কীর্ত্তিপাশা জমিদার বাড়ি, গাবখান সেতু, বৈশাখের ভিমরুলী বাজার দর্শন
বৈশাখের ভিমরুলীঃ
ভিমরুলী বাজার ভাসমান পেয়ারা বাজারের জন্য বিখাত। অগাস্ট-সেপ্টম্বর মাসে পেয়ারা মৌসুমে এখানে প্রচুর পর্যটক ঘুরতে আসে।
সে সময়কার ভিমরুলীর রুপ আমরা মোটামোটি সবাই জানি। একটা কাজে বরিশাল যেতে হবে বিধায় ভাবলাম বৈশাখে কেমন অবস্থা থাকে তা দেখে আসি।
ঝালকাঠি নেমে অটোতে কীর্ত্তিপাশা বাজার। সেখান থেকে আরেক অটোতে করে ভিমরুলী বাজার। ভিমরুলীতে নেমে আমি অবাক। গ্রীষ্মের প্রতাপে ভিমরুলীকে চেনাই যাচ্ছে না।
খালে তেমন পানি নেই। তেমন কোন বাজারও নেই। দুপুর ১১টার সময় কেমন স্তব্ধ, নিরব চারিদিক। এক দোকানে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, এটাই কি ভিমরুলী বাজার? লোকটা আমার দিকে তাকিয়ে বললো, জ্বি।
কিছু সময় এদিক-ওদিক ঘুরে চলে গেলাম জমিদার বাড়ি।
কীর্ত্তিপাশা জমিদার বাড়িঃ
কীর্ত্তিপাশা জমিদার যেতে ভিমরুলী থেকে অটোতে উঠলাম। জমিদার বাড়ি এখন স্কুল হিসেবে ব্যবহৃত হয়। শুক্রবার হওয়ায় কোন মানুষ নেই। অজানা কোন কারনে বাড়ি প্রাঙ্গণে ঢুকেই গা ছমছম করছিলো। ভয়ে ভয়ে পুরো চারপাশ ঘুরে দেখলেও ভিতরে বা ছাদে যাওয়ার সাহস হলো না। বাইরে থেকেই কয়েকটা ছবি তুলে বাজারে চলে আসলাম।
কীর্ত্তিপাশা জমিদার বাড়ির ইতিহাস সম্পর্কে কিছুটা জানা যাক, (বাংলা উইকিপিডিয়া থেকে)
“কীর্ত্তিপাশা জমিদার বাড়ি প্রতিষ্ঠিত হয় প্রায় একশতক বছর আগে। বিক্রমপুর জমিদারের বংশধরের কিছু অংশ প্রায় ১৯ শতকের শেষ সময়ে ঝালকাঠি জেলার কীর্ত্তিপাশা জমিদার বাড়িটি প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯ শতকের প্রথম দিকে বিক্রমপুর জমিদার বংশের রাজা রাম সেনগুপ্ত এই কীর্ত্তিপাশা গ্রামে আসেন। এখানে তিনি তার দুই ছেলের জন্য দুইটি বাড়ি নির্মাণ করেন। বড় ছেলের জন্য পূর্ব বাড়ি যা ছিল ১০ আনা বড় হিস্যা জমিদার বাড়ি নামে পরিচিত। আর ছোট ছেলের জন্য পূর্ব বাড়ি যা ৬ আনা ছোট হিস্যা জমিদার বাড়ি নামে পরিচিত ছিল। ছোট ছেলের জমিদার বাড়ি অনেক আগেই ধ্বংস হয়ে গেছে। আর বড় ছেলের জমিদার বাড়ির কিছু অংশ টিকে আছে। এই জমিদার বাড়ির জমিদারপুত্রকে বিষ খাইয়ে হত্যা করা হয়। এবং তার স্ত্রীও তার সাথে মৃত্যুবরণ করেন। পরে তাদেরকে একসাথে সমাধি করা হয়। এখানে এখনো একটি নাট মন্দির, হল ঘর, ছোট ও বড় মন্দির আছে। এই জমিদার বংশের দুজন বিখ্যাত ব্যক্তি হচ্ছেন রোহিনী রায় চৌধুরী ও তপন রায় চৌধুরী।”
গাবখান সেতু দর্শনঃ
গাবখান সেতু সম্পর্কে প্রথম জানতে পারি রকেট স্টীমার লঞ্চ জার্নি নিয়ে বিস্তারিত পড়ার সময়। পিরোজপুরের সন্ধ্যা ও ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীকে সংযোগ করেছে ১৮ কিলোমিটার দৈর্ঘের গাবখান চ্যানেল। বলা হয়ে থাকে, গাবখান চ্যানেল দেশের অন্যতম সুন্দর নৌরুট। সেই লোভ থেকেই সেতু দেখার শখ জাগে। সেতু নিয়ে তাই নেটে আরো ঘাটাঘাটি করে জানতে পারি, সেতুটি অনেক উঁচু এবং সেতুর উপর থেকে অনেক দূর পর্যন্ত দেখা যায়।
অটোতে করে সেতুতে উঠার সময়ই টের পেলাম আসলেই অনেক উঁচু। বেশ অনেক সময় ধরে উপরে উঠতে হলো। সেতুর পাশে থাকা বিশাল সব রেইন ট্রি (কড়ই গাছ) একসময় সেতুর উচ্চতার কাছে হার মানলো। সেতু ভালোভাবে দেখার জন্য সেতু পার হয়ে অটো থেকে নেমে পড়লাম, হাঁটা দিলাম সেতুর দিকে।
পায়ে হেঁটে চারপাশ দেখতে দেখতে উঠছিলাম আর অবাক হচ্ছিলাম। দেশের বিভিন্ন জায়গায় কত লুকানো সৌন্দর্য আছে অথচ আমরা তার কিছুই জানি না। ব্রিজে দাঁড়িয়ে জাহাজ ও নৌকার চলাচল দেখলাম। অত উঁচু থেকে দেখতেও বেশ লাগছিলো। ছবি তুলে, ভিডিও করে বাসে উঠতে ব্রিজের এইপাড়ে চলে আসলাম।
যানবাহন নিয়ে ব্রিজে উঠতে টোল দিতে হয়। কয়েকটি ছেলে রাস্তায় দাঁড়িয়ে যানবাহন থামিয়ে টোল আদায় করছে। অনেকেই টোল না দিয়ে চলে যাচ্ছে। টোল তোলার কাহিনী দেখতে দেখতে বরিশালগামী বিআরটিসি বাস চলে আসলো। ঝালকাঠি জেলা ঘোরার সমাপ্তি টেনে চললাম বরিশালে।
যাতায়াতের উপায়ঃ
দেশের যেকোন স্থান থেকে বরিশাল বা ঝালকাঠি। ঝালকাঠি বাসস্ট্যান্ড থেকে কীর্ত্তিপাশা জমিদার বাড়ি/ভিমরুলী বাজার/গাবখান সেতু যাওয়ার অটো পাওয়া যায়। না পেলে লোকাল অটোতে করে কলেজ মোড় চলে যাবেন। সেখান থেকে অটো পাবেন।
বি.দ্র.
১।স্থানীয়দের সাথে এমন কোন আচরন করবো না যেন তারা পরবর্তীতে কোন ট্যুরিস্ট/ট্রাভেলার দেখতে বিরক্ত হয়।
২।লঞ্চে যে ময়লা জমবে চেষ্টা করবেন নিজের কোন পলিথিন বা ব্যাগে জমা রাখতে। লঞ্চের ডাস্টবিনে ফেললে সেগুলো দিনের বেলা নদীতেই ফেলা হয়।