এক দিনে যশোর ভ্রমন গল্প
একদিনে সিলেট আর পঞ্চগড় ভ্রমন করার পর এক আত্মবিশ্বাস জন্মাল যে একদিনেও যশোর ঘুরে আসা সম্ভব ।সেই আত্মবিশ্বাস নিয়ে শুরু করলাম কীভাবে ২৪ ঘণ্টায় যশোর ভ্রমন করা যায়।
গল্পটা ২০১৭ সালের নভেম্বরের। সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে হেমন্তের একরাতে যাত্রা শুরু যশোরের উদ্দেশে ।সকালে সাগরদাঁড়ি গ্রামে মাইকেল মধুসূদন দত্তের বাড়ি, দুপুরে যশোর শহর , বিকেলে গদখালি ফুলের বাগান ঘুরার পর সন্ধার বেনাপোল রাতে ঢাকা।
আমাদের বাস যখন রাত দশটায় আমারবাগ থেকে ছেড়ে শহরের জ্যাম, হেমন্তের মরা চাঁদের আলো আর শিশির ভেদ করে আরিচা ঘাটের দশ মাইলের জ্যামে ঘড়িতে তখন রাত একটা। একটি পরিকল্পনা ব্যর্থ হওয়া শুরু তখন থেকে। তারপরও ভাল একটা ঘুম দিয়ে উঠলাম ঘড়ির কাঁটায় সকাল ছয়টা। দেখলাম দিল্লী বহু দূরে।
দুপুর বারটায় প্রাতরাশ আরা মধ্যাহ্ন ভোজ শেষ করে আর ব্যর্থ পরিকল্পনা নিয়ে যশোরে পৌঁছলাম দুপুর দুইটায়।
যেহেতু মনে কিছুটা দুঃখ ভাবলাম প্রথমে নদীর আছে যাওয়া যাক। কপোতাক্ষ নদ।
মনিহার সিনেমা হলের সামনে থেকে বাসে উঠলাম কেশবপুরের উদ্দেশে। বাস শহরের সীমানা ছাড়ার সাথে সাথে প্রকৃতি তার সৌন্দর্যতা দিয়ে আমাদের মুগ্ধ করতে লাগল। পথের দুই পাশে শান্ত নীবির গ্রাম,সারি সারি খেজুরের গাছ, মাঠে সরিষা ফুলের হলুদ রং আরা বাসের ভিতর মানুষের কথোপকথন সারা রাতের ক্লান্তি ধুয়ে দিল।
কেশবপুরের মাইকেল মধুসূদন দত্তের প্রাচীন বাড়ির দালান কোঁটা অনেকটা প্রশান্তি দিল মনে।
তারপর সূর্যাস্তের কিছু সময় কাটল কপোতাক্ষের পাড়ে ।
ঠিক সন্ধে নামার পরে যশোর শহরে। মনিহার হোটেলে রাত যাপনের বন্দোবস্ত। চায়ের নেশায় চায়ের চুমুকের সাথে সন্ধার জনজীবন ।
রাত আটটা পর্যন্ত যশোর শহরের আঁকে বাঁকে ঘুরে আর রাতের ভোজ সেরে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সিনেমা হলে সিনেমা দেখার লোভে পরা । মনিহার সিনেমা হলে প্রবেশ করার পর গা ছমছম কারা অনুভুতি ,এত বড় হল আর মাত্র কয়েক জন দর্শক। ঘুম আরা জাগরণে সিনেমা দেখা।
খুব গভীর আর প্রশান্তিময় ঘুমের শেষে সকালে যশোর শহর থেকে যশোর রোড ধরে গদখালিতে।
বাংলাদেশের ফুলের রাজধানী । চার পাশের দিগন্ত জুড়ে ফুল আর ফুল, সূর্যের আলোর সাথে শিশির ভেজা মেঠো পথ। যেখানে মুগ্ধতা আনে রজনীগন্ধা, গোলাপ আরা গ্ল্যাডিয়াস।
যশোর রোডের প্রাচীন রেইন ট্রির ছায়া মারিয়ে বেনাপোল রেল স্টেশন ।তার পর একদিনের পরিকল্পনা দুই দিনে শেষ করে ঢাকা ফেরার পালা।
এখনও সেটা অন্যরকম ভাল লাগা আরা অভিজ্ঞতার ভ্রমন।
আশা করি এই হেমন্তে আরা শীতের যশোর ভ্রমন আপনাকে দিবে ভ্রমনে নতুন এক অভিজ্ঞতা। বঞ্ছিত হবেন না এই শহরের রুপ মাধুরী থেকে।
প্রকৃতি ও পরিবেশের পরিছন্নতা আর সৌন্দর্য রক্ষার মধ্যদিয়ে আমাদের ভ্রমন হোক আনন্দময়।