গোমুখ অভিযানের খরচাবলী সম্পর্কে ধারণা

আজকের গল্পটা আমার একা একা গোমুখ অভিযানের কোথায় কত অর্থকড়ি খরচ হয়েছে বা করেছি তাই নিয়ে। ৪০+ দীর্ঘ ধারাবাহিক গল্প লেখার মাঝে মাঝেই এই প্রশ্ন করেছেন অনেকেই যে এই অভিযানে খরচ কেমন হয়েছে বা লাগবে? যদিও প্রতি পর্বেই সেই পর্বের খরচ সংক্রান্ত ব্যাপার লিখে দেবার চেষ্টা করেছিলাম, তবুও অনেকের অসীম কৌতূহল শুধু খরচ নিয়ে তাই আজকের লেখাটা শুধু এই অভিযানে অর্থকড়ির খরচ নিয়ে।

এই অভিযানে আমার ভাগ্য অর্থকড়ির দিক দিয়ে খুবই ভালো ছিল আর সব ধরনের বাহন, যখন যেখানে যে বাহন দরকার হয়েছে দারুণ ভাবে সেই সময়ে সেই বাহন আমি পেয়েগেছি খুব বেশী কষ্ট আর অর্থ খরচ না করেই। আর তাছাড়া সবগুলো বাহনের পরিবেশও ছিল খুবই চমৎকার আর একদম মনের মত। সবকিছু মিলে এই অভিযানের অর্থকড়ির হিসেব নিয়ে আমি খুবই খুশি ছিলাম। এবার তবে সরাসরি খরচের হিসেবের খাতাটা খুলে বসা যাক।

এই অভিযানে আমার বাজেট ছিল ২২,০০০ টাকা। হ্যাঁ টাকাই, রুপী নয়। যে বাজেটের পুরোটা আমার খরচ হয়নি আর লাগেওনি। যদিও কলকাতা থেকে দিল্লী আর দিল্লী থেকে কলকাতা পর্যন্ত আমি এয়ারে যাওয়া আসা করেছি সময় বাঁচাতে আর ঝামেলা কমাতে। কারন রুট নিয়ে খুব বেশী ধারনা ছিলনা, আগে এই দিকে যাওয়ার কোন রকম অভিজ্ঞতা ছিলোনা। সবকিছু মিলেই কলকাতা থেকে দিল্লী আর দিল্লী থেকে কলকাতা এয়ারে করেছিলাম, দেরাদুন থেকে পরবর্তী গন্ত্যব্যের সময়ের হিসেবে যেন কোন রকম ঘাটতি না পরে।

সবার আগে ভাগ্য মুখ তুলে তাকিয়েছিল এয়ার টিকেট করার সময়। কারন মাত্র একমাস আগে এয়ার টিকেট করতে গিয়েও আমি যাওয়া আসার টিকেট করতে পেরেছিলাম ৬৫০০ টাকায় (কলকাতা-দিল্লী-কলকাতা)। দিল্লী থেকে দেরাদুন যাওয়ার মধ্য রাতের কিন্তু একেবারেই ভিন্ন অভিজ্ঞতার নন্দাদেবী এক্সপ্রেসের টিকেট করেছিল্ম ১১০০ টাকায়। আর দেরাদুন থেকে দিল্লী ফেরার ট্রেন টিকেট ছিল ১০০০ টাকা। এখানে বলে রাখা ভালো সব টাকাকেই পূর্ণ করে দিয়ে দিলাম হিসেবের সুবিধার্থে। যদিও খুচরা হিসেব করলে আরও কমই হবে আসল খরচ।

দেরাদুন থেকে মুশৌরি হয়ে উত্তরকাশী পৌছাতে দুটি বাসে টিকেট করেছিলাম ১০০ টাকা ও ১২০ টাকা। উত্তরকাশী থেকে গাঙ্গোত্রীর জীপ ভাড়া লেগেছিল ২৭৫ টাকা। গাঙ্গোত্রীতে রুম ভাড়া ছিল ৪৮০ টাকা তিন জনের বেড। জীপে আরও দুজন সঙ্গী পেয়েছিলাম বলে এক রুমে জনপ্রতি থাকার খরচ পরেছিল ১৬০ টাকা করে। গাঙ্গোত্রী থেকে গোমুখ যাওয়ার টিকেট নিয়েছিল ৭৫০ টাকা (উহ খুব বেশী ছিল এই খরচটা, বিদেশী বলে!) ভুজবাসা রাতের থাকার খরচ ৫০০ টাকা সরকারী লজের খোলা উঠানের তাবুতে। গাঙ্গোত্রী ফিরে হোটেল ভাড়া নিয়েছিলাম এক রুম একার ২৩০ টাকা। এই হল কলকাতা থেকে গাঙ্গোত্রী পর্যন্ত শুধু বাহনের খরচ। এখানে কলকাতা দিল্লী আর দিল্লী কলকাতা এয়ার টিকেট ধরা হয়েছে।

এরপর ফিরে আসার খরচ। গাঙ্গোত্রী থেকে উত্তরকাশী বাস ভাড়া ছিল ১৫০ টাকা। উত্তরকাশী থেকে দেরাদুন বাসের টিকেট লেগেছিল খুব সম্ভবত ২০০ টাকার মত। এখানে ২০-২৫ টাকার কমবেশি হতে পারে, সঠিক রুপীটা মনে নেই বলে। দেরাদুনে দুই দিনের ডরমেটরি ভাড়া ছিল ৩০০ টাকা। দেরাদুন থেকে দিল্লী ট্রেন টিকেটের হিসেব আগেই দিয়ে দিয়েছি। কলকাতা নেমে কোনদিকে না তাকিয়ে দমদম থেকে সোজা ২০ টাকার বনগাঁ লোকালের টিকেট কেটে বনগাঁ।

