জালালপুর ইকো রিসোর্টে ২দিন

কাল ভরসন্ধ্যায় আমরা জালালপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে সাইকেল চালিয়েছি। তিনজন বয়সী মানুষকে দেখে সেখানে সমবেত বালক- কিশোরগণ উৎসুক হয়ে ওঠে, তারা আমাদের সন্নিকটে আসে। আমরা এই নৈকট্যের সুযোগটি নেই। তারাও অবলীলায় তাদের প্রিয় সাইকেল আমাদের চালাতে দেয়।

সেখানে সাইকেল ছিল তিনজনের, আমরাও তিনজন। প্রথমে সাইকেল নিয়ে একবারেই তাতে চড়ে বসেন সৈয়দ আবু জাফর ভাই। পক্ককেশ ও শুভ্রদাঁড়ির মানুষটিকে সাইকেল চালাতে দেখে বালক-কিশোরগণ বেশ আনন্দ পায়। দ্বিচক্রযান থেকে নেমে জাফর ভাইয়ের উক্তি, ‘বহুদিন পর উঠলাম সাইকেলে। কিন্তু ভুলিনি।’ মাহমুদ হাফিজ ভাইও ভোলেননি। আমি প্রথমবারের চেষ্টায় চড়তে পারিনি। দুই কিশোর সাইকেল ধরে থাকে, আমি সাইকেলে উঠি। স্থিরতা ভেঙে প্রাথমিক গতি সৃষ্টি করতে ওরা সাইকেলটিকে একটু গড়িয়ে দেয়। ভয় হয়, পড়ে না যাই। কিন্তু পড়লাম না, সঠিক চালিয়ে গেলাম মাঠের ঘাসঢাকা অমসৃণ সমতলে। সাইকেল চালানো এমন এক শিক্ষা, যা আমরা কখনো ভুলি না।

ইকো রিসোর্টে এসে দেখি বাতিমালা তাকে অন্যরূপ দিয়েছে। চারপাশের প্রায়ান্ধকার প্রতিবেশের মাঝে ঐ ঔজ্জ্বল্য মনে হলো দরিদ্র ঘরে ধনীর দুলালী বৌ বসে আছে। আমি রিসোর্টে না ঢুকে তার পাশের ঘাসছাওয়া পথ ধরে এগুই, কেননা সেপথ বাতিমালায় উজ্জ্বল, সবুজ ঘাসে সাদা আলো জোৎস্নার মতো ঝরে পড়ছে। রিসোর্টের পেছনের পথে কয়েক রঙের বাতি নিচু করে লাগানো। বাতিগুলো অদ্ভুত, হারিকেনের ভেতরে জ্বলছে এনার্জি লাইট। স্লাবগুলোর উপর পা ফেলে ফেলে চলে যাই সুইমিং পুল ঘেষে থাকা দোচালা মাচানে। মাঠের উপর প্রসারিত এই মাচানটি চমৎকার! এর মোটা কাঠের ভারি বেঞ্চ ও টুল ঐ আসবাবের মতোই আপনাকে দৃশ্য দেখতে স্থায়ী করতে প্রণোদিত করবে। আমরাও স্থায়ী হই, দুপাশের গ্রাম আর মাঝের সবুজ মাঠ কী সম্মোহন জাগায়, তাকে মোহময়ী করে ফেলে ক্রমশঃ অপসৃয়মান আলো। তবে সবচেয়ে মনোলোভা ছিল প্রাণজুড়ানো হাওয়া।

তবে সেখানে বসে থাকার আরো কারণ ছিল। উৎকৃষ্ট কারণ হলো আজ বারবিকিউ হবে। হাফপ্লেটে চলে এলো বারবিকিউ চিকেন, তাদের ঝলসানো অংশগুলো কালো, লাল ও কালোর কম্বিনেশন মিলে গেল কালো হাফপ্লেটের এককোণের লালরঙের কম্বিনেশনের সাথে। ঐ প্রাণজুড়ানো হাওয়ার ভেতর বসে মুরগি চিবুতে চিবুতে মনে হচ্ছিল জগৎ বুঝি অপরিমেয় সুখের জায়গা!

Source:  Kamrul Hassan

Share:

Leave a Comment