কলকাতা ভ্রমণ বৃত্তান্ত ও টিপস

হলুদ ট্যাক্সির শহরে (কলকাতা ): কলকাতা নামটি শুনলেই মনে পড়ে অনেক স্মৃতিবিজরিত জিনিস। কোন এক সময় এই কলকাতাই ছিল আমাদের রাজধানী এবং ভারতবর্ষের রাজধানী আমাদের সবকিছু বাণিজ্য,শিক্ষা,রাজনী­তি কলকাতা কেন্দ্রীক থাক ইতিহাসে ফিরে না যাই আজ বরং আমার ভ্রমনকথা বলি।

-১ম দিনঃ বিকালে সৌদিয়া বাসটি নামিয়ে দিল কলকাতার মারকুইস স্ট্রিটে আগে থেকেই booking.com এ হোটেল বুক করা ছিল বাট মারকুইস স্ট্রিট থেকে কিছুটা দূরে বলে দীর্ঘ ভ্রমনে আর সেখানে যাওয়ার ইচ্ছা হলনা তার উপর আগের দুইরাত ঘুম হয়নাই ফোনে নাই চার্জ চাইছিলাম এখানেই হোটেল নিতে। প্রথমেই গেলাম মারকুইস স্ট্রিটের “Hotel 21” মাঝারি মানের হোটেল আর ঘোরাঘুরি করতে ইচ্ছা করছিল না নিয়ে নিলাম সিংগেল রুম উল্লেখ্য ঢাকা থেকে আমি একাই এসেছিলাম তবে এখানে আমার কয়েকজন বন্ধু কয়েকদিন আগেই এসেছিল। হোটেল রুমে যেয়ে গোসল করে ফ্রেশ হয়ে বের হলাম গন্তব্য নিউ মার্কেট মারকুইস স্ট্রিট থেকে পায়ে হাটা রাস্তা। সিম কিনলাম একটা ভোডাফোনের বাসায় কথা বলে তাদেরকে টেনশন মুক্ত করলাম। সম্পূর্ণ নতুন শহর প্রথম বিদেশ ভ্রমণ কিছুটা থ্রিল কাজ করছিল। মির্জা গালিব স্ট্রিট, পার্ক স্ট্রিটে হাটতে হাটতে রাত হয়ে গেল এর মধ্যে এত ভাল লাগছিল সব যে সারাদিন যে না খাওয়া সেটাই ভুলে গেলাম এক বন্ধুকে কানেক্ট করলাম যে কিনা আজ রাতেই “গোয়া” যাবে পিওর সোলো ট্রাভেলার আমিও এখন সোলো কারণ আমার যে কজন বন্ধু এসেছিল ওরা দিল্লি যাবে আজ রাতে আমার ও সিন্ধান্ত ছিল দিল্লি যাওয়ার তবে সিন্ধান্ত পরিবর্তন করায় ওরা চলে গেল। দুইজন মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম জাকারিয়া স্ট্রিটে রাতের খাবার খেতে যাবো “ইসপ্লানেড মোড়” থেকে বাসে করে এলাম জাকারিয়া স্ট্রিটে এখান থেকে খাবার খেয়ে দুইজন রাতের কলকাতা উপভোগ করলাম। তাকে বিদায় জানিয়ে সদর স্ট্রিটে আসলাম সেখান থেকে কিছু খাবার কিনে ফিরলাম রুমে দেন ঘুমিয়ে পড়লাম।

