কুয়াকাটা ট্যুরের গল্প
এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের অনেক জায়গাই ঘুড়ে এসেছি। লিখবো লিখবো করেও আসলে কোনো ট্র্যাভেলিং স্টোরিই লিখা হয়ে উঠেনা। কুয়াকাটা ঘুড়ে এসে মনে হলো কুয়াকাটা সম্পর্কে না লিখলেই নয়। বেশ লম্বা একটা জার্নি করে কুয়াকাটা পৌঁছুতে হয়, যারা দূরপাল্লায় যাত্রায় অভ্যস্ত নয় তাদের জন্য খুব কষ্টদায়ক হয়ে উঠতে পারে।
বাংলাদেশের অন্যতম সুন্দর একটি সী-বিচ হচ্ছে কুয়াকাটা যা “সাগরকণ্যা” নামে পরিচিত আর দেশের একমাত্র স্থান যেখান থেকে একই সাথে সানরাইজ এবং সানসেট দেখা যায়।
বেশ কিছুদিন ধরে প্ল্যানিং চলছিলো কুয়াকাটা নিয়ে। ঠান্ডা কাঁশি জ্বর থাকার পরেও তাই ১৪ ডিসেম্বর রওনা দিয়ে দিলাম আমরা।
ট্যুরে যাওয়ার কথা ছিলো ৪ জনের। কিন্তু ১ জন খুব বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ায় আমরা ৩ জনে পরিণত হলাম।
গাবতলী থেকে বিকেল ৪:৩০ এর দিকে বাবুবাজারের বাসে উঠলাম। বাস যখন চলতে শুরু করলো তখন বুঝলাম, আজকে বুদ্ধিজীবী দিবস এবং মানুষের ঢল নেমেছে রাস্তায়। বাসটা সোয়ারীঘাট এসে পুরোপুরি থেমে গেলো। আমরা লাফ দিয়ে নেমে নৌকায় উঠে গেলাম, গন্তব্য — সদরঘাট।
মাঝি-মামা ২০-২৫ মিনিটে সদরঘাট পৌঁছে দিলো। সদরঘাট এসে দেখি পটুয়াখালীর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে এমন ৩টা লঞ্চ অপেক্ষমাণ। কুয়াকাটা-১, এ.এফ.রহমান-১ আর সুন্দরবন-৭।
আমরা ৩টা লঞ্চই ঘুড়লাম কিন্তু কোনোটাতেই কেবিন মিললো না। আফসোস! অতঃপর সুন্দরবন-৭ এর ডেকের টিকিট কেটে উঠে পড়লাম। জনপ্রতি ৩০০ টাকা।
পটুয়াখালী কিংবা বরিশালের লঞ্চের একটা অন্যতম সমস্যা হলো এরা ডেকে সিটের ব্যবস্থা করেনা.. হয়তো কেবিন নাও, কিংবা ফ্লোরে বসে যাও!
আমরা ৩ তলায় কেবিনের পাশের করিডোরে চেয়ার পাতা থাকে এমন তিনটা চেয়ার খালি পেয়ে দ্রুত বসে গেলাম!
সন্ধ্যে ৬:৪৫ মিনিটে হুইসেল দিয়ে লঞ্চ ছেড়ে দিলো। শুরু হয়ে গেলো আমাদের কুয়াকাটা ভ্রমণ।
আমরা খুব আয়েশ করে সেলফি তুলছি, গল্প করছি, ভালোই লাগছিলো।
কিন্তু কিছুক্ষণ পর লঞ্চটা যখন ফতুল্লা ঘাটে থামলো, আত্মা শুকিয়ে যাবার অবস্থা, ৪-৫ হাজার মানুষ লঞ্চে উঠার জন্য অপেক্ষা করছে!
আল্লাহ্!! এরা সবাই এই লঞ্চে উঠবে নাকি????
