ঐতিহাসিক দিবর দীঘি, নওগাঁয় যেভাবে যাবেন
আমাদের দেশের অনাবিল গ্রাম-বাংলার সৌন্দর্যে দিগন্তজোড়া দীঘি এক অন্যতম অনুষঙ্গ। চিরায়ত বাংলার রূপে সৌন্দর্যের ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে সুবিশাল দিঘিগুলো। এই বাংলায় যেমন রয়েছে অনবদ্য প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ভাণ্ডার আর প্রাচীন স্থাপনা তেমনি সেগুলোকে ঘিরে রয়েছে অসংখ্য উপকথা, লোককথা ও কল্পকাহিনী। তেমনি বিভিন্ন জেলার দিঘিগুলোকেও ঘিরে প্রচলিত আছে নানান লোককথা ও কল্পকাহিনী। আর দিঘিগুলোর সৌন্দর্যও দারুণ নজরকাড়া। অপরূপ সৌন্দর্যের এই দিঘিগুলোর শীতল জলে মন-প্রাণ জুড়াতে কার না ভাল লাগে। তেমনি একটি ঐতিহাসিক দিঘী নওগাঁর দিবর দিঘী। অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর পুরাকীর্তির নিদর্শনে ঘেরা এই দিঘীটি দেখে আসতে ভুলবেন না।
নওগাঁ জেলার পত্নীতলা উপজেলা থেকে ১৬ কি.মি. পশ্চিমে সাপাহার-নওগাঁ সড়কের পাশেই ঐতিহাসিক দিবর দীঘি অবস্থিত। দিবর দীঘির ঐতিহাসিক পটভূমি ছাড়াও রয়েছে অপার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। দীঘির মূল ঘাটে প্রবেশ করার সময় দু’পাশে উইপিং দেবদারু গাছ দিয়ে ঘেরা রাস্তা আপনাকে স্বাগত জানাবে। দীঘির পাড়ে কয়েকশ’ একর জায়গা জুড়ে রয়েছে দেশী-বিদেশী বিভিন্ন গাছের সমন্বয়ে সামাজিক বনায়ন প্রকল্প এবং দীঘির পশ্চিম পাড়ে বিশাল আম-কাঁঠালের বাগান। দীঘিটিকে ঘিরে লোকমুখে অনেক গল্প কাহিনী, কাল্পনিক গল্প-কথা প্রচলিত। এই দিঘীর মাঝখানে রয়েছে আশ্চর্যজনক ভাবে স্থাপিত অখণ্ড গ্রানাইট পাথরের স্তম্ভ। সুদূর অতীতের বাঙ্গালীর শৌর্যবীর্যের সাক্ষ্য বহন করছে আজও। অর্ধ বর্গ বিঘা দীঘির মধ্যখানে অবস্থিত আট কোণাবিশিষ্ট গ্রানাইট পাথরে নির্মিত এতবড় স্তম্ভ বাংলাদেশে বিরল। এটিকে জয়স্তম্ভ নামে ডাকা হয়। সকলের কাছেই ওই দীঘিটি কর্মকারের জলাশয় নামে পরিচিত। স্তম্ভটির সর্বমোট উচ্চতা ৩১ ফুট ৮ ইঞ্চি। পানির নিচের অংশ ৬ ফুট ৩ ইঞ্চি এবং পানির উপরের অংশ ২৫ ফুট ৫ ইঞ্চি। স্তম্ভটির ব্যাস ১০ ফুট ৪ ইঞ্চি। প্রতিটি কোণের পরিধি ১ ফুট সাড়ে ৩ ইঞ্চি। স্তম্ভের উপরিভাগ খাঁজকাটা অলঙ্করণ দ্বারা সুশোভিত। বৃটিশ প্রত্নতাত্ত্বিক স্যার আলেকজান্ডার ক্যানিং হামের মতে, একাংশ শতাব্দীর কৈর্বত্য রাজা দিব্যকের ভ্রাতা রুদ্রকের পুত্র প্রখ্যাত নৃপতি ভীমের কীর্তি এটি। ধারণা করা হয়, তার শাসনামলে পাল বংশকে পরাজিত করে বিজয় অর্জনের স্মৃতি চিহ্ন হিসাবে দীঘির মাঝখানে এই জয়স্তম্ভ স্থাপন করা হয়। এটি একটি অখণ্ড পাথর কেটে তৈরি করা হয়েছে। স্তম্ভের চারটি কোন থাকার পাশাপাশি এই বিরাট স্তম্ভের উপরিভাগে পরপর তিনটি রেখা রয়েছে যা স্তম্ভটির সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেছে। স্তম্ভটির শীর্ষে রয়েছে নান্দনিক কারু-কার্য যা রাজার স্মৃতিকে আজও ধারণ করে রেখেছে।
দীঘির পশ্চিম দিক থেকে দক্ষিণ দিকে রয়েছে দীর্ঘ খাঁড়ি। বর্ষার সময় বনের ভেতর দিয়ে খাঁড়ির প্রবাহ আপনাকে সুন্দরবনের কথা মনে করিয়ে দেবে। এই খাঁড়ি বিভিন্ন এলাকা ঘুরে আত্রাই নদীতে মিশেছে। এখানকার প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে বরেন্দ্র অঞ্চলের বিশেষ ভূমিরূপ। যা দেখতে হলে আপনাকে বরেন্দ্র এলাকা ঘুরতেই হবে। দীঘির জলাশয় থেকে উপরের দিকে গ্যালারির মতো হয়ে ওঠে যাওয়া ভূমি সত্যিই অপরূপ। বর্ষাকালে দিবর দীঘি এলাকা এক ভিন্ন রূপ ধারণ করে। সে সময় এলাকাজুড়ে ধান চাষ করা হয়। উঁচু-নিচু ঢেউ খেলানো ধানক্ষেতে সবুজের সমারোহ দেখে আপনার প্রাণ ও চোখ দুটোই জুড়াবে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও ঐতিহাসিক নিদর্শন দুটোই মন ভরিয়ে তুলবে আপনার।
যেভাবে যাবেন:
ঢাকা থেকে হানিফ এন্টারপ্রাইজ, আল নাফি ইত্যাদি বাস নওগাঁর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এসব বাসে করে সাপাহার এসে ভ্যান বা রিকশাযোগে দিবর দীঘি যেতে পারেন। ভাড়া নিবে ১০ টাকা। এছাড়া বাস টার্মিনাল থেকে সাপাহারের বাসে করে দিবর দীঘি নামতে পারেন। বাসে সময় লাগবে দেড় থেকে দুই ঘণ্টা।
যেখানে থাকবেন:
সাপাহারে থাকার জন্য কিছু আবাসিক হোটেল আছে। তাছাড়া চাইলে নওগাঁ সদরেও থাকতে পারেন। এখানে ভালো মানের আবাসিক হোটেল পেয়ে যাবেন। এখানে ১৫০ থেকে ১৫০০ টাকার মধ্যে রুম পাবেন। এসিও রুমও পাবেন। সেক্ষেত্রে খরচ আরো কিছুটা বেশী পড়বে।