কামরূপ কামাখ্যা ভ্রমণ

এই লেখা যারা পড়ছেন, তাদের প্রায় সবারই শিশুকিশোরবেলায় যাদুটোনার এক রহস্যময় জগতের কথা শুনেছেন- যার নাম কামরুপ-কামাখ্যা বা কামুখ্যে। শোনা যেতো, এই কামরুপ কামাখ্যা জঙ্গল পাহাড়ময় এমন ভয়ঙ্কর জগৎ, যেখানে যাওয়া খুব দু:সাধ্য। চরাই উৎরাই পেরিয়ে কেউ যদি সে জগতে পৌঁছাতেও পারে, সেখান থেকে ফিরে আসা সম্ভব না। সেখানকার দেবীদের মায়ার জালে বন্দী হয়ে ভরজীবন কাটাতে হয়। আর যাদু টোনা বাণ কিংবা তন্ত্র মন্ত্র শিখতে কামরুপ কামাখ্যার জুড়ি নেই।

এই মিথ আর প্রচলিত ধারণা নিয়ে কোন কথা বলতে চাচ্ছি না। কামরুপ কামাখ্যা আসলে এক ধর্মীয় পর্যটন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে আজ । এখানে প্রতিদিন শত সহস্র মানুষ আসছে ভারত, বাংলাদেশ ও বিদেশ থেকে। অনেকে মন্দিরে পূজা দেয়, অনেকে দর্শণ করে, অনেকে মন্দির দর্শনকে পর্যটনের অনুষঙ্গ হিসেবে রাখে। আসামের কামরুপ জেলার অন্তর্গত গুয়াহাটি শহরের সন্নিকটে নীলাচল পর্বতে এই কামাখ্যা দেবির মন্দির অবস্থিত। এটি হিন্দু লোক বিশ্বাসের ৫১টি সতীপিঠের একটি। এখানে দশমহাবিদ্যার মন্দিরও আছে। পৌরাণিক ইতিহাসে কামাখ্যা মন্দির ও দেবী কামাখ্যার বিস্তৃত ইতিহাস আছে। আমাদের এই রচনার প্রতিপাদ্য কামাখ্যা ভ্রমণ।

কামরুপ কামাখ্যায় ভ্রমণে ভয় শঙ্কার কিছু নেই। শিলং থেকে সড়কপথে গুয়াহাটিতে সহজেই পৌঁছানো যায়। ভারতের কলকাতা বা হাওড়া থেকে ট্রেনে বা বিমানে গৌহাটি যাওয়া যায়। শিলংয়ের দর্শণীয় স্থানগুলো ভ্রমণ করার সময় একটি বা দুটি দিন আসামের জন্য রাখা বুদ্ধিমানের কাজ। তাহলে এক ঢিলে দু্‌ইপাখি মারার মতো একযাত্রায় দুটি রাজ্য দেখা যায়।

যাওয়ার পথনির্দেশ

শিলং- গুয়াহাটি:

ডাউকি সীমান্ত পার হয়ে শিলং যাওয়া যায়। শিলংয়ের চেরাপুঞ্জি, ডাউকি, শিলং শহরের দর্শণীয় স্থান ভিজিট করার পর কোন এক সকালে পুলিশ বাজার থেকে শেয়ার ট্যাক্সি বা টাটা সুমোতে গুয়াহাটি। ভাড়া- শেয়ার ট্যাক্সিতে ৪০০ টাকা, সুমোতে ২০০ টাকা। সময় লাগবে তিনঘন্টা।

গুয়াহাটি-কামরুপ কামাখ্যা:

গুয়াহাটি পল্টন বাজার এলাকাতেই গুয়াহাটি রেলওয়ে স্টেশন, বাজার, বাসস্ট্যান্ড। এখান থেকে ট্রেন, বাস, ট্যাক্সি, অটোতে যে কোন জায়গা যাওয়া যায়।

ট্যাক্সি বা অটো রিজার্ভ করে কামাখ্যা মন্দিরে যাওয়া যায়। ভাড়া আড়াইশ’ থেকে সাড়ে তিনশ’ টাকা। বলে নিতে হবে একদম কামাখ্যা মন্দিরের কাছে যেতে হবে। তা না হলে অটোওলারা পাহাড়ের কাছে নামিয়ে দিয়ে পাহাড়ে উঠে যেতে বলতে পারে। আজকাল রাস্তা হয়েছে…হেঁটে যাওয়ার কোন প্রয়োজন হয় না।

আবার পল্টন বাজার থেকে আসাম ট্রাংক রোডে কামাখ্যা মন্দির গেটের কাছে নামা যায়। সেখান থেকে পাহাড়ের মন্দির পর্যন্ত ওপরে উঠতে শেয়ার টাটা সুমো চলে। জনপ্রতি মাত্র ২০ টাকা। পল্টন বাজার থেকে কামাখ্যা গেট পর্যন্ত রাস্তা মাত্র ৬ কিলোমিটারের মতো। যেতে সময় লাগে ১৫ মিনিটের মতো। ভাড়া একশ থেকে দেড়শ টাকার মধ্যে।

আসার সময় মন্দিরের নিচেই স্ট্যান্ডে অটো, সুমো, ট্যাক্সি এসব আছে। দরদাম করলে ভাড়া আরও কমবে। কামাখ্যা মন্দিরে যাওয়ার পথে পাহাড়ের একটি জায়গায় ভিউপয়েন্ট আছে। যাওয়া বা আসার পথে ট্যাক্সি বা অটোওলাকে অনুরোধ করে থামিয়ে ওপর থেকে গুয়াহাটি শহর ও আশপাশের পাহাড়ি জনপদের ছবি নেয়া যায়।

পুনশ্চঃ ভ্রমণপ্রিয় হোন। ভ্রমণগদ্য লিখুন । ভ্রমণের সময় পরিবেশে রাখুন পরিচ্ছন্ন । মনে রাখবেন, পরিবেশ বিপন্ন হলে দর্শণীয় জায়গাগুলো আর দর্শণীয় থাকবে না।

Source:  Mahmud Hafiz‎ <Travelers of Bangladesh (ToB)

Share:

Leave a Comment