উপর থেকে বসেই দেখলাম মানুষের মারামারি লঞ্চে উঠার জন্য। কিছুক্ষণের মধ্যেই লঞ্চটা কানায় কানায় ভরে উঠলো। জানিনা কতো লোক উঠলো, কিন্তু লঞ্চের ধারণক্ষমতা ১০০০ জনের বেশি অবশ্যই না।
আবার যাত্রা শুরু হলো। হৈ-হুল্লোড়ে মগ্ন পরিবেশ। অনেক কাপল এসেছে, কেউ রোমান্স করছে আর কেউবা ঝগড়া। মনোযোগ দিয়ে ঝগড়া গুলো শুনছি, রোমান্সের দিকে কান দিচ্ছিনা।
একবার কফি, একবার ঝালমুড়ি, একবার চিপস এভাবে পালাক্রমে হালকা নাস্তা খেয়ে দেয়ে চলছি। ভারী খাবার পেটের জন্য পীড়াদায়ক হয়ে যেতে পারে।
আমার চেয়ারের পাশে আর সামনে হঠাৎ দুইটা গ্রুপ চাদর বিছিয়ে শুয়েই নাক ডাকতে আরম্ভ করলো। আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। পা ও নাড়াতে পারবোনা এখন আমি!
রাত তখন ১২টার মতো বাজে। লঞ্চ একটা ছোট্ট চরে প্রবল বেগে ধাক্কা খেয়ে কাঁপতে আরম্ভ করলো। সবাই ভয়ে জেগে উঠলো, কেবিন থেকে সবাই বেরিয়ে এলো, আমরা প্রচন্ড আতংকিত হয়ে পড়লাম। কারণ লঞ্চটা কাঁপছে, বেশ জোরেসোরে কাঁপছে। একটুপর কাঁপুনির মাত্রা কমে এলো, লঞ্চ স্থির হয়ে আবার চলতে আরম্ভ করলো।
রাত ২টা নাগাদ আমাদের লঞ্চ একটা চরে আটকা পড়ে গেলো। অনেক চেষ্টা করে ৩০ মিনিট এর মতো সময় নিয়ে লঞ্চটাকে কিভাবে যেন চর থেকে ছাড়ানো হলো। শীতকালে এটা নাকি একটা কমন ব্যাপার।
রাত যখন ৪টা বাজে তখন খুব ঠান্ডা পড়তে লাগলো। চারপাশ কুয়াশাতে ছেয়ে গেলো। আমার খুব শীত করছিলো। তাই ফুলহাতা গেঞ্জির উপরেই একটা হুডিস চাপালাম, গলায় বাঁধলাম মাফলার, মাথায় কানটুপি, আর মুখে এঁটে দিলাম মাস্ক। সবশেষে গায়ে জড়িয়ে নিলাম একটা কাশ্মীরি শাল। তারপরেও কিভাবে যেন হাড়ে গিয়ে ঠান্ডা বিঁধছিলো। প্রচন্ড অসহায় একটা অনুভূতি।
ভোর ৬টা বাজতেই লঞ্চটা পটুয়াখালী পৌঁছে গেলো। হিসেব কষে দেখলাম সোয়া ১১ ঘন্টা লঞ্চে কাটিয়ে দিয়েছি আমরা।
লঞ্চঘাট থেকে বেরিয়ে অটো নিয়ে নিলাম। পটুয়াখালী বাস স্ট্যান্ড যাবো। জনপ্রতি ভাড়া ২০ টাকা। ১৫ মিনিটের মতো সময় লাগলো বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছুতে।
এখানে অনেক ছোটখাটো হোটেল আর খাবারের দোকান আছে। সকালের নাস্তা সেরে নিলাম।
পটুয়াখালী থেকে কুয়াকাটা গামী একটা বাসে উঠে গেলাম। ৭টায় বাস ছাড়লো। একটা ভুলই হয়ে গেলো। বাসটা ঠিক ডিরেক্ট বাস ছিলোনা। অনেকবারই থেমেছে। সাড়ে ৮টা নাগাদ কলাপাড়া এলো আমাদের বাস। এখানে এসে আমাদেরকে অন্য একটা বাসে তুলে দেয়া হলো।
নতুন এই বাস ড্রাইভার একটা জিনিস!!! বাস ছাড়ে না তো ছাড়েই না। সব যাত্রী চিৎকার করছে, তাও বাস ছাড়েনা। শেষমেশ ৯টায় বাস ছাড়লো।
সাড়ে ৯টা বাজে আমরা কুয়াকাটা পৌঁছে গেলাম। বাস স্ট্যান্ড থেকে সাগর চোখে পড়ে। অপূর্ব এক দৃশ্য!