২য় দিনঃ সকালে ঘুম থেকে উঠেই গোসল করে বেরিয়ে পড়লাম রাস্তা থেকে চা খেয়ে চলে গেলাম হাওড়া ব্রিজ দেখতে সেখান থেকে এলাম বড় বাজার কিছু কেনাকাটা করতে করতে দুপুর হয়ে গেল বড় বাজারের পাশ থেকে মুসলিম হোটেল থেকে দুপুরের খাবার খেয়ে নিলাম। চলে এলাম পার্ক স্ট্রিট সেখান থেকে কলকাতা মেট্রো রেলে চলে এলাম কালিঘাটে কলকাতায় সবচেয়ে ভাল লেগেছে এই মেট্রোরেল আহা! এত্ত গোছানো ব্যালেন্সড অত্যাধুনিকপ্রযুক্তি একটা ময়লা নেই ভিতরে মাটির নিচ দিয়ে যায়। ঢাকার মেট্রোর সার্ভিস কেমন হবে তা জানিনা তবে আমরা কলকাতাবাসীর মত ব্যবহার করতে পারব কিনা? কালিঘাট মন্দির দেখে নিলাম ধারণা করা হয় কলকাতা নামই হয়েছে এই কালিঘাট মন্দির থেকে। কালিঘাট থেকে মেট্রো দিয়ে আবার চলে এলাম “ইসপ্লানেড মোড়” সেখান থেকে নিউ মার্কেটে টুকটাক কিছু কেনাকাটা করলাম সন্ধ্যা হয়ে এল এর পর গেলাম “বিগ বাজারে” সেখান থেকে কিনলাম কিছু ওরে বাবা বিল দেওয়ার এত্ত বড় লাইন আমি জীবনেও দেখিনাই ৩০-৪০ মিনিট লাইনে দাঁড়িয়ে বিল দিলাম। সদর স্ট্রিটে এলাম সেখান থেকে কিছু খাবার কিনে রুম এসে গোসল করলাম রেস্ট নিলাম। দেন রাতে বের হলাম ডিনার করতে মাইকুইস স্ট্রিটের এক মুসলিম হোটেলে খেলাম। কোক খাওয়ার জন্য বরফ পাইকারি বেচে সেখান থেকে কিছু বরফ নিলাম মারকুইস স্ট্রিটের পাশেই সেখানেই ওয়াজ মাহফিল হচ্ছিল কিছুটা সময় সেখানে থেকে রুমে এসে বরফ দিয়ে কোক খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম।

৩য় দিনঃ সকালে উঠেই খাবার খেয়ে নিলাম কাল রাতে যেখান থেকে খেয়েছি সেখানে এলাম। ইন্ডিয়ান মিউজিয়াম ঘুরলাম এরপর এলাম ময়দানে সেখানে খানিকটা সময় কাটিয়ে দেখতে গেলাম সিম্বল অব ক্যালকাট্টা

” ভিক্টোরিয়া মেমোরিয়ালে ” সত্যিই অমর এক ভবন দেখলেই চোখ জুড়ায়। সেখান থেকে এলাম “শহীদ মিনারে” এর পর “ইডেন গার্ডেনে” গেলাম সাথে বোনাস হিসাবে দেখাম কলকাতা মোহামেডান ও ইস্ট বেংগল ফুটবল ক্লাব। সেখান থেকে বাসে করে পার্ক স্ট্রিট নেমে হেটে রুমে আসলাম ফ্রেশ ও রেস্ট নিয়ে চলে গেলাম পার্ক স্ট্রিট কেএফসি তে সেখান থেকে লাঞ্চ করে আবার গেলাম নিউ মার্কেটে কিছু কেনাকাটা করলাম সন্ধ্যা হয়ে গেল গেলাম বিগ বাজারে কপাল খারাপ থাকলে যা হয় আজ ১ ঘন্টার উপরে লাইনে দাড়ালাম বিল দিতে। সদর স্ট্রিটে আসলাম কিছু খাবার কিনে রুমে রেস্ট নিয়ে ও ফ্রেশ হয়ে গেলাম ডিনার করতে ডিনার করে এসে দেন ঘুমালাম।

