অ্যালবাম আলেপ্পি ব্যাকওয়াটার-চেরাই বিচ-ভেম্বানাড় হ্রদ-ভাইপিন দ্বীপ-আলেপ্পি/আলাপুঝা বিচ
কেরালা…
(এই অ্যালবাম আলেপ্পি ব্যাকওয়াটার-চেরাই বিচ-ভেম্বানাড় হ্রদ-ভাইপিন দ্বীপ-আলেপ্পি/আলাপুঝা বিচ এর ছবি দিয়ে সাজানো)
কোচি:-
আরব সাগর এবং ভারতে নোনা জলের দ্বিতীয় বৃহত্তম হ্রদ ভেম্বানাড়ের ওপর অসংখ্য দ্বীপ নিয়ে তৈরি কোচি।
কোচিতে কি কি দেখবেন:-
(১) আথিরাপাল্লি জলপ্রপাত (বাহুবালি-১ সিনেমার শুটিং স্পট) – কোচি থেকে ৭২ কিমি, গাড়ি বা বাসে আসুন। ভারতের নায়াগ্রা ফলস্ বলা হয়। ৮০ ফুট ওপর থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ছে চলাকুডি নদীতে।আথিরাপাল্লি জলপ্রপাতে বলিউডের অনেক সিনেমার শুটিং হয়েছে।ঐশ্বর্য রাই বচ্চনের ‘গুরু’ সিনেমার ‘বারসো রে মেঘা মেঘা’ গানের শুটিং হয়েছে আথিরাপাল্লি জলপ্রপাতে।এছাড়াও ‘দিল সে’ সিনেমাসহ দক্ষিনী প্রচুর সিনেমার শুটিং এখানে হয়েছে।আথিরাপাল্লি মূলত বিখ্যাত হয়েছে ‘বাহুবালী-১’সিনেমার পর থেকে।
(২) মুকুন্দাপুরাম জলপ্রপাত:-আথিরাপাল্লি জলপ্রপাত এর রাস্তা থেকে ১০ কিমি সামনে গেলে মেইন রাস্তার সাথে বিশাল মুকুন্দাপুরাম জলপ্রপাত পাবেন।
(৩) ভজোছাল জলপ্রপাত:-মুকুন্দাপুরাম জলপ্রপাত থেকে ৩ কিমি সামনে গেলে ভজোছাল পার্কের মধ্যে পাবেন ভজোছাল জলপ্রপাত।
(৪) সেন্ট ফ্রান্সিস চার্চ – ১৫০৩ সালের এই গির্জাটি ইউরোপীয়দের তৈরি ভারতের সব থেকে পুরনো গির্জা। কোচিতে মৃত্যু হওয়ার পর ভাস্কো-দা-গামার দেহ কয়েক বছর এখানেই রাখা ছিল।
(৫) সিনাগগ – ১৫৬৭ সালের তৈরি। মাতাঞ্চেরি এলাকায়। স্টেশন থেকে ৯ কি.মি দূরে।
(৬) মাতাঞ্চেরি প্রাসাদ – ডাচ প্যালেস হিসেবে পরিচিত হলেও ১৫৫৫ সালে পর্তুগিজরা এই প্রাসাদটি তৈরি করে কোচির রাজাকে উপহার দেন। সিনাগগের পাশেই।
(৭) ভেম্বানাড়ে নৌকায় ভাইপিন দ্বীপ-ভেম্বানাড়ে আধঘণ্টার জলযাত্রায় এক বিকেলে ঘুরে আসতে পারেন ভাইপিন দ্বীপ থেকে।কোচির জেটি থেকে নিয়মিত স্টিমার ছাড়ে।অথবা আলেপ্পি থেকেও যেতে পারেন।আলেপ্পি ব্যাকওয়াটার হয়েও ভেম্বানাড় ঘুরে আসতে পারবেন।
(৮) কালাডি – আদি শঙ্করাচার্যের জন্মস্থান, কোচি থেকে গাড়ি বা বাসে আসুন। দূরত্ব ৪৪ কিমি। রয়েছে শঙ্করাচার্য মঠ। আরও বেশ কয়েকটি মন্দির। কাছেই রামকৃষ্ণ মিশন। পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে পেরিয়ার নদী।
কীভাবে যাবেন:-