আমরা সী বিচে গিয়ে একটা বেড ভাড়া করে ব্যাগ রাখলাম। রেস্ট করলাম। সাগরের পানিতে পা ভিজিয়ে এলাম। আমার সাথে দু’জন ১২৫ টাকা করে দুইটা সানগ্লাস কিনে আনলো সৈকত থেকেই। আমি আর কিনলাম না।
১ ঘন্টা বাদে উঠে পড়লাম। যেহেতু আজকে রাতেই ফিরবো, তাই টিকিট কেটে ফেলা জরুরি। গোল্ডলাইনে টিকিট কাটলাম। কুয়াকাটা টু ঢাকা ভাড়া ৬০০ টাকা করে।
আমরা একটা চায়ের দোকানে বসে চা তা খেয়ে সাথে পানি নিয়ে নিলাম।
এবার বাইক ভাড়া করে ঘুড়ে দেখবার পালা কুয়াকাটা। এখানে কিছু কথা বলে না রাখলেই নয়। একটা বাইকে ২জন করে ঘুড়তে পারা যায়। বাইক ভাড়া অনেক চাইবে। ৫০০-৬০০ টাকায় রাজি করাতে হবে। চাপার জোর যার যতো বেশি, সে ততো লাভবান হবে। সিজন টাইম ছিলো, তাই আমরা ৬০০ টাকায় ঠিক করতে পেরেছিলাম। ১৮টা স্পট এর কথা বলে তারা (আসলে কিছু স্পট খুবই কাছাকাছি), সময় লাগে ৪-৪.৫ ঘন্টা।
ভাড়া ঠিক করে আমরা বাইকে চেপে বসলাম। ঘুড়তে শুরু করলাম অনিন্দ্য সুন্দর এক স্থান কুয়াকাটা!! জিরো পয়েন্ট থেকে আমাদের যাত্রা শুরু হলো।
🌈 ইকোপার্ক / জাতীয় উদ্যান
বাইক রাইড শুরু হবার পরেই প্রথমে চোখে পড়বে এই জায়গাটা। সারি সারি গাছ। পার্কের মতো করে করা। সাগরকে একপাশে রেখে অন্যপাশে গড়ে উঠেছে এই ইকোপার্ক।
🌈 সূর্যোদয়ের স্থান
এখান থেকে সূর্যোদয় খুব সুন্দর অবলোকন করা যায়। যারা খুব সকালে কুয়াকাটা পৌঁছে যাবে, কিংবা একদিন থেকে পরদিন সূর্যোদয় দেখবে, তারা এইখানে এসে দেখতে পারবে।
🌈 গঙ্গামতির চর
এই জায়গাটা গঙ্গামতির লেক নামে পরিচিত। লেকটা নৌকা করে পার হতে হয়। নৌকায় বাইক তুলা যায়। বাইক প্রতি ৩০ টাকা নিবে। ওপাশে গেলেই চর চোখে পড়বে। অনেক সামুদ্রিক বৃক্ষরাজি। শ্বাসমূল দেখা যায়। আছে পাখি, বন মোরগ, আর বানর। চমৎকার দৃশ্যাবলী।
🌈 কাউয়ার চর
এইখানটাতে বাইক টেনে নিয়ে যাবে। বাইকে বসেই উপভোগ করা যায় প্রাকৃতিক পরিবেশ।
🌈 ক্রাব আইল্যান্ড
লাল কাঁকড়ার দ্বীপ নামে পরিচিত। অনেক কাঁকড়া দেখা যায়। কিন্তু কাছে গিয়ে ছোঁয়া যায়না। তার আগেই এরা বালির ঢিবিতে ঢুকে লুকিয়ে পড়ে। ডিএসএলআর সাথে থাকলে জুম ইন করে ছবি তুলতে পারা যায়। আর মৃত কাঁকড়া পেলে হাতে নিয়ে দেখা যাবে অনায়াসেই।
🌈 ঝাউবন
সবারই পরিচিত ঝাউগাছ। আর অন্যান্য সমুদ্রসৈকতে দেখেও অভ্যস্ত সবাই। কুয়াকাটাতেও ঝাউবনের দেখা মিলবে। কিন্তু বনের গহীনে যেতে নিষেধ করবো আমি। ছবি তুলতে হলে বনের একটু অভ্যন্তরে গিয়েই তুলে চলে আসা ভালো। নিরাপত্তাই প্রথম!
