একদিনের বরিশাল ভ্রমন যেভাবে যাবেন ও খরচাবলি
ভ্রমন পিয়াসু বাংলাদেশিদের পূর্বের ট্রাভেল ডেস্টিনেশন ছিলো কক্সবাজার নয়তো সিলেট। কিন্তু এখন বাংলাদেশি ট্রাভেলাররা দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে অনেক অনেক দূর দেশের যাচ্ছে বা যাবার প্লান করে ফেলছে। তবে বিদেশে ঘুরতে তো আর মাসে মাসে যাওয়া যায় না তাই দেশের মাঝেই অনেক সুন্দর ভ্রমনের জায়গা আছে যা ছোট্ট এক-দুই দিনের ট্যুরের জন্য অসাধারণ প্লেস হতে পারে। এমনি একটি একদিনের ছোট্ট ট্যুরে যেতে পারেন প্রাচ্যের ভেনিস নামে খ্যাত বরিশালে।
বরিশালে যাবার জন্য বেস্ট টাইম হচ্ছে ঠিক গরম না আবার কনকনে ঠান্ডাও না এমন সময়। কেন এই সময় বেস্ট তা একটু পরে বলছি। বরিশাল যাবার জন্য ট্যূর প্লানটা কদিন আগে থেকেই করতে হবে কারন ভালো টিকিট পাওয়া নিয়ে কথা। যদিওবা বরিশালে প্লেন এবং এসি বাস আছে (ট্রেন নেই) তবুও আমি বলবো আপনি লঞ্চেই যান। বাংলাদেশে লাক্সারিয়াস ভাবে জার্নি করতে চাইলেও লঞ্চ বেস্ট আবার বাজেট ট্রাভেল করতে চাইলেও লঞই বেস্ট। তবে আমি বাজেট ট্রাভেল নিয়েই আজ বলবো। প্লান হলো পুরো সপ্তাহ অফিস করে বৃহস্পতিবার রাতে লঞ্চে করে রওনা দিবেন। লঞ্চে চাইলে আপনি সবার জন্য আলাদা সিট (সোফা) নিতে পারেন অথবা একটা কেবিন নিয়ে ফ্রেন্ডরা আড্ডা দিতে দিতে চলে যাবেন। রাতে চাদের আলোয় লঞ্চের বারান্দায় বসে আড্ডা দিবার মজা আপনি আর কোথাও পাবেন না। তবে এই মজার পুরোটা পেতে গেলে অবশ্যই আবহাওয়া পুরো ঠান্ডা হওয়া যাবে না আবার বৃস্টিও থাকা যাবে না। লঞ্চের খাবার কিন্তু খুব মজা তাই খাবার নিয়ে টেনশন করার কিছু নেই। তবে যারা রাতে ট্রাভেল করতে ইচ্ছুক নন তাদের জন্য আছে গ্রীনলাইন এবং এডভেঞ্জার নামে দুইটা ক্রুইজ শিপ। এটা সকাল ৮টার দিকে ছাড়ে এবং ৬ গন্টায় গন্তব্যে পৌঁছে যায়। দিনের বেলায় এই জার্নিটাও মজার একটা এক্সপেরিয়েন্স বিস্তারিত জানতে এই লিঙ্কে দেখতে পারেন।
লঞ্চে গেলে খুব ভোরেই আপনি বরিশালে পৌঁছে যাবেন। লঞ্চ থেকেই সকালের সকল ক্রিয়া কর্ম সেরে নামবেন কিন্তু নাহলে নেমেই হোটেল নিতে হবে।
সকালে নেমে প্রথম কাজ হলো নাস্তা করে নেয়া। নাস্তা করার জন্য ভালো কয়েকটা রেস্টুরেন্ট হলো- এম আলি, রোজ গার্ডেন, ঘরোয়া, বলাকা। সব গুলোই অনেক সকালে খুলে। এরপর অটো নিয়ে চৌমাথা মোড়ে, এখানে আপনি পাবেন আটঘর যাবার লেগুনা নয়তো মাহেন্দ্র। এতে করে ১ ঘন্টার মাঝেই পৌঁছে যাবেন আটঘর। এখান থেকে দরদাম করে নৌকা ভাড়া নিয়ে সোজা পেয়ারা বাগানে। ভাড়া পরবে ১০০০ থেকে ২০০০টাকার মত নৌকা সাইজ অনুসারে।
পেয়ারা বাগানঃ এই সময়টা হলো পেয়ারা বাগানে যাবার জন্য পারফেক্ট। আপনি নৌকা নিয়ে পেয়ারা বাগানের মাঝের ছোট ছোট সরু খালের মাঝে দিয়ে যাবেন আর চারদিকে সবুজের মাঝারে হারিয়ে যাবেন। আপনি যেকোন বাগানে নৌকা দার করিয়ে পেয়ারা গাছ থেকে পেড়ে পেয়ারা খেতে পারেন কিন্তু নিয়ে আসা যাবে না। নিয়ে আসতে গেলে কিনে আনতে হবে, আর কিনার জন্য রয়েছে ভাসমান পেয়ারা মার্কেট যেটা এই আমার জানামতে সব থেকে বড় ভাসমান পেয়ারা মার্কেট।
