
Sunamganj Tanguar Haor trip
“আমি বাংলায় দেখি স্বপ্ন,
আমি বাংলায় বাঁধি সুর
আমি এই বাংলার মায়াভরা পথে হেঁটেছি এতটা দূর।”
লাইন গুলো নিজে নিজেই মাথায় চলে আসে কিছু জায়গায় গেলে, সুনামগঞ্জ সেগুলোর মধ্যে অন্যতম।
নির্দিষ্ট কোনো ট্যুরিস্ট স্পট না, পুরো সুনামগঞ্জই যেনো এক মায়া। জোৎস্নার শহর হিসেবে পরিচিত জেনে গেলেও মেঘলা আকাশ আর বৃষ্টির জন্য তা দেখা হয়নি কিন্তু তাও কমতি ছিলোনা কিছুতে।
যাওয়ার প্ল্যান টা গত বছর থেকেই ছিলো কিন্তু যাওয়া হচ্ছিলোনা সবার সময় না মিলার কারনে। বাধা এবারো আসলো।
রাত ১১ টার বাস, সন্ধায় কাউন্টার থেকে ফোন, সিলেটের বাস যাবেনা,ব্রিজ ভেংগে গিয়েছে। অনেক এদিক ওদিক করে কুল কিনারা না পেয়ে পরে মাইক্রো রিজার্ভ করেই শুরু করি যাত্রা।
আবার আসার দিন সিলেট থেকে ট্রেনে ফিরার প্ল্যান থাকলেও টিকেট জোগাড় করতে পারিনি, ফলে তাহিরপুরে আর ব্যাক না করে আমরা মধ্যনগর এ এসে নৌকা ছাড়ি এবং এখান থেকে নেত্রকোনা, নেত্রকোনা থেকে ঢাকা আসি।
.
হাওরে যেয়ে সবাই এক রাত থাকলেও আমাদের প্ল্যান ছিলো দুইরাত থাকার, যতটুকু অনুভব করা যায় আর কি! ❤
ওয়াচ টাওয়ার এ লাইফ জ্যাকেট পড়ে পানিতে ঘন্টার পর ঘন্টা ভেসে থাকা, সোয়াম্প ফরেস্টের মত জায়গাটাতে ধীরে ধীরে হেটে ঘুরে দেখা, রাতে ঘাটের একটু দূরে নৌকা ভিড়িয়ে খোলা আকাশের নিচে সারারাত পার করা, কালো আকাশে আবছা সাদা মেঘ গুলো তে ছবি আকানো, নিলাদ্রির সবুজ পানিতে গোসল করা এগুলো স্মৃতি ভোলার মত না।
প্রথম রাত থেকেছিলাম ট্যাকেরঘাটে, সামনে বিশাল পাহার, পিছে যতদুর দেখা যায় শুধু পানি। বাতাসে নৌকার হাল্কা দোল খাওয়া সবকিছুই ঠিক ছিলো, তারপরেই ইতিহাস 😐
সাউন্ড স্পিকার নিয়ে হাজির কিছু নৌকা আর তাদের বাজানো কিছু লিজেন্ডারি খ্যাত গান 🙂 আল্লাহ তাদের হেদায়েত দান করুক।
এজন্য পরের রাত টা থেকেছি মুসলিমপুর থানা ঘাটের একটু দূরে, এইখানে আমরা ছাড়া আর কেউই ছিলোনা। ভয়ংকর শান্তির রাত ছিলো এটি। যারা থাকবে শুধু তারাই অনুভব করবে এটা।
বারিক্কা টিলা অনেক সুন্দর জায়গা, সে হিসেবে শিমুল বাগান যাওয়া আসা আমার কাছে সময় নষ্ট মনে হয়েছে এই সিজনে।
অন্যদিকে নিলাদ্রি খুব সুন্দর।
পাহাড় গুলো সব ইন্ডিয়াতেই পরেছে। খারাপ লাগে অনেক তাইনা? আমাদের ও লেগেছে। কিন্তু বাস্তব কথা কি জানেন? ভালো হয়েছে সেগুলো এদেশে নেই। থাকলে পাহাড় কেটে কুটে শেষ করে ফেলতাম আমরা। রক্ষণাবেক্ষণ খুব করি তো আমরা তাই আর কি। বগালেকের কথাই ভাবেন, কি ছিলো আর এখন কি। থাক আর না বলি…
