ঘুরে আসুন পাহাড় বেষ্টিত আজমির শরীফ

মুসলিম শরিফ তীর্থ আজমের শহরটি আজকের নয়। পাহাড় বেষ্টিত আনা সাগরের তীরে ৪৮৬ ফুট উচ্চে রমনীয় পরিবেশে সবুজ মরুদ্যানের মতোই রূপ পেয়েছে শহর। ধর্ম, ইতিহাস আর স্থাপত্যের সমন্বয় ঘটেছে এখানে। তেমনই সর্বধর্ম সমন্বয়ে  মিলনক্ষেত্র ও পূণ্যভূমি এই আজমের। কথিত আছে ৭ বার আজমের দর্শনে ১ বার মক্কা দর্শণের পূণ্য মেলে।

সপ্তম শতকে অজয় পাল চৌহানের হাতে গড়ে ওঠে আজমের শহর। কারো মতে আজমের নামেই শহরের নামকরণ করা হয়েছে। আবার কেউ কেউ বলেন অজয় মেরু পর্বত থেকেই আজমের নাম হয়েছে। পূর্বের অজয়মেরুর দূর্গটিরনাম এখন তারাগড় দূর্গ। ১১৯৩ খ্রিষ্টাব্দে পৃথ্বিরাজ চৌহাননকে হারিয়ে গজনীর মোহাম্মদ ঘোরী আজমের দখল করেন। সেই থেকে শুরু হয় ক্ষমতা দখলের লড়াই।

১৩৯৮ খ্রিষ্টাব্দে তৈমুর লঙ ভারত আক্রমন করে অবাধে লুটতরাজ, খুন-জখমের বন্যা বইয়ে দিয়ে অত্যাচারের রোলার চালিয়ে চলে যাবার পর রানা কুম্ভ কিছুদিন আজমীরের রাজা হন। কিন্তু ১৪৭০ থেকে ১৫৩১ পর্যন্ত আজমের মলোয়ার সুলতানদের দখলে থাকে। ১৫৫৬ সালে আজমের একটি দূর্গও গড়ে তোলেন। তবে তিনি স্বয়ং এখানে আসেন  ১৫৬১ তে এবং এখানে তার কীর্তি তুলে ধরেন নানা দূর্গ, মসজিদ ও স্থাপত্য শিল্পকলার মাধ্যমে। তার সেই সব স্থাপত্যের নিদর্শন আজও পর্যটকদের আকর্ষণ করে।

আকবরের ধর্মগগুরু খাজা মৈনুদ্দিন চিস্তি ১১৯২ খ্রিষ্টাব্দে মহম্মদ ঘোরীর সঙ্গে ভারতে আসেন। তিনি মক্কা হয়ে মদীনায় যাওয়ার পথে আল্লাহর নির্দেশ পান যে, তাকে ভারতবর্ষে ইসলাম ধর্মের মহাত্ত প্রচার করতে হবে। তিনি তখন ভারতে আসেন। এই আজমীরেই আস্তানা করে বিভিন্ন স্থানে ইসলাম ধর্মের প্রচার করতে  থাকেন। ১২৩৬ খ্রিষ্টাব্দে ৯৪ বছর বয়সে এই আজমীরেতেই তার জীবনাবসান হয়। এখানেই তাকে সমমাধিস্থ করা হয়। এটাই আজমীর শরিফ।

নির্দেশনা
আজমীর যেতে প্রথমে যেতে হবে কলকাতা। শহরটির শিয়ালদহ স্টেশন থেকে সরাসরি আজমীরের ট্রেন পাওয়া যায়। এর মধ্যে অনন্যা এক্সপ্রেস উল্লেখযোগ্য। এই ট্রেনে যেতে সময় লাগবে প্রায় ৩৪ ঘণ্টা। এছাড়াও শিয়ালদহ স্টেশন থেকে আজমীর সুপার ফাস্ট এক্সপ্রেসে যেতে পারেন, সময় লাগবে ২৭ ঘন্টা ৪০ মিনিট। ভাড়া এসি থ্রী-টায়ার ২৮০০ রুপি, রাত ১১টা ০৫ মিনিটে ছেড়ে যায়।। ক্ষেত্রবিশেষে সময় বেশিও লাগতে পারে। ট্রেনটি আজমীরের রেল স্টেশনে নামিয়ে দেয়ার পর মাজার সড়কে যেতে অটো রিকশায় ৩০ রুপি, রিকশায় ২০ রুপি লাগবে। এছাড়াও জয়পুর থেকে প্রাইভেট গাড়ী ভাড়া করে যেতে পারেন। সময় লাগবে ২ ঘণ্টা।

হোটেলে থাকতে হলে কিছুটা সমস্যা পড়তে হতে পারে। কারণ বিদেশি হলেই সরকারের গোয়েন্দা সংস্থার নির্দেশনা মতো একটি অনলাইন ফরম পূরণ করতে হয়। এই পদ্ধতি যদি কোনো হোটেলে না থাকে তাহলে বিদেশিদের এসব হোটেল কর্তৃপক্ষ রাখতে চাইবে না। মাজার রোড থেকে সোজা বের হয়ে একদম শেষ প্রান্তে বাম দিকে কয়েক পা ফেললেই চোখে পড়বে রিগালসহ বহু হোটেল। বাংলাদেশিরা কেউ আজমীরে এলে সাশ্রয়ী ও বেশি দামে দু’ধরনের কক্ষই পাবেন। ১৫০০ রুপি থেকে শুরু করে ৪৫০০ রুপিতে এসি স্যুইট রুমও মিলবে।

Share:

Leave a Comment