একদিনে রাতারগুল, উৎমাছড়া, তুরংছড়া ভ্রমণ গল্প

গত বৃহস্পতিবার রাতে খাওয়া দাওয়া করে পরেরদিন শুক্রবার ভেবে নিশ্চিন্তে একটা ঘুম দিবার প্ল্যান করে ঘুমানোর প্রিপারেশন নিচ্ছিলাম। হঠাৎ ছোট একটা ভাই এর ফোন, ওপাশ থেকে জানালো, ভাই আমরা ৪জন সিলেট আসতেছি! এখন ট্রেণে! সকালে পাঁচ ভাই এর সামনে থাকবেন! বুঝতে আর বাকি নেই সিলেট ঘুরবে এরা! তো সকাল বেলা ভোর ৬.৩০ পাঁচ ভাই রেস্টুরেন্ট এর সামনে দেখা ওদের সাথে! ভাবলাম প্ল্যান দিয়ে কেটে পড়বো কিন্তু নাছোড়বান্দারা ছাড়ে না আমায়!!

সিলেটে স্থানীয় হওয়াতে কম বেশী সব জায়গা একাধিকবার ঘুরা শেষ! তারপরো ওদের কথা রাখতে আবার যেতে রাজী হয়, সকাল বেলা খিচুড়ি খেতে খেতে ঠিক করলাম সবাই ডে ট্যুরে রাতারগুল, উৎমাছড়া, আর তুরংছড়া ঘুরবো! যেহেতু পাঁচজন ছিলাম আমরা তাই বেশী একটা কষ্ট করতে হয় নাই! পাঁচ ভাই এর সামনে অনেক সিএনজি দাঁড়ায়া থাকে যে কারোর সাথে সারাদিন চুক্তিতে ১৪০০-১৫০০ টাকায় রাতারগুল, ভোলাগঞ্জ ঘুরে সিলেট ব্যাক করতে পারবেন৷ সকাল ৭.১৫ তে সিএনজিতে উঠে প্রথম গন্তব্য রাতারগুলে!

চলে গেলাম রাতারগুলের মাঝের ঘাটে। সেখান থেকে ৭৫০ টাকায় ইউএনও কর্তৃক নির্ধারিত ভাড়ায় ঘুরা শুরু হলো বাংলাদেশে একমাত্র স্বীকৃত সোয়াম্প ফরেস্ট বন বা মিঠাপানির বনে! বর্ষা শেষের দিকে বিদায় পানি অনেক কম ছিলো তবে অন্যরকম ভালো লাগা কাজ করেছিলো! পানি শুকিয়ে যাওয়ায় বনের মাঝখানের গাছের সারিগুলো খুব সুন্দর দেখাচ্ছিলো!! ঘন্টাখানিকের বেশী সময় অতিবাহিত করে চলে গেলাম ভোলাগঞ্জ ১০নম্বর ঘাটে। বলে রাখা ভালো, আমরা সবাই ভোলাগঞ্জ আগেও ঘুরেছিলাম বলে এবার আর জিরো পয়েন্টে যায় নি। সিএনজিকে ১০ নম্বর ঘাটে বসিয়ে রেখে খেয়াঘাট থেকে জনপ্রতি ১০টাকা নৌকা ভাড়ায় চলে যাই দয়ারবাজারে। এখানে ইচ্ছে করলে সিএনজি নিয়ে যেতে পারতাম বাট রাস্তার অবস্থা খুবই খারাপ বিদায় সিএনজি নেয় নি!

তাছাড়া সিএনজিতে দয়ারবাজার যেতে ৪০ মিনিট সময় লাগে। নৌকা তে ৪-৫ মিনিট। ভোলাগঞ্জের নৌকা ঘাট থেকে যে কাউকে বললে দয়ারবাজার যাবার খেয়াঘাট টা কোথায়? দেখিয়ে দিবে। নদীর তীর ঘেঁষে বালুর উপর ৫ মিনিট হাঁটলে খেয়াঘাট পেয়ে যাবেন। দয়ারবাজার পৌঁছে, লোকাল সিএনজিতে চরারবাজার চলে যেতে হবে। জনপ্রতি ৩০ টাকা ভাড়া। সেখান মাত্র একটাই খাবার হোটেল পাবেন।। তুলনামূলক ভালোই। দুপুরের পেট পূজা ওখানেই ৬৫টাকা দিয়ে সেরে নিতে হয়েছে৷ হাওরের তাজা ছোট মাছ, সবজি, আর ভাত আনলিমিটেড প্যাকেজ ৬৫টাকা৷ দুপুরের খাবার সেরে মাত্র ৮মিনিট হাঁটলেই উৎমাছড়া পৌঁছে যাবেন। রাস্তা না চিনলে ওখানে অনেক মানুষ পাবেন, স্থানীয়দের সহযোগিতা নিন। উৎমাছড়ায় শরীর ভিজিয়ে নেক্সট গন্তব্য তুরংছড়া।

এই দুটো জায়গাতে তুলনামূলক পর্যটক খুব কম পাবেন। তাই জায়গা দুটো এতো পরিষ্কার আর কোলাহলমুক্ত! তুরংছড়া যেতে বাজার থেকে বাইকাররা তাদের বাইকে যাবার জন্য অনুরোধ করবে৷ পার বাইক ২০০ টাকা। যেহেতু হাতে প্রচ্যুর সময় ছিলো, আর সবাই টগবগে যুবক তাই তাদের কথায় কর্ণপাত না করে সোজা হাঁটা শুরু করলাম। মাত্র ২৭ মিনিটে পৌঁছে যাই তুরংছড়ায়। যাবার পথটা ছিলো অসাধারণ! পথে অনেক সবুজ ধান ক্ষেত, গ্রামের মেঠোপথ আর ভারতের মেঘালয় পাহাড়ের ছায়া আমাদের সঙ্গী ছিলো। ঘন্টাব্যাপি জলের সঙ্গে জলকেলি করে আগের মতো পায়ে হেঁটে চরার বাজার। বাজার থেকে লোকাল সিএনজিতে দয়ারবাজার। আবারো ১০টাকা খেয়াতে ভোলাগঞ্জ ঘাট। ঘাট থেকে আগের ঠিক করা রিজার্ভ সিএনজিতে সিলেটের পাঁচ ভাই৷

সন্ধ্যা ৭.৩০টার মধ্যে সিলেট পৌঁছায়। রাতের খাবার খেয়ে তাদেরকে বিদায় দিয়ে একদিনের ডে ট্যুরের সমাপ্তি ঘটে। আপনারাও ইচ্ছে করলে একদিনে এমন ডে ট্যুর দিতে পারেন। সেক্ষেত্রে দেশের যে কোন প্রান্ত থেকে আপনাদের পচ্ছন্দ মতো রাতের ট্রেন অথবা বাসে সিলেট আসতে হবে। সিলেট আসার পর বাকিটা কি করতে হবে তা এখন নিশ্চয় জানা? পুরো ট্যুরে সিলেট টু সিলেট জনপ্রতি খরচ ৭৫০ টাকা।
Source: Kowsar Ahmed Kaif‎ <Travelers of Bangladesh (ToB)

 

Share:

Leave a Comment