কলকাতার হাওড়া থেকে এর্নাকুলম যাওয়ার দ্রুতগামী ট্রেন অন্ত্যোদয় এক্সপ্রেস। প্রতি শনিবার বিকেল পাঁচটায় হাওড়া ছেড়ে এর্নাকুলম পৌঁছোয় সোমবার সকাল ছয়টায়। শালিমার থেকে সাপ্তাহিক গুরুদেব এক্সপ্রেস। প্রতি বুধবার রাত ১১:০৫-এ ছাড়ে, এর্নাকুলম পৌঁছোয় শুক্রবার বিকেল সোয়া তিনটায়। আছে দ্বিসাপ্তাহিক তিরুঅনন্তপুরম এক্সপ্রেস। ছাড়ে প্রতি মঙ্গল এবং রবিবার রাত ১১:০৫-এ। এর্নাকুলম পৌঁছায় বৃহস্পতিবার এবং মঙ্গলবার বিকেল চারটায়। তা ছাড়া হাওড়া থেকে করোমণ্ডল বা চেন্নাই মেলে চেন্নাই আসুন। চেন্নাই থেকে প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭:৪৫-এ ছাড়ে তিরুঅনন্তপুরম মেল, এর্নাকুলম পৌঁছোয় পরের দিন সকাল ৬:৪৫-এ।এছাড়া আছে তিরুঅনন্তপুরম এক্সপ্রেসও, ছাড়ে বিকেল ৩.১৫-য়, পৌঁছায় ভোর ৩টেয়।এছাড়াও আছে আলেপ্পি এক্সপ্রেস। ২০:৪৫-এ ছেড়ে পরের দিন সকাল ৮:৪০ এ পৌঁছায়।
এছাড়া প্লেনেও যেতে পারেন।কলকাতা থেকে ব্যাঙ্গালুরু হয়ে কোচি।স্পাইস জেট,ইন্ডিগোর ফ্লাইট আছে।ভাড়া ৫৫০০-৬৫০০ রুপি জনপ্রতি।
কোথায় থাকবেন
কোচি এয়ারপোর্ট এর পাশে এবং কোচি শহরে প্রচুর হোটেল আছে।১২০০-১৫০০ রুপির মধ্যে ভালো মানের হোটেল পেয়ে যাবেন।
মুন্নার:-
ভারতের অন্যতম সেরা হিলস্টেশন। উচ্চতা পাঁচ হাজার ফুটের কিছু বেশি। চা-বাগানের জন্য বিখ্যাত। পাহাড়ি পথ এঁকেবেঁকে উঠে গিয়েছে চা-বাগানের মধ্যে দিয়ে। গরমের মধ্যে বাকি কেরালা ঘোরার ফাঁকে এখানে এক রাত থেকে ঠান্ডা উপভোগ করতে পারেন।মুন্নার যখনই যাবেন শীতের কাপড় নিয়ে যাবেন।
মুন্নারে কি কি দেখবেন:-
(১) এরাভিকুলাম জাতীয় উদ্যান:-
মুন্নার থেকে সাত কিমি। নীলগিরি থরের জন্য বিখ্যাত। ওরা ভেড়া আর ছাগলের মিশ্রণ। রাজামালা এন্ট্রি পয়েন্টে টিকিট কেটে উদ্যানে প্রবেশ করতে হবে। গাড়ি কিছুটা এগোবে, তার পর হাঁটা। অভয়ারণ্যের মধ্যে দিয়ে পাহাড়ি পথ পেরিয়ে প্রায় কিলোমিটার দুয়েক হাঁটা যাবে। এই পথে নীলগিরি থর আপনাকে ঘিরে ধরবে। হাঁটাপথের মধ্যেই পেয়ে যাবেন একটি সুন্দর ঝরনা।
(২) পল্লিভাসাল জলপ্রপাত :-
মুন্নার থেকে ২৩ কিমি। এমনিতে মুন্নারের আশেপাশে অনেক জলপ্রপাত। সারা বছর ভালো বৃষ্টি হয় বলে সবাই বেশ হৃষ্টপুষ্ট। কোচির দিকে কয়েক কিলোমিটার এলে বাঁ দিকে একটা রাস্তা পল্লিভাসালের দিকে নেমে গেছে। পথ শেষে পড়বে জলপ্রপাত।
(৩) ইকো পয়েন্ট :-
মুন্নার থেকে টপ স্টেশনের পথে ১৮ কিমি দূরে। প্রাকৃতিক কারণে এখানে ইকো হয়। মাট্টুপেট্টি ড্যামের জলে তৈরি হয়েছে একটা হ্রদ। হ্রদের এপার থেকে চিৎকার করলে, ওপারের পাহাড়ে ধাক্কা লেগে তা ইকো হয়। হ্রদে বোটিং এর ব্যবস্থা রয়েছে।