🌈 অতিথি পাখির বীচ
আহামরি কিছু নয়। কিছু অতিথি পাখির দেখা মিলবে শীতকালে। তবে ব্যক্তিগত মতামত দিবো আমি, এরচেয়ে বেশি পাখি জাহাঙ্গীরনগরেই দেখতে পাওয়া যায়। আর কাছাকাছি গেলে, পাখি সব এমনিতেই উড়ে চলে যাবে।
🌈 মিশ্রি পাড়া (সীমা বৌদ্ধ মন্দির)
কুয়াকাটার প্রাচীন কুয়ার সামনেই সীমা বৌদ্ধ মন্দির। কাঠের তৈরি এই মন্দির কয়েক বছর আগে ভেঙে দালান তৈরি করা হয়েছে। তবে মন্দিরের মধ্যে এখনও আছে প্রায় ৩৭ মন ওজনের প্রাচীন অষ্টধাতুর তৈরি বুদ্ধ মূর্তি।
ছবি তুলতে দিবে অবশ্যই, কিন্তু অনুমতি নিয়ে নেয়া ভালো। ১০ টাকা দিয়ে টিকিট কেটে মন্দিরে ঢুকতে হয়।
🌈 মিষ্টি পানির কুয়া
মন্দিরের সাথে লাগোয়া এই কুয়া। দেখে অবশ্যই আশাহত হলাম। নিষেধাজ্ঞা থাকার পরেও মানুষ চিপসের প্যাকেট, সিগারেট এর ধ্বংসাবশেষ, খাবারের উচ্ছিষ্টাংশ ফেলে নোংরা করে রেখেছে কুয়ার পানি। কিছুই বলার নেই।
🌈 রাখাইন তাঁতপল্লী
সবারই পছন্দ আদিবাসীদের হাতের কাজ। এখানে অনেক কিছুই পাওয়া যায়, যা আদিবাসীরা নিজের হাতে তৈরি করে। দামও খুবই কম। শাল, শাড়ি, ফতুয়া থেকে শুরু করে অনেক কিছুই কিনতে পারবেন প্রিয়জনদের জন্য। এখানে একটা পিঠা খেয়েছি, উনুনে বসে এক রাখাইন মধ্যবয়স্কা নারী পিঠা বানাচ্ছিলো। দেখতে পাটিসাপটা এর মতোই, কিন্তু চালের গুড়ো আর নারিকেল দিয়ে বানানো। কেনো জানি মনে হয়, ঐ স্বাদ আবার পেতে হলেও কুয়াকাটা যাওয়া দরকার। আমি কিছু কেনাকাটা ও করেছিলাম রাখাইন পল্লী থেকে।
## এই জায়গাগুলো ঘুড়তে সময় বেশি লেগে গিয়েছিলো আমাদের। তাই আমাদের বাইক রাইডার বের হয়েই খুব জোরে বাইক টান দেয়। এবং বাইক এক্সিডেন্ট করে আমরা কালভার্ট থেকে নিচে পড়ে যাই। আল্লাহ্র অশেষ রহমতে তেমন কিছুই হয়নি।
পূর্বদিকের এই জায়গা গুলো ঘুড়া শেষ হলে বাইক আবার জিরো পয়েন্টে এসে পশ্চিম দিকে যাবে।
🌈 লেবুর চর
লেবুর চর নামে একটা জায়গা থেকে তিন নদীর মোহনা দেখা যায়। এক পাশে সমূদ্র আরেক পাশে তিন নদীর মোহনা, অপর পাশে উপকূলীয় বন, নদীর ওপারে দেখা যায় ফাতরার বন- সব মিলিয়ে জায়গা টা অসাধারন।
🌈 তিন নদীর মোহনা
অনেক ঘেটেঘুটেও তিনটা নদীর নাম বের করতে পারলাম না। মনে হয় বালেশ্বর নদী আর আন্ধার মানিকের সাথে সাগরের মিলনকেই তিন নদীর মোহনা বলা হয়।
🌈 সানসেট পয়েন্ট
