ইউরোপের ভ্রমনে চারটি বাজেট ট্যুর

বাজেট ট্রাভেলারদের কাছে প্রতিটি মহাদেশে ভ্রমণ করা একটি বিশাল পরিকল্পনার ব্যাপার। সেদিক দিয়ে ইউরোপ বাজেট ট্রাভেলারদের কাছে অল্প পয়সায় ভ্রমণ একটি চ্যালেঞ্জের মতোই। ইউরোপ উপমহাদেশের সংস্কৃতি, ইতিহাস এবং দারুণ দারুণ সব ল্যান্ডস্কেপের মায়ার জালে ফেঁসে সব ট্রাভেলারই উন্মুখ হয়ে থাকে এখানে ভ্রমণ করার জন্য। আবার অনেকে বছরের পর বছর ধরে অর্থ জমিয়ে সময়ের অভাবে যেতে পারে না। কিন্তু আপনি যদি জেনে বুঝে ব্যয় করেন সেক্ষেত্রে আপনার ইউরোপ ভ্রমণটি সফল হয়ে যেতে পারে খুব কম সময়ে ও কম খরচে।

সাধারণত অনেক ভ্রমণার্থীরই ধারণা থাকে, ইউরোপ মহাদেশে গেলে প্রচুর টাকা-পয়সার দরকার হয়। কিন্তু অন্যান্য মহাদেশ থেকে ইউরোপ মহাদেশে ভ্রমণ যে কতটা সহজলভ্য সেটা অনেকে জানেন না। কারণ একটি ব্যাপার যদি বলি শুধুমাত্র একটি ভিসা গ্রহণ করলে আপনি ১৭ থেকে ১৮ দেশ বিনা বাধায় ঘুরতে পারবেন। সেই ক্ষেত্রে অন্যান্য মহাদেশের তুলনায় অর্থ ব্যয় অনেক কম হয় বলা চলে।

এছাড়া ইউরোপের সবগুলো দেশের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা এতটাই ভালো, ইচ্ছা করলেই এক দেশ থেকে আরেক দেশে মুহূর্তের মধ্যে চলে যাওয়া যায় কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে। তাই জেনে বুঝে যদি ব্যয় করতে পারেন এবং মাথা থেকে খরচ, খরচ আর খরচের চিন্তাটা যদি বের করতে পারেন তাহলে আপনাকে আর এই সর্বশ্রেষ্ঠ গোলকধাঁধায় পড়তে হবে না। আজ আমি ইউরোপের কিছু বাজেট ডেস্টিনেশন সম্পর্কে বর্ণনা দেব।

আলবেনিয়ান কোস্ট:
আপনি যদি ভূমধ্যসাগরীয় নীল রঙের পানিযুক্ত বিশাল সমুদ্র সাথে সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত এবং চকচকে বালির বীচ খুঁজে থাকেন তাহলে আলবেনিয়ান কোস্টে চলে আসুন। এখানে বিভিন্ন বাজেটে ভ্রমণ করা যায়। যেমন অতি উচ্চ বাজেট থেকে শুরু করে অতি নিম্ন বাজেট। এখানে আপনি খুব পরিমিত মাত্রার খরচ করে থেকে যেতে পারবেন দিনের পর দিন। গ্রিস থেকে এখানে সরাসরি প্রবেশ করা যায়। ট্রেন বা বাসে করে দ্রুত চলে আসতে পারবেন এখানে।

ঘুরে বেড়াতে পারবেন নৌকায় করে নিকটবর্তী দ্বীপগুলোতে। এখানকার সামুদ্রিক খাবার অত্যন্ত সস্তায় পাওয়া যায় রাস্তায় রাস্তায়। তাই খাওয়া দাওয়া নিয়ে চিন্তা করার দরকার নেই। কিন্তু একটু সস্তা মানের হোটেল খুঁজতে হলে চলে যেতে হবে পূর্ব দিকে, যেখানে খুব সস্তায় কটেজের রুম ভাড়া পাওয়া যায়। এছাড়া পাওয়া যায় বেশ কিছু ডরমেটরি। এখানে মাত্র ১৫-৩০ ইউরো খরচ করে দুই থেকে তিন দিন আয়েশ করে থাকতে পারবেন।

সারজোভো, বসনিয়া-হারজেগোভিনা
ইউরোপের একটি প্রাচীন শহর হিসেবে এই শহরটি সর্বাধিক খ্যাত। কারণ এই শহরেই পাওয়া যাবে ইউরোপের প্রাচীন ইতিহাস সম্বলিত বেশ কয়েকটি জাদুঘর। এছাড়া শহর ভ্রমণ এবং ইউরোপের শিল্প সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হবার জন্য এই এলাকায় প্রতিদিন উদযাপিত হয়ে থাকে কোনো না কোনো বিশেষ উৎসবের। উৎসবে আপনি এখানকার প্রাচীন এবং বর্তমান সমাজ ব্যবস্থা সম্পর্কে সহজেই ধারণা পেয়ে যাবেন। ইচ্ছা করলে উপভোগ করতে পারবেন তাদের শিল্প সংস্কৃতি।