(৫) কুন্ডলা ড্যাম:-
ইকো পয়েন্ট থেকে সাত কিমি।
(৬) টপ স্টেশন ভিউ পয়েন্ট :-
কুন্ডলা ড্যাম থেকে দশ কিমি, ইকো পয়েন্ট থেকে ১৭ এবং মুন্নার শহর থেকে ৩৫ কিমি। তামিলনাড়ু-কেরালা বর্ডারে ৬,১০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এই ভিউ পয়েন্ট। এখান থেকে এক দিকে যেমন পশ্চিমঘাট পর্বতশ্রেণি উপভোগ করা যায়, তেমনই অন্য দিকে দেখা যায় তামিলনাড়ুর থেনি জেলার উপত্যকা।
(৭) কথাকলি নৃত্য:-
মুন্নারে উপভোগ করতে পারেন কথাকলি নৃত্য।প্রতিদিন বিকেল ৫ টা থেকে ৬ টা কথাকলি নৃত্যের শো হয়।টিকিট জনপ্রতি ৩০০ রুপি।
(৮) বডি ম্যাসেজ:-
মুন্নার গেলে অবশ্যই ফুল বডি ম্যাসেজ করাবেন।
কীভাবে যাবেন:-
কোচি থেকে মুন্নারের দূরত্ব ১৩০ কিমি।কোচি এয়ার পোর্টের পাশে ট্যাক্সি স্ট্যান্ড থেকে গাড়ি ভাড়া করে নিতে পারেন। কোচি থেকে মুন্নার যাওয়ার বাসও পাওয়া যাবে।
কোথায় থাকবেন:-
মুন্নারে থাকার অনেক হোটেল আছে।১২০০-২০০০ রুপির মধ্যে ভালো মানের হোটেল পেয়ে যাবেন।
পেরিয়ার:-
অভয়ারণ্যের জন্য বিখ্যাত। সমুদ্রতল থেকে হাজার তিনেক ফুট উচ্চতায় অবস্থিত এই অভয়ারণ্যের প্রধান বাসিন্দা হাতি। রয়েছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, সাদা বাঘ সহ আরও অনেক প্রজাতির প্রাণী।
কীভাবে যাবেন:-
পেরিয়ারের নিকটবর্তী স্টেশন কোট্টায়াম। দূরত্ব ৯৭ কিমি। গুরুদেব এক্সপ্রেস কোট্টায়াম পৌঁছোয় বিকেল ৪:৪৫-এ। গুয়াহাটি-তিরুঅনন্তপুরম এক্সপ্রেস হাওড়া ছাড়ে প্রতি বৃহস্পতিবার ও শনিবার রাত ১.০৫-এ কোট্টায়াম পৌঁছোয় রবিবার সন্ধে ৬.৪৫-এ।কোচি বা মুন্নার থেকে গাড়ি বা বাসে পেরিয়ার পৌঁছতে পারেন। কোচি থেকে ১৪৬ কিমি, মুন্নার থেকে ১২৭ কিমি।
আলেপ্পি ব্যাকওয়াটার:-
আলেপ্পি বা আলাপুঝা, প্রাচ্যের ভেনিস হিসেবে পরিচিত।রাতে হাউস বোটে থাকতে পারেন।আবার বোট ভাড়া করে দিনেও ঘুরতে পারেন।৩ ঘন্টার জন্য ভাড়া করলে ১৮০০ রুপির মতো লাগবে।আলেপ্পি ব্যাক ওয়াটার ঘুরে ভেন্বানাড় হ্রদ দেখে আলেপ্পি ঘোরা শেষ করবেন।
আলেপ্পিতে কি কি দেখবেন:-
(১) আলেপ্পি সৈকত – আলেপ্পি শহরের প্রধান সৈকত। স্টেশন থেকে মাত্র ১ কিমি দূরে। এখানে রয়েছে লাইট হাউস, ১৮৬২ সালের তৈরি। প্রতি সোম থেকে শুক্রবার বিকেল তিনটা থেকে সাড়ে চারটা পর্যন্ত পর্যটকরা লাইটহাউসের ভেতরে যেতে পারেন। প্রবেশমূল্য দশ রুপি।