দুপুর ১টার মাঝেই পেয়ারা বাগান ঘুরে চলে আসবেন শহরে। এখানে এসে রেস্টুরেন্টে যেয়ে ফ্রেশ হয়ে দুপুরের খাবার খেয়ে নিন। কয়েকটা ভালো রেস্টুরেন্ট এর মাঝে ঘরোয়া, রোজগার্ডেন, হান্ডি করাই।
এরপর আপনি চলে যাবেন একটা অটো নিয়ে নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ড। এখান থেকে গন্তব্য হচ্ছে দূর্গাসাগর। বাস পাওয়া যায়, যেখানে মাত্র ১৫ টাকার টিকেটে বাসে চরে বসবেন। আর বাসে যেতে না চাইলে মাহেন্দ্র নামক তেলে চলা যানে করে চলে যেতে পারেন। ভাড়া পরবে ৪০ টাকা/প্রতিজন।
দূর্গাসাগরঃ এটা হলো শতবছর পুরানো একটা লেক যা দক্ষিন বাংলার সব থেকে বড় জলাশয়। লেকের মাঝে ছোট্ট একটা দ্বীপের মত আছে যা লেকের সৌন্দর্য শুধু বাড়িয়েছেই। এটার চারদিকে সুন্দর করে গাছ লাগানো, বসার ব্যাবস্থাও আছে। লেকের পার ধরে হাটতে হাটতে হাল্কা বাতাসে সেই রকম একটা অনুভুতি পাবেন। ঠিক সময়ে গেলে লেকে পদ্মও পেতে পারেন। ছোট্ট একটা চিড়িয়াখানাও আছে সাথে। লেকের এন্ট্রি টিকেট ২০ টাকা।
এরপরের গন্তব্য হলো গুঠিয়ার মসজিদ। দূর্গাসাগর থেকে জনপ্রতি ২০ টাকা টিকিটে অটোতে অথবা মাহেন্দ্রতে করে চলে যাবেন গুঠিয়া।
গুঠিয়ার মসজিদঃ সকালে অথবা দুপুর হলো বেস্ট টাইম কারণ তখন এখানে মানুষ কম থাকে আপনি নিজের মত করে ঘুরে দেখতে পারবেন তবে বিকেলে অনেক মানুষ থাকে তাই আমি বলবো দুপুরে খাবারের পর দেরি না করেই চলে আসা ভালো। এটি অনেক বড় জায়গা নিয়ে করা এক অসাধারণ স্থাপত্য শৈলী। ফটোগ্রাফারদের জন্য ফাটাফাটি জায়গা। চাইলে আসরের নামাজটা পরে নিতে পারেন এখানে। গুঠিয়া থেকে আসার পথে অবশ্যই গুঠিয়া বাজারে নেমে বিখ্যাত গুঠিয়ার সন্দেশ খেয়ে আসবেন।
এরপরের গন্তব্য হচ্ছে ৩০ গোডাউন।
৩০ গোডাউনঃ এটি আসলে কীর্তনখোলা নদীর পারে একটা সুন্দর মনোরম পরিবেশে নদীর সৌন্দর্য উপভোগের জায়গা। এখানে বসে সূর্যাস্তটা দেখার অনুরোধ রইলো। নদীর পাড় ধরে হেটে হেটে আপনি এর পাশেই অবস্থির মুক্তিযোদ্ধা পার্কে চলে যেতে পারেন। অথবা আগে আগে চলে আসলে এখান থেকে নৌকা ভাড়া নিয়ে ১ ঘন্টা নদীর মাঝে চিল করতে পারেন দুইটাই সেই লেভেলের ফিলিংস দিবে শিওর থাকেন।
এরপর সময় থাকলে রসোগোল্লা অভিযানে নামতে পারেন আর দেরি হয়ে গেলে সারাসরি লঞ্চে চলে আসেন। এসে ফ্রেশ হয়ে একটা খেয়ে দেয়ে একটা নাক টেনে ঘুম এক ধুমে সকালে চিরচেনা জ্যামের শহরে হাজির হয়ে যাবেন।
খরচঃ
লঞ্চ- কেবিন ৯০০ সিঙ্গাল/ ১৮০০ ডাবল। ফ্রেন্ডরা মিলে এক ডাবল কেবিন নিলে ২জন বাদে বাকিদের জন্যে ২০০ টাকা দিয়ে ডেকের টিকিট নিতে হবে। আর সোফা ৬০০ টাকা এবং সকালের গ্রিনলাইন ৭০০/১০০০ আর এডভেঞ্জার ৬০০/৮০০/৯০০ টাকা (ডিটেইলস জানতে ভিডিও লিঙ্কে দেখুন)
লঞ্চঘাট-চৌমাথা= ১৫ টাকা
চৌমাথা- আটঘর= ৪০ টাকা
নৌকা ভাড়া= ১০০০-২০০০ টাকা
চৌমাথা- সদররোড= ১৫ টাকা
সদররোড- নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ড= ১৫ টাকা
নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ড- দূর্গাসাগর= ১৫ বাস /৪০ মাহেন্দ্র টাকা
দূর্গাসাগর- গুঠিয়া মসজিদ= ২০ টাকা
গুঠিয়া মসজিদ- নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ড= ৫০ টাকা
নথুল্লাবাদ বাসস্ট্যান্ড- ৩০ গোডাউন= ৭০ টাকা রিজার্ভ অটো
মুক্তিযোদ্ধা পার্ক- লঞ্চঘাট= ১৫-২০ টাকা রিক্সা