মন মাতানো এই যেন এক অপরূপ সৌন্দর্যের প্রতীক

এই একটা যায়গা, যে যায়গার কথা মনে পড়লে, যে যায়গার কথা ভাবলে, যে যায়গার ছবি দেখলে আমার আর মন খারাপ হয়না, থাকেনা। যেখানে মন খারাপেরা কিছুতেই কাউকে আঁকড়ে ধরতে পারেনা। এখানে মন খারাপেরা বাতাসের সাথে উড়ে উড়ে, মেঘেদের সাথে ভেসে ভেসে, সুখের বৃষ্টি হয়ে ঝরে পরে।
যেখানে মন খারাপেরা পাহাড়ের গায়ে গায়ে ছড়িয়ে গিয়ে আদরের কুয়াসা হয়ে জড়িয়ে ধরে, যেখানে মন খারাপেরা পাইনের গভীর অরণ্যে হারিয়ে গিয়ে, একমুঠো রোমাঞ্চ হয়ে শিহরণ তুলে যায়, যেখানে মন খারাপেরা পাথরে পাথরে বাড়ি খেয়ে, উচ্ছ্বাসের ঝর্ণাধারা হয়ে নদীর অনন্ত আলিঙ্গনে নিজেকে সপে দেয়। যেখানে মন খারাপেরা পাহাড়ি নদীর পাগল করা স্রোতের সাথে ভেসে ভেসে চলে যায় দূর অজানায়, দেশ থেকে দেশান্তরে। আর এই একটা যায়গা, যে যায়গা নিয়ে আমার লেখার কোন শেষ নেই যেন!
কিভাবে শেষ হবে লেখা? আর কিভাবেই বা হবে মন খারাপ? তার যে কোন উপায়ই সে রাখেনি। তার সবকিছুই যে আমাদের সাধারনের কাছে অমোঘ, অপার্থিব আর অসহ্য সুখের।
এখানে যখন মেঘ করে, মেঘেরা যেন তখন সবচেয়ে আপন কেউ। ছুঁয়ে ছুঁয়ে যায়, ভিজিয়ে দেয়, জানালার ধারে এসে আভিমান করে থাকে, জানালা খুলে দিলেই নিজের অভিমান ভেঙে আপনাকে আলিঙ্গনে বেঁধে ফেলে মন খারাপ দূর করে দেয়, মুখে এক চিলতে হাসি ফুটিয়ে তুলতে বাধ্য করে। মেঘেরা এখানে মন ভালো করে দেয়, এক মুহূর্তেই।
এখানে যখন বৃষ্টি নামে, অবিরত ঝরতে থাকে। বৃষ্টির ছন্দেরা তখন, অবিরাম গুণগুনিয়ে গান শুনিয়ে যায়। সবুজ পাহাড় তখন রুপালী রঙে সেজে ওঠে, জানালার কাঁচে তখন কতরকমের আকুবুকি করতে ইচ্ছে হয়। রঙিন ফুলেরা, সবুজ ঘাস গুলো, ঝুলে থাকা গাছের লতারা, সবাই যেন সুখের নাচন শুরু করে। ভিজে ভিজে সবুজ আরও সবুজ হয়ে ওঠে। রঙিন ফুল গুলো আরও বেশী রঙের হয়ে ওঠে।
এখানে যখন কুয়াসা পড়ে, চারদিক একটু আদুরে চাদরে ঢাকা পরে যায়। পাহাড়, পাইনের বন, নদী, ঝর্ণা, আকাশ। সব যায়গায় কেমন একটা ধোঁয়া ধোঁয়া অবাক করা প্রকৃতি তৈরি হয়। অন্যরূপে পৃথিবীকে চেনায়। এখানের সবকিছুই তখন একটা অন্য জগতে রূপ নেয়। ইচ্ছে হয় অচেনা পাইনের বনে হেটে হেটে হারিয়ে যাই ধোঁয়া ধোঁয়া সেই অপরূপ অরণ্যে। ইচ্ছে হয়ে কোন এক পাহাড়ের গায়ে হেলান দিয়ে নিজেকে জড়িয়ে ফেলি, ধোঁয়া ধোঁয়া এই কুয়াসার চাদরে, ইচ্ছে হয় ধোঁয়া ওঠা নদীর স্রোতের সাথে ভেসে যাই কোন দূর অজানাতে।
এখানে যখন সূর্য হাসে, একই সাথে যেন সবকিছুই ঝলমল করে হেসে ওঠে। পাহাড়, বন, নদী, ঝর্ণা, গাছ, ঘাস, লতাপাতা আর মাঠ। সবাই যেন সূর্যের আলোতে আলোকিত হয়ে ওঠে মুহূর্তেই। নিজেদেরকে সাজিয়ে তোলে যার যার খেয়ালে। কেউ রুপালী, কেউ সোনালী, কেউ নীল আর কেউ কেউ নানা রঙের স্যাডোতে। তখন চোখের দৃষ্টিরা ভীষণ অসহায় হয়ে পড়ে। চোখ দুটো ভীষণ অসহায় হয়ে মনকে জানায় চোখ কেন দুটোই হল? কেন আরও দুটি চোখ নেই মানুষের? দুই চোখে আর কতটাই দেখা যাবে সূর্যের হাসিতে ঝরে পরা শত রকমের রূপের?
