একদিনের ডে ট্যুরে মোবারক শাহ মসজিদ, মায়ুং কপাল,জেলা পরিষদের ঝুলন্ত ব্রীজ,আলুটিলা গুহা
হঠাৎ রাতে মাথায় ভূত চেপে বসলো খাগড়াছড়ি যাবো। মায়ুং কপাল দেখতে। এর আগেও দুইবার যাওয়া হলেও সাজেক, রিসাং ঝর্না, আর হাজাছড়া ঝর্না দেখে চলে আসি। কিন্তু মায়ুং কপালটার জন্য বারবার পিছুটান ছিলো। যেই ভাবনা সেই কাজ। রাতের ট্রেনে সিলেট থেকে ফেনী যাওয়ার টিকেট করে নেই ২৫০ টাকা করে। ভোর ৫টাই ফেনী স্টেশন পৌঁছে সকাল হওয়ার আগ পর্যন্ত ওয়েট করতে থাকি। সকাল ৬টাই হেঁটে হেটেঁ মিজান রোড চলে যাই। এর আগেও ফেনী আসা হয় ৬ থেকে ৭ বার। কিন্তু কখনো ফেনী শহরের কিছুই ঘুরে দেখা হয় নি৷ ফেনী শহরের মহীপাল, আর মিজান রোডের রাস্তা চিনা ছিলো আগেই। যেহেতু মহীপাল থেকে সকাল ৮.১৫ মিনিটে প্রথম ট্রিপের শান্তি পরিবহনের গাড়ী খাগড়াছড়র উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাই সেহেতু হাতে অনেক সময় ছিলো৷
৬জন ট্যুর মেম্বারের জন্য একটা সিএনজি রিজার্ভ করে ফেলি ৪০০ টাকা দিয়ে যাওয়া- আসা (মহিপাল)পর্যন্ত, শর্শদিতে অবস্থিত মোবারক শাহ মসজিদটা দেখার জন্য। প্রায় ৪০০ বছরের পুরনো মসজিট এটি। এমনিতে জন প্রতি ৩০ টাকা দিয়ে শর্শদি বাজার পর্যন্ত যাওয়া যায়। সে যাই হোক ৩০ মিনিট পর মসজিদের কাছে পৌঁছে যাই। মসজিদ টা দেখার পর মহিপাল চলে আসি। মহিপাল থেকে ২২০ টাকা করে টিকেট করে নেই খাগড়াছড়ি পর্যন্ত৷ পাক্কা ৩ ঘন্টা ২০ মিনিট পর পৌঁছে যাই খাগড়াছড়ি তে। তখন ঘড়িতে বাজে সকাল ১১.৫০। দেরী না করে অটো নিয়ে চলে যাই জামতলী যাত্রী ছাউনি পর্যন্ত৷ জনপ্রতি ১০ টাকা করে। যাত্রী ছাউনির বা পাশের রাস্তা দিয়ে ১০ মিনিট হাঁটলেই চেঙ্গি খাল পাবেন। খাল পার হওয়ার জন্য বাশেঁর সাঁকো তৈরী করা আছে। বাশেঁর সাকো পার হয়েত ত্রিপুরা পাড়ায় চলে যাই। পাড়ার দোকান থেকে কথা বলে একজন গাইড ঠিক করে নিলাম মায়ুং কপাল দেখবো বলে৷
দরদাম করে ২৫০ টাকা ফিক্সড৷ আমাদের গাইড ছিলো পিন্টু ত্রিপুরা। খুব ভালো ছেলে৷ ডিগ্রীতে পড়ালেখা করে বিদায় খুব ভালো বাংলা বলতে পারতো আর খুবই ফ্রেন্ডলি ছিলো৷ পথি মধ্যে সে আমাদেন জন্য গাছের আম পেড়ে খাওয়ালো, এবং ট্র্যাকিং পথে প্রত্যেকে পাড়ার জুম ঘর থেকে পানি সাপ্লাই দিলো৷ আমরা ভুল করে পানি না নিয়ে যাওয়াতে প্র্যচুর বিপাকে পড়তে হয়। যারা যাবেন দয়া করে সবার হাতে ১লিটারের পানির বোতল নিয়ে যাবেন। পাক্কা ১ঘন্টা ৩০ মিনিট (রেস্ট সহ) পৌঁছে যাই নৈসর্গিক সৌন্দর্যে তৈরী মায়ুং কপালে। অনেকে এটাকে স্বর্গের সিঁড়ি বলে৷ ৪০ মিনিট এখানে অবস্থান করে আবার জামতলী ছাউনিতে চলে আসি দেড় ঘন্টার মধ্যে। জেলা পরিষদের পার্ক যাবার কথা বলে ১০০ টাকায় টমটমে চেপে চলে আসি হর্টিকালচার পার্কে। পার্কে ঢুকার আগে রাস্তার পাশে খুব সুন্দর এবং অনেক বড়একটা বৌদ্ধ মন্দির আছে। চাইলে দেখে নিতে পারেন। জনপ্রতি ২০ টাকা করে টিকেট কেটে ঢুকে পড়ি পার্কে।
২৫ মিনিট থাকার পর জনপ্রতি ১০ টাকা ভাড়া দিয়ে চলে আসি বাসস্ট্যান্ডে। বাসস্ট্যান্ড থেকে লোকাল বাসে করে জনপ্রতি ২০ টাকা দিয়ে চলে যাই আলুটিলা গুহা তে। তখন ঘড়ি তে ৪ টা ২০ বাজে৷ আলুটিলা গুহা থেকে ৫.৩০ চট্টগ্রাম যাবার লাস্ট বাস। তাই দেরী না করে জনপ্রতি ২০ টাকা করে টিকেট এবং ১০ টাকা করে মশাল নিয়ে চলে যাই গুহা জয় করতে। রোমাঞ্চকর একটা অধ্যায় ছিলো। সাড়ে ৫টার বাসে করে চট্টগ্রাম চলে যাই জনপ্রতি ১৪০ টাকা করে। চট্টগ্রাম অক্সিজেন মোড় থেকে আবার লোকাল বাসে ১০ টাকা ভাড়ায় চলে আসি স্টেশন। স্টেশন থেকে যে যার মতো ঢাকা বা সিলেটের ট্রেণ ধরে চলে যাই যার যার গন্তব্যে।
বিদ্রঃ যারা এই ট্যুরপ্ল্যান টা বাস্তবায়ন করতে চান তাদেরকে সময়ের সাথে সাথে চলতে হবে। যারা যারা এই বর্ষায় সীতাকুন্ডের দিকে ট্রেইলে যাবেন তারা ইচ্ছা করলে ফেনী নেমে এই প্রত্নত্ত্বিক নিদর্শন বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক সংরক্ষিত অনন্য সুন্দর এই মসজিদটি দেখে যেতে পারেন।
পরিশেষে শুধু বলবো, দয়া করে কেউ স্বর্গের সিড়ির আশে পাশে আপনার ব্যাবহৃত পানির বোতল, চিপসের প্যাকেট কোথাও কিছু ফেলে যাবেন না। খুব সাবধানতার সাথে সিঁড়িতে উঠবেন। অনুমতি না নিয়ে পথিমধ্যে আম, কাঁঠাল বা বেল গাছ থেকে কিছু পাড়বেন না৷ স্থানীয় ত্রিপুরাদের সাথে কোন অশোভন আচরন করবেন না। পার্কের ভিতর ময়লা ফেলার জন্য নির্দিষ্ট জায়গা পাবেন। যেখানে সেখানে অপচনশীল কিছু ফেলে আসবেন না।