গ্যাংটকে গন্ডগোল আর দার্জিলিং জমজমাট
টিওবি তে সিক্কিম ভ্রমণের পোস্ট দেখতে দেখতে ঘুরে আসলাম সিক্কিম-দার্জিলিং।আমাদের দলটি ছিল ৮ জনের।এর মধ্যে ৭ জনের বর্ডার ছিল চ্যাংড়াবান্ধা আর ১ জনের হরিদাসপুর।আমরা ৭ জন ২৫ এপ্রিল রাতে শ্যামলী এন আর ট্রাভেলসে শিলিগুড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হই।টিকেটের দাম ছিল ১৬০০ টাকা।আমরা ২৬ তারিখ রাতে রওনা দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু টিকেট না পাওয়ায় ২৫ তারিখে যেতে হয়।তাই টিকেট যতদিন সম্ভব আগে কেটে নেওয়া ভাল।হরিদাসপুর বর্ডার যার ছিল তাকে আমাদের একদিন আগে রওনা দিয়ে কলকাতা হয়ে শিলিগুড়ি আসতে হয়।
২৬ তারিখ সকাল ৭ টায় আমরা বর্ডারে পৌঁছাই।ইমিগ্রেশনের কাজ ৯ টায় শুরু হয় তাই ওই সময়টা আমরা ফ্রেশ হয়ে নেই আর নাস্তা করে নেই।ট্রাভেল ট্যাক্স আমাদের দেয়া ছিল না তাই ৫০০+১০০ টাকা দিতে হয়।লাগেজ চেকিং এড়ানোর জন্য আরো ১০০ টাকা দিতে হয়।বর্ডারেই মানি এক্সচেঞ্জ করে নিতে পারবেন।
বর্ডারে কাজ শেষে আমরা আবার বাসে উঠে শিলিগুড়ি পৌঁছাই দুপুর ২ঃ৩০ এ।প্রথমেই আমরা সিম কিনে নেই।দুই একটা দোকান ঘুরে ৩০০ রুপিতে ভোডাফোন কিনি সবাই।প্রতিদিন ১.৫ জিবি ইন্টারনেট ও লোকাল কল ফ্রি।ইন্টারন্যাশনাল কলের জন্য রিচার্জ করে নিতে হবে।এরপর কাছেই ফ্যান্সি হোটেল থেকে লাঞ্চ করে নেই।
আমরা শিলিগুড়ি এস এন টি তে সিক্কিমের পারমিশনের জন্য ফর্ম ফিল আপ করতে যাই।এস এন টি বিকাল ৪ টায় বন্ধ হয়ে যায় তাই তাড়াতাড়ি যাওয়া ভাল।এখানে পাসপোর্ট ও ভিসার এক কপি করে ফটোকপি প্রয়োজন হয়।এরপর আমরা গ্যাংটক যাওয়ার জন্য জিপ ভাড়া নেই ৩৫০০ রুপিতে।আরো কমেই পাওয়া যায় কিন্তু আমাদের দেরি হয়ে যাওয়ার কারনে বেশি ভাড়ায় রাজি হতে হয়।রাত ৮ টায় র্যাংপো চেক পোস্ট বন্ধ হয়ে যায়।আমরা তার কিছুক্ষণ আগে গিয়েই পৌঁছাই।ওখানে ফর্ম জমা দিয়ে পারমিট নিয়ে আমরা গ্যাংটক পৌঁছাই ৯ঃ৩০ এ।রাত হয়ে যাওয়ায় একটু বেশি দাম দিয়ে একটা হোটেলে রুম নিতে হয়।ওখানে সব দোকান ৯ টার মধ্যে বন্ধ হয়ে যায় তাই ডিনার ও হোটেলেই করে নেই।
পরদিন ২৭ তারিখ পি এন জি রোডে সানমুন হাউজ নামে একটা হোটেল খুঁজে পাই ৪ জনের রুম ৮০০ রুপিতে।আমরা হোটেল থেকেই বিভিন্ন স্পটের প্যাকেজ নেই কিন্তু নিজেরা আলাদা ট্রাভেল এজেন্সি ম্যানেজ করাটাই বেটার।ওইদিন আমরা ৭ টা স্পট ঘোরার জন্য ১৬০০ রুপিতে প্যাকেজ নেই।এর মধ্যে বানঝাকরি ফলস সবচেয়ে সুন্দর স্পট কিন্তু আমাদের গাড়ির ড্রাইভার সেটায় একদম শেষে নেয় যখন ওটা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।এক্ষেত্রে ড্রাইভার কে আগে ওই স্পটে নেয়ার জন্য বলে রাখতে হবে। আমরা হ্যান্ডলুম এক্সিবিশন,ফ্লাওয়ার এক্সিবিশন,তাশি ভিউ পয়েন্ট,গণেশটক মন্দির ও মনেস্ট্রি ঘুরে দেখি।গণেশটকে চাইলে তাদের স্থানীয় পোশাক বক্কু পরতে পারেন ৪০-৫০ রুপিতে।
পরদিন.২৮ তারিখ আমরা সাঙ্গু লেক যাই ৪০০০ রুপির প্যাকেজে।দুর্ভাগ্যবশত আমাদের গাড়ির ড্রাইভার ভাল পড়েনি।খুবই বাজে ব্যবহার করছিল আর রাফ চালাচ্ছিল।আমরা ফিরে তার নামে কমপ্লেইন করি।যাই হোক সাঙ্গু লেক অসম্ভব সুন্দর জায়গা।প্রায় পুরোটাই বরফে ঢাকা ছিল।বরফে পড়ার উপযুক্ত কাপড় সাথে না থাকলে পথে ভাড়া নিয়ে নিতে পারেন ৫০/১০০ রুপিতে।রাতে আমরা এম জি মার্গে শপিং করতে যাই।স্যুভেনির ছাড়া অন্য কিছু খুব একটা কম দামে পাবেন না।