আসলে সানসেট সব জায়গা থেকেই দেখা যায়। এই জায়গা থেকে হয়তো একটু ভালো দেখা যায় আরকি। আমরা সানসেট পর্যন্ত যেহেতু থাকিনি সেখানে, তাই ডিটেইলস জানাতে পারছিনা।
🌈 ফাতরার বন
এখানকার গাছপালা কিছুটা হলুদ বর্ণের, আর বনের মধ্যে দিয়ে পায়ে চলার পথটা অসম্ভব সুন্দর, বন দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে একসময়য় সাগরের দিকে বের হওয়া যায়, সেখানে একটা চুলা আছে যেখানে রাতে ক্যাম্পিং করে বারবিকিউ করা হয়।
ট্রলার করে নদী পার হয়ে যাওয়া লাগে। রাতে থাকার ইচ্ছে না থাকলে না যাওয়াই ভালো।
🌈 শুটকি পল্লী
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের পশ্চিম প্রান্তে আছে জেলে পল্লী। এখানে প্রচুর জেলেদের বসবাস। নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত এখানে চলে মূলত শুঁটকি তৈরির কাজ। সমুদ্র থেকে মাছ ধরে এনে সৈকতেই শুঁটকি তৈরি করেন জেলেরা। কম দামে ভালো মানের শুঁটকিও কিনতে পাওয়া যায় এখানে।
🌈 ভাঙা জাহাজ
দৈর্ঘ্য ৭২ ফুট, প্রস্থ ২৪ ফুট এবং উচ্চতা সাড়ে ১০ ফুট। নৌকা নাকি জাহাজ, তা নিয়ে আছে মতভেদ। অনেক পুরাতন এক জাহাজ। ঝাউবনের কাছে বালুচরের নিচে পাওয়া যায় এই জাহাজটি।
ভেঙে গেছে অনেকখানিই। কাঠামো বুঝা যায় কিছুটা।
স্থানীয়দের মতে, বহু বছর আগে মিয়ানমারের আরাকান রাজ্য থেকে বিতাড়িত হয়ে ২৫০টি রাখাইন পরিবার ১৫০টি নৌকা নিয়ে ভাসতে ভাসতে কুয়াকাটায় এসে পাড়ি জমায়। এ নৌকাটি ওই সময়ের হতে পারে।
অনেকে “সোনার নৌকা” নামেও অভিহিত করে থাকে।
🌈 শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধ বিহার
এইখানেও ১০ টাকা দিয়ে টিকিট কেটেই প্রবেশ করতে হয়। সুনশান নিরব শান্ত মন্দিরের পরিবেশ। ভেতরে ঢুকে ছবি টবি তুলে আসা যাবে। এখানে ছবি তুলতে কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই।
🌈 কুয়াকাটার কুয়া
কুয়াকাটা নামকরণের ইতিহাসের পেছনে যে কুয়া সেটি এখনও টিকে আছে। তবে কয়েক বছর আগে অদূরদর্শী ও কুরুচিকর সংস্কারের ফলে এর সৌন্দর্য নষ্ট হয়ে গেছে। কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের কাছে রাখাইনদের বাসস্থল কেরাণিপাড়ার শুরুতেই প্রাচীন কুয়ার অবস্থান।
