ঘুরে এলাম এশিয়ার বৃহত্তম গ্রাম বানিয়াচং
রেমা কালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য অভিযান শেষ করে এবার আমাদের গন্তব্যস্থল এশিয়ার বৃহত্তম গ্রাম বানিয়াচং। বানিয়াচং উপজেলা হবিগঞ্জ জেলার অন্তর্গত একটি প্রশাসনিক এলাকা। এর আয়তন ৪৮২.৪৬ বর্গ কিলোমিটার। এর উত্তরে রয়েছে শাল্লা উপজেলা এবং দিরাই উপজেলা, দক্ষিণে হবিগঞ্জ সদর উপজেলা ও লাখাই উপজেলা, পূর্বে নবীগঞ্জ উপজেলা ও হবিগঞ্জ সদর উপজেলাএবং পশ্চিমে রয়েছে আজমিরীগঞ্জ উপজেলা, মিটামইন উপজেলা এবং অষ্টগ্রাম উপজেলা।
নৈসর্গিক রূপ আর ইতিহাস ঐতিহ্যের লালনভূমি বানিয়াচং উপজেলা। ভূ-গঠনিক অবনমন ভূমির হাওর-বাঁওড়ে সুশোভিত। অসংখ্য নদ-নদী বিধৌত ও বিল-ঝিল, খাল-নালা অধ্যুষিত এক নয়নাভিরাম সুবর্ণভূমির জনপদ। বর্ষায় হাওরে থৈ থৈ জলরাশির উচ্ছ্বলতা। নৌকা বাইচে সারি গানের তালে তালে প্রাণের উচ্ছ্বাসে উদ্ভাসিত এই জল ঢেউ’র দেশ। হেমন্তে দিগন্তজুড়া ফসলের মাঠ। অঘ্রানে আমন ধানের মৌ মৌ গন্ধ আর নবান্নের কলতানে ভাস্বর বাংলার চিরায়ত রূপ। বোরো মৌসুমে চারিদিকে সবুজের সমারোহ। লিলুয়া বাতাসে ধানগাছের কচি ডগার খেলানো ঢেউয়ে দোলে উঠে প্রাণ। বৈশাখে সোনালী রঙের রঙিন ধানসিঁড়ি মাঠ জুড়িয়ে দেয় হৃদয়। ফসল কাটার আনন্দ পরিণত হয় মহাউৎসবে। ‘‘গোলায় ধান, জলায় মাছ ও গলায় গান’’ এ নিয়েই হাওর পাড়ের নিরন্তর জীবনযাত্রা। সংগ্রামী জীবনের বৈশিষ্ট্য এবং বৈচিত্তে রসবোধের মহিমা ও উৎকর্ষতা।
প্রাচীণ জনপদ বঙ্গ রাজ্যের অন্তর্ভূক্ত ‘পূর্ব বাঙালার’ এই হাওর বা ভাটি এলাকা নিয়ে ক্ষুদ্র রাজ্য গড়ে উঠেছিল। রাজধানী ছিল বানিয়াচং। রাজা, জমিদার ও জায়গীরদের শাসনকাল ও বীরত্বগাঁথা ইতিহাসের পাতায় বিধৃত। অনেক প্রাচীন নিদর্শণ ও পুরাকীর্তি এখনও বিদ্যমান। চারশ থেকে পাঁচশ বছরের প্রাচীন মসজিদ, মন্দির, রাজবাড়ীর ধংসাবশেষ, বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বীর আখড়াগুলো কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ‘সাগর দিঘী’তে দর্শনার্থীদের ভীড় ও একে ঘিরে রাণী কমলাবতীর আত্মবিসর্জনের উপাখ্যাণ এখনো মানুষের মুখে মুখে ফিরে। পল্লীরাজ বা মহাগ্রাম নামে ভূষিত পৃথিবীর বৃহত্তম গ্রাম বানিয়াচং পর্যটকদের হাতছানি দেয়। সারি সারি বৃক্ষরাজি ও প্রাচীন বসতির নিদর্শন মাটির ঢিবি ও টিলায় ঝোঁপ-ঝাড় ও