এই যেন এক স্বরূপকাঠি

পিরোজপুর যাওয়ার জন্য ঢাকা-হুলারহাট লঞ্চই উত্তম। সন্ধ্যায় লঞ্চ ছাড়ে এবং পৌছায় খুব ভোরে। কিন্তু ছেলেকে নিয়ে একা যাব বলে সাহস করলাম না। নভ এয়ারে টিকেট বুক করলাম। যদিও পরে খালাত বোন আর তার পরিবার যোগ দেয়। প্রথম দিন দুপুর দুইটায় নভ এয়ারের ফ্লাইটে করে পৌছে গেলাম বরিশাল। এখান থেকে বাই রোডে স্বরূপকাঠি। তারপর নদী পার হয়ে আমার গ্রাম। বরিশাল এয়ারপোর্টে গাড়ি তেমন পাওয়া যায়না বলে, বন্ধুর সাহায্যে গাড়ি আগে থেকে যোগাড় করা ছিল। পথে থামলাম গুটিয়া মসজিদ এ। মনে পড়ল মালায়শিয়ার পুত্রাজয়ার কথা। গুটিয়ার সন্দেশ শুনলাম বিখ্যাত। তাই গাড়ি থামিয়ে মিষ্টিও কেনা হল। বরিশাল থেকে স্বরূপকাঠি গুগল ম্যাপে ৩৪ মিনিট দেখাচ্ছিল। পথে না থামলে মনে হয় আগেই পৌছে যেতাম। বিকাল ৪.৩০ এ পৌঁছে গেলাম বাড়ি। মাত্র আড়াই ঘন্টা। বাড়ি আমার এত কাছে জানতাম না। সদরঘাট যেতেই তো তিন ঘন্টা লেগে যায়!

দ্বিতীয় দিন ঝটিকা সফরে গেলাম বাগেরহাট। যাকে travelers রা বলেন “day trip”। আত্মীয় স্বজনদের বাসা ঘুরে চট করে দেখে আসলাম ষাট গম্বুজ মসজিদ এবং খানজাহান আলী (রঃ) এর মাজার। উল্লেখযোগ্য ভাবে পরিস্কার পরিচ্ছন্ন সব যায়গা৷ খুব ভোরে রওনা হয়েছিলাম বলে সন্ধার আগেই ফিরে আসতে পারলাম।

তৃতীয় দিনে ইচ্ছা ছিল আটঘর, কুরিয়ানা এর পেয়ারা বাগান আর ভাসমান হাট (floating market) দেখতে যাব। পেয়ারা মূলত বর্ষাকালীন এবং এখন তেমন কিছু দেখার নাই বলে মামাত ভাইয়ের পরামর্শে রওনা হলাম অলংকারকাঠি। স্বরূপকাঠি ইউনিয়নের প্রবেশ মুখে বিস্ময়কর গ্রাম। ২/৩ কিলোমিটার বা তার চেয়ে বেশি এলাকা জুড়ে শুধুই নার্সারি। আরও আশ্চর্য্য হলাম সব ধরনের ফল ও ফুলের গাছ পাওয়া যায়। কোনটা রেখে কোনটা নেই এই অবস্থা। তারউপর একেবারে পানির দাম। বেশ কিছু গাছ আর সুন্দর স্মৃতি নিয়ে ফিরতি পথ ধরলাম। আসা যাওয়ার ট্রলার রিজার্ভ করা ছিল বলে গাছ নিয়ে ফিরতে অসুবিধা হয়নি।

চতুর্থ দিন ফেরার পালা। এবার লঞ্চে। বিকালে লঞ্চ ছাড়ল আর খুব ভোরে পৌঁছে গেলাম ঢাকা।
একটা জিনিস বলতেই হয় সুন্দর পরিস্কার রাস্তাঘাট। উন্নত বিদ্যুৎ ব্যবস্থা। লোডশেডিং ছাড়া গ্রামের অভিজ্ঞতা এই প্রথম। শুধু একটা জিনিস খারাপ লাগল, লঞ্চের যাত্রীরা পানিতে অহড়হ ময়লা ফেলছে। নদীর পানি পরিস্কার রাখার জন্য, মাছদের অবাধ বিচরণের জন্যে আমাদেরই এগিয়ে আসতে হবে।

Share:

Leave a Comment