কেওক্রাডং ভ্রমণ অভিযান
অনেক দিন ধরেই কোথাও ঘুরতে যাবো যাবো করে যাওয়া হচ্ছিল না..ট্যুরের জন্য প্রচন্ড ব্যাকুল হয়ে..ঠিক করলাম বান্দরবান যাবো.. অনেক দিন পাহাড় দেখি না.. কিন্তু পাহাড়ে ঝর্নায় পানি নাই.. ঝর্নার আশায় গেলে মন খারাপ করে ফিরতে হবে।তাই ঠিক করলাম শুকনা ট্রেকই করব। গন্তব্য কেওক্রাডং।
আবহাওয়ার পূর্বাভাসে যদিও ট্যুরের ৩ দুনেই বৃষ্টি দেখাচ্ছিল.. তাও তোয়াক্কা না করে রওয়ানা দিলাম..চিন্তা ছিলো বেশী বৃষ্টি হলে কেওক্রাডং না উঠে.. বগালেকে ল্যাটাবো..
১৩ তারিখ বৃহষ্পতিবার রাতে আমরা ৪ জন রওয়ানা দিলাম বান্দরবানের উদ্দেশ্যে। আগে থেকেই গাইড প্রকাশ দার সাথে কথা বলে রাখছিলাম। সকালে বান্দরবান নেমে সেখান থেকে রুমা বাজার বাসে। রুমা বাজার থেকে প্রকাশ দা আমাদের গাইড করা শুরু করেন। প্রকাশ দা অমাইক মানুষ.. দ্রুত সব ফর্মালিটিস শেষ করে… রুমা বাজার থেকে লান্ডক্রুজারে করে চলে গেলাম বগালেক.. সেখান থেকে হাটা শুরু.. শীতকালে গাড়ি নিয়েই কেওক্রাডং চলে যাওয়া যায়..কিন্তু এই বর্ষায় পায়ে হেটেই যাওয়া লাগবে।
দুরের পাহাড়ে হালকা মেঘ জমতেছে… কিন্তু রোদ আছে এখনো.. বোঝা গেলো আজ আর বৃষ্টি হবে না। প্রকাশ দার পিছে পিছে হাটা শুরু করে দিলাম আমরা। দূরের পাহাড়ের দিকে আমরা যত আগাচ্ছিলাম.. দূরের পাহারে মেঘ গুলাও আমাদের দিকে আগাচ্ছিলো.. যার ফলশ্রুতিতে পাহাড়ের সৌন্দর্য ক্ষনে ক্ষনে পরিবর্তন হচ্ছিল। আর সাথে পরান জুড়ানো ঠান্ডা বাতাশ। মাঝে দার্জিলিং পাড়ায় আইরিন দিদির দোকানে দুপুরের খাবার খেয়ে নেই। প্রায় সন্ধায় পৌছে যাই কেওক্রাডং এর চূড়ায়। তখন কেওক্রাডং এর চূড়ায় ভারী মেঘ এসে ঘিরে ফেলছে… সাথে প্রচুর ঠান্ডা।রাতে খেয়ে দেয়ে আড্ডা দিয়ে সকালের জন্য এলার্ম দিয়ে রাখি যে সকালে সূর্যদয় দেখবো.. সকালে এলার্ম বাজতেই বাইরে বের হয়ে দেখি সব সাদা হয়ে আছে মেঘে..কিছুই দেখা যাচ্ছে বা.. বাইরে বের হলে মেঘে ভিজে যাচ্ছিলাম.. এলার্ম অফ করে আরো কিছুক্ষন ঘুমায়ে নিলাম।
ফেরার পথে সবার তারাহুড়া.. পাহাড়ে মেঘ যমছে.. এগুলা সব যাচ্ছে বগালেকের দিকে.. মেঘের আগে না পৌছাইতে পাড়লে মাঝপথে বৃষ্টিতে ভিজতে হবে.. রাস্তাও পিচ্ছিল হয়ে যাবে.. তাই তাড়াতাড়ি চলা শুরু করলাম। এত তাড়াহুড়ার মধ্যেও আইরিন দিদির দোকানে বেশ সময় লাগাইয়া.. খিচুড়ি, ব্যাম্বো চিকেন, বাশ কোরোল, ডাল মরিচ ভর্তা দিয়ে.. একদম পেট পুড়ে খেয়ে নিলাম..সাথে পাশের গাছ থেকে প্রচুর মিষ্টি কাঠাল।