জঙ্গল যেন অতীতের কথা কয়। গ্রামের অভ্যন্তরে একেবেকে বয়ে গেছে অসংখ্য বিল ও গড়ের খাল। বর্ষায় জলে টইটম্বুর হয়ে গ্রামের শ্রী ছবির মতো ভেসে উঠে। অসংখ্য খাল ও দিঘীগুলোর পাড় ধরে মহল ও পাড়ার নান্দনিক অবস্থান আগন্তুকদের দারুনভাবে আকর্ষন করে। জানার আগ্রহে আরো কাছে টেনে নেয় গ্রামীণ ঐতিহ্য। কালজয়ী উপাখ্যান আলাল-দুলাল, রাণী ভবানী, আমেনা সুন্দরী, আফজাল খান ও আরজু বানুর স্মৃতি বিজড়িত এবং বিখ্যাত কিংবদন্তীশিল্পী সুবীর নন্দীর জন্মস্থান এই বানিয়াচং। প্রাচীন জনপদ, হাওর বাঁওড়, পাখ-পাখালী আর ফলফসলে ভরপুর প্রকৃতির এই লীলাভূমি গর্বিত বাংলার প্রতিচ্ছবি। পর্যটক ও দর্শনার্থীদের মোহিত করার মতো বৈচিত্রময় লৌকিক সম্ভার এখানে বিদ্যমান।
প্রথমদিনে আমাদের বিথঙ্গল আশ্রম, রাজবাড়ী আর সাগরদিঘি ঘুরার প্ল্যান থাকলেও বানিয়াচং পৌঁছাতে দেরী হয়ে যাওয়ায় বিথঙ্গল আশ্রমে যাওয়া হয়নি। তাই হোটেলে হালকা ফ্রেশ হয়ে টমটম রিজার্ভ করে বেরিয়ে পড়লাম রাজবাড়ী দেখতে। পুরানো রাজবাড়ির ধ্বংসাবশেষ ছাড়া তেমন আর কিছুই নেই, কিছু সারি সারি সুপারি বাগান, পাশে আছে একটা পুকুর ঘাট আর রাজবাড়ির সামনে রয়েছে সুন্দর কারুকার্যখচিত একটি মসজিদ। এরপর আমরা চলে গেলাম সাগরদিঘি। গোধূলি বেলাটা সাগরদিঘি ঘুরে সন্ধ্যায় চলে গেলাম একটি পুরানো কালীমন্দিরে। সেখানে আধা ঘন্টার মতো সময় কাটিয়ে হোটেলে ফিরে আসলাম। রাতে খেলাম বড়বাজার পোষ্ট অফিস গলির হিমেল হোটেলে। এখানে এই হোটেলের খাবারটাই ভাল লাগলো, বিশেষ করে টাকি মাছের ভর্তাটা।
পরদিন সকাল ৬ টায় বেরিয়ে পড়লাম লক্ষীবাওর জলারবন দেখতে, যা স্থানীয়ভাবে হরতির জঙ্গল নামেই পরিচিত। অসম্ভব সুন্দর একটা যায়গা, যেখানে গেলে আপনার মন ভালো হয়ে যাবে। এরকম গ্রামীণ পরিবেশে খাল বিলের মাঝখানে এরকম জঙ্গল বোধয় বাংলাদেশে আর কোথাও নেই। আমরা সেখানে ঘন্টা দুয়েকের মত ঘুরে হোটেল এসে ফেরার প্রস্তুতি নিলাম। আসলে এইসব যায়গায় আসলে একটু সময় নিয়ে আসতে হয়, তাহলে আরো অনেক যায়গা ঘুরা যায়। ট্রেনের তাড়া থাকায় তাড়াতাড়ি ব্যাকপ্যাক গুছিয়ে হোটেল থেকে বের হয়ে বানিয়াচং থেকে প্রথমে হবিগঞ্জ আসলাম তারপর চলে গেলাম শায়েস্তাগঞ্জ। দুপুরের খাবার খেয়ে কিছুক্ষন জিরিয়ে নিয়ে স্টেশনে চলে এলাম। ট্রেন সময়মতো আসলো। অনেক স্মৃতি নিয়ে এভাবেই আমাদের রেমা কালেঙ্গা আর বানিয়াচং গ্রাম ভ্রমণ শেষ হলো।