খরচ –
দুইরাতের জন্য নৌকা ভাড়া পরেছে ৮হাজার টাকা আর বাবুর্চি ১০০০ টাকা।
বাজার আপনার খাবারের উপর, গ্যাস ৭০০ টাকা পরেছে আর আই পি এস প্রতিদিন ৪০০ টাকা। নেত্রকোনা থেকে ঢাকা বাস ভাড়া ২৫০ টাকা। মধ্যনগর থেকে ঢাকার ভালো বাস নেই,তাই নেত্রকোনা হয়ে আসলেই ভালো (যদি এই র্যুটে আসা হয় আর কি) । মধ্যনগর থেকে নেত্রকোনা যেতে
প্রতিজন সর্বোচ্চ ১৫০ টাকা পরবে ।
ট্যাকেরঘাট থেকে বাকি স্পট গুলো ঘুরতে বাইক না নিয়ে অটো নিয়েছিলাম ,খরচ কম পড়েছিলো।বাইক ২৫০ টাকা করে, 2জন বসা যায় আর এদিকে অটো রিজার্ভ ৯০০টাকা পড়েছে।
.
নিলাদ্রি বা ওয়াচ টাওয়ার এ পানিতে নামলে সাতার না জানলে লাইফ জ্যাকেট পড়ে নামাটাই ভালো হবে।
আর
ওয়াচ টাওয়ারে ছোট নৌকা গুলো তে উঠার আগে ভাড়া ঠিক করে তারপর উঠুন। যা খুশি তাই দিবেন বলে উঠাবে তারপর শেষে ৫০ টাকা দিলে নিবেনা।
৫০ ট্যাকা????মাত্র???? কি কন? ( লজ্জা পেয়ে যাবেন)
তার চেয়ে ভালো আগেই ঠিক করেন আর ঝাপাঝাপির সময় যেকোনো একজন নৌকায় থাকুন সবার টাকা আর মোবাইলের ব্যাগের পাশে।নাহলে একটু পরে কিছু নাও পেতে পারেন। সাবধান থাকবেন।
শিমুল বাগানে এই সিজনে যেয়ে ভালো লাগেনি সত্যি বললে,অপরদিকে বারিক্কা টিলা সুন্দর লেগেছে।
.
ট্যাকেরঘাট জায়গাটা অনেক সুন্দর, সামনে পাহাড়, পিছনে পরিস্কার হাওরের পানি। কিন্তু ঘাটের পানির দিকে তাকালে লজ্জা হবে। পলিথিন,চিপ্সের প্যাকেট,বোতল, কলা কমলার খোসা আর ও কত কি। জোরে স্পিকারে গান শোনা মানুষ গুলোর কাছে আর কি আশা করা যেতে পারে। এইসব স্থানে সাউন্ড বক্স ব্যানড করার কোনো ওয়ে নেই? থাকলে ভালো হতো। পুরো রাত টা নষ্ট করবে আপনার এইটুকু কনফার্ম।
এই গ্রুপের এমন কেউ যদি থাকেন যারা এইরকম কাজ করেন তারা দয়া করে এগুলো বন্ধ করেন। আর পানিতে ময়লা ফেলা বন্ধ করেন। ঘাটে ছোটো দোকান গুলোর পাশে কোনো ময়লার ঝুড়ি পাইনি, ওরা সব যেখানে সেখানে ফেলে দেয় যা খুবই প্যারাদায়ক। যা কিছু ফেলার মত সেগুলো বড় একটা পলিথিনে জমা করে ফিরে এসে তাহিরপুর এ ফেলেন তাও হবে। এগুলো আমাদেরই জায়গা,আমাদেরই সম্পদ। বাইরের ট্যুরিস্ট এসে পরিস্কার করে দিয়ে যাবেনা,আর গেলেও তা লজ্জাজনক হবে আমাদের জন্য।
সচেতন হোন,অন্যকেও হতে সাহায্য করুন।