বান্দরবানে’র দেবতাখুম অভিযানের গল্প
বিখ্যাত Boney M. Band এর ‘hooray hooray it’s a holi-holiday’ গানের তিনটা লাইন ‘Time isn’t here for wasting, Life is so full of sweet sweet things, I’d like to do some tasting’ জ্বী! জীবনে অনেক সুন্দর সুন্দর জিনিস আছে যা সবারই অনুভব করা উচিত! আর ট্রাভেলিংয়ের চেয়ে সুন্দর জিনিস আর কিছু আছে বলে মনে হয় না। ট্রাভেল করলে আপনি রিয়েল লাইফ এক্সপেরিয়েন্স পাবেন। ট্রাভেল করলে আপনি শিখতে পারবেন, জানতে পারবেন একদম প্রাকটিক্যালি জীবন’টা যে কতো বেশী সুন্দর। এই ইট, পাথরের শহর যদি আপনার কাছে রীতিমত বিরক্ত হয়ে উঠে, জীবন একঘেয়ে লাগে তাহলে আপনি এখনি বের হয়ে পরুন বাসা থেকে কোনো অভিযানের জন্যে। কোনো অভিযানে গেলে আপনি বুঝতে পারবেন যে আমাদের জীবন’টা আসলে খারাপ না বরঞ্চ অনেক বেশী সুন্দর। আর আপনি যদি একদিনেই পাহাড়, ঝিরিপথ, খুম, ট্রেকিং, সব কিছুর ফিলিংস চান! জীবনে অ্যাডভেঞ্চারের একটা আলাদা মাত্রা চান, একদম নিস্তব্ধ, নিরিবিলি, শান্ত একটা পরিবেশে খুমের মধ্যে ঘন্টার পর ঘন্টা ভেলায় ভাসতে চান তাহলে বান্দরবানের দেবতাখুম আপনার জন্যে এক কথায় পারফেক্ট একটা জায়গা! *_*
বাংলাদেশের মানুষ এখনো দেবতাখুমের সাথে খুব একটা পরিচিত না! মানুষজন যায় না বললেই চলে!! বাংলাদেশে কথা বাদ দিলাম বান্দরবানের মানুষ রোয়াংছড়ি উপজেলার ভিতরে যে অসাধারণ একটা খুম আছে অনেকেই জানে না। দেবতাখুমে গেলেই আপনি বুঝতে পারবেন জায়গাটা কতো বেশী অসাধারণ সুন্দর *_* আপনি ভেলা নিয়ে যতোই আগাবেন ততো জায়গাটা সরু হবে! এমনো জায়গা ভেলা দিয়ে পাড় হবেন যেখানে সূর্যের আলো খুবই কম ঢুকে *_* আর দেবতাখুমে এখনি যাওয়ার বেস্ট সময়। বৃষ্টি হচ্ছে আর খুম একদম পানি দিয়ে ভরা থাকবে, অনেকদূর পর্যন্ত ভেলা নিয়ে যেতে পারবেন!
তাই আপনার হাতে যদি একদিনো সময় থাকে(রাতের বাসে আসবেন, ভোরে নামে সারাদিন ঘুরে আবার রাতের বাসে ব্যাক)দেবতাখুমের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরুন!
দুই পাশে বিশাল বিশাল পাহাড়, সব কিছু নিস্তব্ধ, এর মধ্যে দিয়ে ভেলায় ভাসা! আর কি লাগে *_*
কীভাবে যাবো?
১. যেকোনো জায়গা থেকে প্রথমে বান্দরবান। দেবতাখুমের র্যুট;
বান্দরবান>রোয়াংছড়ি বাজার>কচ্ছপতলী>শীলবাধা পাড়া>দেবতাখুম
বান্দরবান থেকে রোয়াংছড়ি বাজার যাওয়ার উপায় বাস/সিএনজি। বাসের ক্ষেত্রে;বান্দরবানের রোয়াংছড়ি বাসস্ট্যান্ড থেকে রোয়াংছড়ি’র বাস ছাড়ে। বান্দরবান শহর থেকে রোয়াংছড়ি বাসস্ট্যান্ডে যেতে সিএনজি/অটো পাওয়া যায়।জনপ্রতি ভাড়া ১০/১৫টাকা নিবে
২. বান্দরবান থেকে রোয়াংছড়ি বাস জনপ্রতি ৬০টাকা। সময় লাগবে ১ঘন্টার মতন।
৩. আর সিএনজি’র ক্ষেত্রে বান্দরবান থেকে সরাসরি একদম রোয়াংছড়ি বাজারের সিএনজি পাবেন৷ সিএনজি রিজার্ভ ৫০০টাকার মতন নিবে
৪. এবার বলে রাখি, দেবতাখুমে আপনার গাইড লাগবে আর গাইড রোয়াংছড়ি বাজার থেকেই নিতে হবে। কারণ এখানে পুলিশ এন্ট্রি আছে+পরে আবার কচ্ছপতলী’তে আর্মি এন্ট্রি আছে। আর আপনার গাইড’ই সব ব্যাবস্থা করবে। আর হ্যাঁ, যাওয়ার আগে অবশ্যই মনে করে আপনার জন্মনিবন্ধন/NID কার্ডের দুই কপি ফটোকপি নিয়ে যাবেন। এন্ট্রি করার সময় লাগবে।
৫. রোয়াংছড়ি থেকে কচ্ছপতলী যেতে হবে সিএনজি’তে। সময় লাগবে ৩০/৩৫মিনিটের মতন।
৬. কচ্ছপতলীতে এন্ট্রি করার পর তারপর হাঁটা পথ+পাহাড় ট্রেকিং করে শীলবাধা পাড়া৷ কচ্ছপতলী বাজারের পর আর দোকান পাবেন না তাই পানি, খাবারদাবার কিনতে চাইলে এখান থেকেই কিনতে হবে। কচ্ছপতলী থেকে শীলবাধা পাড়ায় যেতে সমগ লাগবে ৩০/৪০মিনিটের মতন। পথটা একটু কষ্টকর, তাই সর্তক থাকবেন
৭. শীলবাধা পাড়া থেকে তারপর ১০মিনিটের মতন পথ হাঁটলেই দেবতাখুম। তারপর ভেলা নিয়ে খুমের রাজ্যে *_*
৮. ফেরার পথও একি র্যুট। দেবতাখুম>শীলবাধা পাড়া>কচ্ছপতলী>রোয়াংছড়ি বাজার>বান্দরবান।
৯. অবশ্যই মনে রাখবেন রোয়াংছড়ি বাজার থেকে বান্দরবানের শেষ বাস বিকাল ৫টায়। এরপর আর বাস নাই। তাই বাসে যেতে চাইলে এর মধ্যেই আপনার বান্দরবান থাকতে হবে। তবে সিএনজি সবসময় পাবেন।
কী কী অবশ্যই মনে রাখবো?