বানিয়াচং ঘুরতে আসলে আপনারা এই দর্শনীয় স্থান গুলো দেখে যাবেনঃ
*বিথঙ্গলের আখড়া:
বানিয়াচং উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১২ কিঃ মিঃ দক্ষিণ পশ্চিমে হাওড় পাড়ে বিথঙ্গল গ্রামে আখড়াটি অবস্থিত । যা বৈষ্ণব ধর্মাবলম্বীদের জন্য অন্যতম তীর্থস্থান। এ আখড়াটি ঘিরে কার্তিক মাসের শেষ দিন ভোলা সংক্রানি- উপলক্ষে কীর্ত্তণ হয়। ফাল্গুন মাসের পুর্ণিমা তিথিতে দোল পূর্ণিমার পাঁচ দিন পর পঞ্চম দোল উৎসব উদযাপিত হয়। চৈত্র মাসের অষ্টমী তিথিতে ভেড়া মোহনা নদীর ঘাটে ভক্তগণ পূজার্চনা করেন এবং ঘাটে বারুনী মেলা বসে। এ ছাড়া আষাঢ় মাসের ২য় সপ্তাহে রথযাত্রা অনুষ্ঠিত হয়। আখড়ার প্রতিটি উৎসবে ৫ থেকে ১০ হাজার ভক্তের সমাগম ঘটেএ আখড়ায় দর্শনীয় বস্তুর মধ্যে রয়েছে ২৫মন ওজনের শ্বেত পাথরের চৌকি (খাট), পিতলের তৈরী সিংহাসন, প্রাচীন কারুকার্য সমৃদ্ধ রথ এবং রৌপ্য পাখি ও সোনার মুকুট।
যেভাবেযাওয়া যায়: শুকনো মৌসুমে হবিগঞ্জ কামড়াপুর ব্রীজ হতে জীপযোগে সুজাতপুর হয়ে নৌকোযোগে অথবা পায়ে হেটে বর্ষা মৌসুমে হবিগঞ্জ কালার ডুবা থেকে নৌকা অথবা বানিয়াচং আদর্শবাজার হতে নৌকাযোগে।
*রাজবাড়ীর ধ্বংসাবশেষঃ
গোবিন্দ সিংহ বানিয়াচং রাজ্যের অধিপতি হওয়ার পর পদ্মনাভ বা কর্ণখাঁর দিঘীর পশ্চিম পাড়ে রাজবাড়ী গড়ে তোলেন। বর্তমানে ঐ রাজবাড়ীর কিয়দংশ বিদ্যমান আছে। পাশে ধর্মান-রিত গোবিন্দ সিংহ তথা হবীব খাঁ’র (প্রাচীন ইটে মোড়ানো) সমাধি রয়েছে। রাজবাড়ীর বাকি প্রাচীর সরিয়ে প্রায় একশ বছর পূর্বে লোকনাথ রমন বিহারী উচ্চ বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়। ধ্বংসাবশেষের মধ্যে পাথরের দালানের ৪টি পিলার দন্ডায়মান রয়েছে এবং এর চার পাশে বেলে ও মার্বেল পাথরের খন্ড বিখন্ড পড়ে আছে। ঐগুলোকে ‘হব্যা’ ও ‘ঘোমা’ দাড়া গুটি বলা হয়ে থাকে। কল্প কাহিনীতে ‘হব্যা’ ও ‘ঘোমা’ দুই ভাই পালোয়ান ছিলেন। তারা দিঘীর পাড়ে এ পাথরের খন্ড নিয়ে দাড়াগুটি খেলতো বলে জনশ্রুতি রয়েছে। আসলে ‘হব্যা’ ও ‘ঘোমা’ একই নাম। হবীব থেকে ‘হব্যা’ এবং গোবিন্দ থেকে ‘ঘোমা’ নামে অপভ্রংশে প্রচার পায়। প্রায় সপ্তদশ শতাব্দিতে দেওয়ান আবেদ রাজা ঐ রাজবাড়ী বানিয়াচং কসবার উত্তরাংশে স্থানান্তর করেন। ঐ এলাকা দেওয়ান বাগ হিসেবে পরিচিত। বর্তমানে ঐ রাজবাড়ীর জরাজীর্ণ প্রাচীন দালান ও প্রাচীন বিদ্যমান এবং সম্পূর্ণ মোঘল স্থাপত্যে তৈরী একটি দর্শনীয় স্থান।