বনগাঁ থেকে ৩৫ টাকার অটোতে করে বেনাপোল বর্ডার। কোন রকম অর্থ না দিয়ে বর্ডারের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে ৯০০ টাকার এসি গাড়িতে ঢাকা। আর ঢাকা থেকে যাওয়ার সময় ৫০০ টাকার ট্রেন টিকেট করে চিত্রা এক্সপ্রেসে যশোর। যশোর থেকে ৫০ টাকা বাস ভাড়া দিয়ে বেনাপোল। বেনাপোল থেকে ৩৫ টাকায় বনগাঁ, বনগাঁ থেকে ২০ টাকা দিয়ে দমদম স্টেশন। এই হল গোমুখ অভিযানের সকল যানবাহনের খরচ।

সবমিলে যানবাহনের খরচ কত হল একটু দেখে নেই। ৬৫০০ এয়ার (কলকাতা-দিল্লী-কলকাতা)+১১০০ (দিল্লী-দেরাদুন ট্রেন)+১০০০ (দেরাদুন দিল্লী ট্রেন)+ ২২০ (দেরাদুন-উত্তরকাশী বাস)+ ২৭৫ (উত্তরকাশী-গাঙ্গোত্রী জীপ)+ ১৬০+৫০০+২৩০ (হোটেল গাঙ্গোত্রী ও ভুজবাসা)+৭৫০ (এন্ট্রি ফি) ১৫০ (গাঙ্গোত্রী থেকে উত্তরকাশী বাস)+ ২০০ (উত্তরকাশী থেকে দেরাদুন বাস)+ ৩০০ (দেরাদুন ডরমেটরি)+ ১০০০ (দেরাদুন দিল্লী ট্রেন) ১৫০০ (ঢাকা-কলকাতা-ঢাকা বাস/ট্রেন) মোট= ১৩,৮৮৫/-

এবার খাওয়ার খরচ।

বনগাঁতে ১৫ টাকার কলকাতা এয়ারপোর্টে ১৫০ টাকার কেএফসি রাইস মেন্যু, ওল্ড দিল্লীতে ১৫০ টাকার কাবাব তান্দুরি, ২০ টাকা মুশৌরিতে কেক আর চা, ৩৫ উত্তরকাশীতে চাপাতি-নারকেল, ২৫ গাঙ্গোত্রীতে চাপাতি-জিলাপি, ৪০ সকালের আলুপরাটা, ৫০ চিরবাসার চা-বিস্কিট-ড্রিংকস, ১৫০ ভুবাসার রাতের খাবার, ১০০ ভুজবাসার চা-পানি, ৩০ টাকা গাঙ্গোত্রীর নুডলস, ৩৫ উত্তরকাশীর রুটি-ডিম-চা-কলা, ৫০ দেরাদুনে বিরিয়ানি রাতের খাবার, ৩৫ আপেল-আইসক্রিম, ২০ দেরাদুনে সকালের নাস্তা, ২০ ফরেস্ট ইন্সটিউট যাওয়া, ২০ টাকা ফিরে আসা, ৩৫ টাকা সিঙ্গারা, ড্রিংকস, ১৫০ দুপুরের মাটন-নান, শেষ বিকেলে ভরপেট খেয়ে রাতে আর খেতে হয়নি। ২৫ দেরাদুনের সকালের নাস্তা, ২০ দেরাদুন থেকে রাজপুর যাওয়া, ২০ রাজপুরে মিষ্টি খাওয়া।

দুপুরে দেরাদুনে আর খাইনি, বিকেলে ট্রেনে খাবার দেবে বলে। আর ট্রেনের দেয়া খাবার দিয়ে সেদিন রাতের খাবার বাঁচিয়ে রেখে রাতে আলাদা খরচ না করা। ভোঁরে দিল্লী থেকে কলকাতা ফিরে, ট্রেনে বনগাঁ গিয়ে বর্ডার পার হয়ে ১০০ টাকার ভাত-মাছ খাওয়া। ও হ্যাঁ আপেল, চকলেট ও শুকনো খাবার কেনা হয়েছিল ২৫০ টাকার মত পুরো অভিযানের জন্য। এই হল সাকুল্যে খাওয়ার খরচ। তো এখন হিসেব করে দেখা যাক খাওয়ার জন্য কত খরচ হল। মোট খাওয়ার খরচ ১৫৪৫/- টাকা। আর দিল্লীতে মেট্রো-সিএনজি ভাড়া দিয়েছিলাম ২৫০ টাকা। ট্র্যাভেল ট্যাক্স ও পোর্ট চার্জ ধরলে ৫৫০/-

তাহলে ১৩,৮৮৫+১৫৪৫+২৫০+৫৫০= ১৬,২৩০/- টাকা। বাজেটের চেয়ে অনেক টাকা বেঁচে যাওয়ায় অনেক দিনের সাধের একটা টাইটান ঘড়ি কিনেছিলাম ৪৫০০ রুপী দিয়ে ৪০% ছাড় পাওয়াতে। কারন ঘড়ির দাম আসলে ছিল ৯০০০ রুপীর প্রায়!

এই হল আমার গোমুখ অভিযানের সকল অর্থকড়ির খরচের হিসেবের সবকিছু।

টুকটাক কোথাও একটু আধটু ভুল থাকতে পারে তবে সেটা কিছুতেই ১০০/২০০ টাকার বেশী নয়। বাড়তি পাওনা বা উপহার ছিল টাইটানের ঘড়ি!

Source: Sajol Zahid‎ <Travelers of Bangladesh (ToB)

Share:

Leave a Comment