জনশ্রুতি আছে ১৭৮৪ সালে বর্মী রাজা রাখাইনদের মাতৃভূমি আরাকান দখল করলে বহু রাখাইন জায়গাটি ছেড়ে নৌকাযোগে আশ্রয়ের খোঁজে বেড়িয়ে পড়েন। চলতি পথে তারা বঙ্গোপসাগরের তীরে রাঙ্গাবালি দ্বীপের খোঁজ পেয়ে সেখানে বসতি স্থাপন করেন। সাগরের লোনা জল ব্যবহারের অনুপযোগী বলে মিষ্টি পানির জন্য তার এখানে একটি কূপ খনন করেন। এরপর থেকে জায়গাটি কুয়াকাটা নামে পরিচিতি পায়।
এই কুয়া নিয়ে অনেক মিথ প্রচলিত – সূর্যোদয়ের সময় পানি নাকি ভরপুর হয়ে যায়, আবার সূর্যাস্তের পর এতোই নেমে যায় আর দেখা যায়না পানির স্তর।
সত্যমিথ্যা জানিনা।
—————
আসলে কুয়াকাটার কুয়া দেখার সময়ই আমাদের বাইকাররা ভাড়া নিয়ে চলে যায়। আমরা তারপর চৌরাস্তা দিয়ে বের হয়ে এসে দুপুরের খাওয়া দাওয়া করি। খাবার দাবার তেমন স্বাদের না। সাগরের ইলিশ পাওয়া যায় হোটেল গুলোতে, আর মুরগী, গরু,সবজি,ডাল দিয়েই খাওয়া সেরে নিতে হবে। কিছু সামুদ্রিক মাছও তারা রান্না করে।
🌈 সমুদ্র সৈকত
১৮ কি.মি দীর্ঘ এই সৈকতটা দেখতে যাওয়া মোটামুটি স্বার্থক। সাগরের পানি অনেক দূর পর্যন্ত সমান। সাগরের বেশ গভীরে যাওয়া যায়, কক্সবাজারের মতো বালি এতো নরম নয়, পা দিলেই সরে যায় এই ব্যাপারটা কুয়াকাটায় নেই।
তবে সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত, জীবনের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ কোনো কাজেই আমি উৎসাহিত করবো না।
বিকেল ৫টায় সাগরে নামি। পানিতে ডুব দিয়েই সানসেট দেখি। অন্যরকম এক অনুভূতি।
সোয়া ৬টা পর্যন্ত সী বিচে ছিলাম আমরা।
সাগরে স্নান শেষে চাইলে বিচের কাছেই গোসলখানা আছে, গোসল সেরে ফ্রেশ হয়ে নেয়া যায়। জনপ্রতি ৩০ টাকা।
কফি খেয়ে আমরা অপেক্ষা করি বাসের জন্য। ৭টায় বাস এসে হাজির হয়।
কুয়াকাটা ট্যুরের পরিসমাপ্তি হচ্ছে। মনটা বেশ খারাপ হয়ে যায়।
সবখানে ব্যাকপ্যাকিং ট্যুর দেই বলে এখানেও তাই দেয়া হলো। দু’একদিন থাকতে পারলে ভালোই হতো।
কিন্তু সবারই কমবেশি ব্যস্ততা আর পরদিন ১৬ ডিসেম্বর এর বিবেচনায় ফিরে আসাটা জরুরি ছিলো।
আমি সংক্ষেপে কুয়াকাটা নিয়ে লিখার চেষ্টা করলাম। আশা করি, যারা পরবর্তীতে কুয়াকাটা ঘুড়তে যাবেন, তাদের জন্য কাজে দিবে।
যাওয়া কিংবা আসা মোটামুটি ১৫ ঘন্টার জার্নি দিতেই হবে। এটা থেকে মাফ নাই। হা হা হা।
আর আসার সময় বাসে উঠে দেখি আমার গলা দিয়ে কোনো আওয়াজই বেরুচ্ছেনা, গলা পুরোদস্তুর ভেঙে গেছে। ঘাপটি মেরেই ১৫ ঘন্টা কাটিয়ে দিলাম বাসে। কি আর করবো, কিচ্ছু করার নেই।
Post Copied From: