গ্যাংটক ভ্রমনে যাতায়াত বিতান্ত ও তথ্য
৫৫০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত সিকিমের রাজধানী শহর গ্যাংটক এক আধুনিক পাহাড়ি শহর। হোটেল, রেস্তোঁরা, ক্যাফেটেরিয়া, শপিং মল, অজস্র দোকানপাট— সব মিলিয়ে এক জমজমাট শহর। ‘মে-ফেয়ার’ ও ‘রয়েল প্লাজা’ হোটেলে ক্যাসিনোও আছে। আবার রোপওয়ে চড়েও আকাশপথে দেখে নেওয়া যায় গোটা শহর। ভাল ভাবে গ্যাংটক দেখতে গেলে হাতে দু’টি দিন রাখতেই হবে। প্রথম দিনটা গাড়ি ভাড়া করে দেখে নিন তাশি ভিউ পয়েন্ট, হনুমান টক, গণেশ টক, রুমটেক গুম্ফা, রাঙ্কা গুম্ফা, অর্কিড হাউস, চোগিয়াল রাজবাড়ি, বনঝাকরি ঝর্ণা, ইনস্টিটিউট অব টিবেটোলজির মতো দ্রষ্টব্যগুলি। হাতে যদি কিছুটা বেশি সময় ও দেখার আগ্রহ থাকে তবে ঘুরে নিতে পারেন ফ্যামবং-লো অভয়ারণ্য ও হিমালয়ান জুলজিক্যাল পার্ক (রেড পান্ডা, ব্ল্যাক বিয়ার, স্নো-লেপার্ডের মুক্তাঞ্চল)।
দ্বিতীয় দিনটা রাখতে হবে জনপ্রিয় ছাঙ্গু-নাথুলা-বাবামন্দির সফরের জন্য। ছাঙ্গু লেকের (উচ্চতা ১২৪০০ ফুট) দূরত্ব গ্যাংটক থেকে মাত্র ৩৮ কিলোমিটার। নীল জলের এই সরোবরটি বছরের অনেকটা সময়ই অবশ্য থাকে ধবধবে সাদা, অর্থাৎ বরফে ঢাকা। ছাঙ্গু থেকে আরও ১৮ কিলোমিটার দূরে নাথুলাতে রয়েছে ভারত-চীন সীমান্ত। কাঁটাতারের বেড়ার ওপারেই দেখা যাবে চিনের বাড়ি, টহলরত চিনা সেনা। নাথুলার উচ্চতা ১৪৪৫০ ফুট। ফেরার পথে চার কিলোমিটার (নাথুলা-গেট থেকে) উৎরাই রাস্তায় গিয়ে দেখে নিন নতুন বাবামন্দির। দুর্ঘটনায় অকালমৃত পঞ্জাব রেজিমেন্টের হরভজন সিঙের নামে এই স্মৃতিমন্দির। ফৌজিদের বিশ্বাস, হরভজনের আত্মা নাকি বিভিন্ন বিপদে এখানে ত্রাতার ভূমিকা নেয়। স্মৃতিমন্দিরে হরভজনের পোশাক, ছবি ইত্যাদি সযত্নে রক্ষিত আছে। ছাঙ্গু, নাথুলা ও বাবামন্দির-তিনটি জায়গাতেই আছে ক্যাফেটেরিয়া।
প্রয়োজনীয় তথ্য: সোম ও মঙ্গলবার বাদ দিয়ে সপ্তাহের বাকি পাঁচ দিনই নাথুলা যাত্রার অনুমতি মেলে। গ্যাংটক পৌছেই দু’কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি ও এক কপি ভোটার পরিচয়পত্রের জেরক্স দিয়ে আবেদন করলে সহজেই মেলে এই অনুমতিপত্র। হোটেলে জমা দিলে তারাও আনিয়ে নিতে পারে অনুমতিপত্র।
যাওয়ার পথ: শিয়ালদহ, হাওড়া কিংবা কলকাতা স্টেশন থেকে ছাড়া উত্তরবঙ্গগামী যে কোন ট্রেনে এসে নামতে হবে নিউ জলপাইগুড়ি (এনজেপি) স্টেশনে। সেখান থেকে গ্যাংটকের দূরত্ব ১২৫ কিলোমিটার। আবার বিমানে বাগডোগরা পৌঁছে সেখান থেকেও চলে আসতে পারেন ১২৪ কিলোমিটার দূরে গ্যাংটকে। পুরো গাড়ি রিজার্ভ করলে ভাড়া পড়বে ২৫০০-৪০০০ টাকা(গাড়ির মডেল অনুযায়ী)। সময় লাগে সাড়ে তিন থেকে চার ঘণ্টা। আবার এনজেপি বা শিলিগুড়ি সিকিম ন্যাশনালাইজড ট্রান্সপোর্ট-এর শেয়ার ভিত্তিতে চলা গাড়িও নিতে পারেন। ভাড়া পড়বে মাথাপিছু ২০০-৩০০ টাকা। এ ছাড়া গ্যাংটকের বাসও ছাড়ে।
গ্যাংটক থেকে ছাঙ্গু-নাথুলা-বাবামন্দির (নতুন) সফরের গাড়ি ভাড়া( গাড়িতে আট জন যাবে এই ভিত্তিতে) পড়বে মাথাপিছু ৮০০-১২০০ টাকা। সময় ভেদে অবশ্য যথেষ্ট হেরফের হয় এই ভাড়ায়।
গ্যাংটক ও আশেপাশের দর্শনীয় স্থানগুলি দেখার জন্য সারাদিন গাড়ি রিজার্ভ করলে, পুরো গাড়ি ভাড়া পরবে ৩০০০-৩৫০০ টাকা।
রাত্রিবাসের ঠিকানা:
ক) ‘হোটেল নির্বাণা রেসিডেন্সি’-দ্বিশয্যা ঘরের ভাড়া ১২০০-১৮০০ টাকা, তিন শয্যার ঘর-১৫০০ টাকা, চার শয্যা ঘর-২০০০ টাকা।
যোগাযোগ: ৯৮৩১৯-৭২৪৬৮, ৯১৬৩৬-৫০৫৫৬
খ) ‘সাই রেসিডেন্সি’-দ্বিশয্যা ঘরের ভাড়া ২০০০-৪৫০০ টাকা।
যোগাযোগ: ৯৯৩৩০-২০০৩৭
গ) ‘সোয়াংগ হোটেল’-দ্বিশয্যা ঘরের ভাড়া ১৮০০-২৫০০ টাকা।
যোগাযোগ: ৮২৫০৮-৯৩৩১৫
ঘ) ‘নিউ হোটেল সিকিম’-দ্বিশয্যা ঘরের ভাড়া ১৫০০-২৫০০ টাকা
যোগাযোগ: ৯০৫১১-৬৬৬৯৩
ঙ) ‘হোটেল বজ্র কিলা’-দ্বিশয্যা ঘরের ভাড়া ১০০০-১৫০০ টাকা
যোগাযোগ: ৯৯৩৩০-০৩৭৩৩
(বাংলা থেকে সিকিমের সব ফোনই লোকাল কল, এস.টি.ডি নয়)