অবশেষে মেঘের সাথে প্রতিযোগিতায় আধা ঘন্টা আগে.. বগালেক পৌছে গেলাম.. বগালেকে গোসল করে.. পাহাড়ি আনারস খেয়ে.. ফিরতি পথ ধরার জন্য রেডি হতে হতে..বগালেকে ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো… এত সুন্দর বৃষ্টি মনে হয় না আমি আগে দেখছি.. প্রায় চল্লিশ মিনিট বগালেকের অপার্থিব বৃষ্টি দেখে.. ফেরার পথ ধরি।
শুকনার সিজনে হয়ত আরো সহজে কেওক্রাডং পৌছে যাবেন , কিন্তু এই বর্ষায় পাহাড়ের আলাদা একটা সৌন্দর্য থাকে। একটু জোকের উতপাত সয্য করতে পারলে এখনই কেওক্রাডং ঘুরে আসতে পারেন।
⭕ যেভাবে যাবো:
📍 দেশের যে কোন জায়গা থেকে বান্দরবান শহর।
বাদরবান শহর থেকে ১৫ টাকা অটো ভারা দিয়ে রুমা বাজার যাওয়ার বাসস্ট্যান্ড। প্রথম বাস সকাল ৮ টায়। প্রথম বাসটাই ধরার চেষ্টা করবেন।
বাসস্টান্ড থেকে রুমা বাজার। ভারা ১১০ টাকা। সময় লাগবে ২.৫ থেকে ৩ ঘন্টা।
📍 রুমা বাজার নেমে গাইডের সাথে আর্মি ক্যাম্পে সব পেপার ওয়ার্কস শেষ করবেন।
এরপর ল্যান্ডক্রুজার জিপ/চান্দের গাড়ি নিয়ে বগালেক যেতে হবে। ল্যান্ড ক্রুজারে ধারন ক্ষমতা ৭/৮ জন। ভারা ১৮০০ টাকা। চান্দের গাড়ি ২০০০ টাকা ১৪/১৫ জনের মত যেতে পারবেন।
📍 বগালেকে আর্মি ক্যাম্পে পেপার জমা দিয়ে কেওক্রাডং এর উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করতে হবে। স্যালাইন, শুকনা খাবার, পানি নিয়ে নিবেন।প্রায় ৮/৯ কিমি হাইক, বগালেক থেকে কেওক্রাডং এর এলিভেশন ডিফারেন্স প্রায় ২০০০ ফিট।টিমের ক্যাপাবিলিটির উপর ডিপেন্ড করে ৪ ঘন্টার আশেপাশে সময় লাগবে কিওক্রাডাং পৌছাতে।
📍 কিওক্রাডাং এর পাদদেশে দার্জিলিং পাড়ায় পোছাতে প্রায় বিকাল হয় সেখানে আইরিন দিদির হোটেলে দুপুরের খাবার খেয়ে নিতে পারেন। অসাধারন রান্না আর আতিথেয়তা পাবেন। কি খাবেন তা গাইডকে আগে থেকে বলে রাখবেন, গাইড দিদির সাথে কথা বলে সব ঠিক করে রাখবে।
📍কিওক্রাডং এ রাতে থাকার জন্য জন প্রতি ৩০০ টাকা।
⭕ গাইড:
২ দিনের জন্য ২০০০ টাকা ৩ দিনে ২৬০০ টাকা। সাথে তার থাকা খাওয়ার খরচ আপনাকে বহন করতে হবে।
আমাদের গাইড ছিলো প্রকাশ দা, খুবই অমাইক আর হেল্পফুল মানুষ। যাওয়ার আগে আপনার গাইডকে ফোন দিয়ে পুরো প্লান ও খরচের ব্যাপারে আলাপ করে নিবেন।