অবাধ্য অনুভূতির প্রকাশ, পাগলকরা পেহেলগামের প্রেমে

কিছু প্রেম থাকে, যাকে কখনো ভোলা যায়না, মন থেকে দূরে সরিয়ে রাখা যায়না। সে প্রেম হতে পারে কৈশোরের, যৌবনের, পরিপক্ক বয়সের, এমনকি সে প্রেম জীবনের শেষ বেলাতে এসেও ধরা দিতে পারে। প্রেম ব্যাপারটাই আসলে এমন। কখন, কোথায়, কিভাবে আর কেন যে কারো জীবনে এসে পরবে ভাবতেই পারবেনা কেউ। প্রেম ব্যাপারটাই এমন, বলে কয়ে বা আগে থেকে জানান দিয়ে কখনো আসেনা। যদি কখনো এমন এসেও থাকে তবে সেটা ঠিক প্রেম নয়, প্রেমের মতই অন্যকিছু।

আমার কাছে প্রেম হল অবাধ্য, অশান্ত, অসহ্য, অপার্থিব সুখের একটা অনুভূতি, যেটা কোন বয়স, সময় আর অবস্থান দেখে হয়না। প্রেম হুট করে আর নিজের অজান্তেই হয়ে যায়। প্রেম তো কখনো কখনো এমনও হয় যে, সে যে প্রেমে পড়েছে সেটা সে নিজেও জানেনা, বুঝতে পারেনা। শুধু বিশেষ কিছুর জন্য মন কেমন করে, বুকের মধ্যে একটা হাহাকার ওঠে, একবার দেখার জন্য চোখ তৃষ্ণার্ত হয়ে ওঠে, একটু ছুঁয়ে দেয়ার জন্য প্রান আনচান করে। আর শত চেষ্টা করে যদি চোখের সামনে বা স্পর্শের অনুভূতিতে আসে তবে তখন অনুভূতিরা ভোতা হয়ে যায়, বোধ লুপ্ত হয়ে থাকে, স্বাভাবিক ভাবনা চিন্তা কোথায় যেন হারিয়ে গিয়ে প্রেমে যে পড়েছে তাকে বোবা করে দেয়।

কোন অনুভূতিই তখন প্রকাশ করা হয়ে ওঠেনা। অনন্ত, অবাধ্য আর অপার প্রেম গুলো এমনই বোধয় হয়ে থাকে। অন্তত আমার তো তেমনই মনে হয়। ক্ষণে ক্ষণে যে প্রেম তার উপস্থিতি জানান দিয়ে যায়, মনকে উদাস করে দেয়, প্রানে পাগলা হাওয়া বইয়ে দেয়, হৃদয়কে উত্তাল স্রোতে ভাসিয়ে নিয়ে যায়, বাস্তবতাকে বরফের মত গলিয়ে দিয়ে ঝরে ঝরে পরে যায়। হ্যাঁ কাশ্মীর, আরও বিশেষ ভাবে বললে কাশ্মীরের পেহেলগাম আমার কাছে তেমনই এক প্রেমের নাম। অবাধ্য, অশান্ত, অপার্থিব এক প্রেম।

পেহেলগামের কোন যায়গা রেখে কোন যায়গার কথা বলব ঠিক বুঝে উঠতে পারিনা আমি। আমাদের যাদের একটু সাধ্য আছে, এমন অপার্থিব প্রেমে বিলীন হবার মত অল্প বিলাসিতা আছে, যারা শুধু ঘুরে বেড়াতে আর জীবনটাকে একটু উপভোগ করতেই শুধুমাত্র পেহেলগামে যাই, তাদের কাছে পেহেলগামের সবকিছু, সবটুকুই যেন সুখের এক ভূমি, স্বর্গের হাতছানি যার সবকিছু জুড়ে, অপার্থিব তার প্রতিটি কোনের যে কোন কিছুই। পাইনের অরণ্য, ঝর্ণাধারা, লিডার নদী, স্রোতধারার মাঝে মাঝে নানা রকম পাথর, কত রঙের পাহাড়, প্রতিটি কোনই যার সুখের পসরা সাজিয়ে বসে থাকে সবসময়।