একদিকে পাহাড় সবুজ পাহাড়ের নীল হয়ে যাওয়া, অন্যদিকে সেই সবুজ পাহাড়ের উপরেই বরফ মোড়ানো পাহাড় চূড়াদের নানা রঙে সেজে ওঠা। একদিনে গভীর পাইনের বনে হলুদ আনন্দ তো অন্যদিকে ঝরে পরা ঝর্ণা ধারায় রঙধনু রঙের খেলা। আর বয়ে চলা রুপালী নদীর ঝলমলে হাসিতে পাগল করে তোলা। এই পাহাড়, অরণ্য, নদী, ঝর্ণা এদের এতো এতো রূপের ঝলকানি কি শুধু দুই চোখ দিয়ে প্রান ভরে উপভোগ করা যায়? যায়না।
হয়তো কোন এক সূর্য রাঙা সকালে, ভীষণ অলস দুপুরে বা বৃষ্টি শেষের বিলাসী বিকেলে যদি ইচ্ছে হয় রাজা হতে, তবে তো আর কথাই নেই। নিজের হোটেল বা কটেজ মালিকের পালিত ঘোড়াতে চেপে বেড়িয়ে পরা যায় রাজার বেশে। টগবগ করে ছুটে চলা যায়, অচেনা পাহাড়ে, অজানা অরণ্যে, হারিয়ে যাওয়া যায় দূর থেকে দূরে। যেখানে আর যতদূর ইচ্ছে করে। কখনো ইচ্ছে হলে ঘোড়ায় চড়েই পারি দেয়া যাবে অবাধ্য নদী, উচ্ছ্বাসের ঝর্ণাধারা আর হাজারো পাথর বিছানো বন্ধুর পথ অনায়াসে।
কোন এক পাহাড় চূড়ায় উঠে গিয়ে ঘোড়াটাকে বেঁধে রেখে নিজেকে সপে দেব সেই পাহাড়ের কাছে, অপলক তাকিয়ে থাকবো নীল আকাশের দিকে, অলস সময় কাটাবো হেটে, বসে বা গড়িয়ে। শেষ বিকেলে যখন দিনের আলোরা ছুটি চাইবে আমার কাছে, ঘোড়ায় চড়ে বসবো। রোদ, মেঘ, বৃষ্টি আর কুয়াসাদের লুকোচুরিদের সাথী করে ফিরে আসবো নিজের আবাসে।
ক্লান্ত শরীরটাকে এলিয়ে দেব সবুজ ঘাসের গালিচায়। হয়তো একটু ঝিরঝিরে বাতাস, নতুবা এক পশলা বৃষ্টি অথবা একটুখানি কুয়াসায় আলিঙ্গনে সিক্ত হতে হতে জীবনের নতুন কোন মানে খুঁজে পাবো, বেঁচে থাকার স্বাদ কি সেটা অনুভব করবো, বিধাতার সীমাহীন উপহারের কাছে নিজেকে ভীষণ ভাগ্যবান ভেবে কৃতজ্ঞতায় নুইয়ে পড়বো।
ইস একটা জীবনে এমন যায়গায় যেতে পারার আনন্দে আনন্দে নিজেকে হারিয়েই ফেলবো ভাবনার, কল্পনার আর স্বপ্নের এক অন্য জগতে।
এটা আর কোন যায়গা নয়। আমার ভীষণ, ভীষণ আর ভীষণই প্রিয় যায়গা। আমার গোপন অভিসারের, নিজেকে নিশ্চিন্তে সপে দেয়ার, ২১ বছর বয়সী টাইটানিকের যেন সেই রোজ, সেই কেটউইন্সলেট এর মত!
Share:

Leave a Comment