চিনি মসজিদ ও তাজিরের বিরিয়ানি ভ্রমন
দর্শন ও ভোজন দুইয়ের সমসত্ব মিশ্রণকেই বোধহয় এক পরিপূর্ণ ভ্রমণের আখ্যা দেয়া যেতে পারে। তাই ‘সাধ্যের মধ্যে সবটুকু সুখ’ – এর মত ‘সাধ্যের মধ্যে এক পরিপূর্ণ ভ্রমণ’- এর জায়গা খুঁজতে গিয়ে মনে হল সৈয়দপুরের চেয়ে আদর্শ জায়গা আর হবে না। কারণ খাওয়ার জন্য যেমন বিখ্যাত তাজির উদ্দিন গ্রান্ড হোটেল আছে তেমনি ঘোরার জন্য বেশ কিছু জায়গা রয়েছে যার মধ্যে অন্যতম হল চিনি মসজিদ।
.
বাস থেকে যখন নামলাম তখন জুম্মার নামাযের আর পৌণে একঘণ্টা বাকি। আমাদের প্লান ছিল নামায পরে তারপর খেয়েদেয়ে ঘুরবো। তাহলে এই পৌণে এক ঘণ্টা সময় কি করা যায়, ভাবতে ভাবতে হাবিবুর বলে উঠলো, “চল, বড়বাজার যাই। ওখানে হাঁটাহাঁটি করবো।”
আমরা রাজি হলাম।
এবার এক অটোভ্যানকে থামিয়ে বলা হলো সে বড়বাজারে যাবে কি না।
চালক মনে হলো কিছুটা বিস্মিত হয়েই বললো,”সেটা আবার কোথায়!”
হাবিবুর আমাদের সরিয়ে নিয়ে এসে বললো,”ওই শালা মনে হয় এলাকায় নতুন, সেই জন্য চিনতেছে না।”
পরে আমরা পাঁচমাথা এলাকায় তাজির হোটেলের কাছাকাছি এসে নামলাম। নেমে দেখি হাবিবুর কেমন যেন উসখুস করছে। একটা সময় যা জানতে পারলাম তাতে আমাদেরই আক্কেলগুড়ুম হয়ে গেল। সে নাকি এই পাঁচমাথা নামটাই ভুল করে বড়বাজার বলে ফেলেছিল।
.
যাই হোক, প্রথমেই আসি তাজিরের বিরিয়ানিতে। অর্ডার দেয়ার পর যখন বিরিয়ানি আসলো তখন আসলে কেন জানি পরিমাণটা দেখে চোখ ভরলো না। তবে সত্যি কথা বলতে খাওয়া শেষে মনে হয়েছে, চোখ ভরলো কি ভরলো না তাতে কোনো ক্ষতি নেই- পেট কিন্তু ভালোমতোই ভরেছে। আর স্বাদের কথা বললে বলতেই হবে,’বেশ ভালো ‘।
.
খাওয়াদাওয়া শেষে ভ্যান নিয়ে চিনি মসজিদের উদ্দেশ্যে চললাম। আগে ইন্টারনেটে মসজিদটির ছবি দেখতেছিলাম। সুন্দর দেখতে। কিন্তু যখন বাস্তবে মসজিদটি দেখতে পেলাম তখন বুঝতে পারলাম, মসজিদটি শুধু সুন্দর নয়, অসাধারণ সুন্দর। চমৎকার এক স্থাপত্যশৈলির এক অনন্য নিদর্শন এই মসজিদটি। আসলেই ভার্চুয়াল জগৎ ও বাস্তবের মধ্যে বিস্তর ব্যবধান। মসজিদটি তৈরি করা হয় ১৮৬৩ সালে। চিনামাটির কাপ, প্লেত বা তৈজসপত্রের ভাঙা অংশ সিমেন্টের সাথে মিশিয়ে দেয়ালের গায়ে এর প্রলেপ দিয়ে এটি তৈরি করা হয়েছে। এই পদ্ধতিকে বলে চিনি করা। এখান থেকে মসজিদটির নাম চিনি মসজিদ। অনেকে চিনা মসজিদও বলে থাকে। ভিতরের অংশ পাশাপাশি তিনটি ঘরে বিভক্ত। মাঝেরটি বানানো হয়েছে ব্রিটিশ আমলে, বামপাশেরটি পাকিস্তান আমলে আর ডানদিকেরটি বাংলাদেশ আমলে বানানো হয়েছে। কারুকাজ দিয়ে ভরপুর আর ৩২টি মিনার ও ৫টি গম্বুজ বিশিষ্ট এই মসজিদটি সকলকে নিশ্চিতভাবে মুগ্ধ করবেই।
source: Mostain Rishad <Travelers of Bangladesh (ToB)