#যেভাবে যাওয়া যায়: বানিয়াচং উপজেলা পরিষদ থেকে পায়ে অথবা রিক্সাযোগে।
*সাগরদীঘি:
প্রায় দ্বাদশ শতাব্দিতে রাজা পদ্মনাভ প্রজাদের জলকষ্ট নিবারণের জন্য গ্রামের মধ্য ভাগে ঐ দিঘীটি খনন করেন। এ দিঘী খননের পর পানি না উঠায় স্বপ্নে আদিষ্ট হয়ে রাজা পদ্মনাভের স্ত্রী রাণী কমলাবতী আত্ম বিসর্জণ দেন বলে একটি উপাখ্যান এ অঞ্চলে প্রচলিত আছে। এ জন্য এ দিঘীকে কমলা রাণীর দিঘীও বলা হয়ে থাকে। এ দিঘী নিয়ে বাংলা সিনেমাসহ রেডিও মঞ্চ নাটক রচিত হয়েছে। এর পাড়ে বসে পল্লী কবি জসিম উদ্দিন ‘রাণী কমলাবতীর দিঘী’ নামে একটি কবিতা রচনা করেছিলেন। সে কবিতাটি তাঁর ‘সূচয়নী’ কাব্যগ্রন্থে অন-র্ভূক্ত রয়েছে। এ দিঘীটি বাংলা দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বলে খ্যাতি রয়েছে। বর্তমানে ৬৬.০০ একর জায়গা নিয়ে দিঘীটি বিস্তৃত। তম্মধ্যে জল সীমানা রয়েছে ৪০.০০ একর এবং চার পাড় মিলে রয়েছে ২৬.০০ একর। ঐ চার পাড়ে দিনাজপুরের রাম সাগরের আদলে পর্যটন পার্ক তৈরী করা হলে আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে বলে অনেক পর্যটকই মতামত রেখে থাকেন। বর্তমানে এ দিঘীটি সরকার মৎস্য চাষের আওতায় এনে লীজ নিয়ে বছরে উল্লেখ যোগ্য পরিমাণ রাজস্ব আয় করছে।
#যেভাবে যাওয়া যায়: বানিয়াচং উপজেলা পরিষদ থেকে পায়ে হেটে অথবা রিক্সাযোগে।
*শ্যাম বাউল গোস্বামীর আখড়া:
শ্রী শ্রী শ্যাম বাউল গোস্বামী ছিলেন ইষ্ট সাধনায় সিদ্ধি লাভে সমর্থ, অলৌকিক শক্তি লাভের অধিকারী, যুগসিদ্ধ এক মহা পুরুষ। শ্রী শ্রী রাম কৃষ্ণ গোস্বামীর নিকট দীক্ষা লাভ করে বৈষ্ণব ধর্ম প্রচারের জন্য তিনি বানিয়াচং আসেন। অনেক বাধাবিঘ্ন অতিক্রম করে অবশেষে যাত্রাপাশা মহল্লায় তিনি আখড়া প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি অসহায় ব্যাধিগ্রস্ত জীবের পরিত্রাণকারী হিসেবে মানুষের অন্তরে স্থান করে নিয়েছিলেন। শ্যাম বাউলের বাংলাদেশের উত্তর পূর্বাঞ্চলে ও ভারতে অনেক ভক্ত ও শিষ্য রয়েছে। প্রতি বছর আখড়ার সন্নিকটে তাঁর স্মরণে চৈত্র মাসে অষ্টমী স্নান মেলা অনুষ্ঠিত হয়।
#যেভাবে যাওয়া যায়: উপজেলা পরিষদ হতে নতুন বাজার হয়ে রিক্সা বা সিএনজিযোগে যাওয়া যায়।