৪র্থ দিনঃ আজ ঢাকায় ফিরে যাব এই কয়েকটা দিন খুবই বিজি গেলেও এক মূহুর্তের জন্য বোর হইনি সকালে উঠে খাবার খেয়ে নিলাম এরপর রাস্তা দিয়ে ঘুরলাম বর্ডার থেকে টাকা দিয়ে রুপি একচেঞ্জ করেছিলাম সব রুপি শেষ হয়ে গেল তাই সদর স্ট্রিট থেকে মানি এক্সচেঞ্জ করে নিলাম। এর পর গেলাম ম্যাকডোনাল্ড’স এ খেতে বাংলাদেশে ম্যাকডোনাল্ড’স নেই তাই খুবই ইচ্ছা ছিল এখানে খাওয়ার আহামরি কিছুই মনে হলনা। হোটেলে এসে ব্যাগেজ নিয়ে চেক আউট করলাম সকাল ১২ টার পর আর কোন বাস যায়না পেট্রাপোল তাই কোন বাস পেলাম না অন্যদিকে বর্ডার বন্ধ হয়ে যায় ৫ টায় কি আর করা তাড়াতাড়ি ট্যাক্সি নিলাম শিয়ালদাহ স্টেশনের বনগাঁ লোকালে উঠলাম এত্ত ভীড় খোদা এর মধ্যে বনগাঁ পৌছাতে ২৪টা স্টেশনে থামল কি ব্যাপার স্যাপার তবে ট্রেনের স্পিড ছিল বাংলাদেশের আন্তঃনগর ট্রেন থেকেও বেশি ফাস্ট। ২ ঘন্টার মধ্যে পৌছে গেল বনগাঁ জংশনে সেখান থেকে অটোতে করে বর্ডারে এলাম সেখান থেকে বর্ডার পার হয়ে বেনাপোল থেকে বাসে চলে এলাম ঢাকায়।

#কিছু টিপস।

-জামা কাপড় বেশি নেওয়ার কোন প্রয়োজনই নেই আমি ব্যাগ ভর্তি ড্রেস নিয়ে কিছুই পরতে পারি নাই সো ২ সেটের বেশি ড্রেস না নেওয়াটাই উত্তম।

– OYO কিংবা booking.com এ আগে থেকেই হোটেল বুক করে যাওয়ার চেষ্টা করবেন।

– সামারে শর্টস পরার চেষ্টা করাই ভাল।

-সাথে একটা ব্যাকপ্যাক রাখবেন সমসময় যেটাতে পাসপোর্টসহ প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস রাখবেন।

-ফোনে ইন্টারনেট রাখবেন কিংবা গুগল ম্যাপ থেকে সিটির ম্যাপ ডাউনলোড করে নিবেন।

-ছাতা রাখবেন সাথে।

-সোলো হলে আসার আগে চেষ্টা করবেন এই শহর বিষয়ক অনেক ব্লগ পড়ার গুগল করলেই পেয়ে যাবেন তখন মনে হবে এই শহর আপনি আগে থেকেই চিনেন।

-খাবার হালাল হারামের তেমন কোন ঝামেলা নেই তাও নিজের মধ্যে সন্দেহ থাকলে অনেক মুসলিম হোটেল আছে নিউমার্কেট ও বড় বাজারের আশে পাশে বিফ লাভার হলে আপনার জন্য হ্যাভেন কলকাতা।

– এখানে ঢাকার মত কোন রিক্সা নেই শুধু ট্যাক্সি অল্প দূরত্বে যেতে হলেও ট্যাক্সিই ভরসা তাই পর্যাপ্ত হাটার মানুষিকতা থাকতে হবে এবং খরচ বাচাতে হলে বাস ও মেট্রোরেল ব্যবহার করতে হবে।

এই কয়েকদিনেই আমি এখানকার প্রেমে পড়ে গিয়েছি খাবার, ট্রাফিক সিস্টেম, মেট্রো কিংবা সদর স্ট্রিটের মোহ আবার যেতে চাই সেখানে।

দেশের বাইরে গেলে আপনি আপনার নিজ দেশের প্রতিনিধিত্ব করেন তাই এমন কিছু করবেননা যেন দেশের ভাবমূর্তি নষ্ট হয় প্লাস্টিক বা ময়লা নিদিষ্ট স্থানে ফেলুন।
Source:Shefan AL Emon‎<Travelers of Bangladesh (ToB)

Share:

Leave a Comment