১. প্রথমেই বলি জায়গাটা একদম সেফ! আর্মি এলাকা! নিরাপত্তা নিয়ে ভয়ের কিছু নাই।
২. যারা সাঁতার জানেন না তাদের জন্যে লাইফ জ্যাকেট হলে ভাল হয় কারণ ভেলায় ভাসার সময় যখন তখন ভেলা খুমের মধ্যে পাথরের সাথে লেগে উল্টায় যাইতে পারে। আর খুমের পানি ভালই গভীর। তাই লাইফ জ্যাকেট হলে বেস্ট হয়৷ আপনি যদি একটু সর্তক থাকেন সেক্ষেত্রে ভেলা থেকে পরে যাওয়ার কোনো ভয় নাই। তবে মাথায় রাখবেন, জীবন আগে! তাই লাইফ জ্যাকেট সঙ্গে নিয়ে যাওয়াই বেস্ট অপশন
৩. এক ভেলায় দুইজন উঠতে পারবেন
৪. দুপুরে খাওয়াদাওয়া আপনি রোয়াংছড়ি, কচ্ছপতলী বা শীলবাধা পাড়া যেকোনো জায়গায় খেতে পারবেন৷ তবে যেখানেই খাওয়াদাওয়া করেন না কেনো আগেই বলে রাখবেন, উনারা ব্যাবস্থা করে রাখবে৷
৫. ভেলায় কায়াকিং করার সময় আপনার নিচের দিক একদম পানিতে ভিজে যাবে৷ তাই সেক্ষেত্রে পলিথিন নিয়ে যাবেন মোবাইল ক্যামেরা সেফ রাখার জন্যে। সবচেয়ে ভাল হয় যদি পলিথিনে সব ঢুকায় ব্যাগে রেখে দেন।
৬. পাহাড় ট্রেকিং বা খুমে ভাসার সময় সর্তক থাকবেন!
৭. রাতে যদি কেউ থাকতে চান রোয়াংছড়ি, কচ্ছপতলী বা শীলবাধা পাড়া কোনো জায়গায়ই ভাল থাকার ব্যাবস্থা নাই৷ আপনার বান্দরবান এসে রাতে থাকতে হবে।
৮. গাইড চার্জ ১০০০টাকা
৯. ভেলার খরচ জনপ্রতি ১০০
১০. আমাদের গাইড পলাশ দাদা: 01838717735
আপনারা যাওয়ার আগে যোগাযোগ করে যেতে পারেন উনি রোয়াংছড়ি বাজারে থাকবেন।
খরচাপাতি:
আমরা ৪জন গেছিলাম। আমরা যদিও একদিন ছিলাম বান্দরবানে। তবে শুধুমাত্র দেবতাখুমের ক্ষেত্রে আমাদের পার হেড ঢাকা থেকে যাওয়া আসা সহ খরচ হয়েছিল ২১০০র মতন। আমরা সিএনজি’তে যাতায়াত করছি। তবে বাসে গেলে খরচ অনেক কমে যাবে।
sadman sakib ayon
আপনারা আমার দেবতাখুম অভিযানের লেখা+ছবি দুইটাই নিছেন আবার পোস্টও করছেন! একবারো আমার কাছে কি অনুমতি নিছেন?
কারো লেখা বা ছবি না জানায় যে পোস্ট করতে হয় এইটা জানেন না?
দয়া করে আমার প্রশ্নের উত্তর দিবেন এই কাজটা কেনো করছেন আপনারা?
ratonshahadat
আমার নিচে আপনার ক্রেডিট দিয়েছি।। ফেইসবুকের পোষ্ট গুলা যেহেতু পাবলিক তাই আমরা ভেবেছি আপনার পোষ্ট আমাদের ওয়েবসাইটে দিলে মানুষ আরও বেশী উপকৃত হবেন।। আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত।।