*লক্ষীবাওর জলাবন:
হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার লক্ষ্মী বাওর সোয়াম্প ফরেষ্ট (জলাবন) হতে পারে আকষর্ণীয় একটি পর্যটন স্পট। বানিয়াচং উপজেলার প্রান্ত সীমানায় খড়তি নদীর দক্ষিণ দিকে বিরাট হাওরের মধ্যে অবস্থিত এই জলাবন এলাকাবাসীর নিকট খড়তির জঙ্গল নামেও পরিচিত। কখন এই জঙ্গল সৃস্টি হয় তা প্রবীণরাও বলতে পারেন না। এখানে প্রকৃতির এই বিচিত্র রূপ সত্যিই বিস্ময়কর।বর্ষাকালে চারদিকে হাওরের পানি আর জঙ্গলের অসংখ্য গাছপালার সবুজ অরণ্য পরিবেশকে এক নান্দনিক রূপ দিয়েছে। হাওরে দূর থেকে জঙ্গলটিকে দেখে মনে হবে যেন পানির উপর ভাসছে। হিজল, কড়চ, বরুণ, কাকুরা, বউল্লা, খাগড়া, চাইল্লা, নল ইত্যাদি অসংখ্য গাছ ও গুল্মে পরিপূর্ণ এই জলাবন বলতে গেলে এতদিন অনাবিস্কৃতই ছিল। ইদানিং সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলার“রাতারগুল” নামক সোয়াম্প ফরেষ্ট বা জলাবন সম্পর্কে পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হলে বানিয়াচং এর লক্ষ্মী বাউর জলাবনেরসাথে এর সামঞ্জস্য খুজে পাওয়া যায়। রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্টকে কেউ কেউ দেশের একমাত্র সোয়াম্প ফরেষ্ট হিসাবে উল্লেখকরলেও ওয়াকেবহাল মহলের মতে বানিয়াচংয়ের লক্ষ্মী বাউর সোয়াম্প ফরেষ্ট একই শ্রেণীভুক্ত এবং অনেক বড়। বর্ষাকালে কয়েকমাস বনের গাছপালা পানিতে নিমজ্জিত থাকে।বনের ভিতরে কয়েকটি খাল ও বিল রয়েছে। এগুলোর স্বচ্ছ পানিতে জঙ্গলের প্রতিচ্ছবি দেখা যায়।শরৎকালে পানি শুকিয়ে গেলেও বনের ভিতরে থাকা অনেকগুলো বিলে পানি জমে থাকে। বিলগুলোতে প্রচুরমাছ পাওয়া যায়।এই জলাবনে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি, সরীসৃপ ও স্তন্যপায়ী জীবজন্তু। এগুলোর মধ্যে রয়েছে মেছোবাঘ,শিয়াল, গুই সাপ, কেউটে, লাড্ডুকা, দারাইশ সহ বিষধর সাপ।বর্তমানে বিভিন্ন জাতের বক, পানকৌড়ী, বালিহাঁস দেখা গেলেও শীতকালে ঝাঁকে ঝাঁকে অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত হয় নির্জন এই জলাবন।এছাড়া বনটিকে দেশী ও অতিথি পাখিরঅভয়ারন্য ঘোষণা করা হয়েছে।কেউ পাখি শিকার করলে ৫হাজার টাকা জরিমানা আদায় সহ শিকারীকে পুলিশের নিকট সোপর্দকরার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