পরদিন ২৯ তারিখ আমরা ১২০০০ রুপিতে লাচুং-ইয়ামথাং ভ্যালী যাওয়ার ২দিন ১ রাত প্যাকেজ নেই।২ রাতের প্যাকেজ নিলে লাচেং যাওয়া যেত কিন্তু ওখানের অনেক জায়গায় বাংলাদেশিদের যাওয়ার পারমিট নেই দেখে আমরা বাদ দেই।এই ১২০০০ রুপির মধ্যে গাড়ি ভাড়া,ওদিনের লাঞ্চ,ডিনার,হোটেল ভাড়া ও পরদিনের ব্রেকফাস্ট,লাঞ্চ ইনক্লুডেড ছিল।আমরা পথে নাগা ফলস,ভিম নালা ফলস দেখে লাচুং এর হোটেলে পৌঁছাই।সিক্কিমে যত জায়গা ঘুরেছি লাচুং এর মত সুন্দর আর কোন জায়গা মনে হয়নি।নিজের চোখে না দেখলে মনে হয় না এটা উপলব্ধি করা সম্ভব।পরদিন ৩০ তারিখ ভোরে ইয়ামথাং ভ্যালীর উদ্দেশ্যে রওনা হই।কেউ যদি জিরো পয়েন্ট যেতে চান তাহলে আরো ৩০০০ রুপি বেশি দিতে হবে।
ওদিন দুপুরের আগেই আমরা গ্যাংটকের উদ্দেশ্যে রওনা হই কারণ আমাদের প্ল্যান ছিল ওদিনই দার্জিলিং যাওয়ার।আমরা গ্যাংটক পৌঁছে হোটেল থেকে লাগেজ নিয়ে দেউড়ালি যাই দার্জিলিং যাওয়ার গাড়ি ভাড়া করতে।২৫০০ রুপিতে জিপ পেয়ে যাই।আমরা পৌঁছাই রাত ১০ঃ৩০ এ।সেখানেও রাত হয়ে যাওয়ায় একটু বেশি ভাড়ায় একটা হোটেলে উঠতে হয়।
পরদিন ১লা মে আমরা গাড়ি ভাড়া করি ১৫০০ রুপিতে ৩টা স্পট।প্রথমে টাইগার হিল যাই।এখানে মূলত সবাই যায় সূর্যোদয় ও কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে কিন্তু এখন কুয়াশার কারণে দেখা সম্ভব হচ্ছে না।এরপর একটা মনেস্ট্রি ঘুরে বাতাসিয়া লুপে যাই।ওখানেও চাইলে দার্জিলিং এর স্থানীয় পোশাক ভাড়া নিয়ে পরতে পারেন।টয় ট্রেনে উঠা যাবে ২০০ রুপিতে।
আমরা এরপর মল চত্বরে যাই শপিং করতে।শপিং শেষে ডমিনোজে খেয়ে আমরা হোটেল থেকে লাগেজ নিয়ে শিলিগুড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেই।গাড়ি ভাড়া ছিল ১৮০০ রুপি। পৌঁছে আমরা পরদিন ঢাকা যাওয়ার জন্য টিকেট কাটি।টিকেট শ্যামলীতেই পেয়ে যাই তবে ৫ জনের। ২ জনকে আলাদা বাসে যেতে হয়।রিটার্ন টিকেট সম্ভব হলে আসার পরপরই কেটে ফেলা ভাল।আমরা মাল্লাগুড়ি রোডের রয়াল গার্ডেন হোটেলে উঠি। ৪ জনের রুম ১৬০০ টাকা আর হোটেলের সার্ভিস বেশ ভাল ছিল।
পরদিন ২রা মে সকালে বিগ বাজার থেকে শপিং করে দুপুর.১ঃ৩০ এ আমরা ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হই।৩রা মে সকাল ৮ টায় ঢাকা পৌঁছাই।
*যাওয়া আসা মিলিয়ে ৭ দিনের ট্যুরে আমাদের খরচ হয়েছে পার পারসন এরাউন্ড ১০০০০ রুপি(খাওয়ার খরচ সহ) ও ২৫০০ টাকা।
**গ্যাংটকে আমরা বেশিরভাগ সময় ময়ূর হোটেল(পি এন জি রোডের কাছেই) খেয়েছি।এখানে মোমো,চাউমিন,ফ্রাইড রাইস,আলু পরোটা কম টাকায় খেতে পারবেন।
***গ্যাংটকের ওয়েদার একদমই আনপ্রেডিকেটেবল।কখনো খুব গরম,কখনো হঠাত বৃষ্টি আবার কখনো অনেক ঠান্ডা।ছাতা আর শীতের কাপড় নিয়ে যাবেন।
****১০-১২ কপি পাসপোর্ট,ভিসার কপি ও ছবি নিয়ে যাবেন।
স্পট গুলোতে অনেকেই ময়লা আবর্জনা ফেলে রেখেছে।সুন্দর জায়গা গুলো সুন্দর রাখার চেষ্টা করবেন।কষ্ট করে পো্সট টা পড়ার জন্য ধন্যবাদ সবাইকে।