আমি কার কথা বলবো, কতটুকু বলবো, কিভাবে বলবো? তার সবকিছু জুড়েই তো শুধু গোপন সুখের অসহ্য অনুভূতি জড়ানো। পাইনের অরণ্য? সে তো ছায়ায় ছায়ায় ঘেরা এক স্বর্গের বনভূমি যেন, সুখের আচ্ছাদনে ঘেরা পুরো অরণ্যের সবটুকু জুড়ে। পাহাড়ি মাটির গভীর থেকে ঝর্ণা ধারার বয়ে চলার স্রোতের তোড়ে বেরিয়ে পরা পাইনের শেকড়, সেও যেন সুখের নতুন কোন উপমায় নিজেকে তুলে ধরতে চাইছে এখানে সেখানে। আর সেই সুখের আচ্ছাদনে আচ্ছাদিত পাইনের অরণ্যে ঘোড়ায় চড়ে অচেনা পাহাড়ের অজানা বাঁকে বাঁকে নিরুদ্দেশ ঘুরে বেড়ানোর মত আনন্দ, তার কি হিসেব আছে? কোন উপমায় কি সেই সুখকে, রোমাঞ্চকে বাঁধা যাবে? আমার তো মনে হয়না।

অথবা যদি লিডারের তীরে বসে থাকা কোন নরম কোমল সবুজ ঘাসের উপরে, যার চারপাশে নানা রকমের ফুলের হাসি, ঘ্রাণ, আদুরের কাটার খোঁচা, বয়ে চলা উচ্ছ্বসিত নদীর জলের ছিটা এসে ছুঁয়ে দেয় আপনাকে? শিহরিত না হয়ে কি পারা যাবে? আমার তো মনে হয়না। উচ্ছ্বসিত নদীর সেই ফুলেল তীরে বসে কাটিয়ে দেয়া যাবে অনন্ত অবসর অনায়াসে, সে আমি নির্দ্বিধায় বলতে পারি। ঘুম, ক্ষুধা, ক্লান্তি কোন কিছুই তখন আপনাকে স্পর্শ করতে পারবেনা। অপার্থিব সুখ যে কাউকে করে তুলবে অনুভূতিহীন।

অথবা যদি একটু সাহস করে, একটা লাফ দিয়ে গিয়ে বসতে পারেন লিডারের উত্তাল স্রোতের মাঝেই আপন মহিমায় নিজের আভিজাত্য জানান দিয়ে যাওয়া কোন পাথরের উপরে, যে পাথরের চারপাশ দিয়ে অনন্ত যৌবনা লিডারের অবিরত স্রোত শুধু বয়ে যায় আর বয়েই চলে যায়, মাঝে মাঝে ভিজিয়ে দিয়ে যাবে আপনাকে, সেই পাথরের উপরে গিয়ে বসতে যদি পারে কেউ, তখন কেমন লাগবে বা লাগতে পারে কোন ধারনা কি কেউ করতে পারবে? কোন বাখ্যা কি কেউ দিতে পারবে সেই অপার্থিব অনুভূতির? কোন উপমায়, কোন ব্যাখ্যায় সেই অনুভূতিকে প্রকাশ করলে হৃদয়ের সবটুকু সুখের অনুভূতি বোঝানো যাবে আমার জানা নেই।

আপাতত আর থাক, এই অবাধ্য প্রেমের, অসহ্য সুখের, অপার্থিবতার বর্ণনা। পাছে হৃদয়, মন-প্রান অশান্ত হয়ে ছুটে চলে যায় তার কাছে, তাকে দেখতে, তার স্পর্শ পেতে। শেষে বাস্তবতা থেকে নিজেকে নির্বাসিত করতে হতে পারে। তাই আপাতত থাক, আমার অসহ্য সুখের আরুভ্যালী আর অলস অবসরের বেতাব ভ্যালীর কথা নাহয় অন্য কোন একদিন, আবেগ অবাধ্য হয়ে উঠলে পরে বলা যাবে।

যাকে যায়না ভোলা, কখনোই আর কিছুতেই। ক্ষণে ক্ষণে যে প্রেমের মাতাল হাওয়া মনপ্রান আনচান করে তোলে, সময়ে বা অসময়ে।

Source: Sajol Zahid‎ <Travelers of Bangladesh (ToB)

Share:

Leave a Comment