#যেভাবে যাওয়া যায়: হবিগঞ্জ থেকে ১২ মাইল দূরবর্তী বানিয়াচং উপজেলা সদরের আদর্শ বাজার নৌকাঘাট থেকে ৫ কিলোমিটার উত্তরে হাওরের মাঝে এ জলাবন দেখতে বর্ষাকালে নৌকা, শরৎকালে মোটর সাইকেল, ট্রলিসহ হালকা যানবাহনে ও পায়ে হেটে যেতে হয়।
*নাগুরা ফার্ম:
জেলা সদরের কাছে বানিয়াচং উপজেলাধীন নাগুরা নামক স্থানে উপমহাদেশের প্রথম গভীর পানিতে চাষ উপযোগী ধান উদ্ভাবনকারী এই গবেষণা প্রতিষ্টানটির অবস্থান। দাপ্তরিকভাবে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনষ্টিটিউট, নাগুরা নামে অভিহিত হলেও সর্বসাধারণের কাছে এটি নাগুরা ফার্ম নামে সমধিক পরিচিত। ১৯৩৪সালে প্রতিষ্টিত এই গবেষণা প্রতিষ্টান কর্তৃক উদ্ভাবিত ধান বর্ষার পানির সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়ে উঠে। ফলে এ ধানের চাড়া কখনো তালিয়ে যায় না। এই ফার্মে উদ্ভাবিত হাইব্রিড জাতের ধানের মধ্যে রয়েছে ব্রি-৫১, ব্রি-৫২, ব্রি-২৯, ব্রিআর-১৯ প্রভৃতি। নতুন প্রজাতির ধান উদ্ভাবনের পাশাপাশি এখানে ধানের পরীক্ষামূলক চাষ করা হয় এবং প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করা হয়। বাংলাদেশ লোকপ্রশাসক প্রশিক্ষণ কেন্দ্রসহ দেশ বিদেশের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সরকারি ও বেসরকারি কর্মকর্তাগণ তাদের প্রশিক্ষনের অংশ হিসেবে এই প্রতিষ্টানটি পরিদর্শন করতে আসেন। উল্লেখ্য এই গবেষণাগারের সবুজ ক্যাম্পাসে নানা প্রজাতির হাজারো পাখির অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। পাকির কলকাকলি আর মেধাবী বিজ্ঞানীদের সৃষ্টিশীলতায় এই ক্যাম্পাসে ইতোমধ্যে একটি দর্শনীয় স্থান হিসেবে পর্যটকদের দৃষ্টি আকৃষ্ট করেছে।
#যেভাবে যাওয়া যায়: বানিয়াচং উপজেলা পরিষদ সিএনজি/বাসযোগে হবিগঞ্জ সদর হয়ে অথবা হবিগঞ্জ সদর থেকে সিএনজি/বাসযোগে।
*মাকালকান্দি স্মৃতিসৌধ:
১৮ আগস্ট ১৯৭১ সাল। বানিয়াচঙ্গ উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল কাগাপাশা ইউনিয়নের হিন্দু অধ্যুষিত গ্রামটির নাম মাকালকান্দি। সকাল বেলা গ্রামের চন্ডি মন্দিরে মনসা পূজার প্রস্তুতি নিচ্ছিলো হিন্দু অধ্যুষিত গ্রামের বাসিন্দারা। এ সময় ৪০-৫০টি নৌকাযোগে পাকবাহিনী রাজাকারদের সহতায়তা এসে হামলা চালায়। পূজারত নারী-পুরুষকে চন্ডি মন্দিরের সামনে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ারে