(৩) বিকাশনম সৈকত – আলেপ্পি স্টেশন থেকে সাড়ে চার কিমি।
(৪) থুম্পলি সৈকত – বিকাশনম সৈকতের পাশে।
(৫) কুট্টানাড় – আলেপ্পি থেকে ২১ কিমি। ভারতের একমাত্র অঞ্চল যেটা সমুদ্রতল থেকে নীচে অবস্থিত। আলেপ্পি থেকে ট্রলারে ঘোরা যায় কুট্টানাড়।
কোল্লম:-
ভারতের প্রাচীনতম সমুদ্রবন্দর। অষ্টমুড়ি লেক এবং সৈকতের জন্য বিখ্যাত।
কোল্লামে কি কি দেখবেন:-
(১) মহাত্মা গান্ধী সৈকত – শহরের প্রধান সৈকত। আন্তর্জাতিক মানের পার্ক রয়েছে এই সৈকতে।
(২) অষ্টমুড়ি লেক – শহরের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ এই খাঁড়ি হ্রদ। লেকের ধারেই কেরালা পর্যটনের হোটেল।
(৩) ভারকালা সৈকত – কোল্লম থেকে ২৫ কিমি। অসংখ্য অনুচ্চ পাহাড়ে ঘেরা সৈকত। এখান থেকে সূর্যাস্ত দেখুন। রয়েছে জনার্দনস্বামী মন্দির।
কীভাবে যাবেন
গুরুদেব এক্সপ্রেস এবং শালিমার-তিরুঅনন্তপুরম এক্সপ্রেস কোল্লম পৌঁছোয় যথাক্রমে সন্ধ্যা ৬:৫৫ এবং ৭:২২-এ।বাসে বা গাড়িতে কোচি অথবা তিরুঅনন্তপুরম থেকেও কোল্লম যাওয়া যায়। কোচি থেকে কোল্লম ১৩৮ কিমি। তিরুঅনন্তপুরম থেকে ৬৪ কিমি।
তিরুঅনন্তপুরম:-
আপনি আপনার ভ্রমণ শেষ করতে পারেন কেরালার রাজধানী তিরুঅনন্তপুরমে।
তিরুঅনন্তপুরমে কি কি দেখবেন:-
(১) কোভালম সৈকত – কেরালা তথা ভারতের অন্যতম সেরা সৈকত। তিরুঅনন্তপুরম থেকে ১৬ কিমি। তিনটে সৈকত নিয়ে কোভালম। লাইটহাউস সৈকত, সমুদ্র সৈকত এবং হাওয়া সৈকত। বিকেলে এলে সূর্যাস্তের সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে।
(২) সম্মুঘম সৈকত – তিরুঅনন্তপুরমের সব থেকে কাছের সৈকত। স্টেশন থেকে ৯ কিমি।
(৩) নেয়ার ড্যাম এবং অভয়ারণ্য – তিরুঅনন্তপুরম থেকে পোনমুড়ির পথে ২৮ কিমি দূরে। পশ্চিমঘাট পর্বতমালা ড্যামটাকে চারিদিক দিয়ে ঘিরে রেখেছে। রয়েছে একটি অভয়ারণ্য। বাঘ, চিতাবাঘ, হাতির পাশাপাশি, কুমিরের বিভিন্ন রকম প্রজাতির দেখা মেলে।
(৫) পোনমুড়ি – তিরুঅনন্তপুরমের নিকটবর্তী হিলস্টেশন। দূরত্ব ৫৭ কিমি। উচ্চতা ১১০০ মিটার, অর্থাৎ ৩৬০০ ফুট। বাইশটি হেয়ারপিন বেন্ড পেরিয়ে রাস্তা উঠে গিয়েছে পাহাড়ের গা বেয়ে। পোনমুড়ির রাস্তায় দুটো জলপ্রপাত। কাল্লার ও মিনমুট্টি।
সবচেয়ে ভালো হয় কোচি থেকে ৬-৭ দিনের জন্য একটি গাড়ি ভাড়া পুরো কেরালা ঘুরে দেখা।তাহলে ঝামেলা কম হয়।কেরালা ছবির মতো সুন্দর।আর কেরালার মানুষগুলো খুব বেশী ভদ্র এবং হেল্পফুল।
source: Dip Biswas