এই অঞ্চলটি মূলত হস্তশিল্পের কারিগরদের কাছে স্বর্গরাজ্য। কারণ এই এলাকাটিতে প্রায় সকল ধরনের উপাদান দিয়ে হাতে করে প্রস্তুত করা হয় বিভিন্ন রকম পণ্য সামগ্রী। তাই যদি বেশ কয়েকটা দিন সকালের কফির সাথে শুরু করে সারাটা দিন এর প্রাচীন স্থানীয় শিল্পের স্বাদ নিতে চান তবে অবশ্যই চলে আসবেন এই শহরে। খাওয়া, হোটেল ভাড়া আর ঘোরাঘুরিতে প্রতিদিন ২০- ৩০ ইউরোর মধ্যে সব হয়ে যাবে।

বাঁশকো, বুলগেরিয়া:
প্রচণ্ড গরমে জরাজীর্ণ অবস্থা থেকে হঠাৎ করে মুক্তি পেতে চাইলে এই জায়গাটির তুলনা নেই। ইউরোপের সব থেকে শীতবহুল এলাকার মধ্যে এই এলাকাটি স্নো এর জন্য বিখ্যাত। বছরের বেশ কিছু সময় এখানে আসলে পাবেন কোমর সমান উঁচু তুষারের স্তুপ। তাই স্কি করার জন্য এই এলাকাটি বেশ খ্যাতি অর্জন করেছে স্কি রাইডারদের কাছে। বরফ শুভ্র পাহাড়ের মধ্য দিয়ে ট্রেনে বা বাসে করে যখন এই এলাকাটিতে যাবেন তখন আপনার মন আপনাআপনি ভাল হয়ে যাবে। এর বাইরে এই শহরটিতে রয়েছে বেশ কিছু চিত্তাকর্ষক পর্যটন রিসোর্ট।

এই রিসোর্টগুলোতে রয়েছে মাইনাস ১০ থেকে মাইনাস ৩০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় এর ভেতর চারদিকে স্নোফল দেখতে দেখতে ফায়ার প্লেসের উষ্ণতায় নিজেকে উষ্ণ করে কফির সাথে কাটিয়ে দিয়ে দেওয়ার মতোব্যবস্থা। তাই প্রাত্যহিক জীবনযাপনে যদি অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন তাহলে বুলগেরিয়ার এই শহরটি হবে আপনার প্রশান্তির ডেস্টিনেশন। এই শহরটি পর্যটনের জন্য বিখ্যাত হলেও অন্য শহরগুলোর মতো আবার প্রচণ্ড খরুচে নয়। খুব কম খরচে দিনের পর দিন কাটানো যায় বলেই ট্রাভেলারদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়। প্রাত্যহিক খরচ ২০-২৫ ইউরোর বেশী হবে না বাজেট ট্রভেলারদের জন্য।

চেক প্রজাতন্ত্র:
আপনি যদি স্বাধীন এবং মুক্তমনা ট্রাভেলার হয়ে থাকেন তাহলে আপনার জন্য সবথেকে মূল্যবান একটি ভ্রমণ হতে পারে চেক প্রজাতন্ত্রের ভ্রমণটি। কারণ প্রাগের মতো ঐতিহাসিক শহরে ভ্রমণ করা একটি ভাগ্যের ব্যাপার বলা চলে। চেক প্রজাতন্ত্রের অধিকাংশ শহরই আসলে ইতিহাস সমৃদ্ধ। তাই প্রতিটি মোড়ে, অলিতে-গলিতে আপনি ছোঁয়া পাবেন তিন-চারশো বছর আগেকার শিল্পের। যে শিল্পগুলো এখনো মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে এই শহরটিতে। এই শহরের অন্যতম কিছু উপাদানের মধ্যে রয়েছে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত বিয়ার ও ওয়াইন।

দর্শনার্থীদের জন্য থাকে বিশেষ বাস। দর্শনার্থীদের পুরো শহরটাই ঘুরিয়ে দেখায় খুব অল্প সময়ে এবং অল্প খরচে। প্রাচীন ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির সাথে মিশে যেতে খুব অল্প সময় লাগে। এখানকার স্থানীয় বাদ্যযন্ত্র, গান, গায়ক ও ইউরোপিয়ান সঙ্গীত সবকিছুই আপনাকে মুগ্ধ করে রাখবে এই শহরটাতে যতক্ষণ আপনি থাকবেন। তাই প্রাগের মতো শহর অথবা চেক প্রজাতন্ত্রের প্রতিটি এলাকা ঘুরে দেখতে পারবেন অত্যন্ত আনন্দে। এখানে প্রতিদিন ২০ থেকে ৪০ ইউরো খরচ করে কাটিয়ে দিতে পারবেন অনায়াসে।

Surce: https://tripzone.xyz/visit-in-europe-on-a-budget/

Share:

Leave a Comment