রুপিতে রোপ ওয়েতে চড়তে পারবেন।
৪: লাচুং যাওয়া আসার সময় কাঞ্চন জংখা এর দেখা পাবেন।
৫: তিস্তা নদির উৎপত্তি স্থল দেখতে পাবেন।
* কখন ভ্রমন করবেনঃ
——————————
মার্চ,এপ্রিল,মে,সেপ্টেম্বর,অক্টোবর,নভেম্বর পিক সিজন।
* কয় জনে ভ্রমন করবেনঃ
———————————
বাংলাদেশিদের জন্য আলাদাভাবে ভ্রমন করতে হয়। কোন ইন্ডিয়ানদের সাথে গ্রুপ শেয়ার গ্রহনযোগ্য না। এজন্য ৭ জনের গ্রুপ হলে গাড়ীতে সহজে বসা যায়। আর খরচও কম হবে। আর গ্রুপ ছোট হলেও পুরা গাড়ীর ভাড়া গুনতে হবে। ভাগ্য ভালো হলে ওখানে যেয়েও বাংলাদেশি কারো সাথে এড হতে পারেন।
* খরচ পাতির সম্পর্কে ধারনাঃ
—————————————-
ট্যুরের সময়,ট্যুর মেটের সংখ্যা,সিজন বেসিসে খরচের তারতম্য হবে। কেননা পিক সিজনে হোটেল ভাড়া,গাড়ী ভাড়া অনেক বেশি থাকে।
_ সাঙ্গু লেকের জন্য ১দিনের ট্যুরের খরচ হবে 3K-5.5K
_ লাচুং,ইয়ামথাং ভ্যালির জন্য প্যাকেজ পড়বে 12K-20K
_ জিরো পয়েন্ট,কাটাও এর জন্য অতিরিক্ত 3K করে দিতে হয়।
_ গ্যাংটক লোকাল ট্যুর এর খরচ স্পট ভিত্তিক হয়।
১০টা পয়েন্টের জন্য ৪ সিটের গাড়ীর ভাড়া 2K
*হোটেল ভাড়াঃ আমরা ছিলাম MG MARG এ। অনেক সুন্দর ছিল হোটেলটা। এক রুমে ৩ জন থাকা যায়। ভাড়া ছিল 1.2K
* পোষাক সংক্রান্ত বিষয়ঃ
——————————–
– শীত নিবারক জ্যাকেট,কানটুপি,হাতমোজা,উলের পামোজা।
-ঠান্ডা, কাশি, মাথা ব্যথা, বমির পর্যাপ্ত পরিমান ঔষুধ।
-পাওয়ার ব্যাংক,চার্জার,ক্যামেরা।
* সিম কার্ড সংক্রান্ত বিষয়ঃ
————————————
-বর্ডার থেকে পাওয়ার দিয়ে ইন্ডিয়ান সিম কার্ড কিনে নেয়া উত্তম। গ্যাংটকের লোকেরা পাওয়ার দেওয়াটা জানে না। সিম কেনাটাও টাফ ব্যাপার।
** লেখা সংক্ষিপ্ত করার জন্য কোন তথ্য বাদ পড়লে সেটা এড করা হবে।
কমেন্ট বক্স কিছু প্রয়োজনী পিক দেওয়া হলো।
গ্যাংটক অনেক পরিচ্ছন্ন শহর। রাস্তায় কোন ময়লা না ফেলে নির্দিষ্ট স্থানে ফেলবেন। লাচুং এ পলিথিন, পানির বোতল নিষিদ্ধ। প্রকাশ্যে সিগারেট নিষিদ্ধ।