একই পরিবারের ১১ জনসহ অসংখ্য গ্রামাবাসীকে হত্যা করে। ১৪১ জন নিরপরাধ হিন্দুকে নির্বিচারে গুলিবর্ষণ ও বেয়নট দিয়ে খুচিয়ে হত্যা করে পাকহানাদার বাহিনী। ঘাতকরা এতেই ক্ষ্যান্ত হয়নি বর্বরোচিত হত্যাকান্ডের পর নারীদের সম্ভ্রমহানী ঘটায়। পরে গ্রামবাসীর মালামাল লুট করে নিয়ে যায় এবং বাড়িঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়। সেই ভয়াল দিনের স্মৃতি বুকে নিয়ে আজও নীরবে-নিভৃতে চোখের অশ্রু ফেলছেন স্বজনরা। স্বাধীনতার দীর্ঘ ৩৬ বছর পর ২০০৭ সালে এলাকাবাসীর সহযোগিতায় তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাব মোহাম্মদ নুরে আলম সিদ্দিকীর প্রচেষ্টায় থোক বরাদ্দের অনুদানে সেখানে একটি স্মৃতি সৌধ নির্মাণ করা হয়। পরবর্তীতে উক্ত স্থানে মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে শহীদ ব্যক্তিদের নামর তালিকাসহ একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করা হয়। বর্তমানে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সরকারী ব্যবস্থাপনায় প্রতিবছর ১৮ আগষ্ট মাকালকান্দি গণহত্যা দিবস পালন করা হয়।
#যেভাবে যাওয়া যায়: বানিয়াচং উপজেলা সদরের আদর্শ বাজার বর্ষাকালে নৌকা, শরৎকালে মোটর সাইকেল, ট্রলিসহ হালকা যানবাহনে ও পায়ে হেটে যেতে হয়।
খরচপাতি:
শায়েস্তাগঞ্জ – হবিগঞ্জ -> ২৫ টাকা(সিএনজি)
হবিগঞ্জ – বানিয়াচং বড়বাজার> ৪০ টাকা(সিএনজি)
বানিয়াচং বড়বাজার থেকে টমটম রিজার্ভ নিয়ে রাজবাড়ী ও সাগরদীঘি ঘুরতে হলে ১৫০-২০০ টাকা নিবে।
লক্ষীবাওর যেতে হলে বড়বাজার থেকে টমটম রিজার্ভ নিয়ে যেতে হবে, সেক্ষেত্রে ৩০০ টাকা দিয়ে মাইদ্দ্যার ঘাট পর্যন্ত যেতে পারবেন, সেখান থেকে আরো একটি টমটম রিজার্ভ করে নদী পাড় হয়ে ৫০০ -৭০০ টাকা দিয়ে হরতির জঙ্গল ঘুরতে পারবেন।
বিথংল আশ্রম যেতে হলে টমটম রিজার্ভ ভাড়া নিবে ৪০০-৫০০ টাকা।
হোটেল ভাড়াঃ
হোটেল আল আমান আবাসিক(বড়বাজার) – ২০০ টাকা (জনপ্রতি)
ফোন নংঃ 01776115779
গ্রুপে ফিমেল পারসন থাকলে হোটেলে আগে বলে রাখবেন।
*খাবারের জন্য “হোটেল হিমেল” ভাল। ফোন নংঃ 01715509853
*বানিয়াচঙ্গে ঘুরার জন্য গাইডের প্রয়োজন নাই।
*ভ্রমণে গিয়ে আপনার আশেপাশের পরিবেশ পরিচ্ছন্ন রাখুন, যেখানে সেখানে ময়লা ফেলবেননা। এমন কোন আচরণ করবেননা যাতে আশেপাশের মানুষজনের ক্ষতি হয়।